somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খেলনা বাড়ি-২

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ৮:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই দশ বছরের অর্ধেকটা সময় আমরা কাটিয়ে দিয়েছি ভালোবাসা নিয়ে। বাকি অর্ধেক সময়ের ভেতরে আস্তে ধীরে বেড়েছে দূরত্ব। একটা সংসারের মাঝ থেকে অল্প অল্প করে গড়ে উঠেছে তিনটে সংসার। গত কিছুদিন থেকে অবস্থা ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন খুঁটিনাটি এটা সেটা নিয়ে কত ঝগড়া। কী নিয়ে আমরা ঝগড়ায় মাতিনি! বিদ্যুৎ বিলটা কেন বেশী এল, ওভেন দিয়ে রান্না করা, আমি বাবা প্রতি মাসে যত টাকা দেই ততই দেব বাড়তি বিল যে ওভেন ব্যবহার করেছে সেই দেবে। ও কী, বাড়ি ভাড়া দেবার ব্যাপারে কারো দেখি কোনো গরজ নেই। রাজুর শাশুড়ি কেনো এতদিন ধরে এখানে পড়ে আছেন। উনার থাকা খাওয়ার বাড়তি খরচ অন্যে কেনো বইবে? এঁটো বাসনগুলো সে কেনো একা ধোবে? সেকি দাসী বাঁদী আর সবাই নবাবজাদী? রুনির গায়ে অর্ণব হাত তুললো কোন্ সাহসে? এইসব ঝগড়া দেখে দেখে আমাদের ছেলেমেয়েরাও বেশ ঝগড়া শিখে গেছে। আমি আশ্চর্য হয়ে দেখি ভাইয়া যদি কোনো কারণে রাগ করে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ রাখেন তবে রুনি আর কথা বলে না অর্ণবের সাথে। আমার মেয়ে রুনি বর্ণমালার ব্যঞ্জনবর্ণগুলো এখনো শিখে উঠতে পারেনি অথচ ঝগড়া শিখে গেছে। রাজুর মেয়েটির মুখে এখন পর্যন্ত কথা ফুটে উঠেনি। এখানে থাকলে কথা শিখে যাওয়ামাত্র সেও নিশ্চয়ই বলবে রুনির সাথে আড়ি।
একটা পর্যায়ে এসে সকলেই আরাদা হয়ে যায় একটা সহজ-সরল নিয়মে। নিয়মটা নিয়ে দুঃখ নেই তেমন। দুঃখ হয় এই ভেবে যে, ভাইয়ে ভাইয়ে সবটুকু মমতা কেটে যাবার পর আমাদের এই আরাদা হয়ে যাবার পালা। দশ বছর একটা বাড়িতে থেকে, যাবার বেলা ভালোবাসাটা রেখে যেতে হচ্ছে। এই বাড়িটা ছেড়ে যেতে মোটেও মন চাইছে না। ওরা দু’জন চলে যাবার পর বাসাটা আমি একাই রেখে দিতাম; কিন্তু এখন আর এত বড় বাড়ির কোনো প্রয়োজন নেই। এ বাড়িতে ছোট বড় ছয়টি রুম। তিনজন মানুষের সংসারে দু’টো রুমই যথেষ্ট। আলাদা হবার পর কারোই এত বড় বাড়ির প্রয়োজন নেই। যখন আমরা এক সাথে ছিলাম তখন ‘বড়’তে ছিলাম এখন ‘ছোট’তে যাবার পালা।
