somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাথাপিছু আয়ের সাথে পালা দিয়ে বাড়ছে ধনী-গরীব বৈষম্য

০২ রা মার্চ, ২০০৮ দুপুর ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির গতি ধারার সঙ্গে পালা দিয়ে বাড়ছে ধনী-গরীব বৈষম্য। ২০০৫ সালে পরিচালিত খানা আয়-ব্যয় জরিপ অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশেরও বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। দেশের সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ চরম দারিদ্রপীড়িত আয় ২০০০ সালে মোট জাতীয় আয়ের দশমিক ৯৩ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০০৫ সালে দশমিক ৭৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর বিপরীতে ২০০৫ সালে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ধনী পরিবারের আয় মোট জাতীয় আয়ের ২৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
অদূর ভবিষ্যতেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরে প্রথমবারের মতো মাথাপিছু জাতীয় আয় ৫শ’ মার্কিন ডলার
ছাড়িয়ে গেছে। সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে দেশে মাথাপিছু জাতীয় আয় ৫শ’ ২০ ডলারে দাঁড়াবে। গত অর্থবছরে
মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিল ৪শ’ ৭৬ মার্কিন ডলার। একইসঙ্গে চলতি অর্থবছরে মাথাপিছু জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি) ৪শ’ ৪৭ ডলার
থেকে বেড়ে ৪শ’ ৮২ ডলারে দাঁড়াচ্ছে। গত এক দশক ধরেই বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের ওপরে রয়েছে। র্সবশেষ ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই আয় বৃদ্ধির ফল মূলত ভোগ করেছে সমাজের মুষ্টিমেয় অংশ। সাধারণ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের আয় ও জীবনযাত্রার মান এর ফলে হয় বৃদ্ধি পায়নি বা পেলেও তার ভাগ ছিল বড়লোকের ভাগের তুলনায় অনেক কম। সবচে’ দরিদ্র ২০ শতাংশ মানুষ দেশের মোট আয়ের মাত্র ৯ শতাংশ ভোগের সুযোগ পাচ্ছে। অথচ সবচে’ ধনী ২০ শত মানুষ ভোগ
করছে ৪৬ শতাংশ আয়। পরিবারভিত্তিক আয় বণ্টনের ক্ষেত্রে দেখা যায়, দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক জাতীয় আয়ের মাত্র ২০.৩২ শতাংশের অংশীদার। ১৯৯৫ সালে দেশে শীর্ষ পাঁচ শতাংশ ধনী ও সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ দরিদ্রদের আয়ের ব্যবধান ছিল ২৭ঃ১। মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে ২০০০ সালে এই ব্যবধান প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ৪৭ ঃ ১। দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির সাথে সাথে ধনী-গরীবের এ ব্যবধান ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণ সরকার দারিদ্র্য বিমোচনে যে নীতি বা পরিকল্পনা গ্রহণ করছে তা দারিদ্র্যের আয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারছে না। সরকারের সব নীতির
লক্ষ্যই সংকট মোকাবেলা বা নিরাপত্তা জাল তৈরি। কাগজে-কলমে ব্যাপক প্রচেষ্টা দেখা গেলেও দরিদ্র মানুষের আয় বাড়ছে না। অথচ মূল্যস্ফীতি আর চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ব্যাপক হারে বাড়ছে ব্যয়। ১৯৯৯ সালের তুলনায় ২০০৪ সালে দেশে গরীব মানুষের মাসিক ব্যয় বেড়েছে গড়ে ৫৬ টাকা। আর এ সময়ের মধ্যে আয় বেড়েছে মাত্র ১৯ টাকা।

১৯৭৩ সালে দেশে মাথাপিছু গড় আয় ছিল ১শ’ ১০ ডলার। সাড়ে তিন দশকে গড় আয় বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে সালে ৫শ’ ২০
ডলারে উন্নীত হয়েছে। মূলত উচ্চবিত্ত মানুষের আয় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই গড় আয় বাড়ছে। সামগ্রিকভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর
আয়ে তেমন কোনও পরিবর্তন আসেনি। এর মূল কারণ জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশই জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আয়ের মতো কাজের
