somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাপুরুষদের কথা অমৃত সমান: ঋণপ্রাপ্তিকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা উচিত - ড. মুহাম্মদ ইউনূস

১২ ই মার্চ, ২০০৮ সকাল ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তাজমহলের সামনে দাঁড়িয়ে আপ্লুত হন নি, এমন মানুষ বোধহয় পৃথিবীতে নেই। এমন সৌকর্য, এমন অপরূপ রূপ, চাঁদনী রাতের মোহময় জগতে তাজমহল যখন সামনে দাঁড়ায়, নিজের প্রেমিক বা প্রেমিকার কথা ভেবে সৌন্দর্যকে আপন করে নেন নি, এমন কোনো মানুষের কথা কি আমরা জানি? দারিদ্র্য, ক্ষুধিত পেট কিংবা সামাজিক বৈষম্য নিয়ে যে মানুষটি কাজ করেন, তিনিও তাজমহলের সামনে এসে সৌন্দর্য আর প্রেমের বাইরে কিছু ভাবতে চান না। অথচ এই একটি তাজমহল বানাতে কত লাখ লাখ মানুষকে পেট অভুক্ত রেখে খাজনার অর্থ যোগান দিতে হয়েছে, ইতিহাসবিদরা কখনোই সেই তথ্যের সন্ধান পাবেন না।

সেই যুগের তাজমহলের সাথে আজকের যুগের ক্ষুদ্রঋণ বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর হাইরাইজ ভবন সৌন্দর্য কিংবা সৌকর্যের দিক থেকে তুলনীয় নয় সত্যি; কিন্তু কত মানুষের শারীরিক শ্রমের আর্থিক রূপ অবশেষে এরকম ভবন দাঁড় করায়- সে হিসেব আধুনিক সিএ পাশ করা অ্যাকাউনটেন্ট বা অডিট কমিটি করতে পারবে না। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কত মানুষের দিশেহারার প্রতীক এই ভবনগুলো- তা আমরা কেউই উপলব্ধি করতে সক্ষম নই। অথচ আমরা তাদের নিয়ে মশকরা করে চলি প্রতিনিয়ত। শুকনো হাড্ডিসার গাভীগুলোর মাঝে মোটাতাজাকরণ বড়ি খাইয়ে নির্দিষ্ট একটি গাভীকেই বারবার টেনে আনি ক্যামেরার সামনে। খালিমুখে জাবর কাটাগুলোকে রেখে দিই ক্যামেরা চলে গেলে হালচাষের জন্য।

আমাদের অনেক ঐতিহ্য! আর বোধহয় সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক ঐতিহ্য আমাদের দারিদ্র্য। এটি পরিমাণে এতো বেশি যে, চাইলেই আমরা এখন শত শত দারিদ্র্যের জাদুঘর বানাতে পারি। অবশ্য এর জন্য সময় লাগবে কিছুটা- আপাতঃ লক্ষ্য ২০১৫ সাল। এর মধ্যে একটি হাইরাইজ জাদুঘর বানাতে যে টাকা লাগবে, সেই টাকা যোগাড় করতে হবে ক্ষুদ্রঋণের সুদ থেকেই। সারা পৃথিবীর পর্যটকরা এসে দেখবে সেই জাদুঘর, দারিদ্র্যতা প্রদর্শনীর নিখুঁত কর্মযজ্ঞের কারণে আরো বিখ্যাত হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। হয়তো এই দারিদ্র্য জাদুঘর উদ্বোধনীর দিন আরেকটি হতদরিদ্র জাদুঘর তৈরির প্রতিষ্ঠার ঘোষণা আসবে। অসম্ভব ব্যতিক্রম এই আইডিয়ার জন্য আরেকবার পৃথিবীবিখ্যাত পুরষ্কারটি জমা হবে আমাদের কোনো ব্যষ্টিক কোষাগারে।

তো আমরা জেনেছি, দারিদ্র্য জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করতে টাকা লাগবে। টাকা আসবে কোত্থেকে? ঋণের সুদ থেকে। সুতরাং প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই ঋণ নিতে হবে। রাষ্ট্র কিংবা সমাজ কিংবা ব্যক্তিমানসিকতা যেনো আগলে না দাঁড়ায়, সে জন্য আমরা এখন নিত্যনতুন উপায় খুঁজে বের করছি। বলছি ‘ঋণপ্রাপ্তিকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা উচিত’। কারণ ‘সমাজের দরিদ্র মানুষ হচ্ছে পদ্ধতির ত্রুটির ফসল’। সুতরাং দরিদ্র মানুষ যেনো প্রতিনিয়ত পদ্ধতির শিকার হতেই থাকেন, আমাদের সে বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রাখতেই হবে। আমরা কখনোই পদ্ধতি বদলাবো না; বরং পদ্ধতি যেনো টিকে থাকে, সহনীয় হয় আরো, সেজন্য ঋণপ্রাপ্তিকে শুধু অধিকার নয়, শুধু মৌলিক অধিকার নয়, শুধু মানবাধিকার নয়, একেবারে পুরোপুরি মৌলিক মানবাধিকার করতে হবে। পদ্ধতি বদলে ফেললে যে মানুষ আর দরিদ্র থাকবে না! সেদিকে এগুলো ক্ষুদ্রঋণ দর্শনে হারাম।

‘প্রচলতি ধ্যনধারণা হচ্ছে ব্যবসা মানেই সর্বোচ্চ মুনাফা’। প্রচলিত কাজ হচ্ছে, দারিদ্র্য নিয়ে ব্যবসা করা। প্রচলিত কৌশল হচ্ছে সাহস করে সত্য কথাটি না বলে সেটিকে মানবতার কল্যাণের পোশাক পরিয়ে বলতে চেষ্টা করা। সবকিছুই করতে পারি আমরা। ঘাটতি কেবল একটি জায়গায়- ঋণ দিয়ে চড়া সুদ আদায় করাকে কারো কারো জন্য মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা উচিত- কথাটি মুখ ফসকেও বলতে না পারা। ড. মুহাম্মদ ইউনূসদের মতো মহাপুরুষদের কাছ থেকে প্রতিনিয়তই এই জিনিসগুলো আমরা শিখে রাখছি।

অবশ্য তাতে কোনো সমস্যা নেই। ‘যদি লক্ষ্য থাকে অটুট’, তাহলে প্রজেক্ট পেপার জমা দিয়ে ব্যবসায় সমৃদ্ধি বাড়ানো কোনো সমস্যাই নয়; ‘বিশ্বাস হৃদয়ে’ থাকলে দেবী লক্ষ্মী ভাগ্যবানদের সাথেই থাকেন; সুতরাং কোনো না কোনোভাবে ঋণব্যবসায়ীদের পরস্পরের সাথে ‘দেখা হবে বিজয়ে’।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×