somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেভাবে রচিত হলো কান্নার উটগুলো

০৩ রা এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৪:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার `জুয়ার আসরে কোনো আঙুলই মিথ্যা নয়' কাব্যগ্রন্থটি রচনার প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে এই গদ্যটি রচিত। বলা যায়, বন্ধুদের তাগিদ খেয়ে লিখা এটি।-জু. মো.


কবিতা লেখার পর তার অনুভূতি কী হতে পারে? খুঁজতে বেরুনো গ্যালো নিজের ভেতর। অনুভূতির অভিভাবক কে? কবিতার অভিভাবক কে আমি চিনি। শুধু কবিতার অভিভাবককে নয়, সহজেই চেনা যায় আমার মহাননন্দা নদী অর্থাৎ কুয়াশানদীকে, চেনা যায় যে সূর্যটা প্রতিদিন ডোবে, প্রতিদিন উদয় হয়। এই জগতে বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের খেলায় আমি টিকিট পাইনি এমন একজন মানুষ। শৈশবে এক মাঝি আমাকে একটা চড় মেরেছিলো। কারণ, নদী পারের কড়ি ছিলো না। তখন নদী পার হয়ে স্কুল যেতে হতো, ঘাটের মালিক ছাত্র-ছাত্রীদের পারাপারের পয়সা মওকুপ করেছিলো, ব্যাপারটা ওই মাঝি জানতো না, তাই হয়তো চড়টা মেরেছিলো আমাকে। সেদিন কাউকে নালিশ করিনি। নিরবে ধারণ করেছি একজন মাঝির আঘাতের চিহ্ন। তার কিছুদিন পর আমাদের নদীর ওপর ব্রিজ হয়ে গ্যালো, মাঝিগুলো বেকার হয়ে গেলো, আমরা বড় হয়ে গেলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে লাগলাম। কোন কোন মাঝি ভ্যান রিক্সায় থিতু হলো। কিন্তু থেকে গ্যালো সম্ভব মায়াস্মৃতি। ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে নিসঙ্গ নৌকাগুলো দেখতাম। নৌকার কাছে প্রথম শিখলাম কীভাবে নিসঙ্গ থাকা যায়। কিন্তু নৌকার মতো বেশিদিন নিসঙ্গ থাকতে পারিনি, এই পৃথিবীর সর্বনাশী সময় কিছু নিয়েছে, পাশে থেকেছে আততায়ী মায়া। সেই অর্থে নিসঙ্গ থাকা হয়নি। আমরা একটা আড্ডাখানা তৈরি করেছিলাম, হালের তিন বন্ধু, আনিফ রুবেদ, অনন্ত আজাদ, আর আমি। সেই আড্ডার নাম দিয়েছিলাম ‘কুয়াশার আড্ডা।’ আড্ডার স্লোগান হিসাবে নিয়েছিলাম রবীন্দ্রনাথের গান ‘আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়’ এই গানটি আমরা বুকে ধারণ করেছিলাম। নদীর ধারে রণাদা’র চায়ের দোকান। দোকানের কালিঝুলির দেওয়াল, সেই দেওয়ালকে দেয়ালিকা বানিয়ে ছিলাম আমরা। চর্যাপদ থেকে শুরু করে নব্বই দশক পর্যন্ত বিভিন্ন কবির কবিতা বাছাই করে ওই দেওয়ালিকা তৈরি করেছিলাম। তখন আমরা ওই পঙক্তিগুলো মুখস্ত করতাম এবং আরেকজনকে মুখস্ত করতে প্রভাবিত করতাম। একবার কবি বন্ধু আনিফ রুবেদ বললো, আমাদের প্রথা বিরোধী হতেই হবে, আমরা তখন প্রথা বিরোধী কি জিনিস ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারিনি। তাৎণাত আমরা প্রথা বিরোধী কাজ হিসাবে তিনটি উদ্যোগ হাতে নিয়েছিলাম তার মধ্যে একটি হচ্ছেÑ পথে ঘাটে ছোট বাচ্চাদের নাম রাখা। ওই বাচ্চাদের বাবা মাকে ম্যানেজ করে, সাহিত্যের বিভিন্ন শিশু কিশোর চরিত্রদের যে নাম আছে, ঠিক সেই নামগুলো রাখা। যেমন রবীন্দ্রনাথের গিরিবালা, সুভা, মৃন্ময়ী, হৈমন্তী, তারাপদ ইত্যাদি। এই কাজটি আমরা করতাম। তাতে ওই সব বাচ্চাদের বাবা মা, হেসে খুন হতো, কেউ কেউ রাগ করতো কেউ কেউ আমাদের অপমানও করতো। কিন্তু যেহেতু আমরা প্রথা বিরোধী কাজ করছি সেহেতু আমরা রাগ করতাম না। দ্বিতীয় কাজটি হচ্ছেÑ সে সময় এস এস সি পরীার রেজাল্ট হয়েছে, জেলা প্রশাসক মেধাবী ছাত্রদের সংবর্ধনা দিচ্ছে, আমরা চিন্তা করলাম, উত্তীর্ণদের উৎসাহ দিয়ে কি লাভ, যারা ফেল করেছে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াবো। আমরা, মানে ‘কুশায়ার আড্ডা’, যারা ফেল করেছে তাদের সংবর্ধনা দেব। এই মর্মে আমাদের আনিফ রুবেদ, অনন্ত আজাদ লিস্ট শুরু করে দিলো, কোন গ্রামে কোন ছেলে ফেল করেছে? পরে ফেল করা ছাত্রদের কাছে গিয়ে আমরা বললামÑ আমরা তোমাদের সংবর্ধনা দেব, তোমরা কিভাবে পাস করো সেই মন্ত্র তোমাদের শেখাব আমরা। কিন্তু অবাক হয়েছিলো ওই ফেল করা ছাত্ররা, ওরা বলছিলো, না ভাইয়া আমরা ফেল করা পার্টি, এমনিতেই আমাদের সবাই বকাবকি করেছে এ অবস্থায় আপনারা এসব কি করছেন? কিসের সংবর্ধনা। আমরা ওদের সেদিন আমাদের উদ্দেশ্যে বিধেয় বোঝাতে পারিনি। মাঠে মারা গেল আমাদের প্রথা বিরোধী দ্বিতীয় উদ্যোগ। উদ্দ্যেগগুলো উদ্বেগে রূপান্তরিত হলো। তিন নম্বর উদ্দ্যেগ হলো, আমাদের ওখানকার শ্রমজীবী মানুষের কর্মসত্ত্বাকে কেন্দ্র করে। আমাদের এখানে প্রায় ৪০ শতাংশ লোক ব্ল্যাক করছে, চিনি, পিয়াজ, লবন, সাইকেল, কাপড়, সব কিছু ভারত থেকে ব্লাক করে আনছে। ভালো ইনকাম করছে, বিড়ি ফুঁকছে মোটা জ্যাকেট পরছে, ফেন্সিডিল খাচ্ছে ইত্যাদি। একদিন কয়েকজন ব্লাকি এসে আমাদের যুৎসই অপমান করলো। আরে তোমরা বাপের হোটেলে খাচ্ছ আর কুয়াশার আড্ডা করছে? ছিঃ ছিঃ... আমরা সেদিন প্রত্যয় করলাম আমরা সব ছেড়ে এখন থেকে ব্ল্যাক করবো। ব্ল্যাক করলে তো আর করা যায় না। কি জিনিস ব্ল্যাক করবো আমরা! তখন আমার মাথায় একটা আয়ডিয়া আসলো আমরা কবিতা ব্ল্যাক করবো, উৎপল, রণজিৎ, জয়, শঙ্খ, সুনীল, শক্তি, বিনয় মজুমদার এদের কবিতা ভারত থেকে এনে নিজের নামে ঢাকার বিভিন্ন পত্রিকা পাঠিয়ে দেব এবং সম্মানি অর্থ অর্জন করবো। বুঝতেই পারছেন, এই প্রথা বিরোধি কাজটি কতো ভয়ংকর ছিলো আর তাইতো ভেস্তে গিয়েছিল আমাদের তৃতীয় উদ্দ্যেগও।
দুই.
