somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেরা সাত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বাংলাদেশের সমস্যা ও সম্ভাবনা

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

০০৭ সংখ্যাটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো জেমস বন্ড চরিত্রের মাধ্যমে। আর ২০০৭ এ এসে বার্নাড ওয়েবার ০৭.০৭.০৭ বর্ষটিকে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে নিয়ে এসেছেন লিসবন ০৭.০৭.০৭ নাম দিয়ে। ২০০৭ সনের জুলাই মাসের ৭ তারিখে পর্তুগালের লিসবনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ অভিযানের আতœপ্রকাশ ঘটে। যদিও আন্তজার্তিক ভাবে এই সংস্থাটির গ্রহনযোগ্যতা এবং ভোট দানের প্রক্রিয়াটি নিয়ে সন্দেহের শেষ নেই। তব্ওু গেলো বছর বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রায় ১০০ মিলিয়নের অধিক মানুষ বিশ্বের সাতটি আশ্চর্য্যতম স্থানগুলোকে নির্বাচন করতে ভোটাভুটিতে অংশ নিয়েছে। সেদিন দুঃখ হয়েছিলো বাংলাদেশীদের। জাতীয় সংসদ, স্মৃতিসৌধ কিংবা লালবাগের কেল্লার মতো স্থাপত্য নির্দশনগুলো বিবেচনায় না আসার জন্য। কিন্তু এবার টনক নড়েছে বাংলাদেশী দেশপ্রেমিক নেটিজেনদের। চলতি বছর বিশ্বের সেরা সাত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের র্শীর্ষ তালিকায় বাংলাদেশেকে দেখতে তারা উঠে পড়ে লেগেছে। যদিও প্রতিযোগিতাটি চলবে পুরো বছর জুড়ে তবে এখন পর্যন্ত কক্সবাজার ও সুন্দরবন এগিয়ে রয়েছে তালিকার শীর্ষে, তাই স্বপ্নের ডালপালা মেলতে শুরু করেছে আমাদেরও। এ অভিযানে আমি নেটিজেনদের এগিয়ে রাখবো এজন্যই যে এখন পর্যন্ত যা কিছু অর্জন তা সম্ভব হয়েছে কিছু দেশপ্রেমিক নেটিজেন আর গণমাধ্যমের প্রচারের জন্য।

ফেসবুক, সচলায়তন ,সামহোয়্যারইন কিংবা ইউটিউবের মতো ইন্টানেট ভিত্তিক সোশাল নেটওয়ার্কগুলোতে এই প্রতিযোগিতার প্রচার চলছে পুরো দমে। বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা ও টিভি চ্যানেলগুলোও এ সম্পর্কে নিয়মিতভাবে সংবাদ ও ফিচার প্রকাশ করে যাচ্ছে। খুবই আশার কথা। চলছে নামে বে-নামে ইমেইল আইডি খুলে ভোটাভুটিও! সুস্থ্য হোক আর অসুস্থ্যই হোক যে কোন মূল্যে আমরা কক্সবাজার কিংবা সুন্দরবনকে সেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের তালিকার শীর্ষে দেখতে চাই। শ্রদ্ধা জানাতেই হয় এমন দেশপ্রেমকে।

আমাদের স্বপ্ন আর বাস্তবতার মধ্যে কতটুকু ফারাক সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার করবো। গ্রীক মিথলজির কৃষক প্যারিসের কথা আমরা নিশ্চই সবাই জানি। সৌন্দর্য্যরে দেবী আফ্রোদিতিকে পাবার জন্য প্যারিসের যুদ্ধটাই ছিলো একটা ইতিহাস। পৃথিবীর সেরা সুন্দরীকে পাবার জন্য ধ্বংস হয়েছিলো ট্রয় নগরী!! ইতিহাসে প্যারিসের সংখ্যা কম বলেই সেটি দৃষ্টান্ত। খুব কম লোকই এভাবে যুদ্ধ করে সেরা সুন্দরকে উপভোগ করতে চায়।

