somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৩. এ পোর্ট্রেইট অফ এ ইয়াং আর্টিস্ট অ্যাজ এ মিডিওকার

২৭ শে জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এত মনোযোগ সত্ত্বেও তৃপ্তি আমার সংকটটাকে পুরো বুঝে উঠতে পারে কি না একবার ভাববার চেষ্টা করি আমি। বেশি দূর ভেবে উঠতে পারি না। হয়তো সে পুরোটাই বুঝতে পারে। লেখক হিসেবে আমার মূল্য সবচেয়ে বেশি ওর কাছেই। আমার লেখক বন্ধুদের ব্যাপারে আমার মতো করেই ভাবে সে। আমি যাদের পছন্দ করি সে নিজেও তাদের পছন্দ করে। আমি যাদের অপছন্দ করি সেও তাদের অপছন্দ করে। তার নিজের একটা বন্ধু-বান্ধবের সার্কেল আছে। বন্ধুরা বাসায় এলে ও আমাকে কখনো একটা বিদেশি কোম্পানির এক্সিকিউটিভ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় না। ভেতর থেকে সত্যিকার অর্থে ফিল করে বলে, ও একজন লেখক। এভাবেই পরিচয় দেয়। আমার খুব ভাল লাগে। মাঝে মাঝে আমার ভুল হয়ে যায়। আপন মনেই ভাবি, তৃপ্তির এই আচরণের সবটুকুই শুধু ভাল স্ত্রী হিসেবে দাযিত্ব পালনের স্বার্থেই করা। হয়তো সত্যিই সে আমাকে বড় লেখক মনে করে না। তৃপ্তিকে আমি ভীষণ ভালোবাসি। ওকে নিয়ে এর বেশি নেগেটিভ কিছু ভাবতে পারি না। এমনকি বাড়ি ফিরতে ফিরতে সেল্ফ সাজেশন দিতে দিতে দরজার নক করি। দরজায় নক করার আগে নিজের মুখটা হাসি হাসি করে রাখি। তারপর আমার স্বভাব অনুসারে কলিংবেলে দুইবার চাপি। দরজার ওপাশে তৃপ্তির ছুটে আশা, অপেক্ষার অবসান এবং দরজা খোলা রুদ্ধশ্বাস অভিযান নিমেষে শেষ হয়। স্বেচ্ছায় তৃপ্তি সম্পর্কে নেগেটিভ চিন্তা থেকে সরে আসা আর মুখে কিছুক্ষণের জন্য মেকি হাসিটা ছাড়া আর কোনো অভিনয় আমার মধ্যে থাকে না দরজা খুলে যাওয়ার পর।
হোয়াট এ সারপ্রাইজ! ওই লাল শাড়ি পরেছো কেন?
তৃপ্তি সাধারণত শাদা ধবধবে ড্রেস পছন্দ করে। বাসায় সব সময় শাদা ড্রেস পরে। এমনকি রান্না ঘরের কাজ করার সময়ও। দুপুরের ঘুম সেরে উঠে রাতের খাবারের আয়োজন পর্যন্ত তার মুখটা একটু ফোলা ফোলা থাকে। হয়তো তখন তার পরণে শাদা ম্যাক্সি অথবা হালকা কাজ করা শাদা শাড়িই থাকে। অবাক হয়ে যাই আমি। কিভাবে যেন মোবাইলে একটা কল না দিয়েও সে বুঝে গেছে আমার মন খারাপ। হয়তো দুপুরের ঘুম সেরে নিজের ক্লান্ত চোখে সজীবতা ফিরিয়ে আনতে চোখে কাজ করেছে। অথবা স্রেফ গোসল করেছে, ঠাণ্ডা পানিতে। মুখের ফোলা ফোলা ভাবটা উধাও হয়ে গেছে। তৃপ্তি চোখ নাচায় শুধু। কিছু বলে না। আমি ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বের হতে হয়ে এক কাপ চা হাতে তৃপ্তি এসে সামনে দাঁড়ায়।
হোয়াটস দ্য প্রোগ্রাম...? আমি একটু গলা গভীর করে বলি, বিজ্ঞাপনে যেমন শোনায় ঠিক সেইভাবে।
নাথিং। তৃপ্তি হঠাৎ সিরিয়াস হয়ে যায়। শোনো, মৌলভীবাজারে লাস্ট ট্যুরটার কথা মনে আছে তোমার? ওই যে, তোমাদের সব লেখক বন্ধু মিলে রাসে গেলা। ২০০৫এর নভেম্বরে। ওই সময় কিন্তু তুমি ডায়রিতে মজার অনেক কথা লিখছিলা।
তুমিও তো গেছলা? তুমি যাও নাই?
যাবো না কেন?
তুমি এইগুলা ভুলে যাও কেমনে?
তাই তো? এই কতাগুলো আমি ভুলে যাই কেমনে। কত মজা হয়েছিল। রাসপূর্ণিমায় সারারাত জেগে আমার সব লেখক-কবি মিলে মৌলভীবাজার পৌঁছালাম ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে। বিকালে একটা সাহিত্যসভা হলো। বাংলা ছোটগল্পের ওপর একটা বক্তৃতা দিলাম। সব কেমন করে যেন ভুলে যাই।
তুমি কিন্তু ওই রাস উৎসবের বর্ণনা থেকে শুরু করতে পারো লেখাটা। উপন্যাসটা।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন নিয়ে লেখা দরকার তাই না?
হ্যাঁ। আর শোনো। আমাদের পৌছানোর কথা মনে আছে? শ্রীমঙ্গলে চাঁদের দেখা মিললো সূর্য ডোবার সাথে সাথে। পাহাড়ের আড়ালে একবার চাঁদ হারিয়ে যায়। আমি সারাক্ষণ চাঁদ হারানো আর চাঁদ খুজে পাবার জন্য পথটা আকাশের দিকে তাকিয়েছিলাম। ঘন বন চারদিকে। চা বাগান। লোকাল বাসে গাদাগাদি করে আমার কতগুলো লোক। বাস আদমপুর পার হয়ে ধু ধু ধান ক্ষেতের ভেতরের পাকা রাস্তা দিয়ে চলার সময় আমি একেবারে অবাক হয়ে গেছলাম। চিৎকার দিতে গিয়ে দেখি তুমি আমার মুখে আঙ্গুল দিয়ে রেখেছো। হোয়াট এ মেস! অসাধারণ! ধান ক্ষেতটগুলোকে মনে হচ্ছিল নদী। ক্ষেত্রে শিষের ওপরে শিশির। তার ওপর চাঁদের আলো। পুরো নদীর মতো লাগছিল।
তৃপ্তির বর্ণনা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই। এই না হলে লেখকের বউ। ওর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি। কীভাবে এত কিছু মনে থাকে ওর?
তোমার এত ডিটেইল মনে থাকে?
গাড্ডু, তোমার ডায়রিতে আছে এইসব। তুমি ডায়রিগুলো নেড়েচেড়ে দেখো না। লিখবা নাকি এইটা নিয়ে?
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ড্রেনেই পাওয়া যাচ্ছে সংসারের তাবৎ জিনিস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫০



ঢাকার ড্রেইনে বা খালে কী পাওয়া যায়? এবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর) একটি অভুতপূর্ব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। তাতে ঢাকাবাসীদের রুচিবোধ অথবা পরিচ্ছন্নতাবোধ বড় বিষয় ছিল না। বড় বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×