somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৃষ্টি সুখের উল্লাসে ~

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা মানুষ, থাকি আকাশগঙ্গা গ্যালাক্সির পৃথিবী নামের গ্রহে। আমাদের সত্তা জৈব পদার্থ নির্মিত এক গঠনের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করে যাকে আমরা বাংলা ভাষায় বলে থাকি “শরীর”। আমরা কিছু কিছু বস্তুর স্বাদ গন্ধ পাই, কিছু কিছুর পাই না, প্রায় ৪০০ থেকে ৭৫০ ন্যানোমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো দেখি, ২০ – ২০০০০ হার্জের মধ্যবর্তী কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পাই। এর বাইরের জগৎ আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে, কারন আমাদের ইন্দ্রিয়ের দৌড় এতটুকুই। অন্য ভাষায় বলা যায়, আমাদের সত্তা এই শরীর নামের খাচায় বন্দী। শুধু কি আমরা মানুষেরাই বন্দী? উত্তর হবে না, সকল সৃষ্টিরই একটা নির্দিষ্ট গন্ডি আছে। আমরা কি পারব কখনও সেই গন্ডিকে অতিক্রম করতে? যদি নাই পারি তবে ঐ কুকুর, তেলাপোকা আর আমার মাঝে পার্থক্য কোথায়? কেন আমি নিজেকে তার থেকে শ্রেষ্ঠ দাবি করি? শুধু কি ওদের থেকেই! আমরাতো নিজেকে সব সৃষ্টি হতেই শ্রেষ্ঠ জানি।


আসলে আমরা মোটেও ভুল জানি না। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সত্তাকে দেহের কারাগারে বন্দী করে পাঠালেও, আমাদের দিয়েছে মন। এই মনটা দিয়ে আমরা যে কাজটা খুব ভাল করতে পারি ,তা হল সৃষ্টি। আমি সৃষ্টি করতে পারি, তাইতো আমি শ্রেষ্ঠ। এ কাজতো ঐ কুকুরটা পারে না, না পারে ঐ তেলাপোকা। আমরা সৃষ্টি করতে পারি বলেতো বিজ্ঞনের জন্ম দিয়েছি। আমাদের সীমিত আয়ু ও শারিরিক সীমাবদ্ধতা আমাদের ঐ সূর্যের কাছে পৌছতে না দিলেও আমরা জানি সেটা কি কি বস্তু দ্বারা গঠিত। চোখ দিয়ে আমরা ১০০ মাইক্রোমিটারএর ছোট বস্তু দেখতে পারি না। কিন্তু আমরা জানি সব থেকে ছোট পোলিও ভাইরাসের আকার কেমন। এসব আমরা পারি কারন আমরা সৃষ্টি করি। বিভিন্ন ঘটনাকে এবং তার ভেতরকার অদৃশ্য ঘটনাগুলো বের করতে আমরা সক্ষম।


দুঃখের ব্যাপার আমরা সকলে অদৃশ্যকে দৃশ্য করতে মনটা খাটাই না। আমাদের মাঝে সংখ্যা গরিষ্ট মানুষই আমাদের দৃশ্য জগতে বাস করে সন্তুষ্ট। অল্প কিছু মানুষ তার মানব সত্তা ব্যবহার করে চারিদিকের ঘটনা গুলোকে অনুভব করে। এদের মাঝে যারা তার অনুভব অন্যের কাছে প্রকাশের রীতি জানে এবং ইচ্ছুক তাকে আমরা বলি জ্ঞানি, দার্শনিক, বিজ্ঞানী প্রভৃতি। আর বাকিরা দৃশ্য জগতে জীবিত থেকে এক সময় অদৃশ্য হয়ে যায়। তাদের ব্যক্তি অস্তিত্ব থাকে না আর, কারন তারা মানুষের জন্য নির্ধারিত সীমার বাইরে যায় না। শ্রেষ্ঠত্বের যে অস্ত্র, চিন্তা তার থেকে নিজেকে দূরে রাখে।


