somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথার কথা

০৪ ঠা মার্চ, ২০০৮ রাত ৩:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজধানী ঢাকা থেকে বেশ খানিকটা দূরে ব্রাহ্মন বাড়িয়ার নাসির নগর । প্রকৃতপক্ষেই পৃথিবীর তিন ভাল জল ও একভাগ স্থল – নাসির নগর এলে বোঝা যায় । চতুর্দিক জলবেষ্টিত এই এলাকায় বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া আর কোন ভাবেই যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব নয় । বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত খন্ড খন্ড ভূমি ছাড়াও রয়েছে প্রচন্ড কষ্ট আর সদাসংগ্রামী চর এলাকা । শহর ও অন্যান্য জনপদের সাথে যোগাযোগ সংকট সংকুল হওয়ার কারনেই কিনা কে জানে , উন্নয়নের স্পর্শ এই এলাকায় লেগেছে কম। লোক মুখে অভিযোগ আছে , বাংলাদেশের সরকারী লোক ও কার্যক্রমও নাকি এই এলাকা মোটামুটি এড়িয়ে চলে । আমি যখন প্রথম নাসির নগর যাই , তখন ও ব্রীজ তৈরী হয়নি । নদী পার হতে হয় এক অদ্ভুত ধরনের বেডপ আকৃতির নৌকায় করে । একি নৌকায় মানুষ, গরু, মোটর সাইকেল , মাছ – মুরগী – সবই পারাপার হয় । নদীর এই পার পর্যন্ত অফিসের গাড়ি নামিয়ে দিলে নৌকায় চড়ে ঐ পার আর তারপর টেম্পো চড়ে অনেক দূর ভিতরে নাসির নগর ।

প্রাইমারী স্কুলের বাচ্চাদের বার্ষিক সভা হচ্ছে । কিশোর কিশোরীদের নেতৃত্বে সেখানে প্রায় ২০০ বাচ্চার সমাগম হবে । এরা সবাই , বিভিন্ন বিদ্যালয়ের “শিশু সংগঠনের নেতা-নেত্রী”। বছর শেষে বার্ষিক কার্যক্রমের হিসাব যেমন মেলাবে , তেমনি নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেবে; পারস্পরিক আনন্দ , হতাশা এবং লব্ধ জ্ঞান একে অপরের সাথে । আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো , সংগঠিত হওয়ার ভিতর দিয়ে এই বাচ্চারা নেতৃত্ব এর গুনাবলীর পাশাপাশি কেমন “লাইফ স্কিলস” বা জীবন যাপনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা লাভ করলো –সেইটা দেখা । যারা সভা করছে , তারা অনেক বছর হলো নেতৃত্ব দেওয়ার কাজ করছে । পুরো অনুষ্ঠান তাই দারুন সংগঠিত । হঠাৎ কান আর মনযোগ কেড়ে নিলো একটা মেয়ে ।

স্থানীয় একটা স্কুলের বাচ্চা । গল্প এবং বক্তব্য লিখতে বেশ পারদর্শী । আমি ভাবলাম ছোটদের কোন গল্প টল্প পড়ে শোনাবে বোধ হয় । ওমা , দেখি সে বক্তৃতা দিতে উঠেছে । চারিদিকে রথী মহারথীরা বসা। ছোট্ট খাট্ট মিষ্টি মেয়েটা সামান্যতম জড়তাবিহীন ভাবে খুব সুন্দর বক্তৃতা দিয়ে গেলো । আমি অবাক ।
আবার দেখা ঢাকায় । আমার বই, আমি লিখি – অনুষ্ঠানে সেলিনা হোসেন, মুস্তফা মনোয়ারদের মত অসাধারন বক্তা এবং দেশী বিদেশী বিভিন্ন “এক্সপার্ট”দের সামনে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ননা করে গেলো অবলীলায় । জীবনে যৎসামান্য যেই সুযোগ হয়েছে , ভালো ভালো বক্তব্য শোনার – তার অভিজ্ঞতায় জানি , পাবিলিক স্পিকিং একটি দুর্লভ গুন । গুছিয়ে বক্তৃতা দেওয়া নাকি লোক জন রীতিমত হাজার হাজার ডলার খরচ করে ট্রেনিং নেয় । তার পরেও সবাই সমান দক্ষ নয় । সেইখানে এই ১০ বছরের মেয়েটা যেই ভাবে , যেই ভাষায় , সম্পূর্ণ গুছিয়ে তার কথা বলে গেলো – হঠাৎ শুনলে মনে হবে ৩০ বছরের কেউ কথা বলছে । আপনারা না শুনলে , না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না , কতটা মেধাবী এই বাচ্চাটা ।

