somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেসবুক মহিলা পীরদের উদ্দেশ্য;

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েদের সাথে আমি কম ওঠবস করি । সঙ্গত কারণেই একই XX ক্রোমোসোম শেয়ার করার পর ও জীবনধারা এবং চিন্তাধারার পার্থক্যর কারণে মেয়েদের অনেক ন্যাকামো আমি সইতে পারিনা!

ফেসবুকের সুবাদে এক শ্রেণীর 'নারীবাদী' কিছু নারীর সাথে পরিচিত (পড়ুন অনলাইন অস্তিত্বের সাথে পরিচিত) হওয়ার দুর্ভাগ্য হয়েছে। দুর্ভাগ্য এই কারণে যে- 'নারীদের স্বার্থ উদ্ধারে তাদের ভূমিকা এবং মানুষ হিসেবে তাদের স্বনির্ভরতা গ্রামের বেতের ঝুড়ি বানিয়ে বিক্রি করা কৃষক- বধূ( বেলালের মা)র চেয়ে বেশী কিছু নয় বলেই আমার মনে হয়েছে । বেলালের মা'র সত্যিকারের নাম যেমন কেউ জানে না, ওনাদের আসল নাম ও জানা দুষ্কর ! ওনাদের প্রায় আপডেট থাকে পুরুষ জাতির 'হেন কারেঙ্গা, তেন কারেঙ্গা, মার ডালুঙ্গা' জাতীয় বুলিতে ভরপুর, কিন্তু ব্যাক্তিগত জীবনে খোঁজ নিয়ে দেখুন- আমাদের আমেনা, করিমা,সখিনাদের জীবনযাত্রার সাথে তাদের জীবনের পার্থক্য সামান্যই (আমেনা,করিমা,সখিনা বলতে আমাদের অসহায় বস্ত্রশ্রমিক নারীদের বোঝাচ্ছি , যারা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত , কিন্তু প্রতিবাদ করার শক্তি নেই । অবশ্য একটা ফেসবুক আইডি খোলার সময় থাকলে এনারাই হয়তো 'ওয়ান্ডার উওম্যান' জাতীয় একটা আইডি খুলে বসতেন , এবং পুরুষ বিদ্বেষী আপডেট দিয়ে ফেসবুকের মহিলা পীর হয়ে যেতেন) ! এসব 'ওয়ান্ডার উওম্যান' এর জীবন যে আসলে শুভঙ্করের ফাঁকি, তা একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায় :

১) এনাদের আইডি তে নিজেদের কোন ছবি নেই , বিস্তারিত পরিচয় নেই । নিজেরা এদিকে বোরকা- হিজাব বিরোধী আন্দোলনে অনলাইনে গলা ফাটাচ্ছেন , কিন্ত নিজের আইডিকে নেকাব পরিয়ে বসে আছেন ! সাহস থাকলে বাস্তব জীবনে অন্য মেয়েদের নেকাব খোলার আগে ভারচুয়ালি নিজের মুখটা খুলে একটু অন্যদের দেখান! যেখানে নিজের মুখ দেখানোর সাহসটুকু নেই নিজের পরিবার বা ছেলেদের সেক্সুয়াল কমেন্টের ভয়ে, সেখানে বাস্তব জীবনে স্বাধীনতা আশা করেন কীভাবে ???!

২) প্রায়ই এনাদের আপডেট দেখা যায় বাসে বা মার্কেটে কিভাবে কোন ছেলে গায়ে হাত দিয়েছে এবং কারাতে জানলে কীভাবে সেই ছেলেকে দশ-দিক দেখিয়ে দিতেন, সেটা নিয়ে ; এবং সেসব আপডেট শেষ হয় ভাল কারাতে স্কুলের ঠিকানা চেয়ে (যেন রাস্তাঘাটে কখনও লিফলেট চোখে পড়েনি , আর ইন্টারনেট এ যে ভাল ভাল কারাতে স্কুলের ঠিকানা পাওয়া যায় তা তারা জানেন না!)।
কথা হল - এসব মেয়ে আসলে কখনই কারাতে না জানার কারণে নির্যাতন হজম করেনা - এরা হজম করে যায় স্বভাবের দোষে ! বাসে কেউ পাছায় হাত দিলে প্রতিবাদ করতে কারাতে লাগে না , চড় মারতে ব্রুস লী হওয়া লাগেনা , লাগে সাহস ! আর যদি কারাতের এত
প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনই, তাহলে শিখছেন না কেন??? আমি যদি টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে, মেডিক্যালের পড়ার চাপ সামলে, তিনটা বাস বদলে গিয়ে কারাতে শিখতে পারি, তো আপনি পারবেন না কেন? আর যদি না ই পারেন, তো নেট থেকে গান ডাউনলোড না করে মার্শাল আর্টস এর ভিডিও নামান ! এক মাস লিপস্টিক না কিনে দুটো ডাম্ববেল কিনে ব্যায়াম করুন! নিজে পটের বিবি হয়ে থাকলে পুরুষরা কি এমনিতেই ছাড় দেবে? লড়াই করে নিজের জমিন আদায় করে নিন!

