somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকাই ছবিতে শ্রেণীচেতনা

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সহিংসতানির্ভর ঢাকাই চলচ্চিত্রের ন্যারেটিভকে ‘ধনীর বিরুদ্ধে গরিবের লড়াই’ বলা যেতে পারে। আপাতভাবে মনে হতে পারে এসব ছবির শ্রেণীচেতনা বেশ প্রখর, এবং বিস্তৃতরূপে চর্চিত -- যেহেতু বেশিরভাগ ছবির বিষয়বস্তুই সেই ধারায় নির্মিত। আর এই ধারা যে একেবারে সা¤প্রতিক, তা নয়। যখন ঢাকাই ছবি সহিংসতা-অশ্লীলতাবর্জিত ছিলো সেই ষাট-সত্তর-আশি দশকের ছবিতেও গরিব নায়কের সঙ্গে ধনীর দুলালী নায়িকা কিংবা রাজপুত্রের সঙ্গে বেদেনীকন্যার প্রেম দেখানো হতো এবং একে ঘিরেই যাবতীয় দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সৃষ্টি হতো। তবে তখনকার ছবিতে শ্রেণীবৈষম্য দেখানো হতো নারী-পুরুষের সম্পর্ককে ঘিরে এবং তাদের অবিচল-অটল প্রেমই শেষ পর্যন্ত জয়ী হতো। আর এখনকার ছবিতে এই শ্রেণীদ্বন্দ্ব দেখানো হয় উচ্চকিত রাজনৈতিক ঘোষণার মাধ্যমে। তবে এখনকার কাহিনীতে ঘটনা একটাই -- গরীবের বন্ধু নায়ক বনাম গডফাদারসমষ্টি। নায়ক কখনও কলেজ-ছাত্র (দাঙ্গা, ত্রাস), কখনও বস্তিবাসী (বাঘের বাচ্চা) অথবা কখনও রবিনহুডের মতো ডাকাত, ধনীর কাছ থেকে লুণ্ঠনকৃত মালামাল গরিবের মাঝে বিলিয়ে দেয়াই যার কাজ (বিদ্রোহী সালাউদ্দিন)। আর ভিলেন-গডফাদার সাধারণত অন্যান্য ক্ষমতাধরদের (রাজনীতিবিদ, মন্দ পুলিশ) সহায়তা পেয়ে থাকে। শ্রেণীদ্বন্দ্বের আদর্শ প্লট!

কিন্তু এইসব ছবি দেখতে দেখতে সচেতন দর্শকের মনে হবে, হ্যাঁ শ্রেণীসংগ্রাম বটে, তবে বড়ো অচেনা, বড়ো একরৈখিক, অজটিল এবং অবাস্তবও। সোভিয়েতপূর্ব সময় থেকে এখন পর্যন্ত পৃথিবীর নানা দেশে শ্রেণীসংগ্রামের যে-ইতিহাস তার কিছুর সঙ্গেই এই দ্বন্দ্ব মেলে না। তবে এধরনের অবাস্তব ন্যারেটিভ নির্মাণের উদ্দেশ্য কী, যৌক্তিকতা কোথায়? আমরা আরও খানিকটা নিঃসন্দেহ হবো যদি জানি যে এইসব ছবির পরিচালক-প্রযোজকদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই, কোনো বাম সংগঠনের সঙ্গে এরা কখনোই জড়িত ছিলো না, এবিষয়ে পড়াশুনা বা আগ্রহ আছে, এদের কেউ এরকমও কখনও প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। প্রসঙ্গত, এই অধ্যায়টির আদি খসড়া একটি সম্মেলনে প্রবন্ধ আকারে উপস্থাপিত হয়েছিলো এবং সেই সম্মেলনে এধরনের ছবির প্রবক্তা কাজী হায়াৎ দাবি করেছিলেন, সমাজের এত এত অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করেনা, আমার নায়ক করে।

এখন দু’টি বিষয় সামনে আসছে, এসব ছবি কেন নির্মাণ করা হয়, এবং এই প্রতিবাদের চূড়ান্ত অর্থ কী দাঁড়ায়? একথা অনস্বীকার্য যে বাংলা ছবির দর্শকের একটা বিরাট অংশই শ্রমজীবী শ্রেণী এবং বর্তমানে তারাই দর্শক হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠ। নায়ককে গরিবের বন্ধু পরিচয় দেবার মাধ্যমে আসলে এই দর্শকশ্রেণীর প্রাথমিক সহানুভূতি আদায় করা হয়। আর শিা, শ্রেণী-অবস্থান ইত্যাদি কারণে চলচ্চিত্রের মতো জটিল ও আধুনিক মাধ্যমের অর্থবিশ্লেষণের ক্ষমতা যেহেতু তাদের থাকে না, তাই এই প্রাথমিক সহানুভূতি বা আত্মপরিচয় দর্শককে আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট হয়। এরপর স্থূল যৌনতা বা বীভৎস ভায়োলেন্স তাদের পয়সা উসুল করবে বলে মনে করা হয়। আর যে-প্রতিবাদ একা-নায়ক করে, এই প্রতিবাদ বাস্তবতা থেকে যোজন দূরে অবস্থান করে। যে-পদ্ধতিতে নায়ক প্রতিবাদ করে থাকে তা এতটাই বাস্তবতাবিবর্জিত যে তা দর্শকের মনে এরকম ভ্রান্ত ধারণাও তৈরি করে যে, কেবল সুপারহিরো হওয়া ছাড়া সমাজ থেকে অবিচার দূর করা সম্ভব নয়। তাই প্রতিটি মানুষের মনের হিরো হবার বাসনার ক্যাথারসিস ঘটাতে গিয়ে আসলে এসব ছবির সুপার হিরোরা সমাজের প্রকৃত হিরো সৃষ্টি হবার সম্ভবনাগুলোকে কমিয়ে দেয়। শ্রেণীসংগ্রাম সম্পর্কে বরং এসব ছবি ভ্রান্ত ধারণা দেয়, লড়াইয়ের যে-পদ্ধতির কোনো অস্তিত্ব নেই, কখনো ছিলো না -- তাকে সমাধান হিসেবে হাজির করে। প্রলেতারিয়েত শ্রেণীর যেক্ষেত্রে একত্রিত হবার কথা, শ্রেণীশত্র“কে মোকাবেলা করার জন্য, এখানে সেরকম কোনো সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়াই সবকিছু সমাধানের জন্য একা নায়ককে দায়িত্ব দেয়া হয়।

বাংলা ছবির শ্রেণীচেতনা তাই ভুয়া, অসার, অবাস্তব; প্রকৃত শ্রেণীচেতনা বিকাশের প্রতিকূলে তা কাজ করে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১০:৪৭
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×