কুয়াশার আড্ডায় বসে আমরা ভালো বইপত্র পেতাম না। কোন প্রকার লিটল ম্যাগাজিন আমরা চোখে দেখতে পেতাম না। লিটল ম্যাগাজিনের জন্য আমরা এক আম ব্যবসায়ীর শরণাপন্ন হয়েছিলাম। সে ব্যবসার কাজে ঢাকা কারওয়ান বাজারের কাচা বাজার যাবে। আমরা তখনও কেউ কোন দিন ঢাকা আসিনি, ঢাকা না ঢাকা, মনে করতাম ঢাকা মানে আমাদের ফিল্ডের হাট। তো ওই আম ব্যবসায়ীকে বললাম ‘ভাইজান এই নিন তিনশত টাকা’ আমার সময় লিটল ম্যাগ নিয়ে আসবেন, দয়া করে খুঁজে দেখবেন, কোথায় লিটল ম্যাগাজিন পাওয়া যায়, আজিজ মার্কেটে যাবেন, হাতের কাছে যেগুলো পাওয়া যায় নিয়ে আসবেন। বেচারা আম ব্যবসায়ী লিটল ম্যাগাজিন তো দূরের কথা, এক সপ্তাহ পর তার কাছে যখন যায় তখন সে আমাদের জন্য ছয় প্যাকেট ছোট ছোট ম্যাঙ্গো জুস কিনে নিয়ে গিয়েছিলাম। সে লিটল ম্যাগ, কোথাও খুঁজে পায়নি অবশেষে গাবতলীর বাজার থেকে ম্যাঙ্গজুস কিনে নিয়ে গিয়েছিলো। তখন আমরা হাসি কান্নার মাঝামাঝি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছিলাম, আমরা একদিন ঢাকা যাবো এবং লিটলম্যাগ কিনে আনবো। বিধায় কুয়াশার আড্ডায় জাতীয় দৈনিকের সাময়িকীর ওপর ভর করতে হতো। বিশেষ করে ‘সুবর্ণরেখা’ আমাদের নেশার জল হয়েগিয়েছিলো। আর কির্তনতলায় কীর্তন, গীতার বাংলা, কোরআনের বাংলা, বাইবেলে ওল্ট টেস্টমেন্ট আরজআলী মাতুব্বর, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিম, জীবনানন্দ শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, সিকদার আমিনুল হক, ইত্যাদি চর্চা করতাম। উদিচীতে নাটক করতাম। উদিচীর কর্ণধর এনাম স্যার আমাদের বইপত্র পড়তে দিতেন। বই পড়ে আলোচনাও হতো। উদিচীর বারান্দায় একটা কদম ফুলের গাছ ছিলো, সেই গাছের নিচে পুরনো হাতওয়ালা চেয়ারে বসে থাকতেন আমাদের এনাম স্যার, একটা বৃদ্ধ গোলাপের মতো তার চেহারা, বঙ্গবন্ধু আদলে চশমা, পাঞ্জাবী, আর কড়া চেতনার মানুষ ছিলেন তিনি। এনাম স্যারের রুমমেট ছিলো আনোয়ার পাশা। কিভাবে আনোয়ার পাশা রাইফেল রোটি আওয়াত লিখেছিলো সে গল্প এনাম স্যার আমাদের শোনাতেন। একদিনের মজার ঘটনা না বলে আর লোভ সামলাতে পারছি না। কিসের যেন অনুষ্ঠান হবে উদিচীতে, আমরা স্যারের চেয়ারের পেছনে দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় আমাদের এক কর্মী মাইকওয়ালাকে কন্ট্রাক্ট করে ফিরেছে এবং এনাম স্যারের সামনে বর্ণনা করছে মাইকের বৃত্তান্ত। মাইক কবে পাওয়া যাবে, যখন পাওয়া যাবে, কিভাবে পাওয়া যাবে ইত্যাদির বৃতান্ত এনাম স্যার শুনলেন। শুনে ওই কর্মীকে স্যার প্রশ্ন করেছিলেন, ওই মাইকওয়ালাকে কি তুমি সন্দেহ করেছ? সে বললোÑ না স্যার, কেন তাকে সন্দেহ করবো? স্যার েেপ গিয়ে বললেন, আরে তুমি সন্দেহ করবা না? সন্দেহ না করলে দর্শন জাগবে কিভাবে? মাইকওয়ালাকে সন্দেহ করলে কী দর্শন জাগতো জানিনা তবে সেদিনই প্রথম শিখলাম দর্শনের পূর্ব শর্ত সন্দেহ। এর পর আমরা নির্মল দর্শনের আশায় সন্দেহ প্রবন হয়ে উঠেছি, তখন যাকে তাকে সন্দেহ করতাম, সন্দেহের গড্ডালিকায় হেন বস্তু বাদ যেত না। তারপর মুক্তবুদ্ধি চর্চার ব্যাপক আগ্রহ জন্মেছিল আমাদের ভেতর। শিখা গোষ্ঠির আব্দুল কাদির, আবুল