somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাবাশ বিশ্বব্যাংক,সাবাশ বাংলাদেশ,সাবাশ সংস্কার

২১ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বব্যাংকের এমডি(নাম ভুলে গেছি,কিছু যায়-আসে না,সব কুকুরের নামই টমি) মহান এক বাণী দিয়েছেন-"বাংলাদেশের মানুষকে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে বেশি করে আলু খেতে হবে,কারণ দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়া নাকি শুধু বাংলাদেশের একার সমস্যা না।" তো,এটা পড়ে আমি বাকহারা হয়ে গেছি,গুরু গীনসবার্গ হয়তো বলতেন--"ওহে বিশ্বব্যাংকের পিশাচ,তোমার আলু দিয়ে নিজের পশ্চাদ্দেশে নিজেই লাগাও গিয়ে,আমাকে বিরক্ত করো না আমার কিছু ভালো লাগছে না।" তো আমি সেটা বলতে পারি না,সেই জোর আমার মেরুদণ্ডেও নেই,গলাতেও নেই। তবে দেখতে সমস্যা নেই,দেখছি। বিশ্বব্যাংক,এডিবি,আইএমএফের
প্রভুরা নিয়মিতই তাদের হাতুড়ে প্রেসক্রিপশন তাদের এদেশি কম্পাউন্ডার দিয়ে আমাদের গিলিয়ে যাচ্ছে একেবারে নীরোগ দীর্ঘজীবনের আশ্বাস দিয়ে,তাই খেয়ে আমরা আধমরা থেকে কোমাতে চলে গিয়েও ভাবছি আহা নিশ্চয়ই স্বর্গেই চলে এলুম নইলে দিনেদুপুরেও চোখে আকাশের তারা দেখি কেন!

ওদিকে দাম বেড়ে চলেছে। বাড়ুক,সরকার বেতন বাড়ানোর মূলা ঝুলিয়ে দিয়েছে,আর সেটা বাড়ার সাথে সাথেই দাম আরেক দফা বেড়ে যাবে,৩০% বেতন বেড়ে খরচ বাড়বে ৫০%,তাই দেখে বিশ্বব্যাংকের দালাল দেশী উপদেষ্টারা মিষ্টি হাসি দিয়ে জানাবেন দেশে প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। তা হচ্ছে তো বটেই,এমনই হচ্ছে যে ক'দিন পরে খাবারের জন্য প্রতিযোগিতা না রাস্তাঘাটে লুটপাটে গিয়ে দাঁড়ায়। তখন হয়তো তপন চৌধুরীরা সুইটজারল্যান্ডের মনোরম
প্রকৃতি দেখতে দেখতে প্রশান্ত মুখে বলবেন এটা স্বাভাবিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার অংশ,সারভাইভাল অভ দ্য ফিটেস্ট,মারো নয়তো মরো। রফিক আজাদের মত কেউ তো আর বলবে না-"ভাত দে হারামজাদা নইলে মানচিত্র খাবো"!

দামের সাথে ব্যস্তানুপাতিকভাবে চলছে উৎপাদন আর কর্মহার,সমানুপাতিকভাবে চলছে বেকারত্ব। দুই নেত্রীর সোনার ছেলেরা দেশটাকে বাবার সম্পত্তি ভেবে সেই সম্পত্তি ব্যক্তিগত তহবিলে জমা করার কর্তব্য ভালভাবেই সমাধা করে গেছে,খালি ঝুড়ির তলাটা খুলে নেয়ার কাজটা সমাধা করে দিচ্ছেন মহান অপদেষ্টারা,এখন আর ইউনুসকে গালি দিই না,ম্যালা ওস্তাদ গজিয়ে গেছেন গালি খাবার জন্য। আদমজী বন্ধ হয়ে গেল,ওদিকে পাশের দেশে পাটের ব্যবসা জমজমাট,এ অন্ঞ্চলের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বীকে কি দারুণভাবেই না শেষ করে দিল ঘরের শত্রুকে দিয়েই। কত লাখ মানুষ পথে বসলো? সাইফুর রহমান বা ফখরুদ্দিন কি বিশ্বব্যাংকের শ্যাম্পেনে চুমুক দিয়ে একবারো ভেবেছেন? এককালে দেশীয় নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হত "প্রগতি"র যানবাহন,কেন সেটা বন্ধ করে টাটা চলে এল,কেউ কি জানেন? অথবা কেনই বা বাংলাদেশের যে কোন আন্তর্জাতিক টেন্ডারে দেশি কোম্পানিগুলোর উপর সরকার ট্যাক্স বসিয়ে রাখে আর বিদেশি কোম্পানিগুলোর ট্যাক্স আর ভ্যাট সরকার দিয়ে দেয়,সেটা কি কেউ একবার ভেবেছেন? ১টা সামান্য জিপগাড়ি ঘুষ দিয়ে যে দেশের জ্বালানিসম্পদ মন্ত্রীকে কিনে ফেলা যায়,সেখানে অবশ্য এগুলো নিয়ে মাথা ঘামানো বাতুলতা।

