somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নোবেল জয়ী নাট্যকার হ্যারল্ড পিন্টার এর নোবেল বক্তৃতা থেকে..... (৩)

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৪:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নোবেল জয়ী নাট্যকার হ্যারল্ড পিন্টার এর নোবেল বক্তৃতা থেকে..... (২) ( Click This Link) এর পর থেকে..........
..............
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিকারাগুয়ার নিষ্ঠুর সামাথা একনায়কতন্ত্রকে সমর্থন করেছে। ১৯৭৯ সালে নিকারাগুয়ার জনগণ সান্দিনিসতার নেতৃত্বে গণবিপ্লবের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটায়।

যদিও সান্দিনিসতারাও নিখুঁত ছিল না। তাঁদের রাজনৈতিক মতাদর্শে কিছু পরষ্পরবিরোধি ব্যাপার ছিল আর অনেক ক্ষেত্রে সহনশীলতার অভাবও ছিল। তবুও তাঁরা ছিল বুদ্ধিমান, যুক্তিসংগত আর সভ্য। একটি স্থিতিশীল ও সুন্দর সমাজ গঠনের উদ্যোগ তাঁরা নিয়েছিল। হাজার হাজার দারিদ্র্যপীড়িত কৃষকেরা জীবন ফিরে পেয়েছিল সান্দিনিসতা শাসন আমলে। সেসময় এক লাখেরও বেশি পরিবার পেয়েছিল চাষের জমি। দুই হাজার স্কুল গঠিত হয়েছিল। বেশ ব্যাপক আর জোরদার সংগঠনের কারণে বিনা পয়সার চিকিতসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শিশু মৃত্যুর হার কমে দাঁড়িয়েছিল এক তৃতীয়াংশে। আর পোলিও উচ্ছেদ হয়েছিল সমূলে।

এই সফলতাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিন্দা করেছে লেনিন/মার্কসবাদী নাশকতা বলে। মার্কিন সরকারের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এক বিপজ্জনক উদাহরণের পত্তন হচ্ছিল। যদি নিকারাগুয়াকে অনুমতি দেয়া হয় সামাজিক স্থিতি ও ন্যায়শীলতা স্থাপন করার, শিক্ষা ও চিকিতসার মান বাড়ানোর, সামাজিক ঐক্য আর জাতীয় মর্যাদা বৃদ্ধির, তাহলে প্রতিবেশী দেশগুলিও তো একই দাবি তুলবে, একই কাজ করবে। আল সালভাদরে সেসময় জোর প্রতিরোধ উঠেছিল তাদের ততকালীন সামাজিক ব্যবস্ঠার বিরুদ্ধে।

আমি আগেও 'মিথ্যার পর্দা'র কথা বলেছি, যা আমাদের ঘিরে আছে। প্রেসিডেন্ট রিগ্যান নিকারাগুয়াকে বলতেন "সমগ্রতাবাদী জেলখানা"। মিডিয়া ও বিশেষ করে ব্রিটিশ সরকার এই উক্তিকে সঠিক ও ন্যায়সঙ্গত বলেই গ্রহণ করেছে। অথচ সান্দিনিসতা সরকার আমলে কোনো ডেথ স্কোয়াডের রেকর্ড নেই। কোনো অত্যাচারের রেকর্ড নেই। পদ্ধতিগত অথবা সরকারিভাবে সামরিক নির্মমতারও রেকর্ড নেই কোনো। সরকারে তিনজন ধর্মযাজক ছিলেন, দুইজন ঈসায়ী আর একজন ম্যারিকনোল মিশনারী।

"সমগ্রতাবাদী জেলখানা" ছিল পাশের রাজ্যে- আল সালভাডর আর গুয়াতেমালায়। ১৯৫৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র গুয়াতেমালার গণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটিয়েছিল আর পরবর্তি একের পর এক সামরিক স্বৈরাচারী সরকারের বলি হয় প্রায় দুই লাখ মানুষ। পৃথিবীর ছয়জন প্রসিদ্ধ ঈসায়ীকে ১৯৮৯ সালে সান সালভাদরে সেন্ট্রাল আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে নৃশংসভাবে খুন করে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার ফোর্ট বেনিং এ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আলকাটল সেনাবাহিনী। প্রচণ্ড সাহসী আর্চবিশপ রোমেরো খুন হন একটি ধর্মীয় বক্তৃতার সময়। প্রায় ৭৫০০০ মানুষ নিহত হয়েছে এ সময়ে। কেন তাঁদের মারা হলো? তাঁরা খুন হয়েছে কারণ তাঁদের বিশ্বাস ছিল আরেকটু ভালোভাবে জীবনযাপন করা যায় এবং তা অর্জন করা সম্ভব। এই বিশ্বাস ততক্ষণাত তাঁদের পরিণত করলো কমুনিস্ট এ। তাঁরা খুন হয়েছেন কারণ জন্মসূত্রে পাওয়া গরিবী, উতপীড়ন ও লাঞ্ছনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সাহস করেছিলেন তাঁরা।

যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত সান্দিনিসতা সরকারেরও পতন ঘটাতে পেরেছিল। যদিও তাতে সময় লেগেছে বেশ কয়েক বছর। তবে অবিরাম অর্থনৈতিক নিপীড়ন আর ৩০ হাজার মৃত্যুতে শেষ পর্যন্ত নিকারাগুয়ার মানুষের মনোবল ফুরিয়ে যায়। আবার দারিদ‌্র্যপীড়িত আর সর্বস্বান্ত হলো। ক্যাসিনোগুলো ফিরে এলো দেশে। বিদায় নিলো অবৈতনিক স্কুল আর নিখরচার চিকিতসা। বড় ব্যবসাকেন্দ্রগুলি ফিরে এলো নতুন উদ্যোমে। "গণতন্ত্রে"র প্রতিষ্ঠা হলো।

তবে এই নীতি শুধুমাত্র এখানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। সারা পৃথিবীতেই চালু হয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যুক্তরাষ্ট্র সারা পৃথিবীর সমস্ত ডানপন্থী সামরিক একনায়কতন্ত্রকে সমর্থন করেছে অথবা গঠন করেছে। আমি ইন্দোনেশিয়া, গ্রীস, উরুগুয়ে, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে, হাইতি, তুর্কি, ফিলিপিন্স, গুয়াতেমালা, আল সালভাদর আর অবশ্যই চিলির কথা বলছি। ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র যে বিভীষিকায় আক্রান্ত করেছে চিলিকে তা কোনোদিন মুছে ফেলা যাবে না, ক্ষমারও অযোগ্য।

এসব দেশে হাজার হাজার হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সত্যি? সব ক্ষেত্রেই কি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিই দায়ী? উত্তর হলো হ্যাঁ। কিন্তু আমাদের কখনো তা জানতে দেয়া হয় না। যেন এরকম কখনোই হয়নি। কোনো কিছুই কখনোই হয়নি। এমন কি যখন এসব হচ্ছিল তখনো তা হচ্ছিল না। এসব কোনো ব্যাপার না। কোনো আগ্রহের বিষয় না। যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধ সবসয়েই পদ্ধতিগত, দৃঢ়, নির্মম, অনুশোচনাহীন অথচ খুব কম লোকই এ নিয়ে কথা বলেছে। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে বাহবা দিতেই হয়। খুব নিপুনভাবে সারা পৃথিবীর উপরে তারা তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করেছে সার্বজনীন মাঙ্গলিক বাহিনীর ভেক ধরে। চরম সফল মগজ
ধোলাইয়ের এক বিচক্ষণ এবং উজ্জ্বল উদাহরণ।


.................. (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৪৮
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×