হোসেন, কাজী ওদুদের ‘সাতশত বঙ্গ’ আবুল ফজল-এর ‘মানবতন্ত্র’ ইত্যাদি পড়া এবং পরে পুড়ে যাওয়া হতো প্রায় প্রতিদিনই। একবার আমরা চাঁপাই সাধারণ পাঠাগারে আবুল ফজলের জন্মবার্ষিকী পালন করেছিলাম, সেখানে প্রাণের ডাকে ছুটে এসেছিলেন ‘কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহা। এভাবেই ভোরের রোদ সাঁঝে পৌঁছাত, আমাদের পড়ার ঝুলিতে থাকতো আরজ আলী মাতুব্বর, আহমদ শরীফ, ভবানী শাহ, জীবনানন্দের কবিতা, লালনের গান, কথায় কথায় রবীন্দ্রনাথ হয়ে যেতো। অনন্ত তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা পড়ছে। আমি আর আনিফ কুয়াশার আড্ডায় পড়ছি, হালের হাওয়া, কালের হাওয়া, মাটি, মানুষ, সিগারেট, মানুষের পায়ের ছাপ, কবিতার করোটি, ঢ়িণ্ডারা খ্যাপা, মসজিদ, তাড়ি খাওয়া পিন্টু কাকা, ইত্যাদির দিনরাত আলোচনা। সেবার ভাদ্র মাস শেষ, বন্যার পানি নেমে গেছে, কিন্তু পানিতে হেঁটে যাওয়া মানুষের পায়ের ছাপ পলিমাটিতে জমে আছে, জীবন ও সাহিত্য মেলানোর জন্য আমরা সেইসব পায়ের ছাপ গুনতে গিয়েছিলাম। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তেত্রিশ হাজার পায়ের ছাপ গুনেছিলাম দু’জনে। পরিত্যক্ত বিষয়বস্তু ছিলো আমার আর আনিফের আরাধ্য বিষয়। ছুঁড়ে ফেলা সিগারেটের ফিল্ডার নিয়ে দিনের পর দিন পাহারা দিয়েছি, দেখতে চেয়েছি ছুঁড়ে ফেলা সিগারেট-এর খণ্ড নিয়ে কি কি কান্ড ঘটে যাচ্ছে মাটিতে। দেখেছিলাম অবাক এক কান্ড, একটি সিগারেটের পরিত্যক্ত অংশ শুধু মাত্র পরিত্যক্ত নয় তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে আমাদের অচেনা অজানা ইতিহাস। পৃথিবীর জন্মের ইতিহাস, মানব সভ্যতার ইতিহাস, ধর্ম, দর্শন এমনকি মাটির দেওয়াল, ইট পাথর, জল,আগুন ইত্যাদি নিয়ে বুঝে না বুঝে আমাদের তর্ক বিতর্ক চলতো। তর্কের ভেতর কত সব অতাত্ত্বিক কথাবার্তা তৈরি করেছিলাম আমরা। আমরা তখনো ফ্রয়েড পড়িনি, অথচ আনিফ বলেছিলো ‘প্রত্যেক বস্তুর সাথে আরেক বস্তুর আছে কামের সম্পর্ক’ কে জানে প্রথম যৌবনের উর্ধ্ব তীরের ভাষা হয়তো এসব।
চায়ের দোকানে সরেন ডোম কে টিনের গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি, এক চুমুক চায়ের আশায় কিংবা চায়ের অধিকার নিশ্চত করতে সরেন ডোমকে ঘন্টার পর ঘন্টা টিনের গ্লাস হাতে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো, চায়ের পেয়ালা সরেনের জন্য ছিলো অচ্ছুত। আমারা জাত বিচারে সরেন ডোমকে হয়তো চিহ্নিত করতে পারতাম কিন্তু সরেন ডোমের হাতের গ্লাস কে চিহ্নিত করতে পারতামনা। এই ভাবনায় কতো বেলা যে অবেলা হয়েছিল আমাদের কে জানে। আনিফ রুুুবেদ বলেছিল, দেখিস -বস্তুজগত কথা বললে তোরা মানুষরা বিপদে পড়ে যাবি। মানুষের জাত পাত নিয়ে যুগ যুগ ধরে বিতর্ক হয়েছে মীমাংসার আভাসও হয়তো পাওয়া গেছে কিন্তু বস্তুর জাত পাত? এগুলোর মীমাংসা কীভাবে হবে? আনিফের প্রশ্নের উত্তর করতে পারিনি সেদিন, এখনও খুঁজি সে প্রশ্নের উত্তর। উপনেবেশিক আয়ু নিয়ে আমরা আর কতদূর যেতে পারি, পৃথিবী আর কতদূর যেতে পারে। পৃথিবীর অপর নাম কি অস্থির আর অসুস্থ ভূখন্ড? তাইতো অস্থির পৃথিবীর জন জীবনের ভাষাও অস্থির। যদিও ভাষার অভিভাবক একজন কবি। একজন কবির কাছেই প্রকৃত ভাষা জিম্ম থাকে, লালিত পালিত হয়।