ধরে নিলাম কক্সবাজার বিশ্বের সেরা সাত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের তালিকার চূড়ান্ত পর্যায়ে মনোনয়োন পেয়ে গেলো! এখন এ সেরা সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে যদি প্যারিসের মতো পর্যটকদের এতো কাঠ খড় পোড়াতে হয়, আর বিড়ম্বনা পোহাতে হয় তাহলে সে স্বপ্ন আমাদের আর বাস্তবায়ন হবেনা। আধুনিক বিশ্বে একজন ট্রাভেলার তার ভ্রমণের শুরুতেই ইন্টারনেটে সার্চ ইঞ্জিনের সাহয্যে খুঁজে দেখে সেই স্থানটি কেমন, আর কি কি সুযোগ সুবিধা সেখানে বিদ্যমান। পর্যটকরা যখন দেখবে প্রাথমিক ভাবে সেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের তালিকায় কক্সবাজার তখন তারা নেট সার্চ দিয়ে যারপরনাই হতাশ হবে। যেমনটা হয়েছি আমি। গুগুল সার্চে কক্সবাজার কিংবা সুন্দরন সার্চ দিলে যে সকল ওয়েভ লিংক পাওয়া যায় তা নিতান্তই দূর্বল। নেই পর্যাপ্ত তথ্য, চমক লাগানো ছবি কিংবা ভিডিও চিত্র !! বিদেশী পর্যটক আকৃষ্ট করতে শুধু মাত্র তথ্য, আকর্ষণীয় ছবি কিংবা ভিডিও চিত্রই পর্যাপ্ত নয়, প্রয়োজন যথাযথ প্রচারও। একজন পর্যটক সার্চ ইঞ্জিন ঘেটে যখন দেখবে কক্সবাজার ভ্রমণের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই তখন সে তার মুল্যবান হলিডে নষ্ট করে বাংলাদেশকে তার ভ্রমণের স্থান হিসাবে নির্বাচন করবে না। তাহলে একজন পর্যটক সার্চ ইঞ্জিনে কি কি দেখতে পারেন? তিনি দেখবেন আসলে কি কি আকর্ষণীয় জিনিস সেখানে আছে? শুধু বিশাল জলরাশিতে সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয় দেখা, প্রেমিকার মুখে জল ছিটিয়ে দিয়ে সাগরের জলে কিছুণ লম্ফঝম্প করার জন্যই সুদুর ইউরোপ-আমেরিকা থেকে লোক জন দল বেঁধে আমাদের দেশে আসবে, এ আবেগকে আমাদের সংযত রাখতে হবে।

ইন্টারনেটে কক্সবাজার ও সুন্দরবনসহ অপর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং স্থাপত্য নির্দশনগুলোর পর্যাপ্ত তথ্য, রাজধানী ঢাকা থেকে এসব স্থানের দূরত্ব এবং যাতায়াত সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা, হোটেল-মোটেল গুলোতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অগ্রীম বুকিং দেয়ার সুবিধা, হোটেলের আভ্যন্তরীণ সুবিধার বিস্তারিত বর্ণনা, আধুনিক নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতকরণের গ্যরান্টি, নিরাপত্তা ও আবহাওয়া সম্পর্কে তথ্য এবং বিনোদনের সুব্যবস্থা, সেই সাথে প্রবাসী পর্যটক ও বিদেশী পর্যটকদের আলাদা স্থান করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। সেই নির্দিষ্ট জোনে যেন আগে থেকেই টিকিট বুকিং দিয়ে কিংবা পাসপোর্ট দেখিয়ে ঢোকার ব্যবস্থা থাকে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। আলাদা করে কেন প্রবাসী ও বিদেশীদের জন্য ব্যবস্থা রাখতে হবে এমন প্রশ্ন যদি কারো মনে আসে তার উত্তরে বলবো, আমি নিশ্চিত যদি কক্সবাজারে কোন বিদেশীনী বিকিনি পড়ে গোসল করতে যায় তাহলে সেই দৃশ্য দেখার জন্য অসংখ্য দর্শক লাইন ধরবে। সৌখিন ফটোগ্রাফার কিংবা ভিডিওগ্রাফার পড়বেন ছিনতাইকারীর কবলে। সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা দশ টাকার ডাবের দাম হাঁকবে একশত টাকা। চকলেট কিংবা চুইংগাম বিক্রেতা পিছু নেবে যতক্ষণ না পর্যন্ত পর্যটক তাকে মারতে উদ্ব্যত হবে। আপন মনে কেউ কোন রোমান্টিক মুহূর্তে একটু কাছাকাছি হতে গিয়ে দেখবে মাথার কাছে একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে একজন হাজির,” ভাইয়্যা আপারে একটা ফুল কিন্না দেন না”। ভাবখানা এমন বেড়াতে এসে এই ফেরীওয়ালার কাছথেকে ফুল না কিনলে ভালোবাসা মিথ্যে হয়ে যাবে। পাইছি বিলাতি মুরগি বলে ঝাঁপিয়ে পড়বে স্থানীয় ঠকবাজ !! এই হচ্ছে প্রাকৃতিক সোন্দর্যের সেরা অবস্থানের শীর্ষে থাকা কক্সবাজারের বর্তমান অবস্থা!!

