somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ভাষার নিয়ন্ত্রণ, ভাষার পুরস্কার

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সকাল ৭:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাষার নিয়ন্ত্রণ, ভাষার পুরস্কার
ফকির ইলিয়াস
-----------------------------------
একটি ভাষার মাধ্যমে মানুষ তার জীবনকে প্রকাশ করে। ভাষাকে বদলেও দেয় মানুষ। নিজের মতো করে কাজে লাগায়। ভাষা নিজে প্রকাশিত হতে পারে না। যুগে যুগে প্রজন্মের বুননের মধ্য দিয়েই একটি ভাষা ক্রমশ তার পরিপূর্ণতা লাভ করে। ভাঙে আবার গড়ে।
আমরা লক্ষ করলে দেখবো তিরিশের দশকে যে আঙ্গিকে, যে অবকাঠামোতে বাংলা সাহিত্য রচিত হয়েছে, এই শূন্য দশকে তেমনটি হচ্ছে না। তার কারণ, বদলে গেছে বিশ্বের চারপাশ। বেড়েছে নিসর্গের নানা নির্মিতি। যোগাত্মক এবং বিয়োগাত্মক দুটি দিকেই পরিবর্তন ঘটেছে। এ পরিবর্তন মেনে নিয়েই এগুচ্ছে জীবন-সমাজ-সংসার। এর সমন্বয় সাধন করেই যাচ্ছে মানুষ। নিজেকে তৈরি করছে নিজস্ব আঙ্গিকে।
একটি ভাষাকে যারা নতুন নান্দনিকতায় রূপ দেন তারা হচ্ছেন সে ভাষার লেখক। লেখকরা প্রতিনিয়ত তাদের মননশীল চিন্তাটুকু ভাষার জন্য, ভাষার পাঠক-পাঠিকার জন্য রেখে যান। কিন্তু একটি ভাষার কাছে একজন লেখকের কি কিছুই চাওয়ার থাকে না? অবশ্যই থাকে।
এ প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতিমান কবি মি. জেমস টেটস-এর একটি উক্তি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, সব সৃজনশীল লেখকই চান মহাকালের মানুষ তার লেখাগুলো গ্রহণ করুক। প্রকৃতপক্ষে যে ভাষার মানুষ, যে জাতি তার সৃজনশীল লেখকদেরকে বেশি মূল্যায়ন করে সে প্রজন্ম ততো বেশিই উপকৃত হয়। এবং এর ফল হয় সুদূরপ্রসারী।
এসব কথা বাঙালি জাতিও জানে নানাভাবে। জানেন রাষ্ট্রকর্তারাও। তারপরও কোথায় যেন এক ধরনের অবহেলা। কোথায় যেন এক ধরনের হীনমন্যতা। চেয়ার দখলের প্রতিযোগিতা! কেন এমন করা হয়? এ সব প্রশ্নের কোনো জবাব নেই।
ফেব্রুয়ারি মাস বাঙালির গৌরবের মাস। এ গৌরব রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। মাসব্যাপী বইমেলার সংবাদটি এখন জানেন প্রায় গোটা বিশ্বের মানুষ। জানেন বিভিন্ন ভাষার লেখকরাও। তারপরও আমরা হতবাক হয়ে যাই, যখন দেখি বইমেলার মতো জ্ঞানার্জনের প্লাটফর্মটিও দখল করে রাখেন রাষ্ট্র শাসকরা। বইমেলার উদ্বোধন, সম্মানিত লেখকদের ওপর ছেড়ে দেওয়া যায় না? প্রকৃত লেখক কখনোই রাজনীতি দ্বারা প্ররোচিত হন না। হতে পারেন না। সত্যের সপক্ষে, মানুষের সপক্ষে, মানবতার সপক্ষে কর্মই তার বড়ো পরিচয়। আর কোনো পরিচয় তার থাকার কথা নয়। তারপরও লেখকদেরকে দলীয়করণের প্রতিযোগিতা আমরা লক্ষ করি।
আমরা সংবাদ মাধ্যমে, বিভিন্ন গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠান দেখি। তাতে দেখা যায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হয়েছেন কোনো মন্ত্রী, আমলা, শীর্ষ ব্যবসায়ী (নব্য মিডিয়া ব্যবসায়ীরাও যুক্ত হয়েছেন), কিংবা সমাজের অন্য কোনো ক্ষেত্রের ক্ষমতাবান। আমরা দেখি রাষ্ট্রের শীর্ষ কবি, লেখক, কথা সাহিত্যিকরা বসে আছেন দর্শক সারিতে। কেন এই জবরদখল?
এই মানসিকতা থেকে লেখক-পাঠকসহ সর্ব শ্রেণীর সচেতন মানুষের বেরিয়ে আসা দরকার। মনে রাখতে হবে একটি প্রকাশনা উৎসব, কোনো জনসভা নয়। তাই তাতে কয়েক হাজার লোক সমাগমও আশা করা উচিত নয়। বিশ্বের শীর্ষ সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, প্রকাশনা উৎসবগুলো, কয়েকশত মানুষের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। আর এই কয়েকশত মানুষই মূলত একটি সমাজের, একটি ভাষা বিনির্মাণের শীর্ষ নেতৃত্ব দিয়ে যান।