আমাদের বাড়ির কাছে শ্মশান ঘাট, ঘাটের ওপর তেঁতুলের বড় গাছ, সেই গাছ কে কেন্দ্র করে কত সব সংস্কার চালু আছে আমাদের গ্রামে । ওই গাছের সাথে আমাদের একটা ভালো সম্পর্ক ছিলো , ওই গাছের নিচে আমাদের লালন চর্চা চলতো। শ্মশান ঘাটের পর মজনু মাদারের ঘাট, ওই ঘাটের পানি ছাড়া কুসংস্কার শুদ্ধ হয়না, ওই ঘাটে আমরা প্রতিদিন øান করতাম, মাঝি দেখলে আমরা মানিক’দা মানিক’দা বলে ডাকতাম। নিশ্চিত ওই মাঝির নাম মানিক নয় জেনেও আমরা মানিক বন্দ্যেপাধ্যায় কে স্মরণ করতাম এভাবেই। কোনো কোনো মাঝি রেগে যেতো, বলতো ‘আমি মানিক নই আমি ভানু মাঝি’ এসব চলতো তখন। সময়কে অসময়ের দিকে চলতে দেখে আমরা অযথায় মানুষকে জি¹েস করতাম ‘ভাই কতো বাজে?’ লোকজন সঠিক সময়টা বলতো কিন্তু কেন জানি আমরা খুশি হতে পারতামনা । সঠিক সময়ের এদিক ওদিক আশা করতাম। শুধু ব্যাতিক্রমী দেখতাম রণা’র দোকানের অসহায় নীলকন্ঠকে, হটাৎ হটাৎ সময় নিয়ে সে বেশ মজা করতো , বেলা একটার সময় সে জিজ্ঞেস করতো ‘দাদা বারোটা বেজেছে কি?’ কখনো কখনো আমরা হাসতাম, হাসি থামলে মনে হতো-সত্যিই তো প্রকৃত সময় বলতে কিছু আছে কি? আমরাও কখনো কখনো নীলকন্ঠকে জি¹েস করতাম ‘কত বাজে নীল’দা?’ সে বলতো- ‘ইশ্বর জানেন, জীবন থেকে পিছিয়ে আছি আমি, আপনাদের ঘড়িতে এগরটা বাজলে আমারতো দশটা বাজা উচিত!’ এই নীলকন্ঠ আঠারো বছর ধরে চায়ের পেয়ালা ধোয়া মোছা করে। জানিনা মহাজাগতিক সময় চেতনায় নীলকন্ঠ কোন দলে পড়বে। কিংবা আমাদের বাজারের তপেস খ্যাপা কোনো হিসেব নিকেষ জানেনা । তো লোকজন তাকে জি¹েস করতো-তপেস Ñ এক টাকা কেজি দরে চাল হলে এক কেজির দাম কতো ? সে বলতো পঁচিশ টাকা। আমরা অবাক হতাম, তাইতো আমাদের প্রশ্নের উত্তর ভুল হলেও তার যাপিত জীবনের উত্তর ছিলো সত্য।
আমাদের নদীর দু’ধারে কুমার পাড়া, কামার পাড়া, মুচি ,মাঝি, দোকানদার, রাজমিস্ত্রি, কৃষক, আর এরা সবাই কেউনা কেউ আমার চাচা, মামা, ভাই, ভগর, এদের সাথে জীবন যাপনে আমি প্রকৃত জীবনের গন্ধ পেতাম। সেই গন্ধ দিয়েই জীবনের সত্যকে আবিস্কার করার চেস্টা করতাম। ডোম , হালদার, ফকির, কাঠুরে ইত্যাদি শ্রমজীবী মানুষের দীর্ঘশ্বাস লেগে থাকতো আমাদের চোখে মুখে। প্রতি মঙ্গলবার নদীর ধারে হাট বসে, হাটের ভেতর গুড় বিক্রি হয় , চিনি বিক্রি হয়, ইদুর মারা বিষ বিক্রি হয়, পিঁপড়া মারা বিষ বিক্রি হয়, খাজা, গজা, মধু বিক্রি হয়। কত কত মানুষকে দেখতাম এমনি এমনি হাটের ভেতর হাঁটছে, গুড়গুলো দাম দর করছে, একটু চেখে দেখছে কিন্তু ও পর্যন্তই। কেনা হচ্ছে না তার গুড়ের খণ্ড, এসব দেখে দেখে বড় হয়েছি। আর মূলত সাব ওয়াল্টার্নদের নিয়ে চিন্তা জগত নির্মিত হয়েছে আমার। সাব ওয়াল্টার্নদের নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি কতো। শৈশব থেকে মানস গঠনের প্রস্তুতি পর্ব ছিলো একেবারে কাশের শেষ বেঞ্চিতে। মামা কিনে দিয়েছিল ঈশপের গল্প, বাবা দিয়েছিল ঠাকুমার ঝুলি এই ছিলো শৈশব। কৈশরে পেয়েছি মাসুদ রানা, শরৎচন্দ্র, ডেল কার্নিগী। কলেজে পেয়ে গেছি জীবনানন্দ, জসীম উদদীন, রবীন্দ্রনাথ, তারাশঙ্কর, বনফুল, ম্যাক্সিম গোর্কি।
