somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

জন্মদাগ মুছে ফেলা যায় না!

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সকাল ৭:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জন্মদাগ মুছে ফেলা যায় না!
ফকির ইলিয়াস
=======================
কোথায় যেন একটি স্খবিরতা। আন্তরিকতার অভাব। না হলে কথা দিয়েও বারবার পিছু টান, টানতে হবে কেন? নতুন উপদেষ্টারা শপথ নেয়ার পর কাজ দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সংলাপ শুরু করে বিভিন্ন দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় বিষয়ে আলোচনা করার কথা ছিল। তা এখনও শুরু হয়নি। বরং বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কেন এই শর্ত? যদি জনগণের কল্যাণ সাধনই মুখ্য উদ্দেশ্য হয় তবে বৃহৎ কল্যাণের কথা ভাবতে হবে। চাপিয়ে দেয়া সংস্কার যেমন জনগণ মেনে নেবে না, তেমনি দীর্ঘ মেয়াদে তা ফলপ্রসূও হবে না। বিশ্বে এমন উদাহরণ রয়েছে প্রচুর।
আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাকারী বলে কথিত আজম জে. চৌধুরী আবারও আলোচনায় এসেছেন। তার বক্তব্য, তিনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করেননি। করেছিলেন শেখ সেলিমের বিরুদ্ধে। সরকার পক্ষ বলছে, আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলছে। ব্যবসায়ী আজম চৌধুরীর মামলা, ঘুষ দেয়ার প্রক্রিয়া, মামলার আসামি­ এসব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। এখন সেই আজম চৌধুরী নিজেই বলেছেন, তিনি মামলা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করেননি। তাহলে সরকার কি পরিকল্পিতভাবেই এমন টানাহেঁচড়া করছে? প্রশ্নটি দানা বাঁধছে বিভিন্নভাবে।
সরকারের সংস্কারের ধাপের প্রধান লক্ষ্যটি হচ্ছে কিছু রাজনীতিককে নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেয়া। কিন্তু তা করতে হলে তো তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকতে হবে। মামলা করে, রায় হয়ে আইনি প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। যারা প্রধান লক্ষ্য, তাদের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ তেমন কিছু এ পর্যন্ত করতে পেরেছে কি? যদি করতে না পারে, তবে এমন ইচ্ছামাফিক তাদের বন্দি করে রাখা যাবে কি?
এসব জিজ্ঞাসা এখন বাড়ছে দেশে-বিদেশে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সিনেটর হিলারি ক্লিনটন নিউজার্সিতে এক সমাবেশে বলেছেন, তিনি শেখ হাসিনার মুক্তির বিষয়ে বর্তমান সরকারের কাছে জানতে চাইবেন। এবং কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে তিনি, শেখ হাসিনার মুক্তির দাবি করবেন।
বহির্বিশ্বে বাড়ছে খালেদা জিয়ার পক্ষে লবিংও। তার দলের প্রবাসী কর্মীদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। এরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আইনি সহায়তা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরুও করেছেন। একটি বিষয় খুবই স্পষ্ট, যতই দিন যাচ্ছে ততই বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিচ্ছে। নব্বই দিনের মধ্যে কেন সংসদ নির্বাচন হবে না­ এই মর্মে মামলা করা হয়েছে আদালতে। যদিও আমি মনে করি এটা একটা ‘নাগরিকের দায়িত্বগত মামলা’ বলেই ধরে নিচ্ছে সরকার। এবং দীর্ঘ দৌড়ে মামলাতে সরকার পক্ষই জয়ী হবে।
কিন্তু তারপরও বিতর্ক তো হচ্ছে। প্রায় পনেরো মাস হতে চললো দেশে কোন নির্বাচিত সরকার নেই। দেশ চলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্বারা। এর মাঝে উপদেষ্টাদের রদবদলও হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। কিন্তু তারপরও কোথায় যেন একটি অসঙ্গতি, অসম্পূর্ণতা থেকেই যাচ্ছে, যা বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্তগুলোকে নানাভাবে প্রশ্নের মুখোমুখি করেই চলেছে।
দুই.
একটি বিষয় আমরা খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করছি, বর্তমান সরকারের সময়ে একটি মহল খুব কৌশলে বেঁচে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তারা সব ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে এক ধরনের কুয়াশা তৈরি করে নিজেদের আড়াল করে রাখছে।
ধরা যাক, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার খুনিদের কথা। এই মামলা নতুন করে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে বর্তমান সরকার। ফলে মামলার পুরনো আসামিদের খালাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এসব সিদ্ধান্তকে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন শাহ কিবরিয়ার পরিবার। বেগম আসমা কিবরিয়া অত্যন্ত সুদৃঢ়ভাবে বলেছেন, প্রকৃত আসামিদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। এ বিষয়ে কোন কারচুপি তারা মেনে নেবেন না।
