somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র-শিল্পের সাম্প্রতিক গতিপ্রকৃতি: পর্ব ৫ (সরকারের প্রচেষ্টা: আইন প্রণয়ন ও র‌্যাব দিয়ে দমন)

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৪:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সরকারের দিক থেকে চলচ্চিত্র-শিল্প বরাবরই ‘সোনার রাজহাঁস’। সার্বিক চলচ্চিত্র-ব্যবসা যতই মন্দ হোক না কেন, উচ্চহারের করের কারণে এটা সবসময়ই একটি লাভজনক খাত। তাই এই শিল্পের মানোন্নয়নে সরকারকে কখনোই আন্তরিক দেখা যায়নি। গবেষক জাকির হোসেন রাজুর মতে:

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্প একটি সোনার রাজহাঁস। এই রাজহাঁসের সোনার ডিম ভাগ করে নিচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং এরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত চলচ্চিত্র-ব্যবসায়ী ও পুঁজিপতিরা। একারণে এই সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁসটিকে মেরে না-ফেলে অথবা পুরোপুরি মরতে না-দিয়ে একে এমন পর্যায়ে এবং এমন কৌশলে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে যেন এটি থেকে সর্বোচ্চ মুনাফা নিয়মিতভাবে আহরণ করা যায়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে রাষ্ট্রের ভূমিকা তাই দ্বিমুখী। (রাজু, ২০০৫)

এই দ্বিমুখিতার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে রাজু বলছেন, একদিকে রাষ্ট্র এশিল্পের জন্য বিভিন্ন সহায়তামূলক পদপে নিয়েছে। পাকিস্তান আমল থেকে রাষ্ট্র এ শিল্পের বিকাশে নানা ধরনের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করেছে। এই প্রক্রিয়ায় এফডিসি নির্মাণ করা হয়েছে। একদিকে সরকার ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পরে ভারতীয় এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পরে পাকিস্তানী ছবি প্রোগৃহে প্রদর্শন নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে চলচ্চিত্র-শিল্পকে প্রটেকশন দিয়েছে; অন্যদিকে রাষ্ট্র এ শিল্প থেকে বিপুল পরিমাণ কর আদায় করে। এদিক থেকে চলচ্চিত্র-ব্যবসায়ীদের সাথে রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গী একই।

সেনাসমর্থিত বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার অশ্লীল চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন বন্ধ এবং ভিডিও পাইরেসি রোধে, ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে, র‌্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব)-এর একজন উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে। এই টাস্কফোর্স পরে কাকরাইল, পল্টন ও বিজয়নগরের প্রযোজনা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান চালিয়ে, বেআইনীভাবে অশ্লীল পোস্টার ও ফটোসেট প্রদর্শনের অভিযোগে, কয়েকজন কর্মচারী ও প্রযোজক গ্রেফতার করে। টাস্কফোর্স পাশাপাশি এফডিসিতে একটি অফিস খোলে। টাস্কফোর্সের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অশ্লীল ছবির প্রযোজকরা এফডিসি চত্বরে বিপুল পরিমাণের সেলুলয়েড পুড়িয়ে ফেলে। অনেক পরিচালক-প্রযোজক চলচ্চিত্র-ব্যবসা ছেড়ে দেবার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। প্রযোজকদের অফিসের পাশাপাশি টাস্কফোর্স অশ্লীল ছবির জন্য কুখ্যাত শরফুদ্দীন খান দীপুর বাড়ি থেকেও বিপুল পরিমাণে পর্নোগ্রাফিক রিল জব্দ করে।

এর আগে অবশ্য চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ আইন ও বিধি সংক্রান্ত একটি সংশোধন আসে ২০০৬ সালে। ‘সেন্সরশিপ অব ফিল্মস (এমেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০০৬’ নামক এই সংশোধনীটি ২০০৬ সালের ০৯ ফেব্র“য়ারিতে জাতীয় সংসদে পাশ হয়। চলচ্চিত্র-শিল্পের চরম অবনমনের পরিপ্রেক্ষিতে চলচ্চিত্রগুলোর অশ্লীলতার বিষয়টি মূল রোগ হিসেবে শনাক্ত হয় এবং এই সংশোধনীতে মূলত চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা, অনুমোদনহীন কাটপিস সংযোজন ও প্রদর্শনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কিছু আইনের বিধান রাখা হয়েছে।

তবে এই আইনের যথাযথ প্রয়োগ হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। ইতোপূর্বে দেশে বিদ্যমান কপিরাইট আইনের আওতায় ভিডিও পাইরেসি বন্ধে একটি আইন পাস করা হয়েছে। কিন্তু সেই আইনের প্রয়োগ তেমন দেখা যায়নি। সদ্যমুক্তিপ্রাপ্ত ছবির দেদারে পাইরেসি হয়েছে। তাই অশ্লীলতা দমন করতে সরকার যে আইন প্রবর্তন করে, তারও যথাযথ প্রয়োগ দেখা যায়নি, যতদিন পর্যন্ত না তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জারি করা জরুরি অবস্থার মধ্যে র‌্যাবের অভিযান শুরু না হয়।

সরকারের এই পদেেপ আপাতত তথাকথিত অশ্লীল চলচ্চিত্রের প্রযোজক-পরিচালকেরা দমে গিয়েছে, এবং সামাজিক ও সুস্থ ধারার চলচ্চিত্রকাররা সন্তোষ প্রকাশ করেছে। হাত গুটিয়ে বসে থাকা অনেক পরিচালক আবার নতুন পরিবেশে কাজ শুরু করছেন।
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×