রান্নাঘর থেকে ঝগড়ার স্বর ভেসে আসে। তার মানে আজো আবার। শেষ দিনটাতেও বুঝি রেহাই নেই। রাজু ঠেলাওয়ালাকে সাথে করে তার টেবিলটা ঠেলে নিয়ে যাচ্ছিল। ঝগড়ার স্বর শুনে সে অর্থপূর্ভ চোখে আমার দিকে তাকায়। তার এই তাকানোটার মানে আছে। রান্নাঘর থেকে যে উচ্চস্বরটা বেশী শোনা যাচ্ছে, সেই স্বর আমার স্ত্রী সুরমার। রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখি সামান্য একটা হাঁড়ি নিয়ে ঝগড়া বেঁধেছে। ভাবী বলছেন, ওটা তার কেনা। সুরমা এক ধাপ এগিয়ে বলে এটা নাকি তার বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে আসা। আমরা আসলে কোনোকিছুরই স্বত্ত্ব ছেড়ে দিতে রাজী নই। দু’ একটা জিনিস বাদ রেখে সবকিছুরই হিসেব হয়েছে কড়ায় গণ্ডায়। বাবা-মায়ের হাতের যে জিনিসগুলো এখনো থেকে গেছে তাও আমরা ভাগ করে নিয়েছি। চারটে সিলিং ফ্যান ছিল ঘরে। তিনজটে নিয়েছি তিনটে, বাড়তিটা রাজু কিনে নিয়েছে আমাদের কাছ থেকে। হাঁড়ি-পাতিলের হিসেব পুরোমত করা হয়ে ওঠেনি। তাই এ নিয়ে ঝগড়া হওয়াটা বিচিত্র কিছু নয। আমাদের স্ত্রীরা এইসব ব্যাপারে আবার আমাদের চাইতেও এক কাঠি সরেস। ঝগড়া শেষ হচ্ছে না দেখে আমি সুরমাকে বলি, থাক্, সুরমা হাঁড়িটা যদি তোমারই হয় তবে মনে করো না হয় ভাবীকে দানই করে দিলে। কথাটা আমি ভাবীকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে বলিনি; তবুও ভাবী ভুল বুঝেন। প্রচণ্ড রাগে তিনি হাতে নেওয়া হাঁড়িটা ছুঁড়ে মারেন। ওটা এসে উড়ে পড়ে ঠেলাওয়ালার পায়ের কাছে। লোকটা এ দেখে অবাক হয় হয়তো; ভাবে সে তাদের ঘরের ঝগড়াটা এই দু’তলায় এল কী করে?
ঠেলাগাড়ির শরীরে যার যার মালামালগুলো ঠেসে দিতে খুব একটা দীর্ঘ সময় ব্যয় হয় না। এক বাসার মালামাল তিন বাসার জন্য তোলা হচ্ছে সুতরাং সময়তো কম যাবেই; তবে সমস্যা অবশ্য এখনো শেষ হয়নি, কিছু সমস্যা থেকে গেছে। থেকে গেছে একটা টেলিভিশন। ওটা নেবে কেÑএ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ফয়সালা হয়নি। সবার লোভ এখন ঐ বাক্সটার কাছে জমা হয়ে আছে। আমার অবশ্য টেলিভিশনের প্রতি ততোটা লোভ নেই। আমার লোভ অন্য কোথাও, অন্য কোনোখানে। টেলিভিশন যে চায় সেই নিয়ে যাক। রাজুর সম্ভবত এর প্রতি লোভ বেশী। সে বারবার টেলিভিশনের দিকে তাকায়। কে নেবে এই প্রশ্নটা তোলার হয়তো সাহস পায় না। আমিই তাই জিজ্ঞেস করি, টেলিভিশনটা কী হবে? আমার কথা শুনে রাজু কান খাড়া করে বড় ভাইয়ার ফয়সালা শুনতে চায়। বড় ভাইয়া চরম স্বার্থপরের মতো বলেন, এটা আমি নেবো। দাম যত হয় তার দুই অংশ তোরা পাবি। তার কথা শুনে রাজুর চেহারায় মেঘ ভর করে যেন। ভাইয়ার কথা উল্টানোর মতো ততোটা সাহস তার হয়নি আবার কিছু বলতে না পেরে সম্ভবত শান্তিও পায় না। তাই তার স্ত্রীকে ডেকে বলে, ‘ওগো আমার মেয়ে বিন্তি যদি টেলিভিশন দেখবে বলে কাঁদে; তবে তাকে বলো, ওটা এক রাসে নিয়ে গেছে। রাজুর কথাটা কেবল তার স্ত্রীই শুনে না, ভাইয়াও শুনেন; তবে এতে তার কোনো ভাবান্তর হয় না।
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×