somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরের ভাষায় মধু বয়ে যায় নিজের ভাষায় যতো অরুচি

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কথার ফাঁকে ফাঁকে বাক্যের ভাঁজে ভাঁজে দু’চারটে ইংলিশ ওয়ার্ড প্রবিষ্ট করাতে না পারলে অভিজাত অভিজাত ভাবটি নাকি ধরে রাখা যায় না। নিজের জ্ঞান-গম্যি জাহির করার জন্যে এটি আজ সমাজে বহুল চর্চিত আর আদৃত এক সৌখিন রেওয়াজ। স্বদেশি ভাষায় প্রয়োজনীয় ব্যুৎপত্তি অর্জনের পর বিদেশি ভাষা শেখায় কোনো দোষ নেই। গোটা দুনিয়ার মানুষ আজ প্রযুক্তির উৎকর্ষে এক গ্রামের বাসিন্দার মতোই। বৈষয়িক উন্নতি বলুন আর সর্বমানবিক কল্যাণ-অভিসারী লক্ষ্যেই বলুন গোটা দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ, সেতুবন্ধন, পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে নানামাত্রিক সম্পর্ক একটি চিরায়ত বাস্তবতা। কিন্তু তাই বলে রক্তেকেনা নিজেদের মাতৃভাষাকে পেছনে ফেলে কেন ? আলোচনা-বক্তৃতা-বিবৃতিতে মাতৃভাষার মহিমা গেয়ে বাস্তব জীবনে ইংরেজিকে নিয়েই মেতে থাকলামÑএটা একদিকে স্ববিরোধিতা অন্যদিকে আত্মপ্রবঞ্চনা ও জাতীয় ভাষার সঙ্গে তামাসার শামিল। এ যেন পরের ভাষায় মধু বয়ে যায় নিজের ভাষায় যতো অরুচি দশা।

২১ শে ফেব্র“য়ারি (যদিও প্রকৃতপক্ষে ৮ ফাল্গুনই ভাষা দিবস হওয়া যুক্তিযুক্ত ছিল) প্রত্যুষে খালি পায়ে প্রভাত ফেরির মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে যারা ‘রক্তে রাঙানো’ ভাষার দায়িত্ব শেষ করাকে জাতীয় কর্তব্যজ্ঞান করতে পুলকিতবোধ করেন তাদের সঙ্গে বাহাসে যাবার ইচ্ছে নেই। তবে এতে করে ভাষাশহীদদের বিশেষ কী লাভ হয় তা জানার কৌতুহল থেকেই গেল।

এই তো গেল আমাদের ভাষা প্রেমের নমুনা। যারা ফেব্র“য়ারি এলে দেহের সকল শক্তি গলায় একত্র করে বুক চেতিয়ে গোটা দুনিয়াকে জানান দেইÑ‘আমরাই পৃথিবীতে একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে।’ যদিও এ দাবি একশতভাগ সত্য! কিন্তু আমরা বোধ ভুলে চাই, আমাদের মাতৃভাষার অবস্থা বর্তমানে ‘কাজির গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’-এর চেয়ে খুব একটা সুবিধেজনক নয়।

চলুন পাঠক! আপনাদের নিয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ের একটি ছোটোখাটো অনুসন্ধানে বেরিয়ে পড়ি। একটু খোঁজ নেয়া যাক বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলনের রক্তপিচ্ছিল পথ ধরে অর্জিত রাষ্ট্রভাষা ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বাংলা ভাষা কোথায় কোন্ অবস্থায় আছে ? প্রথমেই যাওয়া যাক উচ্চ আদালতের ‘পবিত্র’ অঙ্গনে। নাহ্ হা-হতস্মি! বেচারা বাংলা সেখানে পুরোদস্তুর গরহাজির। ওখানে দোর্দণ্ড প্রতাপে রাজত্ব চলছে বৃটিশ প্রভুর ভাষা ইংলিশের। এবার পথ ধরি বিশ্ববিদ্যালয়ের। দেশের উচ্চতর বিদ্যাপীঠগুলোতে জগতের জ্ঞান-বিজ্ঞান পঠন-পাঠনের মাধ্যম হিসেবে শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষা ‘বাংলা’ গৃহীত হয়েছে কি ? না! সেখানেও বেচারির ঠাঁই হয়নি। এ বাংলা নাকি চাষাভূষা, কুলি-মজুর ও চাপরাশি-আর্দালির ভাষা! ওখানে তো চলবে লাট সাহেবদের ভাষা।

