somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এমএলএম হলো শুভংঙ্করের ফাঁকি

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাল্টিলেভেল মার্কেটিং ৯০ দশকে শুরু হলেও এর প্রসার লাভ করে ২০০০ সাল থেকে।আর ডেসটিনি-২০০০লিমিটেড এইক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে।তারা এমএলএম পদ্ধতিকে জনগণের কাছে প্রচার ও জনপ্রিয় করার ব্যাপক প্রচেষ্টা চালায়।যার ফলে মানুষ বুঝে হোক না বুঝে হোক প্রথমে ২৭০০ টাকার বিনিময়ে ডেসটিনির সদস্য হয়।এবং এই সদস্য হওয়ার বিনিময়ে তারা ডেসটিনির কিছু প্রোডাক্ট পাবে।যদিও বা প্রোডাক্টগুলি বিভিন্ন কোম্পানী থেকে নিয়ে ডেসটিনি বাজারজাত করে।এবং তাদের গ্রাহকদেরকে তাদের নির্ধারিত পণ্য কিনতে বাধ্য করে।যেই শার্টটির মূল্য বাইরে ২৫০-৪০০ টাকা সেটি তারা ৬০০-৭০০ টাকা বিক্রি করে।এই ভাবে তারা বিভিন্ন প্রজেক্ট খুলে তাদের গ্রাহক বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালায়।শেয়ার ছাড়ার কোন আইনগত বৈধতা না থাকলে তারা শেয়ার ছেড়ে জনগণের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।গ্রাহকের কিছু না হলেও মোটামুটি রফিকুল আমিন সাহেবরা রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যান। যার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে ডেসটিনির কাছে ১৪০০কোটি টাকার পুজি জমা হয়।এছাড়া বর্তমান তদন্তে ডেসটিনির বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।এই ছাড়া জনগণের টাকা দিয়ে কোম্পানীটি টেলিভিশন চ্যানেল,পত্রিকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যায়।দ:খজনক হলেও সত্য যে এই কোম্পানীর সাথে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্তা ব্যাক্তি জড়িত রয়েছে।২০০৬ সাল থেকে আরো কিছু এমএলএম কোম্পানী তাদের ব্যবসা শুরু করে।বর্তমানে ডেসটিনি ছাড়াও নিউওয়ে,টিবিআই,ভিসারেব,এইমওয়ে,স্পিক এশিয়া,রিচ,ইলিংক,ইউনিপে ও আপট্রেন্ড টু ইউসহ প্রায় ৭০টি এমএলএম কোম্পানি কাজ করে যাচ্ছে।এদের মধ্যে ইউনিপে টু ইউ বর্তমানে তাদের কাজকর্ম স্থগিত রেখেছে।তারা কোটি কোটি টাকা নিয়ে অনেক মানুষকে সর্বশান্ত করেছে।আমি মনে করি MLM বলতে Multi level marketing নয় আমি মনে করি Men life murder।প্রতিটি এমএলএম কোম্পানী তাদের দলে ভিড়ানোর জন্য অনেক কৌশল প্রয়োগ করে।যেমন তারা মানষ ভিড়ানোর জন্য যাদেরকে টার্গেট করে প্রধানত তারা হলো,সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যাক্তি,নেতা,প্রশাসনিক কর্মকর্তা,ডাক্তার,আইনজীবি,ব্যবসায়ী,বিশ্বস্ত ব্যাক্তিবর্গ,মসজিদের ঈমাম,শিক্ষক এবং কিছু পরিচিত মুখ।যার মাধ্যমে তারা অন্যদের ভিড়ানোর জন্য রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করে।এবং এরা বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে তারা গ্রাহক ভিড়ায়।