somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেরালী ষোল-শহীদ পট (সকল শহীদ স্বরণে)

০১ লা মার্চ, ২০০৮ ভোর ৬:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শেরালী পনেরো

শহীদ পট
ভরা যৌবন পেরিয়ে বর্ষা এখন বিজ্ঞ গৃহিণী। ধীরে ধীরে আর সব রমনীয় ভাটার অমোঘ টানে ভেসে যাবে। সঞ্চিত অবিজ্ঞতার মত ঘন হচ্ছে জল। প্রসুত মাছের পোনারা আগামী বরষায় প্রজনেনর লোভে বেড়ে উঠছে। আমনের গলা ফুলেছে। সাবধানী চাষী দু"একটা ধানের গলা ছিড়ে আগমনী ফসল কল্পনা করে নিচ্ছে। বৃষ্টির উপদ্রব আর নেই। প্রকৃতি এখন কত শান্ত!
অশান্ত শুধু পাক হানাদার আর রাজাকরদের মন। মুক্তি ফৌজের হামলা এখন যখন তখন যেখানে সেখানে ঘটতে পারে। এত ভয় নিয়ে মানুষ শান্ত থাকে কি করে! অশান্তির কারনেই অতিরিক্ত সতর্কতা। খুব বেশী সতর্ক থাকতে গেলেই ভুলও খুব বেশী হয়। অতর্কিত আক্রমনে প্রতিদিনই পাক বাহিনী বা দু"একজন রাজাকার মারা যাচ্ছে।
এমন সাফল্যে অতিউৎসাহী হয়েই নজরুল এই ভুলটা করে বসল। পিতার খূনী লোকমান রাজাকার আর পাক হানাদারদের আক্রমন করল। সাথী যোদ্ধারা মোক্ষম সময়ের অপেক্ষায় থাকার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু নজরুলের বুকের আগুন তাতে আরো জ্বলে উঠল। তাকে নেভাবে কে? পিস্তলের সব গুলি শেষ হলে, গ্রেনটটা ছুড়ে দিল। তাতে শত্রুর সব বুংকার ধংশ হয়নি। অথচ নজরুলের হাতে আর কোন অশ্র অবশিষ্ট নেই। বুকের উপর রাইফেল তাককরে নজরুলের হাত বেধে ফেলল লোকমান রাজাকার। কমান্ডারের ইশারায় নজরুলকে মারা হলনা। বোয়ালমারী বাজারের কেম্পে নিয়ে আসা হল। রাজাকার নজরুলের সব পরিচয় প্রভু পাক বাহিনীর কাছে প্রকাশ করল।
নজরুলের মামা হুদা সাহেব মুসলীম লীগের এম পি প্রার্থী ছিলেন। তাকে খবর দেয়া হল। সারা রাত পাক হানাদার আর রাজাকারদের অকথ্য নির্যাতনে নজরুলের শরীর নব্জু। কিন্তু চোখ দুটি যেন তারার মত জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। রাতের মধ্যেই দূরদূরান্তের গ্রামের মানুষেরা এখবর পেয়ে গেছে। ভোর থেকেই দলে দলে মানুষ নজরুলকে একবার চোখের দেখা দেখতে বাজারটা জনসমুদ্রে পরিনত করে ফেলেছে। মানুষের ঢল থামাতে হানাদাররা অনেক ফাঁক আওয়াজ করে ব্যার্থ হয়েছে। পাক হানাদার আর রাজাকার বেষ্টনী করে নজরুলকে ঘিরে রেখেছে। নজরুলের হাত পেছনে বাঁধা, চোখ বাঁধা হল। কোন বিয়গান্তক গ্রীক নাটকের মঞ্চ। তার চারিদিকে উৎকীর্ণ উত্তেজিত দর্শকের উপছেপড়া ভীর।

