somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২. এ পোর্ট্রেইট অফ এ ইয়াং আর্টিস্ট অ্যাজ এ মিডিওকার

২৭ শে জানুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শনিবার দিনটা খুব ম্যাড়মেড়ে, এমনকি রবিবারটাও। অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে রাস্তার চেহারা দেখে এর চেয়ে ভাল কোনো কথা মনে এলো না। কী অদ্ভূত একটা দিন। শীত চলেই যাচ্ছে মনে হচ্ছিল। কিন্তু দুইদিন ধরে দিনভর বৃষ্টি। বাতাসের সাথে উত্তরের ঠাণ্ডা মিশে বেশ কনকনে শীত জেঁকে বসেছে। দুইদিনের টানা বৃষ্টিও নয়, ঝিরিঝিরি। ঠিক যেন কাদা জমার জন্য যতটুকু বৃষ্টি দরকার ততটুকু পড়ছে। পুরো রাস্তা জুড়ে প্যাচপ্যাচে কাদা। একটু একটু কালো জমা পানি। অফিস শেষ পাঁচটাতেই। কিন্তু বস বললো, একটু বসো। বসতে অসুবিধা নেই। কিন্তু কাজও তো থাকার কথা নয়। কাজ আসলে শুরু হবে সোমবার। আমাদের কাজ সাধারণত বাইরের ক্লায়েন্টদের সঙ্গে। শনিবার ওদের সাজসাজ রব। উইকএন্ডের প্রস্তুতি। রবিবার উইকএন্ড সেরে তবে ওদের রেসপন্স আসতে শুরু করে। সে হিসেবে আমাদের উইকএন্ড তিন দিনের। শুক্র, শনি রবি। কিন্তু শনি রবি অফিস করতেই হয়। ইন্টারনাল শিপমেন্টগুলোর অগ্রগতি দেখতে হয়। চিটাগাং ফোন করা। ইন্সট্রাকশন নেয়া। আমাদের হেড অফিস চিটাগাংয়ে। ঢাকায় ব্রাঞ্চ অফিস। আমাদের কাজ ন্যাশনাল এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা। পাবলিক রিলেশন নিয়েই সারাদিন ব্যস্ত থাকতে হয়। ডেস্কে কিছুক্ষণ বসে, বসের রুমে গেলাম।
আবির ভাই...
যাবা? আচ্ছা চলো, আমিও তোমার সাথে যাই।
আপনার গাড়ি?
প্যাচপ্যাচে কাদার মধ্যে গাড়িটা আর বের করিনি।
সাদা গাড়িতে একটু কাদা পড়লেও কেমন বিশ্রি লাগে। বুঝলে। চলো বরং তোমাদের সঙ্গেই ফিরি।
অফিস শেষে বাড়ি ফেরার জন্য একটা মাইক্রো বরাদ্দ আমাদের জন্য। নিশা আগেই বেরিয়েছে বান্ধবীর সঙ্গে কোথাও যাবে বলে।
ফাহিম, আবির ভাই দুজনকে ডিওএইচএস আর নিকেতনে নামিয়ে গাড়ি এখন কাওরান বাজারের সিগনালে। শনিবার আর রবিবার পুরোটাই ম্যাড়ম্যাড়ে। আবার কথাটা ভাবলাম। শুক্রবারের ছুটির হ্যাঙওভারটা শনিবারের অর্ধেক দিন পুরো আচ্ছন্ন করে রাখে। রবিবার অন্য উইকডেজের মতোই। কাজ একটু কম। কিন্তু কাজের দিনই মনে হয়। শনিবার পুরোটাই আকাজের। সন্ধ্যার ভেজা শহরের দিকে তাকিয়ে আবার মনে হলো। ইদানিং চিন্তাগুলো এরকমই জট পাকিয়ে যায়। এক ঘণ্টা দুই ঘণ্টা ঝিম মেরে বসে থাকার পর হঠাৎ বুঝতে পারি একটা বিষয় নিয়েই চিন্তা করছি। আর চিন্তাটাও তেমন কিছু না। একটা লাইনই। হয়তো বিরক্তিকর একটা লাইনই। আর কিছু না। মাঝে মাঝে মনে