somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সত্যিকারের স্বাধীন হবো

২৬ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রচন্ড একটা হৈ চৈ শুনে আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো। বাসের সামনের দিকে থাকায় ঘটনাটা বুঝতে বেশি দেরি লাগলো না। মাথাটা ঘুরিয়ে গেটের দিকে তাকালাম। চলন্ত বাস। কন্টাকটার ছেলেটার সাথে কিছুটা বাক-বিতন্ডা চলছে প্যাসেঞ্জার আরেক ছেলের। কন্টাকটারের সাথে তুলনা করলে অপর ছেলেটা বয়সে একটু বড়ই হবে। হাত উচিয়ে চড় লাগানোর ভঙ্গি করলো কয়েকবারই। ভাবখানা এমন যেন কন্টাকটার ছেলেটা কোন অমার্জনীয় অপরাধ করে ফেলেছে। যার ফলে গোবেচারার মত গালি গালাজ হজম করছে। কিন্তু আসল ঘটনা উল্টো।

আপনারা নিশ্চই জানেন ঢাকা শহরে বেশ কিছু বাস আছে যেগুলোতে টিকেট কেটে উঠতে হয়। এবং স্টপেজ ছাড়া যেখানে সেখানে দাঁড়ায় না। তেমনই একটা বাসের কথা বলছি। ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকা আমাদের বাসে হুট করে উঠে পড়লো চ্যাংড়া টাইপের দুটো ছেলে। গলায়, কানে, হাতে অলংকারের (!) কমতি নেই। বাসে উঠতে গিয়ে কন্টাকটারের বাধার সম্মুখীন হয়েছে বলে ওরা চড়াও হয়েছে। শেষমেষ জোর করে ওঠার চেষ্টা করলে ড্রাইভারের অনুমতিতে কন্টাকটার উঠতে দিলো। ঘটনার সূত্রপাত এখান থেকেই। বাসে উঠেও ড্রইভারকে চোখ রাঙ্গানো, আর কন্টাকটারকে যাচ্ছেতাই বলে গালাগালি...।

অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে বাসে সীট পেয়ে যেন সোনার হরিণ পেয়েছি। আরাম করে বসে বিভিন্ন ভাবনায় ডুবে ছিলাম। কিন্তু ছেলেগুলো আর আরাম করতে দিলো না। আকষ্মিক এই ঘটনা সবার মনোযোগকেই বিচ্ছিন্ন করে দিলো। ঘটনাটা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু ওরা হতে দিলো না....

"ওই মামু! কলেজের গেটে থামাইবা কইলাম...."
ওদের নির্দেশে কলেজের ঠিক সামনেই বাস থামালো ড্রইভার। পরের ঘটনায় অবাক হয়ে গেলাম! কন্টাকটারকে শার্টের কলার ধরে টেনে নামালো ওরা।
আবার কি হলো!! নিজেদের কলেজের সামনে এসে গায়ের জোর বেড়ে গেলো বুঝি! রাস্তায় নামিয়েই সজোরে একটা চড় বসিয়ে দিলো ওর মুখের উপর। সংগে সংগে নাক ফেটে রক্ত বের হতে লাগলো। তার সাথে আরও কিছু বন্ধু-বান্ধব এসে যোগ হলো। টানতে টানতে গেটের ভেতরে নিয়ে গেলো ছোট ছেলেটাকে। বিশাল এক পাথর খন্ড হাতে নিয়ে তেড়ে এলো ওর মাথায় মারবে বলে। ভয়ে আমার নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। হায় হায়! ছেলেটাকে মেরেই ফেলবে নাকি! ড্রাইভার লাফিয়ে নেমে ওদেরকে অনেক আকুতি ভরে সামলানোর চেষ্টা করলো। আর কন্টাকটার ছেলেটা ওদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে প্রাণ ভয়ে গাড়ীর ভেতর দৌড়ে এলো। তখনও ওর নাক থেকে রক্ত ঝরছে। বাস ভরা লোক, কেউ কিছুই বললো না। উত্তেজনায় কেউ কেউ বসা থেকে দাড়িয়ে পড়লো। এতটুকুই। ছেলেগুলো ড্রাইভারকে শাসিয়ে দিলো, আর যেন এমন না হয়। ড্রাইভার ফিরে এসে কন্টাকটারকে কড়া কন্ঠে বললো, "জানিস না ওরা কেমন! বাধা দিলি কেন?" বাসের গন্যমান্য ব্যক্তিদেরও একই কথা।

আর আমি এক নিরব দর্শক, ঘটনাটা নিরবে প্রত্যক্ষই করলাম শুধু। কন্টাকটার ছেলেটার জন্য খু্ব মায়া হলো। চুপচাপ সে তার দায়িত্ব পালন করছে। পরবর্তী স্টপেজগুলোতে নামার সময় সব যাত্রীই ওর দিকে করুনার দৃষ্টিতে একবার তাকায়। আর আমি বসে ভাবি এই ছেলেটা কী অন্যায় করেছিলো? সে তো তার মালিকের নিয়ম মেনেই কাজ করছিলো। অথচ দোষ-গুন যাই হোক, ওরাই সব সময় মার খায়।

তার চেয়েও বড় ব্যাপার হলো, তথাকথিত কিছু ছাত্রের হাতে বাস ভর্তি সব মানুষেরা কতই না অসহায়। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এমনই এক বাধনহারা শক্তি, যে শক্তি কারো পরোয়া করে না। ঠিক-বেঠিক চিন্তা করে না। নিজেদের ছাড়া অন্যদের মনে করে হাতের পুতুল। যার উদাহরণ আমরা দ্খেতে পাই কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুটিকয়েক ছাত্রের সারা দেশকে অস্থির করে তোলার মাধ্যমে। অথচ আর কয়েক বছর পর এরাই আর ছাত্র থাকবে না, হয়ে যাবে দেশের সাধারণ মানুষ। তখন এরাই আবার পরবর্তী ছাত্রদের কাছে জিম্মী হয়ে যাবে। হবেই তো! কেননা এ পথ তাদেরই দেখিয়ে যাওয়া। ভাবতেই গা শিউরে ওঠে।
কিন্তু কেন?
এই ছাত্ররাই কি একাত্তরে দেশ স্বাধীনের আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে নি? বাংলার মানচিত্রকে পৃথিবীর বুকে স্থান করে নেয়ার পেছনে এই তরুণদেরই ভূমিকা ছিলো সবচে বেশি। আর আজ আমরা স্বাধীন হয়েও তাদের হাতে যখন তখন জিম্মী হয়ে যাই।

সেদিন ড্রাইভারকে সবাই বলেছিলো, গাড়ীটা কলেজের সামনে না থামালেই তো ছেলেটার মার খেতে হতো না। জবাবে ড্রইভার বলেছিলো, ওরা পরে যখন বাস ভংচুর করবে, তখন কোম্পানি এত বিশাল ক্ষতি কিভাবে পূরণ করবে? কন্টাকটার ছেলটার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছে, অরে তো হোমিওপ্যাথী নইলে এ্যালোপ্যাথীর একটা ট্যবলেট খাওয়াই দিলেই সুস্থ হয়ে যাবে। আর বাস ভাইঙ্গা ফালাইলে তা কি দিয়ে ঠিক করবো??

তখন আমার মনে একটাই প্রশ্ন জেগেছিলো, যারা অল্পতেই উত্তেজিত হয়ে, কান্ডজ্ঞান হারিয়ে মানুষের ক্ষতি করে, তাদের জন্য কোন ট্যাবলেট টা কার্যকর হবে........???
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×