somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কমিউনিস্ট পার্টি, শ্রমিক শ্রেণী ও সাম্প্রতিক শ্রমিক আন্দোলন

০২ রা এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্রমিক শ্রেণী কেবলমাত্র নিজের মুক্তির জন্য লড়ে না। পুঁজিবাদী দাসত্বের শৃংখল থেকে শ্রমিক শ্রেণী নিজেকে মুক্ত করার সাথে সাথে মুক্ত করে সমগ্র জাতিকে। সাম্যবাদী সমাজের লক্ষ্যে সমাজতন্ত্র কায়েমের জন্য দেশে দেশে কমিউনিস্ট পার্টিগুলো তাই শ্রমিক শ্রেণী ও মেহনতি মানুষকে সচেতন ও জাগ্রত করার কাজটিকে প্রধান সাংগঠনিক কর্তব্য হিসেবে বিবেচনা করে। সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি গঠনতন্ত্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুচ্ছেদের শুরুতে ১নং ধারার আত্ম পরিচয় দিয়ে দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছে 'বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি' বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণী ও শ্রমজীবী জনগণের বিপ্লবী রাজনৈতিক দল।’ পার্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ২য় ধারায় উল্লেখ্য করা হয়েছে, ‘সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই এই পার্টির লক্ষ্য।’ শোষণমুক্ত যে কাঙ্খিত মানবিক সমাজের জন্য কমিউনিস্টরা লড়ছে তার নেতৃত্ব সম্পর্কে যাতে কোনো সংশয় না থাকে, মূল দলিলে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদী সমাজের নেতৃত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সমাজতন্ত্রে রাষ্ট্র ক্ষমতায় জনগণের সমর্থনপুষ্ঠ শ্রমিক শ্রেণী ও মেহনতি মানুষের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। ... শ্রমিক শ্রেণী ও জনগণের সক্রিয় সমর্থন ও আস্থা ছাড়া সমাজতন্ত্র অগ্রসর হতে পারে না।’ সুতরাং আমরা যে যেভাবে বলি না কেন, শ্রমিক শ্রেণী এবং মেহনতি মানুষকে সচেতন এবং
সংগঠিত করা ছাড়া কমিউনিস্ট পার্টি সমাজ বা রাষ্ট্রের বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে পথ নির্দেশ বা উদ্যোগ নিতে পারে কিন্তু শেষ করতে
পারে না। কখনো কখনো চমকও সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু শ্রেণীগত শক্তি স্বল্পতার কারণে আন্দোলনের ফসলটি তুলে দিতে হয় অন্যের
ঘরে।

বাংলাদেশে অবশ্য কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ আমল থেকে শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল। ষাটের দশকে এ দেশে বিশাল শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। কিন্তু চীন-সোভিয়েত দ্বন্দ্বে কমিউনিস্টদের মধ্যে বিভক্তির কারণে বিভক্তি চলে আসে শ্রমিক সংগঠনেও। শ্রমিক সংগঠনের প্রাধান্য চলে যায় চীনপন্থীদের হাতে। পার্টির যেসব কর্মী ট্রেড ইউনিয়নে ছিল তাদের কাজকে সমন্বিত করতে নানাভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে। ছাত্র আন্দোলন বা মধ্যবিত্ত থেকে পেশাদার বিপ্লবী হিসেবে