somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিডনী-চাংগি-জিয়া (একটি গল্প লেখার অপচেস্টা)

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গল্পের একমাত্র নায়ক নাফিজ।
৩ ঘন্টার একঘেয়ে বাস জার্নি শেষে সিডনী এয়ারপোর্টে আসতেই মনটা কেমন যেনো করে উঠলো, "আহ হা !! অবশেষে দেশে যাচ্ছি ! " নিজের মনেই বলে উঠে।
ম্যাক থেকে এক কফি নিয়ে টেবিলে বসতেই পাশে বাংলা কথা শুনে কান পাতলো নাফিজ।
"দোস্ত, দ্যাখ দ্যাখ মাইয়াটা জোস, সেরম ! "
নাফিজ তাকিয়ে দেখে তিনটা বাংলাদেশী ছেলে। একজন সম্ভবত দেশে যাচ্ছে, বাকীরা তাকে বিদায় দিতে এয়ারপোর্টে এসেছে।
বাংলাদেশীদের দেখলেই চেনা যায়, কেমন যেনো ভাত ভাত চেহারা। পাকিদের দেখলে যেমন মনে হয় রুটি-ডাল খাওয়া চোঁয়াড়ে।

নাফিজ ভাবছে, শালার রাতুলটা কখন যে আসবে। গল্পের পার্শ চরিত্র রাতুল সিডনী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলটাইম পোস্ট গ্রাড, পার্ট টাইম কামলা।
"দোস্ত, কখন আসছস ? রাস্তায় কুনু সমস্যা হয় নাই তো? পাশে কি কুনু মাইয়া বসছিলো ? চান্সে কিছু করস নাইতো রাইতের অন্ধকারে?, তোর তো আবার মাইয়া দেখলে মাথা ঠিক থাকে না! " এক নিশ্বাঃষে সব কিছু বলেই রাতুল নাফিজের দিকে দাঁত কেলিয়ে হাসলো।
দেশে বিশাল আমলার ছেলে মফিজ এখানে কামলা খাটে এটা মফিজ অস্বীকার করে না অবশ্য। গল্পের পার্শ চরিত্র রাতুল নাম অবশ্য অন্য। গল্পের খাতিরে তার নাম রাতুলই রাখা হয়েছে। নামে কি এসে যায়।
রাতুল দেশে পাঠাবার জন্য একগাদা জিনিস নিয়ে এসেছে। নাফিজের অবশ্য সমস্যা নাই এসব নিতে। সে কিছুই নিচ্ছে না, তার সুটকেস খালি।
"কোনো বোতল দ্যাশ নাইতো? "
"কি কস হালায়, আমার বাপের জন্য বোতল পাঠামু !! বোতল অবশ্য কিছু আছে, তয় সেই গুলান ওষুধ।"
নাফিজের ভালো লাগে রাতুলের কথাগুলো শুনে। কথাগুলো অন্যরকম ভালোবাসা নিয়ে বলা, চোখে আনন্দ।
"তোর চেক ইন কয়টায়?"
রাতুলের কথায় নাফিজের ভাবনায় ছেদ পরে। বলে " ১১ টায় "
"চল যাই, তরে আগায় দিয়া আসি "। এটা বলেই রাতুলে নাফিজের সুটকেস টানা শুরু করে।
রাতুল কি জানে নাফিজ তাকে এতো পছন্দ করে। দেশে যাবার সময় নাফিজের টাকার সমস্যা কথা শুনে আচমকা তার একাউন্টে ৬০০০ ডলার দিয়ে ট্রান্সফার করার সাহস এই রাতুলেরই আছে।
চেক ইন করার সময় সমস্যা হয়নাই অবশ্য কোনো।

