somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওয়ার পোয়েট্রিতে ইউনিফর্মহীন কবিদেরও রাজত্ব আছে

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সকাল ৮:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেপাই থেকে জেনারেল-- সবাই এক সঙ্গে চিতকার করে বলছেন, চির উন্নত মম শির। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মটো। কাজী নজরুল ইসলাম আর তাদের কাছে নগন্য কোনো হাবিলদার নয়, জাতীয় কবি। সমরবিদ্যাও দিন দিন আধুনিক হচ্ছে। এখন সমাজতত্ত্ব, মনোবিজ্ঞান এমনকি রাষ্ট্রবিজ্ঞানও পড়ানো হচ্ছে সেনা কর্মকর্তাদের। তবে এটা নিশ্চিত, এখনো কবিতার অনুপ্রবেশ ঘটেনি সামরিক বিজ্ঞানে। অথচ কবিতার দীর্ঘ মেয়াদী ইতিহাসে এরই মধ্যে রণাঙ্গণের কবিতা আলাদা একটি ডিসকোর্সে পরিণত হয়েছে।
সামরিক ব্যক্তিত্বদের কবিতা চর্চার বিষয়টি একটু বেখাপ্পা লাগার কথা। পেশার বৈপরীত্য ছাপিয়ে অনেকেই কবিতা লিখেছেন। শত্রুর অপেক্ষায় ট্রেঞ্চে ওঁত পেতে থাকার ফাঁকেও কবিতা লেখা হয়েছে। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় ইংরেজি কবিতায় রুপার্ট ব্রুক, আইজ্যাক রোসেনবার্গ, উইলফ্রেড ওয়েন বা চার্লস সোরলের মতো সেনারা রীতিমতো কবিতাকে শাসন করতে শুরু করলেন-- তখন ওয়ার পোয়েট্র টার্মটি ব্যবহৃত হতে শুরু করলো। প্রথম মহাযুদ্ধের রণক্ষেত্র আরো যে সব কবিদের এনেছে, তারা হলেন: আলফ্রেড এডওয়ার্ড হাউসম্যান, আলফ্রেড জয়েস ক্লিম্বান, কর্নেল জন ম্যাককেয়ার, আইজ্যাক রোসেনবার্গ, লরেন্স বিনইওন, রবার্ট নিকোলস, রুপার্ট ব্রুক, উইলফ্রেড উইলসন গিবসন। কালের পরিক্রমায় যুদ্ধবিষয়ক কবিতার আঙ্গিকও বাঁক নিয়েছে। এখন যুদ্ধবিরোধিতাও ওয়ার পোয়েট্রির অংশ।
সাহিত্যে যুদ্ধের অনুপ্রবেশ মোটেই নতুন কোনো ঘটনা নয়। পৌরাণিক সাহিত্যেও যুদ্ধের অস্তিত্ব আছে, আছে বীরের স্তুতিগাঁথাও। তবে রণাঙ্গণের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে উতসারিত কবিতা সাহিত্য পেয়েছে অনেক পরে। গত শতাব্দিতে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রণাঙ্গণ থেকে পাঠানো তাজা কবিতা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল পাঠক মহলে। জার্মানদের চেয়ে ইংরেজরাই বেশি কবিতা লিখেছিল এ সময়। ইংল্যান্ডে উইলফ্রেড ওয়েন বেশ জনপ্রিয় কবি ছিলেন। জার্মান কবিদের মধ্যে আ্যন স্কম্যাকের কবিতা ছিল বেশ জনপ্রিয়। ওয়ার পোয়েট্র শব্দবন্ধকে এখনো যথাযথভাবে সংজ্ঞায়িত করা না গেলেও, ইউনিফর্মের কবিদের কাছ থেকে বাঁক পরিবর্তনের মতো গ্রহণযোগ্য ও গভীর তাতপর্যপূর্ণ লেখা নয়, রণক্ষেত্রে সরাসরি আবেগতাড়িত বর্ণণা ও রিপোর্টিংই প্রত্যাশা করা হয়েছে। সহজবোধ্যতার কারণেই হয়তো তারা পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধেও সেনাদের মধ্যে কাব্য চর্চার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। ১৯৩৯ সালের শেষের দিকে দ্য টাইমসের সাহিত্য সাময়িকীতে ওয়ার পোয়েট্রি প্রসঙ্গে `টু দ্য পোয়েট অফ ১৯৪০' শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়। সাহিত্যাঙ্গণে রণক্ষেত্রের কবিদের নিয়ে আলোচনা আরো বিস্তৃত হতে থাকে তখন। ১৯৪১-এ যখন বিশ্বযুদ্ধ চলছে পুরোদমে, তখন এক ব্রিটিশ রেডিওতে আলোচনার বিষয় ছিল হোয়াই হ্যাজ দিস ওয়ার প্রোডিউজড নো ওয়ার?' অ্যালোন লুইস ও কেইথ ডগলাসের কবিতা এ প্রশ্নে সমুচিত জবাব দিয়ে দেয় ব্রিটিশ সমালোচকদের। কার্ল শাপিরোও পিছিয়ে নেই। যা হোক, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইংরেজির চেয়ে ফরাসি ভাষায় বেশি কবিতা লেখা হয়েছিল রণক্ষেত্র থেকে।
ভিয়েতনাম যুদ্ধে ওয়ার পোয়েট্রির বিশাল অংশজুড়ে মানবতাবাদ আশ্রয় নেয়। যুদ্ধবিরোধিতা প্রাধান্য পায় কবিতায়। বর্তমানে ইরাক রণাঙ্গণ থেকে ই-মেইলে বা ব্লগে যে সব কবিতা আসছে-- তাতেও সেই যুদ্ধবিরোধিতার সুর। আরো একটি বিষয় এখানে লক্ষণীয়, সেনাবাহিনীর অফিসার র‌্যাংকের কর্মকর্তাদের চেয়ে সাধারণ সেপাইরাই বেশি মাত্রায় কাব্য চর্চায় আসক্ত। হতে পারে, অফিসাররা যে সামরিক বিদ্যায় বুদ হয়ে থাকেন-- সেখানে কবিতা নেই।
যুদ্ধবিরোধিতার সুযোগে বেসামরিক কবিরাও সেনাছাউনিতে আশ্রয় নিচ্ছেন। ইরাক যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ফের চাঙ্গা হয়েছে `ওয়ার পোয়েট্রি'।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×