somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নামের ফাজলামো নাকি আমাদের মহান শহীদ দিবস ?

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সকাল ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত কয়েকবছর ধরে হুটহাট করে একটা বিষয় আমাদের সামনে চলে এলো , সেটা হচ্ছে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ।ছোটবেলা থেকে শুনে আসছিলাম ২১ ফেব্রুয়ারি হচ্ছে আমাদের শহীদ দিবস , এই দিন ভাষার জন্য প্রান দিয়েছেন সালাম-বরকত-রফিক , এই দিন আমাদের চেতনাকে শানিত করে , আমাদের নিরন্তর সংগ্রামের ইতিহাসকে শ্রদ্ধা জানায় ।

সেই ২১ ফেব্রুয়ারিকে ছিনতাই করলেন আমাদের " ভাষাকন্যা (!) " শেখ হাসিনা । সেটাকে বানিয়ে ফেললেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস । উহু , উনি বানান নি , বানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেস্কো অথবা জাতিসংঘ , কিন্তু সে সময় চামচা মিডিয়াদের শোরগোল শুনে মনে হচ্ছিল শেখ হাসিনার নির্বাহী আদেশে বুঝি মাথা নত করেছে পৃথিবীর সবগুলো দেশ ।

পৃথিবীতে এই সব দিবস টিবসের কোন লেখাজোখা নেই । ( একবার গিয়াস ভাই ভোরের কাগজে একটা কার্টুন ছেপেছিলেন যেখানে এক লোক ক্যালেন্ডার খুঁজে দেখছে বছরের কোন দিন খালি আছে কি না , সেই দিনে সে একটি দিবসবিহীন দিবস বানাতে চায় । ) মাতৃ দিবস , মাতৃদুগ্ধ দিবস , এইডস দিবস , নারী দিবস , ডায়বেটিক দিবস ...হরেক রকম দিবসের ছড়াছড়ি ।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস তেমনই একটি দিবস মাত্র । তার সাথে একুশের চেতনার কোন সম্পর্ক নেই । মাতৃভাষা দিবস মানে হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে ছোট ছোট উপভাষাগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে , সেগুলো সংরক্ষনে সবাইকে সচেতন করা । আমাদের দেশেই বেশ কিছু পাহাড়ী ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে , এরকম হাজার হাজার ভাষা বিভিন্ন দেশে বিলুপ্তির মুখে চলে যাচ্ছে ।

ভাষার উদ্ভব , ভাষার বিকাশ , ভাষার বিলুপ্তি ..সব কিছুই সময়ের দাবী । যে ভাষা বাইরে ব্যবহার করা যায় না , সেই ভাষা ধীরে ধীরে তার শক্তি হারাবে এটাই স্বাভাবিক । সেই বিপন্ন ভাষাগুলোর জন্য মমতা প্রকাশ করা যায় , ভাষা বিজ্ঞানীরা সেগুলোকে নিয়ে গবেষনা আর সংরক্ষন করতে পারেন , কিন্তু সেগুলোর সাথে বাংলা ভাষা বা একুশের কোন সম্পর্ক নেই ।

স্মরণাতীত কাল থেকেই একুশ আমাদের মানে এই জনপদের বাঙালিদের দ্রোহ ও ক্ষোভের উৎস । একুশ মানেই পাড়ায় পাড়ায় ফুলচুরি , কাকভোরে প্রভাতফেরি , পাচঁ দশটাকা দামের সংকলন , পাড়ার মোড়ে মাইক ঝুলিয়ে অনুষ্ঠান ...পুরো বিষয়টির মাঝেই বাঙালির সংগ্রামের একটা প্রতিফলন ।

সেই একুশকে মুছে দেয়ার চেষ্টা চলেছে সেই পাকিস্তান আমল থেকেই । একুশকে মুছে ফেলা মানে আমাদের চেতনাকে স্থবির করে দেয়া , আমাদের লড়াইয়ের স্পৃহাকে মুছে ফেলা । পাকিস্তানের পরে এদেশের সবগুলো স্বৈরশাসকই একুশকে ভয় করে চলেছে , কিন্তু মুছে ফেলতে পারেনি ।

জেনেই হোক আর না জেনেই হোক , সেই কাজটি করে ফেলেছেন শেখ হাসিনা ।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষনার জন্য একটা দিন খোঁজা হচ্ছিল , তখন দুই বাঙালি একুশে ফেব্রুয়ারির ভাবগাম্ভীর্যকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এধরনের একটা প্রস্তাব পেশ করেন ইউনিসেফে , যেটি নানা কাঠখড় পুড়িয়ে এবং বাংলাদেশ সরকারের সমর্থনে উত্থাপিত হয় । স্বাভাবিক ভাবেই যেখানে একটা দিন হলেই হয় , সেখানে একুশে ফেব্রুয়ারি তার ইতিহাসের কারনেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষিত হয় ।

কিন্তু বাংলাদেশের সাধারন মানুষ আর মূর্খ মিডিয়ার কর্মকান্ড দেখে মনে হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘোষনা করা মানে হচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারির ইতিহাসকে পৃথিবীর সব জাতি বুঝতে পেরেছে । এখন দুনিয়ার সব দেশে শহীদ মিনার বানিয়ে প্রভাত ফেরি হচ্ছে । কী অদ্ভুত মিডিয়া প্রচারনা ।

একুশ ফিরে আসুক তার চেতনা নিয়ে ।
একুশ ফিরে আসুক পথের মোড়ের সংকলনে, রাতের ফুল চুরিতে , ভোরের প্রভাত ফেরিতে ।

অসাধু রাজনীতিবিদদের নোংরা হাতের স্পর্শ এড়িয়ে , মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর রঙিন বিজ্ঞাপনের ছোবল বাচিঁয়ে , মূর্খ মিডিয়ার দুই কলাম হেডিং সরিয়ে ,

আমাদের মহান একুশ চির জাগ্রত থাক শহীদ দিবস হিসেবে ; আর আমাদেরকে শানিত করুক বারবার ..সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:০৮
২৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×