হলিডে কিংবা হানিমুন মানেই নিরবে নিভৃতে আপনজন কিংবা প্রিয় জনের সাথে সময় কাটানো। প্রকৃতি আর ভিন্ন আবহাওয়ায় জীবনে খানিকা বৈচিত্র আনতে গিয়ে যদি এতো কিছু মাথায় নিয়ে কক্সবাজার কিংবা সুন্দরবন যেতে হয় তাহলে পর্যটক বাঙালি হলেও তিনি ব্যংকক সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া,কিংবা সুইজারল্যান্ডের দিকে ছুটবেন। দেশ প্রেমের কারনে হয়তো তিনি প্রথমবার আসবেন কিন্তু সেই ভ্রমনটা হয়ে যাবে ন্যাড়ার বেলতলায় যাবার মতো দশা। প্রতিবছর লক্ষাধীক প্রবাসী বাঙালি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হলিডে করতে যায়। প্রবাসে বড় হওয়া ছেলে মেয়েদের অনেককেই দেখেছি তারা দেশে আসে নিজের আত্নীয় স্বজন দেখতে, আর হলিডে কাটাতে যায় অন্য দেশে। নিজের দেশের অসাধারন প্রাকৃতিক সোন্দর্য আর স্থাপত্য নির্দশন দেখতে তার এতটা উৎসাহী হয়না যতটা আনন্দ পায় অন্যকোন দেশে গিয়ে পয়সা খরচ করতে। শুধু মাত্র প্রবাসী বাংলাদেশীরা যদি প্রতিবছর তাদের নিজ দেশে হলিডে পালন করতে আসে চোখ বন্ধ করে আমি বলতে পারি তাহলেও কক্সবাজার সুন্দরবনে পা ফেলার জায়গা থাকবেনা! কিন্তু নিজের দেশের মানুষকেইবা আমরা কতটুকু আকৃষ্ট করতে পেরেছি সেই প্রশ্নের ও উত্তর খুঁজতে হবে আমাদের।

