somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি দরকারি লেখা .....

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সকাল ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিক্ষার দিকে নজর দিন
ড. রফিকউল্লাহ খান
********************
একটি জাতির অগ্রগামিতার প্রধান মানদণ্ড হচ্ছে শিক্ষা। তার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উত্তরণে শিক্ষাই পালন করে দিকনির্দেশকের ভূমিকা এবং প্রচলিত যে কথাটি আমরা সবসময় উচ্চারণ করি শিক্ষা সম্পর্কে তা হলো ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’। বাঙালি জাতি গঠনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে শিক্ষাকে কেন্দ্র করেই বাঙালি জাতি স্বাবলম্বী হতে শুরু করে। মধ্যযুগের ইতিহাস থেকে এ ভূ-খন্ডের অর্থনৈতিক প্রাচুর্যের কথা আমরা জানি। কিন্তু বিত্ত-বৈভব দিয়ে বহিরাগত আগ্রাসী শক্তির হাত থেকে বাঙালি নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি। অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে যখন ইংরেজ আধিপত্যের সূত্রপাত হলো তখন থেকে বাঙালি জাতি আত্মরক্ষা এবং আত্মআবিষ্কারের প্রয়োজনে আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি নিজ ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন হতে শুরু করে। ঊনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীব্যাপী বাঙালি জাতি এবং বাংলা ভাষার যে বিশ্বজনীন বিস্তার আমরা লক্ষ্য করি তার মূলে শিক্ষার ভূমিকা সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ।

বিত্ত এবং শিক্ষা এ দু’য়ের শিল্পিত যৌথায়ন একটি জাতির উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি। কিন্তু বিগত কয়েক দশক ধরে আমরা লক্ষ্য করছি শিক্ষা বিত্ত থেকে দূরবর্তী হচ্ছে অথবা বিত্ত শিক্ষাকে গ্রাস করছে। আজকের বাংলাদেশের শিক্ষা পরিস্থিতি বিচার করলে আমার মন্তব্যের যথার্থতা প্রমাণিত হবে। ১৯৭১ সালে আমরা যখন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, সার্বভৌম ভৌগোলিক কাঠামো, আধুনিকতম সংবিধান এবং একটি স্বতন্ত্র পতাকার অধিকারী হলাম তখন সমগ্র জাতির সামনে স্বপ্ন, প্রত্যাশা ও সম্ভাবনার সকল দিগন্ত খুলে গিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত স্বাধীনতার কয়েক বছরের মধ্যেই আমাদের সংবিধানের মূল স্তম্ভগুলো গুঁড়িয়ে দেয়া হলো। প্রগতির পরিবর্তে প্রতিক্রিয়ার জয়যাত্রা বাঙালি জীবনের সমগ্র সম্ভাবনাকেই যেন গ্রাস করে ফেললো। গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে জাতিসত্তা বিরোধী অপশক্তিগুলো সক্রিয় হয়ে উঠলো। স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর মতো আর কোন অবলম্বনই যেন আমাদের থাকলো না। এর ফলে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই একমাত্র দুর্নীতি ছাড়া মুখ থুবড়ে পড়ে গেল এবং যে মেরুদণ্ড অর্থাৎ শিক্ষা জাতির অগ্রগতির চালিকাশক্তি তার সামনে নানা প্রতিবন্ধকতার দেয়াল রচিত হলো। এবং শিক্ষার যে বৈষম্য অনিবার্য হয়ে উঠলো তার ফলাফল হলো সুদূরপ্রসারী। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসার যে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করলো, তার ফলে স্বাধীনতার মূল চেতনা থেকেই যেন আমরা বিচ্যুৎ হয়ে পড়লাম। দীর্ঘদিন সেনা শাসনের কবলে শিক্ষাটা তার উজ্জ্বল তাৎপর্য হারিয়ে সনদসর্বস্ব হয়ে উঠলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের কাজ হলো শিক্ষা বিস্তারের পরিবর্তে দুর্নীতির বিস্তার। শিক্ষকরা ভিক্ষাবৃত্তি করতে পারে না, সুতরাং তাদের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেয়ার জন্য ন্যূনতম বেতনই যথেষ্ট। উপজেলা পর্যায় থেকে মন্ত্রণালয়ের অফিস পর্যন্ত ঘুষের সাম্রাজ্য একজন শিক্ষকের ভীতিকে যেন বিচলিত করে তুললো। যিনি এক হাতে ঘুষ দেবেন, তিনি অন্য হাতে কীভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে শিক্ষাদানের কলম ধরবেন? সঙ্গত কারণেই যে প্রাথমিক শিক্ষা আমাদের ভিত্তি সেখানে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই কল্পনা করা যায় না।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বাধীন মুক্ত চেতনার সূতিকাগার ছিল, সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেগুলোর মেরুদণ্ড বহু আগেই ভেঙ্গে ফেলা হয়। আর শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের বিকল্প পন্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হলো ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠতে থাকা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে মেধা চর্চার পরিবর্তে উন্নত ‘ব্রেড’ সমৃদ্ধ সনদপত্র বিতরণ করা হয়। অর্থাৎ, বাঙালির শিক্ষা ব্যবস্থা আজ কক্ষচ্যুত এবং ছিন্নভিন্ন। শিক্ষা সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট মন্তব্য করার মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশে নেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিগত কয়েক দশকে রাজনীতি এবং দুর্নীতি সমান্তরালভাবে ক্ষতিকর ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে যাত্রা শুরু করেছিলেন। আমরা আশা করেছিলাম বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তথা শিক্ষার সমগ্র ক্ষেত্রে যে অরাজকতা, নৈরাজ্য ও দলীয়করণ হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে সরকার মনোযোগী হবেন। নি:সন্দেহে এই সরকার অতীতের যেকোন সরকারের চেয়ে শিক্ষিত ও বিচক্ষণ সরকার।

[ লেখক : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ]

-----------------ইত্তেফাক/ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮









১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×