কিন্তু মহাসত্য হল ব্যক্তি অস্তিত্ব না রইলেও একটা নির্দিষ্ট সময়ের নির্দিষ্ট স্থানে মানুষের সমষ্টিগত অস্তিত্ব কখনোই মুছবার নয়। সমষ্টিগত ভাবে এরাই চিন্তাশীলদের চিন্তার রসদ জোগায়, কর্মের প্রেরণা দেয়। এরা সচেতন নয় নিজ স্বার্থ সম্পর্কে। যুগে যুগে এদের প্রকাশ হয় কখনও প্রোলেটারিয়েট হিসেবে, কখনও পরাধীন জাতি হিসেবে, কখন হরিজন হিসেবে আবার কখনও বা শুধু জনগন হিসেবে। অতএব যে ব্যক্তি স্বীয় সত্তা নিয়ে সমাজের জন্য কাজ করে সে ইতিহাসে টিকে থাকে একক অস্তিত্ব নিয়ে। অন্যদিকে যে সামাজিক সত্তা নিয়ে অনেকের মাঝে একাকার হয়ে কাজ করে সে টিকে রয় তার সামাজিক অস্তিত্ব নিয়ে। প্রথমজন শ্রেদ্ধেয়, কিন্তু নিঃসঙ্গ। দ্বিতীয় জন কেউ না, তবুও তার সঙ্গী অনেক।
যে সময়ের মানুষ আমরা এই সময়ে সবকিছুর মতই উপরের চিন্তাধারাও কেন জানি না খাটে না। এখন একজনও এমন পাই না, যাকে সক্রেটিস, প্লেটো এরিস্টোটল, নিউটন, আইনস্টাইন, আলবেরুনি, ইবনে সীনা বা ডারউইনের সাথে তুলনা করা সম্ভব। তবে কি আমরা সকলেই সমষ্টিগত ভাবে সমাজের জন্যে কাজ করছি? কই তেমন তো দেখি না! সবাই যে যার ব্যক্তি স্বার্থে, সচেতনই ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরা মোটেও আগের সময়ের নির্বাক, অসচেতন সাধারন জনগন নয়। নিজ স্বার্থে আঘাত এলেই এরা গর্জে উঠে। এটাই হয়ত আমাদের সময়ের সাধারণ জনগনের রূপ। এটা যদি সাধারণ মানুষের রুপ হয়, তবে এই সময়ের সৃষ্টিশীল মানুষের রূপ কেমন? তাকে কোথায় পাব? তাকে খুঁজব কোথায়?



খুজতে খুজতে ক্লান্ত আমি প্রতিবারে একটা উত্তরই খুঁজে পাই। সেটা হল, নিজের মাঝে।



















[পুনশ্চঃ ব্লগে এটা আমার ৫০ তম পোস্ট। প্রায় দুইবছর আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ সালে গভীর রাতে ডায়েরীর পাতায় এই লেখাটা লিখেছিলাম। তখন জানতাম না ব্লগের কথা, ফলে আমার কথাও কেউ জানত না। আজ ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখে, ছেড়ে দিলাম। চারবছর আগের ২৯ ফেব্রুয়ারির কথা মনে নেই। চারবছর পরে কি হবে জানি না। তবে সেদিন তখন মনে রইবে এই ২৯ ফেব্রুয়ারির স্মৃতি]
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৩:৩৪
২০টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে চিরতরে যুদ্ধ বন্ধের একটা সুযোগ এসেছিল!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩


মনে হয় শুধু মানুষের কল্পনাতেই এমন প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন সম্ভব- যদি বাস্তবে হত তবে কেমন হত ভাবুন তো?
প্রত্যেকটি দেশের সমস্ত রকমের সৈন্যদল ভেঙে দেওয়া; সমস্ত অস্ত্র এবং সমর-সম্ভার, দুর্গ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

টুইস্টেড মাইন্ড অফ আ সিরিয়াল কিলারঃ কবি কালিদাস স্পেশাল

লিখেছেন এইচ তালুকদার, ২৭ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে আমার আগ্রহ শুরু হয় এই ব্লগেরই একজন অসাধারন ব্লগার ''ডক্টর এক্স'' এর লেখা পড়তে যেয়ে। বাংলা ভাষায় সাইকোলজির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেলফ হেল্প ধরনের অসাধারন কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিলিস্তিনে কী শান্তি সম্ভব!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৭ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:২১

এক.
প্রতিদিন ঘুমানোর আগে আলজাজিরা দেখি৷ গাজার যুদ্ধ দেখি৷ রক্ত দেখি৷ লাল লাল৷ ছোপ ছোপ৷ সদ্য জন্মানো শিশুর৷ নারীর৷ কিশোর কিশোরীর৷ বৃদ্ধের৷ সারি সারি লাশ৷ সাদা কাফনে মোড়ানো৷ ভবনে চাপা পড়া৷... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রাকৃতিক দূর্যোগে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫

আমার জীবনে আমি সরাসরি প্রাকৃতিক দূর্যোগের ভেতরে পড়েছি বলে আমার মনে পড়ে না । ২০১৯ সালের ঘটনা। ঘূর্ণিঝড়ের নাম সেবার ছিল সম্ভবত বুলবুল ! সেটা যখন আসছিল তখন আমি ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্কাই ডাইভিংয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার প্রচেষ্টায় সফল বাংলাদেশের আশিক চৌধুরী

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৬




দেশে এখন চলছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর তান্ডব। তার মধ্যেই সুখবর এলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে-

বিশ্ব রেকর্ড গড়তে ৪১ হাজার ফুট উঁচুতে উড়ে যাওয়া বিমান থেকে শূন্যে লাফ দিলেন বাংলাদেশের আশিক চৌধুরী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×