এইজন্য তাদের একটি পদ্ধতি অনুসরন করে তা হলো:FORM যার পূর্ণাঙ্গ অর্থ হলো,F=Family/Friend,O=Organisation,R=Relative, M=Man।তাদের মধ্যে আবার যারা বাকপটু মূলত তাদেরকে কোম্পানীর প্রশিক্ষক বা Trainer বলে।তাদের পলেসি অনেকটা বৃষ্টি যেদিকে ছাতা সেদিকে।সবচেয়ে খারাপ যেই দিক তা হলো তারা ধর্মকে ব্যবহার করে।যখন যাকে যে ভাবে বসে আনতে হয় তখন তাকে সেইভাবে বুঝানো হয়।বিশাল বিশাল সপ্ন দেখিয়ে অল্পদিনে কোটিপতি হওয়ার চমক দেখিয়ে তারা মানুষদের কোম্পানীতে মেম্বারশীপ নেয়ার আহবান করে।তারা অনেক সময় দৃশ্যমান তেলেসমাতি পন্য দিয়ে অথবা অদৃশ্যমান পন্য দিয়ে ফ্রি মেম্বারশীপ অথবা পণ্যের বিনিময়ে মেম্বারশীপ দেয়ার অফার করে।তারা মানুষ ভিড়ানোর জন্য একেকবার একেক চমকপ্রদ প্যাকেজ নিয়ে আসে।দূর্ভাগ্যবসত আমাকেও এমএলএমের ফাঁদে পড়তে হয়েছে।তবে সেই কোম্পানির নাম হলো,আপট্রেন্ড টু ইউ।তারা আবার কিছু তেলেসমাতি পণ্য নিয়ে কাজ করে।আমার এক বন্ধু যাকে বিশ্বাস করতাম,সেই আমাকে তার প্রতি যে বিশ্বাস সেটাকে কাজে লাগিয়ে কোম্পানীতে ইনভাইট করে।সে সময় আমি অনার্স ফাইনাল দিয়েছিলাম।আর তখন পকেট খরচের জন্য ছোটখাট পারটাইম জব খুজছিলাম।আর এই সুযোগটাকে কাজে লাগালো।বন্ধু বললো তোর চাকরির ব্যবস্থা আমি করবো।যাহোক তাদের অফিসে নিয়ে গেল,লিডারদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।লিডারের চমকপ্রদ কথা শুনে একজন বেকার যুবকের যা হয় তাই হলো।টাকা ছিলনা সে আমাকে কিছু ধার দিলো আর কিছু টাকা দিয়ে ঘুঘুর ফাঁদে পা দিলাম।এরপর কয়েকদিন তাদের প্রোগ্রামগুলোতে উপস্থিত হলাম।এবং আমার পরিচিতর মাধ্যমে আরো অনেককেই কোম্পানীতে জয়েন করালাম।কিন্তু মনভোলানো কথা দিয়ে আর কতদিন।সত্য আমার কাছে দিন দিন উন্মোচিত হতে লাগলো।আমার স্বার্থপর বন্ধুর অনেক মিথ্যা তথ্য আমার কাছে ধরা পড়লো,সে বললো তাদের যাদুকরি পানির বদৌলতে তার মার নাকি ডায়বেটিস ভাল হয়ে গেছে,আর তাই আমি ও আমার মায়ের জন্য যাদুকরি পানির জার কিনলাম।যা কিনা জমজম ক্থপের পানির সমতুল্য।ব্যবসার জন্য মাকে নিয়েও মিথ্যা বলবে আমার বন্ধু তা আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল।তাদের যাদুকরি কিছু পণ্য যেমন,ব্রেসলাইট,হরমোন ব্যালেন্স করার ক্রীম,বিষেশ ধরনের কফি,ম্যাজিক পানি ইত্যাদি।এরা গ্রাহকের বিশ্বাস কাড়ার জন্য আল্লাহর নামে কসম করতেও দ্বিধা করেনা।হায়রে অর্থ! তোর জন্য মানুষ কত নিচে নামতে পারে।এদের ব্যাবসার সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো,যত লোক তাদের কোম্পানীতে জয়েন করে তাদের ৯০%নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় তাদের মরিচিকার সিস্টেমে পড়ে।আর এই ৯০% লোকের মূলধন আজীবনের জন্য তারা ভোগ করে।