somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

সুবিচার যখন প্রধান নাগরিক প্রত্যাশা

০৪ ঠা মার্চ, ২০০৮ সকাল ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুবিচার যখন প্রধান নাগরিক প্রত্যাশা
ফকির ইলিয়াস
================================
দুর্নীতির অভিযোগে ফেঁসে যেতে পারেন নিউইয়র্কের সাবেক পুলিশ কমিশনার বার্নার্ড কেরিক। তার বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। ইন্টারনাল রেভিন্যু সার্ভিস (আইআরএস) বলেছে, তার আয়ের সঙ্গে ট্যাক্স প্রদানের সঙ্গতি নেই। এসব অর্থ কী করে অবৈধভাবে অর্জন করা হয়েছে? এমন অনেক প্রশু এখন মুখে মুখে। যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন তবে যাবজ্জীবন কারাভোগ করতে হতে পারে। ইউএস অ্যাটর্নি বলেছেন, তিনি পুলিশের চিফ ছিলেন। সেই ব্যক্তিই যদি এমন দুর্নীতিগ্রস্ত প্রমাণিত হন তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিই মানুষ বিশ্বাস হারাবে। বার্নার্ড কেরিক নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র জুলিয়ানির ঘনিষ্ঠ জন। নাইন-ইলেভেনের সময়ও তিনিই ছিলেন পুলিশ কমিশনার। পরবর্তী সময়ে অবসরে যাওয়ার পর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়ের প্রধান অর্থাৎ সেত্রেক্রটারি অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি হিসেবেও কেরিকের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। সে সময়ই তার বিরুদ্ধে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ আসে। বার্নার্ড কেরিক তার নাম প্রত্যাখ্যান করে নেন। কিন্তু তদন্ত তার পিছু ছাড়েনি। সেসবের অংশ হিসেবেই এখন তিনি দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পথে। মামলার রায়, আপিল শুনানি সবকিছুর আইনি প্রত্রিক্রয়া সমাপ্ত হলে রায় তার অনুকূলে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই।
বার্নার্ড কেরিকের নাম বাদ পড়ার পরই মাইকেল শের্টফকে প্রেসিডেন্ট বুশ হোমল্যান্ড সিকিউরিটির প্রধান হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। যিনি এখনো এই পদে বহাল আছেন। এদিকে কেরিকও একজন সুপরিচিত রিপাবলিকান ধনপতি। পুলিশের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু পুলিশ কমিশনার হিসেবে তিনি কি অবৈধভাবে আয় করেছেন? এসব প্রমাণের জন্যই সরকার পক্ষ এখন নেমেছে কোমর বেঁধে। এই যে আইনি প্রক্রিয়া তা সবার জন্যই সমান থাকা বাঞ্ছনীয়। এর আগে ইন্টারনাল রেভিন্যু সার্ভিসের প্রধান রক্ষক অ্যালেন হ্যাভেসির বিরুদ্ধেও এ রকম অভিযোগ এসেছিল। তিনি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। অপরাধ শাস্তিযোগ্য হওয়ায় তাকেও শাস্তি পেতে হচ্ছে। এই যে ঘটনাবলি তা শুনে কেউ কেউ হয়তো বলবেন, যুক্তরাষ্ট্রে তো দুর্নীতি আরো অনেক হচ্ছে। সব দুর্নীতির বিচার হচ্ছে কি? বিচার যে হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। দু’চারজন রাঘববোয়ালকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর মাধ্যমে যু্ক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ এই বিশ্বাস স্থাপনে সমর্থ হয়েছে যে, মানুষের আস্থা নিয়েই চলেছে স্বাধীন বিচার বিভাগ।