পরবর্তীতে ভারতচন্দ্র, মুকুন্দরাম, বড়– চন্ডিদাসের শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন কাব্য, বিভিন্ন, মঙ্গলকাব্য। ময়মনসিঙ্গের গীতিকা, রামায়ন, মহাভাতর, কালিদাস, সাফোকিস, শেক্সপিয়র রাসেল, মধুসূদনের মেঘনাদ বধকাব্য, তারপর তিরিশ দশকের জীবনানন্দ দাশ, সমর সেন, অমিয় চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব বসু। চলিশের সুকান্ত ভট্টাচার্য, পঞ্চাশের শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, উৎপল কুমার বসু, বিনয় মজুমদার এছাড়া রণজিৎ দাশ, শক্তি চট্টপাধ্যায়, শঙ্কঘোস, মৃদুল দাশগুপ্ত, শহীদ কাদরী, আব্দুল মান্নান সৈয়দ, সিকদার আমিনুল হক, রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, আসাদ মান্নান, নাসির আহমেদ, শোয়ের শাদাব, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, মাসুদ খান, রাজা হাসান, শামীম রেজা, পাবলো শাহী, মজনু শাহ, মোস্তাক আহমাদ দীন, মুজিব মেহদী, রহমান হেনরী, আলফ্রেড খোকন এদের কবিতা আমাকে আকৃষ্ট করেছে, মুগ্ধ করেছে, কবি হবার স্বপ্ন দেখিয়েছে। এছাড়া বোদলেয়ার, এলিয়ট, রিলকে, মায়কোভস্কি, কাহলিল জিবরান, পবলো নেরুদা, নিকেরার পারা, এম এ সেজায়ার, মার্কেজ, রাবার্ট ফ্রস্ট ইত্যাদি লেখকের লেখা দিয়ে বিশ্ব সাহিত্য ভ্রমণ করেছি।
জানি না জগতের এসব কবিতার জীব জন্তু আমার ভেতর বাস করছে কিনা। ভালোবেসেছিলাম জল, ভালোবেসেছিলাম কবিতা, আর ভালোবেসেছিলাম মানুষের দীর্ঘশ্বাস। লাটিম, বেড়াল, মৃত্যু এই তিনকে ভলোবাসবো বলে প্রতিদিনই আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠি। কিন্তু কালের বদ হাওয়া, রাষ্ট্রের নির্মম প্রহসনে থমকে দাঁড়াই, অবিশ্বাস আর অভালোবাসার সাথে নিরুপায় গা ভাসিয়ে দেই। পৃথিবীর উত্তাল হাওয়ায় গা ভাসিয়ে কবিতা কে খুঁজেছি। আর কানে বেজেছে, ‘কবিতা তো মক্তবের মেয়ে চুল খোলা আয়শা আক্তার। কবিতাতো সেই বার্তাÑ ‘কবিতা-কবিতা কইরা যে মেয়েকে খুঁজছে সবাই ছোট্টবেলার নামতা খাতায় লেখা দূরের স্টেশনে নাইমা গেছে সে। কবিতাতো জলÑ অবশেষে কবিতা কে খুঁজে পাওয়া যায়নি, কবিতায় আমাকে খুঁজেছে, আমি কবিতাকে খুঁজেছি, মাঝখানে কেউ কাউকে খুঁজে পাইনি।
তিন.
আমার কবি বন্ধু মাহমুদ শাওনকে কী করে বোঝাবো যে, ওই কবিতাগুলোর লেখার অনুভূতি আমি লিখতে পারবো না। কবিতাগুলোই এক একটা চূড়ান্ত অনুভূতি। তবুও শাওন নাছোড়বান্দা, একজন ল্যাংড়া লোককে দৌড় প্রতিযোগিতায় নামাবেই, এ যেন তার এক ধরনের জিদ, শাওন নিশ্চয় জানে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আমি কত দূর আর যেতে পারি। মাত্র একুশ দিনে লেখা হয়ে গেছে ‘জুয়ার আসরে কোনো আঙুলই মিথ্যা নয়।’ যে কোন জুয়ার আসর থেকে সত্য আর লোভের জন্ম হয়। অবশ্য সত্যর ধরন আর লোভের ধরন একই, অর্থাৎ সত্য আশ্রিত লোভের জন্ম হয় জুয়ার আসরে। কিংবা পৃথিবীর তাবৎ বস্তুজগত, ভাবজগত, প্রাণজগত সব কিছুই জুয়ার সীমারেখাই বিদ্যামান। ছোটবেলায় মামার সাথে মাছের বাজারে যেতাম, কাঁচা মাছের গন্ধটা আমাকে মাতাল করতো। এক মাছওয়ালা মামাকে দেখলেই হাঁক পাড়তো মাছ কেনার জন্য, মামাও মাছের লোভে ছুটে যেতো। ব্যাপারটা এই যে, মাছওয়ালা ছুটে যাচ্ছে টাকার গন্ধে, মামা ছুটছেন মাছের গন্ধে। দু’জনেই একটা অভিন্ন লোভের জন্ম দিয়েছে। এই দৃশ্যাবলী আমার কাছে জুয়ার শামিল মনে হয়েছিল। যাক সে সব কথা, পৃথিবীর সমস্ত আয়োজনের পেছনে, লোভ আর জুয়া খেলা করে। এক হাতের সাথে আরেক হাতের, এক দেহের সাথে আরেক দেহের জুয়ার সম্পর্কই বিদ্যমান বোধ করি। এই পাণ্ডুলিপি লেখার বহুদিন আগে পদ্মা নদীর ভাঙন দেখেছিলাম, আমার খালাবাড়ি জমি জিরাত সব ভেসে গেলো পদ্মার ঘোলা জলে, তার বহুদিন বাদে কানসাটের রক্তয়ী সংগ্রাম আমাকে বিধ্বস্ত করে। যে দিকে তাকাই সেদিকেই রক্ত। স্বদেশের অনাচে-কানাচে মানুষ মরার ধুম পড়ে গেছে। একটা রক্তয়ী ঘটনা শুকোতে না শুকোতে আরেকটা রক্তয়ী দুর্ঘটনা এসে পড়ে। সত্যি কথা বলতে কী পৃথিবীব্যাপী গণতন্ত্র পতনের শব্দ শুনতে পাই আমি। বিপর্যয়ের কালে পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছি আমরা, হয়তো সব কালেই এমনটা ছিলো কিন্তু সমকালের দিকে আর তাকানো যাচ্ছে না। যুদ্ধ বিগ্রহ আর আগ্রাসনের ইতিহাস যদি মানুষের ইতিহাস হয় তবে এই আধুনিক সভ্যতার যথাথর্তা প্রশ্নের মুখে পড়ে। পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে আরেক প্রান্তে এসব যুগ যন্ত্রণা আমাকে তাড়িয়ে ফিরেছে। কবিতার দেশে বারুদ পোড়ানো দিনরাত সহজে ভোলা যায় না। চেতনায় শুধু একটি কথায় শব্দ করে ওঠে আমরা ডুবে যাচ্ছি। আমাদের সবুজ জাহাজ ডুবে যাচ্ছে। এই ডুবে যাবার পূর্বণে আমাদের কবিতার ভাষা কী হবে সহজেই অনুমান করা যায়। উন্মাদ সময়ের মুখে আমাদের উম্মাদ ভাষা বি¯তৃত লাভ করছে তবুও কালান্তরের দরজা খুলছে না। এটা বড় দুর্ভাগ্যের বটে।
দেশের রাষ্ট্রনীতির প্রহসন দেখে কেঁদেছি। ব্যাক্তিগত জীবন জিরাত হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলো অস্তিত্বে সংকটে, ঘটনা ও দুর্ঘটনার মুখে প্রকৃত ভাষা দেওয়াই বোধহয় একজন শিল্পীর কাজ, আমি তা করতে পারিনি, উল্টো এক ধরনের ব্যথা আর সুর ধারণ করেছি নিজের ভেতর। আমার বুকেও সমুদ্র নড়ে চড়ে ওঠে, আমার প্রাণের ভেতর প্রতিনিয়ত উদ্ভব হয় উদ্ভট ঝড়ের পঙক্তি। আর একটি পঙক্তি নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখি কীভাবে ব্যক্তিগত অনুভূতিকে বিশ্ব অনুভূতির সাথে মেলানো যায়। কোন কোন চিন্তা চূড়ান্ত হবার পেছনে কিছু শর্ত থাকে, সেইসব শর্ত মিটে গেলে চিন্তা চূড়ান্ত হয়। সেদিন ঢাকা থেকে ফিরেছি চাঁপাইতে, শীত আর শেয়ালের বেশ দপদপানি চলছে ওখানে, বিষণœ কুয়াশায় ডুবে যাচ্ছে কুয়াশা নদী। পূর্ব শর্ত মিলে গেল, চিন্তাটা চূড়ান্ত। এখন সন্ধ্যা লাগতে বাকি, প্রত্যাশিত সন্ধ্যা লেগেছিল সেদিন। শৈশবের লাল সাইকেলটাও ছিলো আমার মতো, চাকায় হাওয়া নেই, দেহে বল নেই, চেইন ছিড়ে আছে। আমি সাইকেলটার সাহায্য চাইলাম গন্তেব্যের দিকে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সাইকেলটাও যেন উল্টো আমার সাহায্য চাইছে। শৈশব থেকে লাল সাইকেলটা নি:সঙ্গ আছে, এতবছর পর আমাকে পেয়ে যেন ডুকরে কাঁদলো সে। আমি তখন প্রচণ্ড বিপদে ছিলাম। দেখলাম জগতের সবাই যেন বিপদে আছে, এমন কী সাইকেলটাও। আমার