আর একটি কথা প্রায়শই কানা ঘুষা চলে.. টুরিষ্ট সেন্টারগুলোতে প্রকাশ্যে এ্যালকোহল বিক্রি হবে কি হবেনা ? আমার মনে হয় বাংলাদেশের এমন কোন পর্যটন কেন্দ্র খুঁজে পাওয়া যাবেনা যেখানে দালালরা মদ বিক্রি করেনা !! এমনকি কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন কিংবা ফয়েস লেকের মতো জায়গায় দালালরা লুঙ্গির নিচে মদের বোতল নিয়ে ঘুরে,”স্যার লাগবো নাকি ? একেবারে অরিজিনাল বাইরের টা আছে।” লাগলে কইয়েন হোটেলে গিয়া দিয়া আমু,” হালে শুনেছি টেলিফোনে অর্ডার দিলে হার্ড ড্রিংকস বাসায় চলে আসে। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে , যদি আমাদের টার্গেটই হয় পর্যটনকে আমরা ব্যবসা হিসাবে নেবো, তবে বিদেশীদের জন্য এ্যালকোহল এবং ডিসকোর ব্যবস্থাও রাখতে হবে। খোলা বাজারের অস্বাস্থ্যকর মদ বিক্রির সুযোগ দেয়ার চেয়ে চেয়ে লাইসেন্সধারী ব্যবাসায়ীদের দ্বারা এটি নিয়ন্ত্রন করাই অধিক যোক্তিক। পর্যটন সেন্টারগুলোতে গোপনে দেহ ব্যবসার প্রথাটিকে বিলুপ্ত করতে দেশীয় সংস্কৃতির নিয়মিত অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হবে, যেন রাতের বেলায় পর্যটকরা এসে বিনোদনের অভাব বোধ না করেন। তবে সবকিছূই একটা কঠোর নীয়ম নীতির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রনও করতে হবে।

ইংল্যান্ড বা ইউরোপের যে কয়টি লাইব্রেরি কিংবা বুক শপে আমি গিয়েছি সেখানে অভ্যস বসত ভ্রমন বিষয়ক বই গুলো নেড়ে চেড়ে দেথার চেষ্টা করে ইন্ডিয়ান ট্রাভেল গাইডের সন্ধান মিললেও বাংলাদেশী কোন ট্রাভেল গাইডতো দূরের কথা কোন পোষ্টার লিফলেটও চোখে পড়েনা। ১৯৯৬ সনে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যোগে আয়োজিত পর্যটন সপ্তাহের কথা মনে পড়ে আমার , সে বার খুব জাক জমকপূর্ণ উৎসবের মাধ্যমে আবাহনী মাঠে আয়োজিত হয়েছিলো অনুষ্ঠান মালা। তখন কিছু লিফলেট ও ট্রাভেল গাইড আমার চোখে পড়েছিলো। তার পর ভালো কোন উদ্যোগ মনে করতে পারছিনা। প্রাথমিক ভাবে বাংলাদেশের বিমান টিকেট গুলোর পিছনে যদি বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর ছবি সংযুক্ত করা যায় এবং সেই সাথে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশী মিশনগুলোতে পর্যাপ্ত লিফলেট ও ইংরেজী বই বিতরণ করা যায়, বিবিসি, সিএনএন, ডিসকোভারীর মতো টিভি চ্যানেলগুলোতে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ,সুন্দরবান নিয়ে প্রামন্য চিত্র নির্মানের উদ্যোগ নেয়া যায়, কিংবা স্পন্সর ভিত্তিক বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা করা যায়। আন্তজার্তিক পত্র পত্রিকায় বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানগুলো নিয়ে ট্রাভেল স্টোরি লিখা যায়, তাহলেও এই অভিযানের একটা ভালো ভবিষ্যত আমরা তৈরী করে দিয়ে যেতে পারবো। বাংলাদেশের গন মাধ্যম এখন অনেক শক্তিশালি হয়েছে, মেধাবী শিক্ষার্থীরা এখন দেশ নিয়ে অনেক ভাবছেন, দেশপ্রেমিক বাঙালির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে, কম বেশী অনেকের সাথে বিদেশী গনমাধ্যমের লেখক ও প্রকাশকের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে । বিদেশী পর্যটক লেখক বন্ধুদের বাংলাদেশে আমন্ত্রন জানাতে হবে। অথবা কষ্ট করে নিজেরা ভালো ছবি সহ ট্রাভেল স্টোরি লিখে দিতে হবে যেন তারা এই সব ফিচারগুলো আন্তজার্তিক গনমাধ্যমে প্রচারের উদ্যোগ নেয়। উইকিপিডিয়া কিংবা ইন্টারনেটের ভিভিন্ন সাইটগুলোকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলতে হবে।