যাতে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে যুক্ত হয় সে ব্যাপারেও উদ্যোগ নেয়া হয়। অবশ্য রেল, বন্দর এবং চা বাগানে কমিউনিস্ট পার্টির কমরেডদের উল্লেখযোগ্য প্রভাব ছিল। পার্টির নির্দেশে পাট ও সূতাকলসহ কিছু কিছু কারখানা, পরিবহন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের মধ্যে ‘শ্রমিক যোগাযোগ কেন্দ্র’ নামে একটি অস্থায়ী সংগঠনের ব্যাপারেঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মীরা ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম অগ্রসর করে নেন। দেশ স্বাধীনের পরে সম্মেলনের মাধ্যমে যোগযোগ কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে। শুরু থেকেই টিইউসি নীতি হিসাবে গ্রহণ করেছিল ‘শিল্প বাঁচাও, শ্রমিক বাঁচাও’। দেশ স্বাধীনের পরে শিল্প, কারখানায় যখন লুটপাট ও নৈরাজ্য চলছিল তখন দেশপ্রেমিক সংগঠন ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের পক্ষ থেকে শ্রমিকের স্বার্থের পাশাপাশি শিল্প স্বার্থকেও সমান গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছিল। দেশের কিছু শিল্প কারখানা ছাড়াও হোটেল, বেকারি, বালি উত্তোলন, ইনজিনিয়ারিং এন্ড ব্ল্যাক স্মিথ, পেট্রোল পাম্প, ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী, রিকশা, ঠেলাগাড়ি, হকার, সিনেমা ইত্যাদি ছোটখাট অসংগঠিত সেক্টরের শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নে সংগঠিত করার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে টিইউসি। পাট, বস্ত্র, ইস্পাত, রেয়ন, পেপার, ট্যানারি, কার্পেট, চিনি, তেল, সড়ক পরিবহন, ইত্যাদি সেক্টরেও কাজ অগ্রসর হতে থাকে। টিইউসিতে কর্মরত কমিউনিস্ট কর্মীদের নিরলস ত্যাগ এবং শ্রমের বিনিময়ে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র একটি প্রভাবশালী ও দেশব্যাপী মর্যাদাশীল সংগঠনের পরিণত হয়। বড় বড় শিল্প-কারখানায় এবং শিল্পাঞ্চলে পার্টির একটি সাংগঠনিক ভিতও পড়ে উঠে। আশির দশকে শ্রমিক-কর্মচারীদের নেতৃত্বে দেশে যে যুগান্তকারী শ্রমিক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তার নেতৃত্বে ছিল টিইউসি এবং চালিকা শক্তি ছিল শ্রেণীচ্যুত কমিউনিস্ট কর্মীরা। কিন্তু ’৯০-এর দশক থেকে মুক্তবাজার অর্থনীতি ও সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের কারণে দেশের পাট, বস্ত্র, ইস্পাত, রেয়ন, চিনিসহ বড় বড় শিল্প কারখানাগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যায়। যেগুলো বন্ধ হয়নি সেগুলোও বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়ায় ধুকে ধুকে
মরছে। শ্রমিক-কর্মচারীরা হয়তো বেকার, নয়তো বিনা মজুরিতে উপোষে দিন কাটাচ্ছে। এ সব কারণে কারখানা ও শিল্পাঞ্চলে কমিউনিস্ট