যেমন আমি তাদের প্রতারনা বুঝার পরে আমি যেমন নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলাম পাশাপাশি আমার সাথে যারা জয়েন করলো তারা ও নিষ্ক্রিয় হয়ে গেল।আর তাদের যে ডান বাম পলেসি তা মেইনটেইন করতে নাপারার কারনে আমার ও আমার সাথে যারা জয়েন করেছে সবার পুজি তাদের হাতেই পড়ে রইল।এইভাবে কোম্পানীগুলো রাতারাতি আঙ্গুর ফুলে কলা গাছ হয়ে যায়।তাদের ইনভাইটের চমৎকার থিউরি আছে।তা হলো:১০:৬:৪:১।অর্থাৎ ১০ জনকে দাওয়াত দিলে ৬জন গ্রহণ করবে,এরমধ্যে ৪ জন প্রোগ্রামে উপস্থিত হবে,অবশেষে ১জন অবশ্যই জয়েন করবে।তারা গ্রাহকদেরকে বাগে আনার জন্য বিভিন্ন মোটিভেশন প্রোগ্রাম করে।অনেক রঙ্গিন সপ্ন দেখিয়ে লোক ভিড়ায়।বিদেশে বিশেষ করে(মালয়শিয়া)যাওয়ার সপ্ন দেখায়।আমার এক বন্ধু কৌতুক করে বলে যে "এমএলএমের ফাঁদে পড়ে,সে তার ক্ষতি একটু কমানোর জন্য আরেকজনকে ফাঁদে ফেলে"।আর এইভাবে চক্রাকারে লোকদের এমএলএমের ফাঁদে পড়তে হয়।কথায় আছে,"কারো সাথে শত্রুতা থাকলে বিয়ে করিয়ে দাও,অথবা নির্বাচনে দাড় করিয়ে দাও,অথবা বাড়ী বানাতে উৎসাহিত করো।আমি আরেকটি যোগ করে বলবো,কারো ক্ষতি করতে চাইলে MLM এ জয়েন করিয়ে দাও"।এমএলএম যারা করে তাদের সম্পর্ক হয় কৃত্রিম ধরনের।এরা আঠার মতো গ্রাহকের পেছনে লেগে থাকে,যতক্ষন পর্যন্ত তাদের সদস্য না হয়।তাদের সম্পর্ক করার মূল কারণই হলো তাদের কোম্পানীতে জয়েন করানো।তাদের মূল কথা হলো,কমিশন ছাড়া কারো উপকার করা যাবে না।আর কোম্পানীতে কাউকে রেফার করলেই কমিশন পাওয়া যাবে।তারা প্রতিনিয়ত মানুষের সাথে বিভিন্ন ভাবে প্রতারণা করে যাচ্ছে।ধর্মকে এবং ধমীয় ব্যাক্তিত্বদেরকে তারা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে।যেটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রতারণা।হাদীসে আছে,"মান গাস্‌সা ফালাইসা মিন্না"অর্থাৎ যে প্রতারণা করে সে আমার দলভূক্ত নয়।মানুষের বেচে থাকার জন্য টাকার প্রয়োজন,তাই বলে প্রতারণা করে বড় হওয়ার কোন দরকার নেই।মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে কাউকে ফাঁদে ফেলা চরম অসভ্যতা।তাদের এই ফাঁদে কতজননা তাদের সর্বস্ব হারিয়েছেন তার কোন ইয়ত্তা নেই।যদি কোন মানুষের ব্যাক্তিত্ব থাকে তাহলে তিনি এমএলএম কোম্পানীতে জয়েন করবেন না।এখানে গেইনার হতে হলে অবশ্য ছেছড়া হতে হবে।কারণ কথার ফুলঝুরি দিয়ে মানুষকে সাময়িকভাবে বোকা বানানো যায় কিন্তু সত্য একদিন প্রকাশিত হবেই।আল্লাহ আমাদের সবাইকে এমএলএমের শুভংঙ্করের ফাঁকি থেকে রক্ষা করুক।বর্তমানে দেশের প্রায় ৩কোটি লোক এমএলএমের ফাঁদে রয়েছে।তাই সরকারের উচিত এই সকল কোম্পানীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া।এটা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।


মুহাম্মদ নূরুল আবছার(টিপু)
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×