সঙ্গে যুক্ত হতে পারছে না। কর্মস্বল্পতা এবং সীমিত আবাদি জমির কারণেই বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির সাফল্য কঠিন হয়ে পড়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পালা দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়ায় প্রতিনিয়ত লম্বা হচ্ছে বেকারত্বের মিছিল। মৌলিক চাহিদা পূরণের মতো আয়ের পথ না থাকায় বাড়ছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা। কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে একের পর এক কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও বেকারত্বের অভিশাপে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে মুক্তি পাচ্ছে না দেশ। কর্মসংস্থানের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের সুযোগ সৃষ্টি করাই দারিদ্র্য নিরসনের একমাত্র পথ। কিন্তু সরকারের সব নীতির লক্ষ্যই জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি। পিআরএসপির ঘোষণায় বলা হয়েছে, যদি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে উন্নীত করা যায়, আয় বৈষম্য যদি কমানো সম্ভব নাও হয় এবং তা যদি বর্তমানে বিদ্যমান প্রবণতাই অনুসরণ করে, পাশাপাশি সরকার যদি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করে এবং ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি যদি অব্যাহত থাকে তাহলেই দারিদ্র্য ২০১৫ সালের মধ্যে অর্ধেকে নেমে আসবে। কিন্তু এই
গতানুগতিক কর্মসূচিও অবশ্য সরকার দক্ষতার সঙ্গে পালন করতে পারছে না। কাক্সিক্ষত হারে দারিদ্র্য না কমলেও প্রতিবছরই দারিদ্র্য বিমোচন খাতে ব্যয় বাড়ছে। ২০০৭-০৮ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে,
অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ৪৫ হাজার ৩শ’ ৯৪ কোটি টাকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখবে যা বাজেটের মোট
বরাদ্দকৃত অর্থের ৫৭ শতাংশ। এরমধ্যে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ সামাজিক ক্ষমতায়ন ও নিরাপত্তা বেষ্টনির অনুকূলে সরাসরি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর
কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়াও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বাজেটে ঋণ প্রদান ও বিশেষ তহবিল গঠনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এর আগে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে দারিদ্র্য নিরসন কার্যক্রমে ব্যয় দেখানো হয়েছিল ৫৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০০৫-০৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত
বাজেটে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দারিদ্র্য নিরসন কার্যক্রমের জন্য উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন বাজেটের প্রায় ৫৪ শতাংশ ব্যয় হবে বলে অর্থমন্ত্রী দাবি
করেছিলেন। কিন্তু ওই দু’টি বাজেটে শেষ পর্যন্ত দারিদ্র্য বিমোচনে কতো ব্যয় হয়েছে সরকারের দিক থেকে সে ধরনের কোনো হিসাব পাওয়া
যায়নি। হিসাব করে দেখা গেছে, ২০০০-০১ অর্থবছরে দারিদ্র্য বিমোচনে প্রত্যক্ষ অবদান রাখে এ ধরনের খাতে জাতীয় বাজেটে মোট বরাদ্দ ছিল ২
হাজার ৯শ’ ৬২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ২০০৪-০৫ অর্থবছরে এ বরাদ্দ বেড়ে ৩ হাজার ৮শ’ ১০ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। ২০০৫-০৬
অর্থবছরের বাজেটে এ বরাদ্দ আরও বেড়ে ৪ হাজার ৬শ’ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। কিন্তু দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তুলনায় এ বরাদ্দও খুবই সামান্য। ২০০০-০১ অর্থবছরে দারিদ্র্য বিমোচনে মাথাপিছু বরাদ্দ ছিল ৪শ’ ৫৭ টাকা ৫৭ পয়সা। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে এ বরাদ্দ মাথাপিছু
৬শ’ ১ টাকা ৯৬ পয়সা। বাজেটে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য যেসব কর্মসূচিতে প্রত্যক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়সামাজিক কাঠামোর দুর্বলতার কারণে তা গরিব মানুষের কাছে পৌঁছে না। অংকের হিসাবে যত বড় বরাদ্দই দেখানো হোক না কেন অর্থ ব্যয়ের গতানুগতিক কাঠামো বজায় রেখে দারিদ্র্য পরিস্থিতির ইতিবাচক কোনও পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। গত ৫ বছরের বাজেট বিশেষণ করে দেখা গেছে, এগুলোর কোনোটিকেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনের নতুন কোনো দিকনির্দেশনা ছিল না। ফলে সরকারের দিক থেকে দারিদ্র্য বিমোচনে বাজেটে বিশাল বরাদ্দের দাবি করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তা শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যহীন প্রচেষ্টা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতানুগতিক বরাদ্দ ও ব্যয়ের ধারা অব্যাহত থাকায় দারিদ্র্য বিমোচনে তা বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। বরাদ্দকৃত অর্থ দারিদ্র্য বিমোচনে কতোটা সহায়ক হবে তা নির্ভর করে এ অর্থ সরাসরি গরিব মানুষের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে কিনা তার ওপর। কিন্তু দুর্নীতি, দলীয়করণ ও পরিকল্পনার ত্র“টির কারণে বরাদ্দকৃত অর্থের সবটুকুও দরিদ্র মানুষের
কাছে পৌঁছে না।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×