পার্টির প্রভাব প্রতিপত্তি দারুনভাবে হ্রাস পায়। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, উপরের কথাগুলো সত্য হওয়া সত্ত্বেও দেশে এ সময়ে বেশ কিছু শিল্প সেক্টর গড়ে উঠেছে। এ সময়ে গড়ে উঠেছে ছোট বড় কয়েক হাজার গার্মেন্ট কারখানা। গার্মেন্ট শিল্পগুলো দেশের জন্য ৭৬% বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে এবং এ শিল্পে ২৪-২৫ লাখ শ্রমিক কাজ করে। গড়ে উঠেছে সিমেন্ট, সিরামিক, নির্মাণ খাতের মতো বিশাল
বিশাল শিল্প খাত। যেখানে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে। এছাড়া অন্যান্য কিছু শিল্প কারখানাও গড়ে উঠেছে। সংগঠিত পুরাতন
জায়গাগুলো ধ্বংস হয়েছে ঠিকই কিন্তু অন্যদিকে নতুন নতুন জায়গায় সংগঠন করার মতো সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে সরকারি,
বেসরকারি মিলে প্রায় ১ কোটির মতো শ্রমিক কর্মচারী রয়েছে, যার মধ্যে শিল্প শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। এক তথ্যে জানা যায়, দেশের
২৬টি জাতীয় ফেডারেশনে সংগঠিত শ্রমিক কর্মচারীর সংখ্যা ৭ লাখ মাত্র। তার মানে লাখ লাখ শ্রমিক কর্মচারী অসংগঠিত এবং নেতৃত্বের
দিক-নির্দেশনা থেকে বঞ্চিত। আমাদের দেশে প্রতিবছর ১২ লাখ মানুষ মজুরের খাতায় নাম লেখায়। দেশে বর্তমানে ক্ষেতমজুরের সংখ্যাই ৫ কোটি ৮১ লাখ এবং কৃষি শ্রমিক রয়েছে ৩ কোটি ৬৭ লাখ। এদেরকে সৃষ্টির সেরা জীব বলা হলেও এরা নিকৃষ্টের জীবন-যাপন করছে। এরাই পূর্ণিমার চাঁদকে ঝলসানো রুটি মনে করে। এরা বাঁচতে চায় এবং এদের বাঁচার অধিকার আছে। কমিউনিস্টদের কাজ হলো এদের বাঁচতে শেখানো, বাঁচার জন্য সংগঠিত করা এবং বাঁচার জন্য অধিকার অর্জন করা।

সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়ন, লাগামহীন মুক্ত বাজার এবং লুটপাটের অর্থনীতির অনুসঙ্গ হলো শিল্পে হাজার শ্রমিকের বেকারী এবং কৃষিতে নিঃস্বকরণ
প্রক্রিয়া। বুর্জোয়া রাজনৈতিক ব্যবস্থা চালু রেখে, সরকার অদল-বদল করে সর্বগ্রাসী সঙ্কট থেকে জাতিকে মুক্ত করার কোনো শর্টকাট রাস্তা
নেই। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শোষিত, বঞ্চিত, শ্রমিক শ্রেণী ও মেহনতি মানুষকে রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে বসানো ছাড়া মুক্তির কোনো দ্বিতীয়
বিকল্প নেই। তাই কমিউনিস্ট পার্টি সমাজতন্ত্রের পথে বাধা বিপত্তি দূর করে সমাজতন্ত্র বিনির্মাণের পূর্বশর্ত সৃষ্টি করার কাজকে অর্থাৎ বিপ্লবী
গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের কাজকে রণকৌশল হিসেবে ঘোষণা করেছে। বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়া নরম মাখনে ছুরি বসানোর মতো
সহজ কাজ নয়। সাম্রাজ্যবাদ, সাম্রাজ্যবাদের দেশীয় দালালেরা, কায়েমী স্বার্থবাদীরা বিনা যুদ্ধে ছেড়ে দেবে না সূচাগ্র মেদিণী। তারা মরণ
কামড় দেবেই। সহজ কথা, বিপ্লবের পথে শক্তি সমাবেশ করেই এই দুষ্ট চক্রকে পরাভূত করতে হবে। কারা সে শক্তি? কমিউনিস্ট পার্টির
দলিলে বলা হয়েছে ‘বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তনে দেশের শ্রমিক শ্রেণী সুসঙ্গত ও বিপ্লবী ভূমিকা পালন করবে।’ গ্রামীণ ক্ষেতমজুরদের বলা
