আজ দুদিন ধরে মাথায় ঘুরছে কয়েকটা লাইন। ঝিঁঝিঁ পোকার মত গুন গুন করে শব্দ করছে। কিছু কিছু শব্দ একদম নিরীহ, সারাজীবন পড়াশোনা করা, বাবা-মায়ের কথা শুনে বড় হওয়া, গোবেচারা ভাল ছেলেটার মত। খুব বেশি জ্বালাচ্ছে না, চুপচাপ মাথার কোষে কোষে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাঝে মধ্যে গড়াগড়ি দিয়ে নিচ্ছে কোন আরাম-কেদারায়।
আর কিছু কিছু শব্দ আছে, মাথার মধ্যে ঢোকার পর থেকে খুব যন্ত্রণা দিচ্ছে। মনে হচ্ছে কোন একটা মারাত্মক বিষাক্ত বিছুটি ঢুকে পড়েছে নাসারন্ধ্র দিয়ে সড়সড়্ করে। চোখের পেছনের দেয়ালে জ্বালা ধরিয়ে দিয়ে একদম সোজা মাথার মধ্যে ঢুকে গেছে। এই উৎপাতে ছটফট করছি ভিতরে ভিতরে, একদম ছাল ছাড়ানো কোন জ্যান্ত পশুর মত।
অনেক আগে ছোট থাকতে, যখন আমি কেবল ক্লাস এইট কি নাইন-এ পড়ি তখন "শূন্যতা" নামে একটা কবিতা লিখেছিলাম। কবিতাটা নিয়ে আমি খুব হীনমন্যতায় ভুগতাম, কারণ একদম সরলমনে যা আসে তাই লিখেছিলাম। একটু পরিবর্তন না করেই এখানে ক'দিন আগে রেখে দিয়েছি। তারপর নিজেই পড়ে মনের হীনমন্যতা একটু কেটেছে। আমার এক বন্ধু পড়ে বললো তার খুব ভালো লেগেছে আর আরেকটা কবিতা লিখতে বললো, অপার্থিব সুখ নিয়ে।
প্রথম চিন্তাতেই মনে হলো আমি কখনোই সুখ বা আনন্দ নিয়ে লিখতে পারবো না, কারণ আমার কাছে সুখ বা আনন্দ খুবই ক্ষণস্থায়ী আর প্রতারক একটা অনুভূতি। ঠিকমতো ওটাকে কব্জা করার আগেই দেখা যায় দুঃখশোকের ঢেউয়ের পর ঢেউ এসে আমাকে বিপর্যস্ত করে ফেলে। আর প্রতারক একারণে যে বেশিরভাগ সময়ই খেয়াল করি যে আনন্দের অনুভূতিটা ঠিক শুদ্ধ না,মাঝে কোথায় যেন একটা দুঃখের চিকন সাপ ঢুকে পড়েছে, বেহুলার বাসর-ঘরের মত। তাকে অগ্রাহ্য করতে পারছি না।
এইসব প্রতিকূলতা কাটিয়ে আমাকে সুখের সেই কবিতাটা আজকে লিখতেই হবে কারণ মাথার মধ্যে এখন খুব হতচ্ছাড়া যন্ত্রণা হচ্ছে। শব্দগুলোকে মুক্তি না দিলে আমার নির্বাণ নেই। দেখা যাক কদ্দুর কী করতে পারি এই শব্দমালার নিরন্তর টানা-পোড়েন নিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১:৫৬