somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কারামুক্তির পর সেলিম রেজা নিউটনের প্রথম লেখার প্রথম কিস্তি

২২ শে জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেলিম রেজা নিউটন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ান। আগস্ট ছাত্র বিক্ষোভের ঘটনায় কারাগারে ছিলেন। কারামুক্তির পর প্রথম লিখেছেন এই লেখাটি। এর কিছু অংশ সমকালে ছাপা হয়েছে। তবে পুরো লেখাটি যারা পড়তে চান, তাদের জন্য তার অনুমতি নিয়েই ব্লগে তুলে দিলাম দুই কিস্তিতে।

আইনের শাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ-১

কানাকে হাইকোর্ট দেখানো এ দেশের মানুষের মুখের বুলি হিসেবে পুরোনো। কত অজস্র মানুষের মর্মানি-ক অভিজ্ঞতা এই বুলির ভেতরে জমা আছে তা অনুভব করা সম্ভব। কানাকে হাইকোর্ট দেখানো কিন' আইনের শাসন প্রতিষ্ঠারই নামান-র; এবং বলা বাহুল্য নয়, আমাদের দেশে আইনের শাসন সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহান বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী। তাঁরা বিতাড়িত হওয়ার পর থেকে ক্রমাগতভাবে এখানে আইনের শাসন ভেঙে পড়তে থাকে। অবশেষে নয়া ঔপনিবেশিক শক্তিসমূহের অনুমোদনপুষ্ট একটি আমলা-ব্যবসায়ী-সামরিক শাসকগোষ্ঠীর নেতৃত্বে বিগত ১লা জানুয়ারি ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে আমরা শুনে আসছি। শোনা কথা হলেও কথাটা সত্য। কোটিপতি থেকে শুরু করে নিঃস্ব ভিক্ষুক পর্যন- সারাদেশের লোক সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্ররা তো বটেই, শিক্ষকরাও বাদ যান নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কানা ছাত্র-শিক্ষকদের রীতিমতো হাইকোর্ট দেখিয়েছে এই সরকার।
কিন', আমরা-শিক্ষকেরা-সরকারকে আক্ষরিক অর্থে হাইকোর্ট দেখানোর আগেই মানুষের দাবি এবং গণ-অনুভূতির কাছে নতি স্বীকার করে সরকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাজাপ্রাপ্ত চার জন শিক্ষককে মুক্তি দিয়েছে। সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল দুই সপ্তাহের ভেতরে ঢাবি’র চার শিক্ষককেও মুক্তি দেওয়া হবে। ছাত্রদেরকেও মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। সরকার কথা রাখে নি। সময়ক্ষেপন করেছে। সরকারের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং শিক্ষক সমিতির নেতাদের ঠিক কোন কোন দিক থেকে আলোচনা চলছিল তার বিস-ারিত আমি জানি না। আলোচনা ভেঙেই বা গেল কেন তাও অজানা। কিন' আমি যেটা জানি, সারাদেশের লোক এরই মধ্যে বুঝে ফেলেছে, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আনা মারাত্মক অভিযোগগুলো স্রেফ বানানো কেচ্ছা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প স'াপন করে বিশ্ববিদ্যালয়কে স'ায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা কোনো মহলে আদৌ ছিল কিনা এবং সেই প্রশ্ন আড়াল করার আগ্রহেই তাড়াহুড়া করে ঐসব কেচ্ছা প্রচার করা হয়েছিল কিনা তা এখনও কেউ অনুসন্ধান করেছেন কিনা জানি না। কিন' বাস-বত, নৈতিক প্রশ্নে নিদারুণ লেজেগোবরে মাখামাখি করেই সরকার মুক্তি দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকেও যে মুক্তি দিতেই হবে, সেটাও স্পষ্ট। শিক্ষকদের দিকে অতি-মনোযোগ দিতে গিয়ে ঢাবি-রাবি’র শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং রাবি’র একজন ড্রাইভারের মুক্তির কথা সরকার যদি ভুলে যেতে চায়, তাহলে যে সমস্যা থেকেই যাবে, সে-কথা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নির্যাতনবিরোধী-কর্তৃত্ববিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ প্রতিদিনই মনে করিয়ে দিয়ে চলেছে।