দুই.
একটি ভাষাভাষি মানুষ যখন একজন লেখককে একগুচ্ছ ফুল দিয়ে পুরস্কৃত করে। তখন তাই হয়ে উঠে লেখকের জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া। বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য আর তার নিয়ন্ত্রকরা এ বিষয়ে বড়ো কৃপণ বলেই আমার কাছে মনে হয়।
বাংলাদেশে একটি মর্যাদাশীল পুরস্কার হচ্ছে ‘বাংলা একাডেমী পুরস্কার’। ১৯৬০ সাল থেকে এই পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। বাংলা একাডেমীর ওয়েব সাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী জানা যায় এর মধ্যে ১৯৮৫, ১৯৯৭, ২০০০ বছরে কোনো পুরস্কার দেওয়া হয়নি। দেশে কোনো যোগ্য লেখক ছিলেন না এ সময়? নাকি রাজনৈতিক কারণে এই বছরগুলোতে একাডেমী পুরস্কার দেওয়া হয়নি? কেন দেওয়া হয়নি এর সুনির্দিষ্ট এবং ব্যাখ্যা সংবলিত কোনো কারণ একাডেমীর ওয়েব সাইটে নেই।
লক্ষ করলে আরো দেখা যাবে যারা পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের মাঝে বেশকিছু লেখক-লেখিকা ইতিমধ্যেই পাঠক বিস্মৃত প্রায়। এ প্রজন্মের অনেকেই এদের নামটি পর্যন্ত জানেন না। তাদের লেখালেখি পড়াতো দূরের কথা। মহাকাল এভাবেই একজন লেখকের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়।
কেউ হয়তো বলতে পারেন, বিশ্বখ্যাত নোবেল সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তিত হওয়ার পর পর্যন্ত, আজ অবধি যারা নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তাদের সবার নাম কি আমরা মনে রেখেছি? এর উত্তর ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ দুটোই হতে পারে। নোবেল যারা পেয়েছেন, তারা বিভিন্ন দেশের মানুষ। বিভিন্ন ভাষাভাষি লেখক-কবি। আমরা কবিগুর" রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে যেমন মনে রেখেছি, সে সব ভাষার কবি-লেখকরাও নিজ নিজ ভাষাভাষির কাছে সমানভাবে সমাদৃত। গোটা বিশ্বের সব ভাষাভাষি মানুষের সে খোঁজ নয়।
বাংলা ভাষার লেখক কবি যারা মেধার মূল্যায়নে (অবশ্যই রাজনৈতিক কোটাভিত্তিক পুরস্কার বিবেচ্য নয়) একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের লেখাগুলো, গ্রন্থগুলো, নিয়মিত পুনঃপ্রকাশ করেনি বাংলা একাডেমী। যার ফলে তারা কালের গহ্বরে হারিয়ে যেতে বসেছেন। এটা খুবই যৌক্তিক কথা, শুধু একজন লেখককে কিছু অর্থ সম্মানী আর ক্রেস্ট-সনদ দিয়ে দিলেই জাতীয় দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। ঐ লেখকের লেখাগুলো সংরক্ষণ, পুনর্মুদ্রণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বটুকুও পালন করতে পারে বাংলা একাডেমী, কৃতিত্বের সঙ্গে। এ ছাড়া বর্তমান তর"ণ লেখকদেরকেও বিভিন্নভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে পারে জাতীয় এই প্রতিষ্ঠান ‘বাংলা একাডেমী’।
ভাবতে অবাক লাগে অনেক সাহিত্যিকও এখনো একাডেমী পুরস্কার পাননি। এমন কবি-লেখকদের তালিকা বেশ দীর্ঘই হবে যারা একাডেমী পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন কিš' এ যাবৎ পাননি। মেধাবৃত্তির বিবেচনায় একাডেমী পুরস্কার প্রদানে উদ্যোগী হবে বলেই জাতি আশা করে। মনে রাখতে হবে ভাষার প্রহরী লেখক-পাঠক-জনমানুষেরাই। রাষ্ট্র নায়করা এর প্রকৃত নিয়ন্ত্রক নন।

-----দৈনিক ভোরের কাগজ।ঢাকা। ১৯ফেব্রুয়ারি২০০৮ মংগলবার প্রকাশিত ।




৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×