হয়েছে গ্রামীণ সর্বহারা। এরা শ্রমিক শ্রেণীর সহোদরা-এর সাথে মেহনতি কৃষকদের বলা হয়েছে বিপ্লবী প্রক্রিয়ার বলিষ্ঠ উপাদান। তাই
দলিলের সাংগঠনিক কর্তব্যে বিপ্লবের শক্তি সমাবেশের পথ নির্দেশ করে বলা হয়েছেÑ ‘শ্রমিক শ্রেণী, ক্ষেতমজুর ও মেহনতি মানুষদের মধ্যে
ঐক্য, সংগঠন ও বিপ্লবী জাগরণ সৃষ্টি করে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তনে এদেরকে চালিকাশক্তিতে পরিণত করতে হবে।’ ১৫ কোটি জনতার
মধ্যে শ্রমিক, ক্ষেতমজুর, মেহনতি কৃষক এই ত্রিশক্তিই বর্তমানে ১১ কোটির মতো। এছাড়া অন্যান্য জঙ্গি উপাদান ও সহযোগী শক্তিতো
রয়েছেই। আমাদের দেশে শ্রমিক আন্দোলন ও ক্ষেতমজুর আন্দোলনের বিপ্লবী ঐতিহ্য রয়েছে। ক্ষেতমজুর ও কৃষি শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন
অধিকার প্রদানের জন্য সাংগঠনিকভাবে লড়াই, সংগ্রাম হচ্ছে। এখন যারা ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের সাথে যুক্ত তাদের কর্তব্য, করণীয়
সম্পর্কেই বর্তমানে আলোচনা জরুরি হয়ে পড়েছে।
কমিউনিস্ট পার্টি শ্রমিকদের মধ্যে কোনো দলীয় রাজনীতি করে না। কমিউনিস্ট পার্টি রাজনৈতিক অঙ্গ সংগঠনেও বিশ্বাসী নয়। পার্টি শ্রমিক
সংগঠনের ব্যানারে রাজনৈতিক সভা সমাবেশ সফল করার জন্যও কাজ করে না। কমিউনিস্ট পার্টির ঘোষণাতেই বলা হচ্ছে, এই পার্টি শ্রমিক
শ্রেণী ও মেহনতি মানুষদের বিপ্লবী রাজনৈতিক দল। বলা হচ্ছে, শ্রমিক শ্রেণী মেহনতি মানুষের নেতৃত্বে সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদী সমাজ
কায়েমের মাধ্যমেই সমগ্র জাতি মুক্ত হতে পারে। তাই কমিউনিস্ট কর্মীরা আদর্শকে বুকে ধারণ করে রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য যাতে
ব্রতী হয়, পার্টি থেকে সে নির্দেশনাই কেবল দেওয়া হয়। সুতরাং এখানে ভুল বোঝার কোনো অবকাশ নেই। সমাজের অন্যান্য পেশায় কর্মরতরা যেমন দেশের নাগরিক শ্রমিক কর্মচারীও এ দেশের নাগরিক। প্রত্যেকেরই রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস এবং কাজ করার যেমন অধিকার আছে আবার পেশাগতভাবে সংগঠিত হবার অধিকারও রয়েছে। এটা মৌলিক অধিকার। কোনো শিল্পে এক হাজার শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বিভিন্ন দলের লোক যেমন থাকতে পারে, তেমনি কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীরাও থাকতে পারে। পার্থক্য হলো এই যে, অন্যান্য দলের কর্মী-সমর্থকেরা শ্রমিকদের উপর বর্তমান শোষণের বিরুদ্ধে কাজ করে আর কমিউনিস্টরা বর্তমান শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তোলার পাশাপাশি পরিপূর্ণ শোষণ মুক্তির জন্যও শ্রমিকদের সচেতন ও সংগঠিত করে। কমিউনিস্টরা শ্রমিক কর্মচারীদের মজুরি বৃদ্ধির সংগ্রাম কেবল গড়ে তোলে না, মজুরি দাসত্ব ঘোচানোর জন্যও লড়াই করে। পার্থক্য হলো অন্যদের মধ্যে কেউ কেউ দালালী করলেও কমিউনিস্টরা শ্রমিক স্বার্থে সদা বিশ্বস্ত থাকে। বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায় জরুরি