মনে ভাবি মাথাটাকে ক্রিয়েটিভলি ডিরেক্ট করা সম্ভব কি না। আমি শিওর না, বুঝতে পারি না সেটা সম্ভব কি না। সৃষ্টিশীলতার মধ্যে সারাক্ষণ বাস করার উপায় কী? নিজের মনেই ভাবি আমি। বুঝতে পারি না। কোনো উপায় বের করতে পারি না। তৃপ্তি কি সমস্যাটা বুঝতে পারবে? ওর সঙ্গে শেয়ার করা দরকার। জ্যামের মধ্যে গাড়িতে আটকা পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে কেন শনিবার দিনটা ম্যাড়মেড়ে এই একটা কথা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারি না আমি। তৃপ্তি কি এর উত্তর জানে। আমি শিওর না। আহা তৃপ্তি! আমাকে নিয়ে কত ভাবে। ডায়রি থেকে উপন্যাস লেখার আইডিয়া নিয়ে গতরাতের ভাবনার পর, বেসিকালি আর কিছুই ভাবিনি আমি। কিন্তু দেখা যাবে পুরো উপন্যাসটা এখন তৃপ্তির মাথায়। নিজের মতো করে একটা উপন্যাস বানিয়ে তার দুপুরের রান্নাবান্না লাটে উঠেছে। মাঝে মাঝে ভাবি, আমার বদলে তৃপ্তিরই লেখক হওয়া উচিত ছিল। ওই ভাল করতো। লেখক কবিদের মতো খেওয়াখেওয়ির মধ্যে থাকতো না। নিরিবিলি লিখতে পারতো। আমার সবকিছু নিয়েই তৃপ্তির উদ্যোগের অভাব নেই। একদিন সৌরভ এসে খানকিটা অন্যমনস্কভাবে আড্ডা দিতে দিতেই আমার একটা পেন্সিল স্কেচ করেছিল। ছোট। পাসপোর্ট সাইজের চেয়ে একটু বড়। বাম দিকে তাকানো একটা রহস্যময় লুক এসেছিল। লেখক লেখক একটা ব্যাপার। আমি প্রথমে খেয়াল করিনি সৌরভ কী করছে। তৃপ্তি তীক্ষ্ণ চোখে পুরো ব্যাপারটা শুরু থেকে খেয়াল করছিল। সৌরভ স্কেচটা শেষ করার পর, সে সৌরভকে ধরে বসলো।
ইউ আর এ জিনিয়াস সৌরভদা। নাইস জব সৌরভদা। শোনো, আমি তোমার এই কাজটা বড় করে বাঁধিয়ে রাখতে চাই। তুমি ডিজিটালে এর একটা প্রিন্ট বের করে দাও।
রাজি না হয়ে সৌরভের আর কোনো উপায় ছিল না। সৌরভের কাছ থেকে বড় একটা ম্যান সাইজ ডিজিটাল প্রিন্ট নিয়ে নিউ মার্কেট থেকে লেমিনেটেডে বাঁধাই করা ছবিটা গেস্ট রুমে টাঙিয়ে রেখেছে তৃপ্তি। কেউ এসে ছবিটার দিকে তাকালে তৃপ্তি আমার দিকে তাকায়। এই গর্বিত তাকানোটার দিকে চেয়েই তৃপ্তিকে আমি কোনোদিনই বলে উঠতে পারি না, তৃপ্তি ছবিটা নামাও। নিজের ইগোকে এইভাবে তৃপ্ত করা কোনো মানে তো নাই, তাই না? আমার নিজের ঘরে নিজের এত বড় ছবি কেন থাকবে? ওখানে রবীন্দ্রনাথের একটা ছবি রাখলে কী হয়। কোনোদিনই তৃপ্তিকে বলা হয়ে উঠে নি। ছবিটার দুই দিক থেকে তৃপ্তির লাগানো দুইটা মানিপ্লান্টের লতা দেয়াল বেয়ে উঠেছে। ছবিটাকে মহিমান্বিত করে রেখেছে তৃপ্তির মনোযোগ আর মানিপ্লান্ট।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৫৫
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×