somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মক্কা-মদীনার পথে পথে-০১

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাতারের রাজধানী দোহা থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হল বেলা এগারটায়। বেলা দেড়টায় ফ্লাইট। কাতার এয়ারওয়েজের একটি প্লেন আমাদেরকে নিয়ে উড়ে যাবে মদীনায়। এখান থেকে মদীনার দূরত্ব প্রায় এক হাজার মাইল। তবুও যেন অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না। আর কতক্ষণ পর মদীনার আলো বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নিতে পারবো- সেই সৌভাগ্যময় মুহুর্তটির অপেক্ষায় অস্থির হয়ে আছি আমি।

আমাদের কাফেলার সদস্য সংখ্যা ১৫ জন। ১০ জন ছাত্র এবং বাকী ৫ জন আমাদের আবাসিক ক্যাম্পাস কর্মকর্তা। ছাত্রদের মধ্যে এশীয় ৩ জন, আফ্রিকার ৪ জন এবং মধ্যপ্রাচ্যের আরবীয় ৩ জন। পুরো সফরের মেয়াদ মাত্র ৭ দিন। প্রথম ৩ দিন মদীনায় এবং তারপর বাকী দিনগুলো মক্কায়। শনিবারে যাত্রা শুরু হল এবং আগামী শুক্রবার মক্কার মসজিদে হারামে জুমার নামাজ আদায়ের মাধ্যমে এর সমাপ্তি।

প্রায় আড়াই ঘন্টা প্লেনটি আকাশে উড়ল। বিকেল চারটা। সূর্যের আলো এখন যাই যাই করছে। সন্ধ্যা নামছে। আমরা তখন মদীনার বিমানবন্দরে। ইমিগ্রেশন শেষ করে বের হতে হতে আরও প্রায় পৌনে এক ঘন্টা। আমি এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে চারপাশের দিকে তাকিয়ে আছি। এই তো সেই মদীনা- কোটি কোটি মুমিন মুসলমানের আবেগ ও ভালোবাসার এই তো তীর্থস্থান। কি স্নিগ্ধ ও মায়াময় এর পরিবেশ। রোদের উত্তাপ নেই, বাতাসের ঝাপটা নেই, প্রকৃতিও যেন এখানে অবনত। এক নিরব চাদরে আমাকে ঢেকে দিল মদীনার প্রথম প্রহর।

মদীনার বিমানবন্দরে প্রায় সবাই বাংলাদেশী কুলি। ওদের কাজ হুড়মুড় করে যাত্রীদের লাগেজ ট্রলিতে ভরে তাকে স্ক্যানার পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া। তাদের হাঁক ডাকে মদীনার শান্ত কিন্তু ছোট বিমানবন্দরটি সদরঘাট হয়ে উঠছিল। আমি ভেবেছিলাম, মদীনার মেহমানদেরকে সমাদর করার জন্যই বুঝি বাংলাদেশী শ্রমিকদের এত তোড়জোড়। নবীর অতিথিদেরকে সাহায্য করার জন্য তাদের নিয়োগকর্তার পক্ষ থেকে হয়তো এভাবেই বলে দেয়া আছে। আমার এ আনন্দ বিষাদে পরিণত হলো তাদের দুঃখের গল্প শুনে।
প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একনাগাড়ে যাত্রীদের লাগেজ আর ব্যাগপত্র টানতে হয় ওদের। কুলিদের মতোই হাত পেতে পেতে যাত্রীদের কাছ থেকে ১৫, ২০ কিংবা ২৫ রিয়াল আদায় করতে হয়।

কারণ কোম্পানীর কর্তাকে সারাদিন বাবদ জমা দিতে হবে ১১০ রিয়াল। বাদবাকী যা থাকবে তা নিজের। এই ১১০ রিয়াল উঠিয়ে নিজের জন্য কিছু রাখতে হলে এমন হাউকাউ আর চেঁচামেচি করে লাগেজ টানাটানি এবং অতঃপর হাত পাতা ছাড়া তাদের গতি নেই।

কারণ অধিকাংশ যাত্রী নিজের ব্যাগ নিজেই হাতে করে নিয়ে যেতে চান। তারা খুঁজে খুঁজে মহিলা ও বৃদ্ধ যাত্রীদের কাছ থেকে ব্যাগ নিয়ে ট্রলিতে করে পার করে দেয়। তারপর গেট পার হওয়ার পর বখশিশের জন্য হাত পেতে অনুনয় বিনয়। এসব দেখে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আগত মদীনাগামী যাত্রীরা বাংলাদেশী কুলিদেরকে লোভী ও ঠগবাজ ভাবলেও তারা তো আর জানেন না যে দিনশেষে ১১০ রিয়ালের জমা জমে আছে এ অসহায় লোকটির ঘাড়ে। তাকে তো এভাবেই বেঁচে থাকতে হচ্ছে।

এর ফাঁকে তাদের কিছু ছবি তুলে নিলাম। তারপর আমাদের জন্য নির্ধারিত বাসে গিয়ে উঠলাম। বাস রওয়ানা হচ্ছে মসজিদে নববী লাগোয়া দিয়ার ইন্টারন্যাশনাল হোটেল উদ্দেশে। মদীনায় থাকাকালীন এ হোটেলই আমাদের আবাসস্থল।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×