মায়ের মুখের দিকে চেয়ে দেখি তিনিও বিপদে আছেন, বাবা বিপদে আছেন, আম গাছ বিপদে আছে, রাস্তাঘাট বিপদে আছে, এমনকি ম্যাচের কাঠি, ভাতের থাল, পায়ের স্যান্ডেল পর্যন্ত বিপদে আছে । সব কিছু বিপদ বিপদ লাগছে। এত বিপদের ভেতর তখন আমি বিপন্ন জীবনের দিকে পা বাড়ালাম। কাউকে কিছু না বলে সব কথা বললাম ওই লাল সাইকেলটাকে। সাইকেলটা আমার প্রস্তাবে চিৎকার চেচামেচি করলো, না না করলো, আমি যেহেতু মানুষ, সাইকেল যেহেতু বস্তু সেহেতু আমি জিতে গেলাম। জগতে বস্তুর ভাষা, বস্তুর আবেদন আকাক্সা কেউ বোঝে না। জোর করে মানুষ নিজের পে জিতে যায়। সেদিন আমি জিতে গেলাম বটে। আমাদের এলাকায় ভাতারমারি বিল নামে একটা বিল আছে, সেই বিল শুষ্ক মৌসুমে বিরাণ মাঠ, আশেপাশে বিশ কিলোমিটার কোন গ্রাম বা জনপদের ছায়া চিহ্ন নেই। সেই বিলের ভেতর একটা পথ আছে, পথের ওপর সাঁকো আছে, যেতে গেলে একটা ঘাট পার হতে হবে। সেদিন যখন লাল সাইকেল নিয়ে বেরিয়েছি তখন সন্ধ্যা সাত টা। কেউ জানে না আমি কোথায় যাচ্ছি। আমিও জানি না, জানে শুধু লাল সাইকেল, আর মৃত্যু। যেতে যেতে কুসুমপুর বা রামজীবনপুর শিমুলতলা। যখন আমি শিমুলতলী ঘাটে পৌঁছি, তখন রাত নয়টা। ঘাটের পাড় ছিলো বিষম উঁচু। নদী নিচে নামতে নামতে এতটাই নেমে গেছে যে, দেখে মনে হয় কোন পাহাড়ের পাদদেশ। তো ঘাটের মাঝিকে বললাম, ভাই পার হওয়া যাবে? সে বললো, দেখ ভাই রাত হয়ে গেছে, পারাপার খুব কঠিন ব্যাপার। অবশ্য পাঁচটা সাইকেল হলে তোমাকে পার করা যেতে পারে। তুমি নিচে নৌকাতে গিয়ে বসো, আর অপো কর বাকি চারটা সাইকেলের। চারটা সাইকেলের আশায় আমি তাই করলাম। ঘাটে নৌকাগুলো বাধা ছিলো সারি সারি। সেই নৌকাগুলোর মধ্যে একটা নৌকার ওপর উঠলাম, সাইকেলকে চাঁদমুখী করে চিৎ করে শুইয়ে দিলাম। আমি আসলে ভাতার মারি বিলে মরতেই চেয়েছিলাম কিন্তু জীবনের প্রতি অদ্ভূত মায়া আমার ঘাড় ধরে টানছিলো, যেহেতু চিন্তা চূড়ান্ত সেহতু আর কোন লাগামের মায়া তখন ছিলো না। বিধায় নৌকায় বসে বসে ঘণ্টা খানেক চলে গেছে, মৃত্যু চিন্তায় বিভোর আমি বুঝতে পারিনি সময় যাচ্ছে অন্যপথে। পাশের নৌকাটি ছেড়ে দিলো। নৌকার ওপর আমি ছাড়াও পাঁচটা সাইকেল ছিলো। আমি পারের আশায় মাঝিকে ডাকলাম, বললাম মাঝি ভাই আমিতো অনেকণ বসে আছি, আমার পারের কী হবে? মাঝি বলেছিল, আরে আপনি তো ভুল নৌকায় বসে আছেন। ওই নৌকাটা কখনো ছাড়বে না, ঘাটে বহুদিন ওই নৌকাটার গলা বাধা আছে। ভুল নৌকায় বসে থাকলে কি আর পার হওয়া যাবে? আমি মনে মনে ভাবলাম আরে শালা, ভুল নৌকাগুলো পানিতে ভাসে কেন? আমার আশ্বান্বিত মৃত্যু ঘুরে গেলো, হেসে উঠলো আমার শৈশবের লাল সাইকেলটা, মোবাইলের আলোতে তখনই লিখতে শুরু করেছি ভুলের ইতিহাস, ভুল নৌকার জন্মকথা, রাতের শৎকার। তখন দেখলাম জুয়ার নেশায় নৌকার চারপাশের জল খল খল করে উঠেছে, রক্তকে কালি করতে আমার দেহ তৎপর হয়ে উঠেছে, শুরু হয়ে গেল জুয়ার আসরে সমস্ত আঙুলের ইতিহাস লেখার বাসনা। আর কাঁচা চাঁদের পাণ্ডুলিপিতে তখন রোপন হতে শুরু করেছে আমার একুশ দিনের একদিন...
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১:৫৮
১৭টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×