একজন বরেণ্য কূটনীতিক, রাজনীতিককে বাংলাদেশে যে নির্মম কায়দায় খুন করা হয়েছে তা মানবিকতার চরম বর্বরতম ঘটনা। আরও বেদনাদায়ক হচ্ছে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও এর বিচার করতে না পারা। কেন বিচার করা গেল না? কেন বারবার তদন্তের নামে প্রকৃত নায়কদের বাঁচানোর চেষ্টা চলছে? নাকি এর নেপথ্যে এমন কেউ কেউ ছিল যারা বর্তমান সরকারের ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করছে এখন?
একটি কথা সবার জানা, কোন খুনি কিং বা খুনের মদদদাতাকে প্রশ্রয় দিয়ে শান্তির সমাজ গঠন কোনমতেই সম্ভব নয়। যারা বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ মন্ত্রী, নেতা ছিলেন এদের অনেকেই এখন পর্যন্ত রয়ে গেছেন স্পর্শের বাইরে। মান্নান ভূইয়া, সাদেক হোসেন খোকারা এখনও সংস্কারের মুলা ঝুলিয়ে দিব্যি কাটিয়ে দিচ্ছেন সময়। করছেন সুসময়ের অপেক্ষা। এসব তো জাতিকে নতুন সূর্য উপহার দেয়ার পূর্বশর্ত হতে পারে না।
প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা চলছে নানাভাবে। আওয়ামী লীগের চার সংস্কারপন্থি নেতা আমু, রাজ্জাক, সুরঞ্জিত, তোফায়েল রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছেন। তারা কি চান? তারাও কি তবে কোন কৌশলে নিজেদের অতীত দফারফা করার চেষ্টা করছেন?
তিন.
বাংলাদেশকে কীভাবে লুটেপুটে খাওয়া হয়েছে, এর প্রমাণ আমরা প্রতিদিন পাচ্ছি। একটি ভয়ানক সংবাদ বেরিয়েছে। তিতাস গ্যাস কোম্পূানির ১২৬ জন কর্মচারী চারশ’ কোটি টাকার সম্পূদ সরকারকে ফেরত দেয়ার কথা জানিয়েছেন। বাহ! কি দানবীর তারা! সরকারকে ফেরত দিচ্ছেন, ঘুষে অর্জিত সম্পূদ। এই চিত্র শুধু তিতাস গ্যাসের নয়। বাংলাদেশে এমন আরও অন্তত ২শ’ বড় বড় রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পূানি পাওয়া যাবে সেগুলোর কর্মচারীরা ফুলে-ফেঁপে উঠেছে অত্যন্ত অস্বাভাবিকভাবে। তাদের আয়ের উৎস কি? এত টাকা কোথা থেকে এলো? তারপরও প্রশ্ন থেকে যায় এই অসাধারণ দুর্নীতিবাজ-সাধু ব্যক্তিরা বা তাদের সব লুণ্ঠিত অর্থ ফেরত দিচ্ছেন? ফেরত দিয়েই কী তাদের শাস্তি থেকে মাফ করে দেয়া হবে? অন্য দুর্নীতিবাজ-সাধুদের কী হবে? তারা কোথায়?
বিদেশ থেকে মাসে হাজার হাজার ডলার, পাউন্ড, উপার্জন করেও বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারীদের কারও কারও সঙ্গে পাল্লা দেয়া যায় না। এত টাকা এরা কীভাবে কামাই করেন?
এটা খুবই দু:খ ও বেদনাদায়ক যে, দেশের বেশকিছু ‘সুশীল সমাজ’ও নানা ঘাপলায় জড়িয়ে পড়েছে। তাদের আয়ের উৎস প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। যারা শুদ্ধ সমাজ গঠনের প্রবক্তা দাবিদার তাদের এমন পতন কাম্য ছিল না কোনমতেই।
মুখে যতই বড় বড় কথা বলা হোক না কেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি রাতারাতি বদলানো যাবে এমন কোন সম্ভাবনা নেই, যা বর্তমান সরকারও জানে। আর জানে বলেই আগামী সংসদ নির্বাচনের পর দলগুলোর অবস্খান কি হবে­ তাও শর্তে ঢুকাতে চাইছে সরকারপক্ষ।
এর কারণ কি? কারণটি হচ্ছে, সরকার শঙ্কিত বিভিন্ন কারণে। কিন্তু এই শঙ্কা এবং সম্ভাবনা কি জাতির ভাগ্য বদলে সহায়ক হবে?
আরও একটি কথা বলি। রাজধানী ঢাকার কথাই ধরা যাক। আন্তর্জাতিক সিটি প্লানিংয়ের জরিপে দেখা গেছে ঢাকা একটি অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত নগরী। এটা ঢাকার জন্মদাগ হয়েই লেগে আছে শরীরে। এই নগরী ভেঙে নতুন নগরী গড়া সহজে কীভাবে সম্ভব? পুরান ঢাকার চিত্রটি মানসে ভেসে উঠলে এখনও এক ধরনের বস্তির কথাই মনে পড়ে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতেও তেমনি কিছু জন্মদাগ লেগে আছে। এসব দাগ মুছে ফেলা কঠিন। কোন কোন ক্ষেত্রে অসম্ভবও। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, কালোবাজারি, মুনাফাখোরি, এমনকি মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িকতার বিষফণাও মিশে গেছে এদেশের রাজনীতিতে। হ্যাঁ, আমি এগুলোকে জন্মদাগই বলব। মনে হচ্ছে বর্তমান সরকারও এসব জন্মদাগে নতুন প্রলেপ দিতে চাইছে মাত্র।

নিউইয়র্ক, ২৯ জানুয়ারি ২০০৮
---------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ১ ফেব্রুয়রি ২০০৮, শুক্রবার।







৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×