বাংলাদেশেও সদ্য স্বাধীন বিচার বিভাগ যাত্রা শুরু করেছে। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এই যাত্রা শুরুকে স্বাগত জানাতেই হবে। প্রশ্ন আসতেই পারে, এরপর মানুষ সুবিচার কিংবা দ্রুত বিচার পাবে কি-না। কিংবা মানুষের পক্ষে ন্যায়বিচার সুপ্রতিষ্ঠিত হবে কি-না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সঙ্গে গ্র্যান্ড জুরিদের মতামতের প্রতিফলন ঘটানোটাও জরুরি বলে আমি মনে করি। উন্নত গণতান্ত্রিক বিশ্বে জুরি ব্যবস্তা ক্রমশ প্রাধান্য পাচ্ছে। এতে নাগরিক দায়িত্ব যেমন প্রতিষ্ঠিত হয় তেমনি হয় ভারসাম্য রক্ষা করে সুবিচার প্রতিষ্ঠা। এ প্রসঙ্গে আরেকটি কথা না বললেই নয়। তা হচ্ছে, বাংলাদেশে জমি-জিরাত সম্পর্কিত দেওয়ানি মামলাগুলোর কথা। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশে এসব দেওয়ানি মামলা যুগের পর যুগ আদালতে চলতেই থাকে। একটি মামলাকে ‘দাদা-বাপ-পুত্র’ এ রকম তিন পুরুষও চালিয়ে গেছেন কিন্তু মামলার সুরাহা হয়নি এমন নজিরও আমরা দেখেছি। বাংলাদেশের আইনে ফৌজদারি মামলা যতটা গুরুত্ব পায়, দেওয়ানি মামলাগুলো এর চেয়ে কম গুরুত্ব পেয়ে থাকে। এ অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন প্রয়োজন। কারণ, যিনি বিচারপ্রার্থী তিনি সমস্যাটির সমাধান এবং দ্র“ত সুবিচার পাওয়ার জন্যই আইনের আশ্রয় নেন। এক্ষেত্রে তা ঝুলে থাকবে কেন? কেন কালক্ষেপণ একজন নাগরিককে রাখবে মানসিক অশান্তিতে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাপটে বলা যায়, এখানে জমিজমা, রিয়েল এস্টেট সম্পর্কিত মামলাগুলো সিভিল ল’র অধীনে গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচিত হয়। বরং অবৈধভাবে দখলদার কেউ ত্রিক্রমিনাল অ্যাক্টে দোষী সাব্যস্ত হতে পারে। ওয়ান-ইলেভেনের পর আমরা ইদানীং একটি কথা প্রায়ই শুনি। তা হচ্ছে সবাই-ই যদি দোষী হয়ে গেল তবে বাংলাদেশে নীতিবান রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী কারা? আমার মনে হয়, এ প্রশু যারা তোলেন তারা শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চান। তাহলে কি আমরা ধরে নেব ১৪ কোটি মানু্ষের রাষ্ট্রে কোনো নীতিবান নেই? অবশ্যই আছেন। আর আছেন বলেই এই প্রজন্ম সোনালি সূর্যের স্বপ্ন দেখে। এখনো মানুষ প্রত্যয় নিয়ে বলে, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় মানুষ। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, দুর্নীতিতে বাংলাদেশ বারবার চ্যা¤িক্সয়ন হওয়ার পরও দেশের শাসকশ্রেণী বিষয়টিকে মোটেও গুরুত্ব দেয়নি। দখলের মাত্রা এত চরমে পৌঁছেছিল, এক সময় এই রাষ্ট্রটিকেই কেউ কেউ নিজেদের নামে লিখিয়ে নেয় কি-না তা নিয়ে শংকা দেখা দিয়েছিল। রাস্তা বন্ধ করে যারা ক্রিকেট খেলে উল্লাস নৃত্য করেছিল, কিংবা যারা ট্রাক তুলে দিয়েছিল গণমানুষের ওপর এরা কোন শ্রেণীর মানসিকতা পোষণ করতো তা দিনে দিনে অনেক খোলসা হয়েছে। জরুরি কথা একটাই, রাষ্ট্রে যদি সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হয় তবেই দুর্নীতি সিংহভাগ কমে যেতে বাধ্য। আর তা হতে হবে যে কোনো রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে। পৃথিবীর দেশে দেশে জুলুমকারী জালেমরা আছে। কিন্তু বিশ্বের আপামর মানুষই শান্তিকামী। অধিকাংশ মানুষই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। তা প্রমাণিত হয়েছে, এখনো হচ্ছে দেশে দেশে, যুগে যুগে।
-------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক সমকাল। ঢাকা। ৪ মার্চ ২০০৮ মংগলবার প্রকাশিত






২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×