এখন সবকিছুর দায় দায়িত্ব আসলে কার উপর বর্তাবে? পর্যটন শিল্পকে বেগবান করতে গিয়ে সরকারের বিমান ও পর্যটন মন্ত্রনালয় রয়েছে, রয়েছে পর্যটন কর্পোরেশনও। বেসরকারী উদ্যোগে এখন বেশ কয়েকটি ট্রাভল ট্যুর কোম্পানীও প্যাকেজ ভিত্তিক ভ্রমনের ব্যবস্থা করছে। দায়িত্বটি আসলে কে নেবে ? আমার মনে হয় দায়িত্বটি নিতে কারো আপত্তি নেই সংকট শুধুই অর্থের আর প্রয়োজনীয় উদ্যোগের। অনেকেই পর্যটন শিল্পে বিদেশী বিনিয়োগের কথা বলেন, আমি বলি স্বদেশী বিনিয়োগের কথা। তবে বিদেশীদের কাছে কারিগরী ও নির্মান সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। স্বদেশী বিনিয়োগ বলতে আমি প্রবাসী বাংলাদেশী বিনিয়োগকারীদের কথা বলছি। প্রতি বছর বৃটিশ বাংলাদেশীদের অর্থায়নে সিলেটে যে সকল বিল্ডিং ও ইমারত নির্মান হচ্ছে তার পুরো বিনিয়োগগুলোই যাচ্ছে রসাতলে ! সে দিন এক প্রবাসী বাংলাদেশীদের বাসায় গেলাম নিমন্ত্রন খেতে। তিনি তার ড্রয়িং রুমে বসিয়ে আমাকে তার সিলেটে সাড়ে এগারো কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাড়ীর ভিডিও দেখাচ্ছিলেন। আমি কিছুক্ষন দেখে বললাম," ভাই বন্ধ করেন, আর ভালো লাগছেনা"। তিনি বললেন, কেন? বললাম, আমার কষ্ট হচ্ছে। কেন, কেন তোমার কষ্ট হচ্ছে?” এতো টাকা দিয়ে বাড়ী বানালাম বিটিভি আমার এই বাড়ী নিয়ে আধঘন্টার ডকুমেন্টারী বানালো, আর তুমি বলছো বন্ধ করতে”। আমি জানতে চাইলাম, আপনি এই বাড়ীতে বছরে কয়বার যান? কারা থাকে এই বাড়ীতে? উনি হেসে জবাব দিলেন, আমি বছরে দুই একবার যাই , আর বন্ধু বান্ধব কেউ গেলে মাঝে মাঝে থাকে, আর বাকী সময়টা আমার কেয়ারটেকার দেখে রাখে।” আমি বললাম আপনার আতœীয় স্বজনদেও মধ্যে কেউ নেই যারা চাকরির জন্য প্রতিনিয়ত আপনার কাছে ধর্ণা দেয় ?? ওনি বললেন ভাই আর বলোনা, দেশে গেলে লাইন ধরে, টাকার বস্তা নিয়ে বসতে হয়, তবুও কুলায়না , খালি দাও আর দাও..
ভদ্রলোককে বললাম, এই সাড়ে এগারকোটি টাকা দিয়ে যদি আপনি একটা লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করতেন তাহলে টাকার বস্তানিয়েও আপনাকে বসতে হতোনা, দেশে গিয়ে টেলিফোনে সুপারিশও শূনতে হতোনা, আর বেকারদেরও একটা স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ হতো। ভদ্রোলোক হেসে বল্লেন,”হু আমি প্রজেক্ট বানাই আর সবাই লুইটা পুইটা আমাকে খেয়ে ফেলুক! আমার আলিশান বাড়ীই ভালো”। এখানে শংকা টি নিরাপত্তার আর অভাবটি পরিকল্পনার। এমন অগনিত অংসখ্য উদাহরণ আমার কাছে আছে। অনেক প্রবাসী বাংলাদেশীরা টাকা খরচ করার জায়গা পায়না, বিনিয়োগের নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে বেড়ায় দিন রাত, দেশের জন্য অনেক কিছু করতে চান