মামা পাক কমান্ডারকে করজোরে অনুনয় করে বললেন: ছোর দেও উস্কো। ইয়ে মেরা বহিন কা বেটা।
মে পাকিস্তান কা শান্তি কমিটিমে হু। মেরা বাত মানলিজিয়ে। এয়ে মেরা বেটা যেছে। ছোর দেও ইসকো।
মজার খেলা পেয়ে পাক কমান্ডার মজা করেই বলেন:
লেকিন ইয়ে মুক্তি ফৌজ হে। হাম লোক আপকা বহিনকা বেটাকো, মেরা বহিনকা বেটা মান্তা হো। এতনা পেয়ারছে ইনকু সিনামে মিলাতুহু। লেকিন স্রেফ এক বাত ইনকু বাতানা হে? মুক্তি ফৌজ ছোরকে ইয়ে হামার সাথ দেনা হে। হামলোক ইনকো কেপ্টেন বানায়েগী।

আহত বাঘের হুংকার আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে তোলে: হাত পা চোখ বাঁধা। মুখ তো বাঁধা নয়! ড্রাগনের মুখের অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত মুখ থেকে বেরিয়ে আসে; আমার মায়ের, আমার বোনের ধষর্ক; আমার ভায়ের, আমার পিতার ঘাতক; শুনে রাখ: তোদের অত্যচার, অন্যায়ের প্রতিকার করতে নজরুলরা অশ্র হাতে নিয়েছে। তোদের বিষ দাঁত ভেঙ্গেই তবে ক্ষান্ত হব। ক'জন নজরুলকে তোরা স্তব্দ করবি! ঐ চেয়ে দেখ স্বাধীন বাংলার পতাকা হাতে বিদ্রহী জনতা ধেয়ে আসছে। এখনো সময় আছে প্রাণে বাঁচতে চাইলে, পালা। স্বাধীন বাংলার জয় পতাকা উড়ল বলে। জয় বাংলা।
জনতার মুখে তা ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে দিগন্তে ছড়িয়ে গেল। নবদিগন্তের ঘোষনার এই প্রতীক্ষায়ই যেন জড়ো হওয়া মানুষ গুলো প্রত্যাশা করছিল! তাদের তৃপ্ত প্রতি ধ্বনিতে হায়েনার দল দিশেহারা হয়ে গেল।
সদ্য জল মুক্ত স্কুলের খেলার মাঠে, ডিনামাইট পিঠে বেঁধে, নজরুলকে শোয়ানো হল। কি বির বিক্রমে নজরুল, স্বাধীনতা নামক ঈশ্বরের বেদীতে, বাংলার মানুষের মুক্তির অর্ঘ হয়ে রইল! কাপুরুষ ঘাতকের দল, নিরাপদ দূরত্বে দ্বাড়িয়ে বারুদে অগ্নি সংযোগ করে, নজরুলের মুক্ত নিঃশ্বাস চীরতরে স্তব্ধ করে দিতে। কিন্তু তারা জানেনা; নজরুলের রক্তে রঞ্ছিত এই বাংলা, স্বাধীনতার পত্রে-পুষ্পে, ফুলে-ফলে স্বসোভীত হয়ে, লাল-সবুজের চাদর হয়ে, এ জাতীর গায়ে মায়া হয়ে, চীরদিন অম্লান হয়ে, রয়ে যাবে! একটি মাত্র নজরুলের বুক থেকে বিস্ফারিত ডিনামাইট, পৃথিবীতে স্বাধীন বাংলার তোপধ্বনি করল। সুজলা-সুফলা সোনার বাংলাকে উর্বর করতে, বাতাসে ভেসে, নজরুলের আত্মা বাংলার আকাশে মিশে গেল।
আজো তারা পলাশ হয়ে, কুষ্ণচূড়া হয়ে, শাপলা হয়ে বাংলায় ফোঁটে। দোয়োল, শালিক বলাকা হয়ে বাংলার আকাশে উড়ে।

চলবে...।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ৩:৫৯
২৫টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×