somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মায়া

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক দিন থেকে একটা কথা গোপন রেখেছি আমি। কার কাছে গোপন করেছি- আসলে নিজেরই টা অজানা। হয়তো নিজের কাছে, নিজের বিবেকের কাছে। তবে আজ আর বলতে বাধা নেই। আমার মনে হয় জানা উচিত সবার। সত্যিই জানা উচিত সবার। কারন গল্প টা তো আমার জীবনেরই একটা অংশ। এ থেকে হয়তো কেউ না কেউ সতর্ক হবেই...
আমি রনি। ঢাকা কলেজ থেকে পাশ করে সদ্য চাকরি প্রাপ্ত একজন। আসলে জীবনে যা আশা করেছিলাম সবই পেয়েছি, কিন্তু একটা ব্যাপার কখনই ভাবিনি যা আমার জীবনে ঘটেছে অপ্রত্যাশিত ভাবে। আজ নির্মোহ স্বীকারোক্তি করব তারই।
উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে আরও উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হলাম ঢাকা কলেজে। ঢাকা কলেজ, একটা প্রতিষ্ঠান, যার নামটাই একজন নিরীহ গোবেচারা ছেলেকেও বাঘ বানিয়ে দেয়। সে ঢাকা কলেজের ছাত্র হয়ে আমিও বদলে গেলাম। ১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করা ছেলে হয়ে গেল আড্ডাবাজ। নিজের জন্মস্থানের বেশ কয়েকজন বড় ভাই ছিল কলেজে যারা আমাকে এই আড্ডার নেশা থেকে উদ্ধার করতে ধরিয়ে দিল টিউশনি। এমনিতেও গ্রামে পরিবারের অবস্থা অতটা সচ্ছল ছিলনা। তাই আমিও রাজি হয়ে গেলাম। একদিন শুভক্ষণ ঠিক করে বড়ভাই আমাকে নিয়ে গেল সেই বাসায় পরিচয় করিয়ে দিতে। এর আগে কখনও এ কাজ কয়রা হয়নি তাই কিছুটা আড়ষ্ট ছিলাম। আড়ষ্টতা কেটে গেল যখন আমার ছাত্রী কে দেখলাম।
আমার ছাত্রী কামনা, অসাধারন সুন্দরী। মায়া ভরা হরিনীর চোখ, গোলাপের পাপড়ির মত ঠোঁট দেখেই ‘হৈমন্তী’ গল্পের নায়কের মত মনে হল, ‘আমি পাইলাম’। আমাকে লুল প্রজাতির ভাবার দরকার নেই কারন এটাই ছিল আমার জীবনে প্রথম কাউকে ভাল লাগা। ভাল লাগা! উপমাটা বোধ হয় ঠিক হলনা। এটাই ছিল আমার জীবনে প্রথম প্রেম। তাও তার প্রথম দর্শনে।
পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে পড়ান আরম্ভ করলাম তাকে। সিটি কলেজে পড়ুয়া মেয়ে। স্মার্ট, পড়াশোনা তেও ভাল। সপ্তাহে ৩ দিন পরানর কথা থাকলেও বেশি যেতাম। কারন টা তো সবাই বুঝি। দেখতে দেখতে সময় কেটে যেতে লাগল। আমি পড়ানোর ফাকে ফাকে তাকে ইঙ্গিতে বোঝাতে চাইতাম আমার মনের কথা। সে বুঝেও না বোঝার ভান করত (পরে জেনেছি)। এভাবেই চলে যাচ্ছিল সময়...
একদিন দুপুরে কলেজে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। সব বন্ধুরা মিলে। হঠাৎ প্রধান ফটকে লক্ষ্য করলাম একটা জটলা। তারপর আচমকা শুরু হল ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া। ধাওয়া খেতে খেতে জানতে পারলাম সিটি কলেজের ছাত্র দের সাথে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের ঝগড়া হয়েছে নারীঘটিত কারনে। সেই নারী আবার ইডেন কলেজের। বোঝাই যাচ্ছে দুই প্রেমিক গ্রুপের ঝগড়া তখন রুপ নিয়েছে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যুদ্ধে। একসময় আমরা (ঢাকা কলেজিয়ান) পাল্টা ধাওয়া দিয়ে সিটি কলেজের ছাত্রদের তাদের ক্যাম্পাসের দিকে নিয়ে গেলাম। আমার বন্ধু সহ অনেকে ঢুকল সিটি কলেজে ভাংচুর এর জন্য। আমাকেও উত্তেজিত করল বাইরে থেকে ঢিল ছোড়ার জন্য। আমিও ভাত্রিত্ব রক্ষার জন্য আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব সফল ভাবে পালন করতে লাগলাম। তখনও বুঝতে পারিনি আমি কি ভুল টাই না করছি???
বিকেলে চলে গেলাম টিউশনে। যেয়ে শুনি আমার ছাত্রী হাসপাতালে। দিগ্বিদিক শুন্য হয়ে গেল আমার, যখন শুনলাম দুই কলেজের মারামারিতে সে আহত হয়েছে। হাসপাতালের ঠিকানা জেনে কালবিলম্ব না করে চলে গেলাম সেখানে। ওর বাবা আমাকে জানাল ওর ডান চোখের জ্যোতি ৮০% কমে গেছে। অল্পের জন্য পুরোটা শেষ হয়ে যায়নি। সেদিন রাতে ঘুমুতে পারলামনা। পরদিন সকালে চলে গেলাম হাসপাতালে। কামনা তখন বিপদমুক্ত, অপারেশন শেষ। ওর বেডের পাশে বসলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, কি ঘটেছিল? ও বলল, সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় দোতালায় হঠাৎ বাইরে থেকে আশা একটা ঢিল ওর চোখে লেগেছিল। আমার বুক যেন খালি হয়ে গেল। এমন সময় ছাত্রী আমাকে অবাক করে আমাকে বলল, ‘স্যার, আমি আপনাকে অনেক পছন্দ করি। আমি জানি আপনিও আমাকে করেন। কিন্তু এখন তো আমার একটা চোখ নষ্ট, আপনি কি আমাকে এখনও ভালবাসবেন?’
তখন শুধু তার হাত ধরে নীরবে জানিয়েছিলাম, তার হাত কখনও ছাড়বনা। সত্যি ছাড়িওনি। তাকে বিয়ে করতে যাচ্ছি সামনে। সরাসরি যে কথা বলবার সাহস নেই তাই লিখেই জানাবো বলে ভেবেছিলাম। জানি সে আমাকে ক্ষমা করে দিবে, কিন্তু আমি হয়তো নিজেকে ক্ষমা করতে পারবনা তার চোখের দিকে তাকিয়ে। কারন ওই মায়া ভরা চোখের দৃষ্টিশক্তি কমানোর জন্য দায়ী যে আমি নিজে............
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×