তারা কিন্তু কর্তা ব্যক্তিদের অনেকের ধারণা ইংল্যান্ডের সকল ব্যবসায়ীরা শুধু ভাত গোস্তের ব্যবসা করে, তাদের দিয়ে কিস্যু হবেনা। এসব প্রবাসী ব্যবাসীরা দেশে আসলে তাদের নিয়ে তাচ্ছিল্য করেন অনেকেই ,” আরে মিয়া আপনেতো রেষ্টুরেন্টের ভাত বেইচ্যা পয়সা বানাইছেন, আপনে বিনিয়োগের কি বুৎঝবেন? এভাবেই আমারা আমাদের স্বদেশী বিনিয়োগকারী হারাচ্ছি। ধরে নিলাম রেষ্টুরেন্টের যে লোকটি কারী বিক্রি কররে মিলিয়নিয়ার হয়েছে, সে হয়তো বিনিয়োগের বিষয়টি সম্পর্কে তাত্তিক জ্ঞান রাখেনা, তবে সে কোন না কোন ভাবে তো ব্যবসায়িক সফলতা লাভ করেছে, এই বিষটিতো মেনে নিতেই হবে। বিলেতে বসে যিনি বৃটিশদের কাছ থেকে পয়সা এনে নিজের পকেটে ঢুকিয়েছে নিশ্চই তিনি মেধাবী ! তাই নীতি নির্ধারকদের পর্যটন শিল্পের বিনিয়োগের খাত গুলো চিহ্নিত করতে হবে, সরকারী ভাবে উদ্যোগ নিয়ে অথবা সরকারী নিয়ন্ত্রনে বেসরকারী সংস্থার মাধ্যমে বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে প্রবাসীদেও কাছে আবেদন জানাতে হবে বিনিয়োগের জন্য। সরকার যদি প্রবাসীদেও বিনিয়োগে অর্থেও যথাযথ নিরাপত্তা দিতে পারে তাহলে কক্সবাজর সেন্ট মার্টিন কিংবা সুন্দরবনের অবয়ব বদলে যাবে চোখের পলকে। আমি ব্রিটেনের দুই একটি পুরোনো সংগঠনের নাম বলবো, বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশ, বাংলাদেশ বৃটিশ চেম্বার অব কর্মাস, গ্রেটার সিলেট ওয়েলফেয়ার এসোয়েশনও গিল্ড অব বাংলাদেশ রেষ্টুরেন্টার্সের মতো প্রবাসীদের ছাতা সংগঠনগুলোর সহায়তার বৃটিশ বাংলাদেশীরা এগিয়ে আসলে সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন বিদেশী সাহায্যের প্রয়োজন পড়বেনা। এখানে সরকারী উদ্যোগের কথা এজন্যই বলছি, ইতিপূর্বে প্রবাসীরা ব্যক্তিগত উদ্যেগে অর্থ লগ্নি করে বিড়ম্বনার স্বীকার হয়েছেন, এয়ার লাইন্স কোম্পানী ও পাঁচতারা হোটেলের নামে প্রবাসীরা বিনিয়োগ করে কোন সুফল পাননি, তাই এই বিয়টিকে সফল করতে হলে সরকারী মহল হতে উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু ইংল্যান্ডেই নয়, এমন বিনিয়গকারী আমেরিকা কানাডা ও ইউরোপেও কম নয়।

আমার আবোল তাবোল প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নের পথ খুঁজলে, কক্সবাজার কিংবা সুন্দরবন সেরা সাত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের তালিকায় না আসলেও আমাদের দেশে পর্যটকের অভাব হবেনা। প্রতিযোগিতায় প্রথম হবার চেয়ে আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়নটাই সবচে বেশী জরুরী।

লেখাটি সচলায়তন ও দৈনিক প্রথম আলোতে অংশ বিশেষ প্রকাশিত হয়েছে।
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×