পাঠক! আর খোঁজাখুজি করে লজ্জা পেতে চাই না। এবার সে যেসব জায়গায় বেঁচে বর্তে আছে সেখানে গিয়ে একটু তার শরীর-স্বাস্থ্যের খবর নিই। চলুন যাওয়া যাক, সদ্য গজানো বিচিত্রকিসিমের এফএম রেডিও’র রঙমহলে। সেখানে রয়েছেন আমাদের টগবগে বহু রেডিও ’জকি’, সংবাদপাঠক-পাঠিকা আরও কত কী ? যারা নিয়মিত, অনিয়মিত কিংবা ঠেকায় পড়ে এফএম রেডিওর খবর শোনেন; পারলে তাদের বাহারি আড্ডায় মজেও থাকেন, তাদের ধারণা থাকার কথাÑওখানে বাংলা ভাষার জীবন্ত ব্যবচ্ছেদ, মুমূর্ষ বাংলার ময়নাতদন্ত থেকে শুরু করে বাংলা ভাষার এমনসব বিকৃতি চলে যারপর চিরচেনা মাতৃভাষার চেহারা-সুরত আর চেনার উপায় থাকে না। ইংরেজি উচ্চারণে বাংলা বলাতে তারা নাকি খুবই ‘এনজয় আর স্মার্টনেস ফিল’ করেন। বড় জানতে ইচ্ছে করেÑএই দেউলিয়াত্বের শেষ কোথায় ?

রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষসহ দেশের প্রায় সব মহল কেন জানি বাংলা ভাষার ওপর এই অত্যাচার অম্লান বদনে মেনে নিয়েছেন। পত্র-পত্রিকায় হাতে গোনা কয়েকজন ভাষাবিদ, কথাসাহিত্যিক এ বিষয়ে লেখালেখিও করেছেন কিন্তু সরকারি কর্তৃপক্ষের কানে পানি যায়নি।

আসন্ন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক, নতুন প্রজন্মকে বিকৃত বাংলা নয় বিশুদ্ধ ও চিরায়ত বাংলা চর্চার পথ কণ্টকমুক্ত করা। আদালত অঙ্গণ, উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠসহ সর্বস্তরে বাংলাকে যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা। ভাষা ও সংস্কৃতিতে বিজাতীয় আগ্রাসন রুখতে বাংলা ভাষা চর্চা ও বিকাশে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশিপাশি নৈতিক অবক্ষয় ও আবহমান পারিবারিক কাঠামোর পতন ঠেকাতে হলে সাহিত্যচর্চা ও কথাশিল্পের নামে যৌনসুড়সুড়িমূলক লেখাকে প্রত্যাখান করতে হবে। কাতারবদ্ধ হতে হবে নীতিবোধ ও আদর্শবাদী সাহিত্যের লালনে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রামে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন।



খন্দকার মুহাম্মদ হামিদুল্লাহ
[email protected]

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:২৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ মনটা কেমন যেন অনেক কিছু চিন্তা করছে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩০ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



সকালের মৃদু আলোয় মোড়ানো একটি মনোরম দৃশ্য ধরা পড়েছে এই ছবিতে। এটি একটি খোলা জায়গা, যেখানে সবুজের সমারোহ এবং প্রকৃতির ছোঁয়া স্পষ্ট। ছবির বাম দিকে গাছের সারি এবং ডান... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুর জন্য ট্রেনিং সেন্টার খুলতে আগ্রহী আপনারা?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ৩০ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩০





সামুতে ব্লগিং করতে হলে কীভাবে করতে হবে,হিটপোস্ট,কমেন্ট বাড়বে সেইজন্য ট্রেনিং সেন্টার চালু করা প্রয়োজন মনে হচ্ছে; নাহয় সচলায়তনের মত গায়েব হয়ে যাবে;পরে দেখা যাবে সামুর মৃত্যুর খবরও অন্য কোনো ব্লগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার ভাঁজ খোলো আনন্দ দেখাও :: দু শ'রও বেশি পুরোনো ব্লগারের প্রোফাইল পিকচার নিয়ে একটি মিউজিক ভিডিও

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ৩০ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে সামহোয়্যারইন ব্লগের দু শ'রও বেশি ব্লগারের প্রোফাইল পিকচার নিয়ে বানানো একটা মিউজিক ভিডিও শেয়ার করেছিলাম। যে-সব ব্লগার ঐ সময়ে অ্যাক্টিভ ছিলেন, প্রোফাইল পিকচারগুলো তাদের ছিল।



কয়েকদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রহস্যময় কলা

লিখেছেন বিষাদ সময়, ৩০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৩১




এই কলা শব্দটা আমার কাছে পুরাই বিভ্রান্তিকর। নারীদের কলা বলতে যে ছলাকলা সেটা ভালই বুঝি। সেই ছলাকলা দেখে গলা বাড়ালেই যে ষোলকলা পূর্ণ হয় সেটাও জানা। কিন্তু এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ দরজা

লিখেছেন মোঃ আরিফুজ্জামান আরিফ, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৬


বাইরে ঝুম বৃষ্টি। বাইরে ঘোর অন্ধকার, বিদ্যুৎ নেই। মা চুলায় খিচুড়ি দিয়েছে। ঘ্রাণে চারপাশ ছেয়ে আছে। সাথে বেগুন ভাজা, ইলিশের দো পিয়াজি, দই-কাতলা, রুই মাছের মাথা দিয়ে মুড়ি ঘন্ট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×