উন্নত বিশ্বের রাষ্ট্র গুলো এই ধরনের স্পেশাল চাইল্ডদের বাড়ি থেকে নিয়ে “বিশেষ মেধাবীদের স্কুলে” রাখে । বিশেষ পরিচর্যায় তাদের মেধাকে বিকাশের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয় । বাংলাদেশের এই ধরনের কোন কার্যক্রম নেই । অথচ আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে কত না মেধাবী শিশু যারা সামান্য পরিচর্যা পেলে একদিন পৃথিবী বিখ্যাত হতে পারে ! হতে পারতো! অথচ আমাদের দেশের মেধা গুলো ভাঙ্গা স্কুল কলেজে পড়ার কলঙ্ক মাথায় নিয়ে কেউ ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রী, কেউ ছাপাখানার কর্মী , কেউ কম্পিউটার অপারেটরের চাকুরী করে। আমার দেখা মেয়েটির নাম কথা । তার বাবা মাকে বলে এসেছি , ওর পড়ালেখার জন্য , মেধা বিকাশের জন্য যা কিছু সাহায্য করার সাধ্য আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন , আমি চেষ্টা করবো। আমি হয়ত একটা বাচ্চার বেশি দায়িত্ব নিতে পারবো না । এই ব্লগে যারা “মেধার শিখরে বিচরনের দারুন গর্ব করার” স্থানটি অর্জন করেছেন , তাদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ , কে কার চেয়ে বড় সেইটা প্রমানের প্রতিযোগীতা না করে , “কথার মত মেধাদের কারো দায়িত্ব নেবেন”?

সত্যি যদি আপনারা ইয়েল, হার্ভার্ড , এম আই টি , কলম্বিয়ার মত জগত বিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল সব ব্যক্তিত্ব হয়ে থাকেন , একটা মেধাবী বাঙালী বাচ্চাকে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছানোর সুযোগ করে দেবেন ? বেশি না, মাত্র একজনকে ?

হার্ভার্ডের পাবলিক হেলথের ২০ জন স্টুডেন্টের সাথে ক্লাস করা এবং প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ হয়েছিলো । সুযোগ হয়েছিলো ক্যারোলিনিস্কার স্টুডেন্টদের টানা এক মাস কাছে থেকে যাচাই করার । একটা সত্যি কথা কি জানেন ? বাঙ্গালী ছাত্র ছাত্রীদের চেয়ে খুব বেশি আহা মরি মরি মেধাবী মনে হয়নি । ওরা কেউ মঙ্গল গ্রহে জন্মায়নি । বরং ওদের চেয়ে অনেক বেশি মেধাবী বাঙ্গালী ছাত্র ছারীদের দেখেছি অকালে ঝরে যেতে। আমাদের সাথে , তারপরেও ওদের প্রধান পার্থক্য হলো , হার্ভার্ড গ্রাজুয়েট বলে , আমেরিকান নাগরিকত্বের জোরে সারা পৃথিবীর সব বড় বড় পদ গুলো ( জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা , বিশ্ব ব্যাংক , আই এম এফ ইত্যাদি ইত্যাদি ) ওরাই দখল করবে । জীবনে কোন দিন বাঙালী মায়েদের ধারে কাছে না থেকেও “মাতৃ পরিচর্যার প্রেস্ক্রিপ্সহন”টা ওরাই লিখবে। আর আমাদের গরীব দেশের মেধা গুলো পেটের দায়ে ওদের বেনিয়া কোম্পানি গুলোর বেতন ভূক কেরানী হওয়ার দোষে বার বার অপমানিত হবে আমাদেরই হাতে ।

আমেরিকা , কানাডা , ইউরোপের শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় গুলোর মেধাবী গ্রাজুয়েট হওয়ার অহংকারে কেউ যখন আমাদের মুখে লাথি মার , তখন কি এক বারো মনে পড়ে , আধা বেলা খেয়ে না খেয়ে কোন মতে জন্ম দিতে পারা অপুষ্ট মা, দুধ – মাছ – মাংস না খাওয়াতে পারা অক্ষম মা , নামী দামী স্কুল কলেজে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে পড়াতে না পারা দরিদ্র মায়ের মুখের উপর গিয়ে লাথিটা পড়ছে !

কাকে ন্যাংটা করার আনন্দে বিভোর তুমি ? তৃতীয় “শ্রেনীর দেশ বাংলাদেশের “

ন্যাংটা শরীরের কোন চাষী ক্ষেতে হাল ধরে ছিলো বলে তোমার পেটে ভাত জুটেছিলো ।
ন্যাংটা শরীরে কোন তাতী সুতো বুনেছিলো বলে তোমার শরীরে কাপড় ঊঠেছিলো ।
প্রায় ন্যাংটা, মাত্র ১৫০০ টাকা বেতনের, কোন দরিদ্র শিক্ষক তোমাকে একদিন যত্ন করে পড়িয়েছিলো বলেই আজ তুমি মস্ত বড় ডাক্তার, বিজ্ঞানী , ইঞ্জিনিয়ার ।

এই চাষী , তাতী, শিক্ষক - এরা কেউ কোন দিন পিয়ন তো দুরের কথা , হারভার্ড , ইয়েল, কলম্বিয়ার পায়খানা পরিষ্কার করার চাকুরীও পাবে না । সেই ভিসা পাওয়ার যোগ্যতাই নেই তাদের , হবেও না ।
৩৯টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×