অবস্থায় দেশব্যাপী ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা সত্ত্বেও জীবন যেমন যে কোনো পরিস্থিতিতে থেমে থাকে না, জীবনের জন্য সংগ্রামও থেমে থাকে না। জরুরি অবস্থায় ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন নিষিদ্ধ করা হলেও মালিক সমিতিগুলো কিন্তু তাদের কার্যক্রম পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে। ট্রেড ইউনিয়ন সম্পর্কে শ্রম আইনের সংজ্ঞায় বলা হচ্ছে, শ্রমিকে-শ্রমিকে, মালিকে-মালিকে এবং মালিকে-শ্রমিকে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে সম্পর্ক যুক্ত কার্যক্রমই হলো ট্রেড ইউনিয়ন। বোঝা যায়, পানি যেমন নিচের দিকেই গড়ায়, আইন তেমনি গরিবের জন্যই প্রযোজ্য। শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে এ সময়ে শ্রমিক নির্যাতন, শ্রমিক ছাঁটাই বেড়েছে। কোথাও কোথাও শ্রম ঘণ্টা বাড়ানো যেমন হয়েছে, কোথাও বা শ্রমের মজুরি কমানো হয়েছে। তাই জীবন যেখানে বন্দি, মৃত্যু যখন দুয়ারে করাঘাত করে, শ্রমিকের ক্ষুধা ও অবোধ শিশু খালি থালা হাতে যখন কান্না করে, তখন জরুরি অবস্থার বিধি-
নিষেধ শ্রমিককে বিরত রাখতে পারে না। এ সময়ে গার্মেন্ট, পাট, কয়লা শ্রমিকেরা অন্যোপায় হয়ে আন্দোলনে নেমেছে। লাঠি, গুলি, টিয়ার
গ্যাসকে উপেক্ষা করে জেল-জুলুমের ভয়কে তুচ্ছ করে সাহসী সংগ্রাম গড়ে তুলেছে। কর্তৃপক্ষও লড়াকু শ্রমিকদের সাথে ক্ষেত্র বিশেষে সমাঝোতা করেছে। শোনা যায়, সব আন্দোলনই সুস্থ ছিল না। ভাঙচুর, রাস্তা অবরোধ ইত্যাদি নৈরাজ্যজনক আন্দোলনের পেছনে মহল বিশেষের উসকানি ও ট্রেড ইউনিয়ন তৎপরতা বন্ধ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রও ছিল। শোনা যায়, বেশি বেতনের পুরাতন শ্রমিকদের বিদায় করে দিয়ে কম বেতনের নতুন শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর জন্য কোনো কোনো মালিকেরও হটকারী আন্দোলনের উসকানি ছিল। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিশ্বব্যাপী নিয়ন্ত্রিত ট্রেড ইউনিয়ন চালু করার জন্য স¤প্রতি ইউরোপসহ সকলকে প্রেসক্রিপশন দিচ্ছে। বিদেশী মহাজনের ছবক অনুযায়ী আমাদের দেশেও নিয়ন্ত্রিত ট্রেড ইউনিয়ন চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিয়ন্ত্রিত মানে তোমাকে এক হাতে অধিকার দিলাম, অন্য হাতে কেড়ে নিলাম। শ্রমিক আন্দোলনের মৌলিক অধিকার বলতে বোঝায়-

১. স্বাধীনভাবে সংগঠন করার অধিকার
২. স্বাধীনভাবে নেতৃত্ব নির্বাচনের অধিকার
৩. আলাপ-আলোচনাসহ সম্ভাব্য অন্যান্য পথে-সমস্যা-সমাধানে ব্যর্থ হলে ধর্মঘট করার অধিকার।

পূর্বের আইনে ছিল স্বাধীনভাবে ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠিত করার অপরাধে কাউকে চাকুরিচ্যুত করা যাবে না। (চলবে)

লেখক : মৃনাল চৌধুরী
সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পরিবহন শ্রমিক নেতা।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×