প্লেনে বসতেই পেটে কেমন জানি গুর গুর করে উঠছে। প্রত্যেক বার প্লেনে ‌উঠার সময় এরকটি হয় নাফিজের। শালার পেট আবার খারাপ হলো নাতো ! নাফিজ ভাবার চেষ্টা করছে গত রাতে সে কি এমন কিছু খেয়েছে যা পেটের সমস্যা করতে পারে।
প্লেনে উঠে নাফিজ একটা প্রথম যে জিনিসটা করে তা হলো চারপাশে একপলক চোখ বোলানো। কৈশরের অভ্যাস। আশে পাশে সুন্দর কোনো মেয়ে আছে কি না সেটা পরখ করে নেয়া। কিছু করা যাক আর যাক ' চোখের সুখ'।
প্লেনে আইল সিট সবমসময় চেয়ে নেয় নাফিজ। ইকোনমি ক্লাসের ভেতরকার দিকে বসে চিপা চিপা সিটে মাঝ খান দিয়ে বের হওয়া কি রকম বিব্রতকর সেটা যে করেছে সেই জানে।
"আমারে একটা উইনডো সিট দেন ভাই"। এ ধরনের অনেক কথাই অনেককে বলতে দেখেছে সে। অবশ্য আকাশে ‌‌উঠে মেঘ দেখে বিরক্ত হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না, রাতে সেটা আঁধারে সাঁতার কাটার মতোই।
পাশের সিটে যথারীতি দুজন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। নাফিজ যতোবারই এরকম দীর্ঘ বিমান যাত্রায় উঠেছে ঠিক ততবারই তার পাশের সিটে কোনো না কোনো বুড়ো লোককে পেয়েছে। মনে হয় এটাকেই বলে নসিব !
ওপাশের সারিতে এক বাংগালি পরিবার। স্বামী-স্ত্রী ,সাথে দুটো বাচ্চা। অশোভনীয় হলেও কান পেতে তাদের কথা শোনার চেষ্টা করে নাফিজ। বুঝতে পারছে উনারা দীর্ঘ ৪ বছর পর দেশে যাচ্ছেন। দেশে অনেক গরম, বাচ্চাদের শরীর ইত্যাদি ইত্যাদি সাংসারিক আলাপ।
গল্পের এ সময়টুকুতে নাফিজ জানতো না যে ঠিক ৫ বছর পর সেও তার পরিবার নিয়ে ঠিক এভাবে দেশে যাচ্ছে আর পাশের সিট থেকে নাফিজের মতোই আরেক নাফিজ কান পেতে কথা শোনার চেষ্টায়।

কিছুক্ষণ পর খাবার আসলে তৃপ্তির সাথে খেয়ে নেয় নাফিজ। তার কেনো জানি প্লেনের খাবার ভালো লাগে। অনেককেই দেখলো ওয়াইন বা স্পিরিট নিতে। নাফিজের অবশ্য অভ্যাস নেই এসবে। ড্রিংক না করায় অনেকেই তাকে ক্ষ্যাত বলে। এক বাংগালীকে দেখা গেলো কিছুক্ষণ পর পর বিয়ার নিতে। ফ্রি পেলে বাংগালী আলকাতরাও খায় , আর এ এটো শরাবে তাহুরা, বেহেশতী জিনিস।

চোখ বন্ধ করে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করছে নাফিজ। প্লেনের ভেতরকার গুর গুর শব্দে ঘুম আসতে চায় না। চোখ বন্ধ করে নাফিজ ভাবার চেষ্টা করছে তার হবু বধুর কথা। চোখ আস্তে আস্তে বুজে আসতে থাকে তার। দীর্ঘ ৮ ঘণ্টা পর ঘুম যখন ভাঙবে তখন সে দক্ষিণ থেকে উত্তর গোলার্ধের ছোট্ট এক দ্বীপ দেশে।

(চলতে পারে)

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১:৩৬
১৩টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অলীক সুখ পর্ব ৪

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৫

ছবি নেট

শরীর থেকে হৃদয় কে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে চেয়েছি
তুমি কোথায় বাস করো?
জানতে চেয়েছি বারবার
দেহে ,
না,
হৃদয়ে?
টের পাই
দুই জায়গাতে সমান উপস্থিতি তোমার।

তোমার শায়িত শরীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চলুন দেশকে কীভাবে দিতে হয় জেনে নেই!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৫১

চলুন দেশকে কীভাবে দিতে হয় তা জেনে নেই৷ এবার আপনাদের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ঘটনা শেয়ার করবো৷ আমি কোরিয়ান অর্থনীতি পড়েছি৷ দেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ১৯৭০ সালের পর থেকে প্রায় আকাশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৮

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪


আজকের গল্প হেয়ার স্টাইল ও কাগজের মোবাইল।






সেদিন সন্ধ্যার আগে বাহিরে যাব, মেয়েও বায়না ধরল সেও যাবে। তাকে বললাম চুল বেধে আসো। সে ঝটপট সুন্দর পরিপাটি করে চুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×