আসলেই তো,ভেবে হবে কি? খাদ্যে ভর্তুকি দেয়া যাবে না,অলস বাঙ্গালি,করে খাক। কৃষিতে ভর্তুকি হবে না,ফাঁকিবাজ বাঙ্গালি,খেটে খাক। পাবলিক ভার্সিটিতে ফি বাড়াও,ফকিন্নির ছেলেরা পড়াশোনা করে কি হবে,যার বাপের পয়সা আছে সে পড়ুক,আর প্রাইভেট আছে না,একদল অপোগণ্ড বের করার জন্য? তেনাদের ছেলেমেয়ে তো পাবলিকে পড়বে না,প্রভুরা এত টাকা দিচ্ছেন দেশটাকে বিক্রি করার জন্য,উনাদের ছেলেপেলেদের থাকার জায়গাও দেবেন,একান্তই না হলে প্রাইভেটে দিয়ে দেব হে! রক্ত পানি করে ৪-৫ টা বছর পড়াশোনা করা উজ্জ্বল চোখের ছেলেগুলো যখন ম্লান মুখে বলে দোস্ত ১টা কাজকর্ম খুব দরকার,বসে থেকে তো বুড়ো হয়ে যাব,মাথা নিচু করে ভাবি,নিজেরটাই তো মাত্র ৩ মাসের,এরপরে আমিই কোথায় দাঁড়াবো?

তাই কেউ ভাবে না। আর আল্লাহর মাল দের নিয়ে ভেবে লাভ নেই,সেটার জন্য উপরওয়ালাই আছেন। তাই চলছে,চলবে। হাঁটুমাথা কদমছাঁট জলপাইরা সুন্দরী নাদুসনুদুস বৌ নিয়ে দেশরক্ষার নামে গাড়ি হাঁকাবেন,আমার দেশের পথশিশু সেই গাড়ির বদ্ধ জানালার সামনে ছেঁড়া জামা গায়ে শুকনো ফুল নিয়ে হাত পাতবে। খাবারের জন্য হাহাকারের মাঝে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে বসে গ্রিলড স্যামন ওড়াবে মজুদদার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। সাইফুর রহমান হিসাব কষবেন এবার লন্ডনের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের ফার্ম থেকে কত এল,হাজার শ্রমিকের আহাজারি শোনার সময় কোথায় তার? বেকার যুবকের বিবর্ন স্বপ্নকে পেছনে ফেলে
বিএমডব্লিউ চড়ে সো হট রুবাবা মতিনের ডিজুস জেনারেশন দুনিয়ার সুখ খুঁজবে গুলশানের ড্যান্স ফ্লোরে। নেতারা জেলে বসে স্বপ্ন দেখবেন বিদেশে পাচার করা হাজার কোটি টাকা দিয়ে জেল থেকে বের হয়েই আমেরিকাতে কয়েকটা প্রাসাদ কেনার। দেবপ্রিয় দেশকে আত্মহত্যার বিষ দিয়ে পুরস্কারস্বরূপ জাতিসংঘে গিয়ে দেশের ভাবমূর্তিকে মূর্তিবৎ বানাবেন, ফখরুদ্দিনের কনিয়্যাকের গ্লাসে ডুবে যাবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ,নিচে তাকাবার অবসর কোথায় দেবতার? ভারতীয় চ্যানেলে ঐশ্বরিয়ার ধুম নৃত্য দেখে মুগ্ধ চোখে আমরাও উদ্বাহু হয়ে নাচবো,পাকিস্তানি মরদ আফ্রিদীর তাকৎ দেখে বিয়ে করার জন্য প্ল্যাকার্ড নিয়ে বাঙ্গালি ললনা টিভি ক্যামেরার সামনে বসে থাকবে,ওবামা আর হিলারির জন্য ক্যাম্পেইন করব আমরা,শুধু আমরা কখনো বাংলাদেশি হবো না,এই মা'কে নিয়ে আমরা কখনো ভাববো না।

বিশ্বব্যাংকের মিষ্টি আলুটা আমাদের পশ্চাদ্দেশ দিয়েই সবার আগে ঢোকানো উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ২:০৩
২৯টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×