৩) 'ওয়ান্ডার উওম্যান'দের অনেকের আপডেট হয় পুরুষবিদ্বেষী । লাগাতার এধরণের পুরুষ বিদ্বেষ বোধহয় লেসবিয়ান না হলে পুষে রাখা সম্ভব নয় ! হ্যাঁ, এটা মানছি যে 'কোয়ালিটি' পুরুষ আমাদের দেশে কম আছে , বেছে নিলে একশটায় হয়তো একজন , কিন্তু দেখলে অবাক লাগে - ফেসবুকের ওসব স্বঘোষিত পুরুষবিদ্বেষী 'ওয়ান্ডার উওম্যান' দের বেশির ভাগ ফলোয়ারই পুরুষ, আইডির স্ট্যাটাস সিঙ্গল হলে তো কথাই নেই ! বাস্তবে হয় তারা রাতে বিছানায় একজন পুরুষের পিটুনি খাচ্ছেন (ম্যারিড) , অথবা কয়েক ডজন পুরুষকে ("লাথি মেরে লিস্ট থেকে বিদায় করে না দিয়ে ") নাকে অদৃশ্য দড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছেন । কেন রে বাপু , এত ঘৃণা যদি থাকে, তো পুরুষদের সাথে সহবাস/ সহাবস্থান কেন? এড়িয়ে যান ! এনাদের অনেকেই আবার পুরুষ জীবনসঙ্গীর নামের শেষাংশ নিজের নামে ব্যবহার করছেন । পতিপ্রেমের চূড়ান্ত !!! নিজের বংশের নাম মুছে যে নারী কোন পুরুষের বংশনাম ব্যবহার করেন, একজন স্বাধীন মানুষ হিসেবে তার অবস্থান যে কোথায় দাড়ায় , তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে!

৪) আরও একটা বিষয় খেয়াল করে দেখলাম যে- বিভিন্ন বিষয়ে, বিশেষ করে নারী নির্যাতনের মতো 'গরম' বিষয়ে এনাদের ফেসবুক এক্টিভিটির শেষ না থাকলেও মাঠে এনাদের খুব কম পাওয়া যায় । বহদ্দারহাট নিয়ে অনেকে চিল্লিয়েছেন, স্পটে গিয়েছেন খুব কম । ধর্ষণ বিরোধী মানববন্ধনে গিয়েও মহিলা পীরদের কাউকে পাইনি , পেয়েছি কিছু পোড়খাওয়া মহিলা এডভোকেটদের - যারা আসলেই ধর্ষিতাদের কষ্টগুলো তাদের চোখে চোখ রেখে অনুভব করতে শিখেছেন ; কিছু মেডিক্যালের ছাত্রীদের - যারা ক্লাস শেষে ক্ষুধা পেটে নিয়ে পথে এসে দাঁড়িয়েছেন । বাংলাদেশে যে অল্প কিছু ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের পাশাপাশি প্রায় সমান তালে লড়াই করে চলেছেন , সেসব পেশার নারীরাই মূলত নিজ ক্ষুধাতৃষ্ণা , অসুখবিসুখ অগ্রাহ্য করে দুরদশাগ্রস্থ মানুষদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন । ওদিকে মহিলা পীররা ব্যাস্ত আছেন নিজেদের লাইক আর কমেন্টস গুনতে , মেয়েদের চিরাচরিত নারসিসিসমে ভুগে আত্মপ্রসাদ লাভ করতে ! তারা পাদ দিলেও ফুলের সুবাস হয়ে যায় -ছেলেরা ১০০ টা লাইক দেবে , কিন্তু রাস্তায় দেখলে কেউ চিনবেও না!

পরিনতি : বছর কয়েক বাদেই প্রতিটা ওয়ান্ডার উওম্যান পরিণত হবেন 'জামাল সাহেবের'
বউ এ । নিজের পরিচয় থাকবে না, মেয়েদের বড় করবেন পরে দৌড়ানো যায়না - এমন চিকন ফিতার স্যান্ডাল আর মেক আপের পসরা দিয়ে । তিনি সেলফ ডিফেন্স শিখেন নি, তার মেয়েও নিজেকে রক্ষা করতে শিখবে না ; তিনি গলাবাজ, তার মেয়েও হবে অন্তস্বারশুন্য আপডেট -সম্রাজ্ঞী । তসলিমা নাসরিন ম্যাডামের বই পড়ে সেও ঠোঁট ফোলাবে , আর অপেক্ষায় থাকবে সেই বীর পুরুষের - যে সেক্সের বিনিময়ে তাকে সকল 'বিপদ' থেকে উদ্ধার করবে ; পরিচয়, স্বকীয়তা কেড়ে নেওয়ার বিনিময়ে তাকে দেবে আশ্রয়! রক্ত ঝরিয়ে নিজের মাটি আদায় করে নেওয়ার বদলে সে ও দোষারোপ করবে পুরো পুরুষ সমাজকে , কিন্তু নিজের গাফিলতি তার চোখেও পড়বে না! এভাবেই চলছে, সম্ভবত এভাবেই চলতে থাকবে আমাদের নারীসমাজ ।

অনেক কিছু বলে ফেললাম , বিরক্তি আর রাখতে পারছিলাম না ! অনুগ্রহ করে নোংরা কমেন্ট করে থ্রেড ভরাবেন না । ভাল না লাগলে চুপ করে আনফ্রেন্ড করে দিন । পরিষ্কার, সুন্দর মতামত থাকলে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ
মূল লেখার লিংক:
View this link
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×