তারপরও, মুক্তিদান আর মামলা চুকে যাওয়াতেই সব ফুরাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা রক্ষা এবং শিক্ষার্থীদেরকে নির্যাতন করার বিরুদ্ধে শানি-পূর্ণ প্রতিবাদের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষকদের বিরুদ্ধে টাকা ঢেলে ছাত্র খেপানো এবং সহিংসতায় মদদ জোগানোর মতো অলীক-আশ্চর্য অভিযোগ আনা এবং তাদেরকে গ্রেপ্তার-নির্যাতন-কারাভোগ করানোর নজিরবিহীন ঘটনা ঘটানোটা রাষ্ট্র-ব্যবসায়ীদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হলো কীভাবে, সেটা তো আমাদেরকে বুঝতে হবে। সেজন্য বহুলনন্দিত আইনের শাসনের আসল অন-ঃসার, কর্তৃত্বপরায়ন রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বাত্মক-স্বৈরতন্ত্রী হয়ে ওঠার প্রবণতা এবং রাষ্ট্রীয়-কর্পোরেট যৌথ প্রচারণা-প্রকৌশলের ঐক্য ও টানাপোড়েন, এক কথায় জরুরি জমানার জরুরি বাক্‌ধারাসমূহ (ডিসকোর্স) বুঝে দেখার প্রয়াস জরুরি।
একেবারে প্রাথমিক অর্থে, আইনের শাসন মানে কিন' সবার জন্য ভালোভাবে খাওয়া-পরার, যার যার পছন্দমতো জীবিকা ও সৃষ্টিশীল কাজের এবং প্রত্যেক মানুষের অফুরন- সম্ভাবনার বিকাশের জন্য মানানসই মানবিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাঠামো গড়ে তোলা নয়; আর সামাজিক পরিসরে সমস- মানুষের ব্যক্তিগত ও যৌথ আত্মকর্তৃত্বের আকার-আয়োজনের প্রশ্ন তোলা তো শাসক সমাজের আলোকিত-দীপায়িত লোকদের কাছে নিতান-ই অবান-র। আদতে আইনের শাসন কায়েম করা মানে হচ্ছে চির-মহান শাসকদের কথা শুনতে, তাঁদের নির্দেশিত পথে চলতে দেশের নাগরিকদেরকে বাধ্য করা এবং যাঁরা অবাধ্য হবেন তাঁদের ওপর বলপ্রয়োগ করার পাকাপোক্ত বন্দোবস- কায়েম করা। উদ্দেশ্য, নিঃশর্তভাবে বিশ্বব্যাঙ্ক-আইএমএফের হুকুম মেনে চলার জন্য, তেল-গ্যাসের বহুজাতিক কর্পোরেশনসমূহ আর এন্টারটেইনমেন্ট-মিডিয়া-গ্ল্যামার-ইন্ডাস্ট্রির অবাধ লুণ্ঠন-বিচরণের ক্ষেত্র তথা বাজারের বিধিকে নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়ে গোলামির সংস্কৃতিকে প্রশ্নাতীতভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, এবং বিশ্বজোড়া ইঙ্গ-মার্কিন আগ্রাসনের দালালি করার জন্য জনসাধারণকে বাধ্য করার আইনসম্মত পরিবেশ প্রস'ত করা। অস্ট্রেলিয়া থেকে বন্ধু বখতিয়ারের (রাবি’র নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক) ইমেইল মোতাবেক, উন্নত দেশের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নত বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় একে ‘নিও লিবারাল অ্যান্টিবায়োটিক’ও বলা যায়। এই ওষুধের প্রধানতম কাজ হচ্ছে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ, সত্যিকারের ভিন্নমত আর স্বাধীন চিন-ার ভাইরাসগুলোকে নির্মূল করা। তো, এই কাজ পুরোনো জমানার ঘুষখোর গরীব পুলিশবাহিনী আর দূরদৃষ্টিহীন দেউলিয়া রাজনীতিবিদদের দিয়ে বাংলাদেশে হচ্ছিল না। তাই বিধিসম্মত রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগের কার্যকর বন্দোবস- বানানোর জরুরি প্রয়োজন হাজির হয়। এই প্রয়োজনের সপক্ষের প্রচার-প্রচারণা চলেছে গত দেড় যুগ ধরে, তথাকথিত সুশীল সমাজের বুদ্ধিজীবীবৃন্দ ও মিডিয়ার নিবিড় নিরলস সাহসী ও সৃষ্টিশীল পরিশ্রমের মাধ্যমে। ফলে, সামন-যুগের ভুতের ঘাড়ে চড়ে ঘুরে বেড়ানো গণবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর দেউলিয়াত্বের চূড়ান- পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনের উপযুক্ত উপলক্ষ পাওয়া মাত্র আইন এবং রাষ্ট্রকর্তৃত্ব নবশক্তিতে বলীয়ান হয়ে সর্বাত্মক-স্বৈরাচারী একটা চেহারা নিতে শুরু করে। তার বলপ্রয়োগের সংস'াগুলো আরও নিখুঁত নিপীড়ক হয়ে উঠতে থাকে। এই প্রক্রিয়াটিই জরুরি আইন নাম ধারণ করে ১১ই জানুয়ারি ২০০৭ তারিখে সিংহাসনে আরোহন করে। বলে রাখা দরকার, ইতিহাসে দেখা গেছে, রাজশক্তিসমূহের বা শাসকগোষ্ঠীসমূহের বোঝাপড়া ভেঙে যাওয়া জনিত প্রতিটা মাৎস্যন্যায়ের পরই রাষ্ট্রের জুলুম-যন্ত্র তথা ‘বিজয়ী’ শাসকগোষ্ঠী আগের চাইতে বেশি কঠোর ও নিপীড়ক হয়ে ওঠার সুযোগ পায়।
আইনের বলপ্রয়োগ মানে প্রধানত আদালত-রিম্যান্ড-জেলজুলুম-ক্রসফায়ার-এনকাউন্টার এবং প্রকাশ্য দিবালোকে বা আধা-প্রকাশ্য রাত্রিলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে তথা যথোপযুক্ত লোকজনকে পুলিশ বা সামরিক-আধাসামরিক বাহিনী দিয়ে লাঠিপেটা করানো। একই সাথে ‘মানুষকে প্রত্যাশিত সেবাদান হবে পুলিশের কর্মকাণ্ডের ভিত্তি’ (৮ জানুয়ারি ২০০৮-এ পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য) জাতীয় বক্তৃতা করাটাও আইনের সুশীল বাচনভঙ্গিরই আনুষ্ঠানিক অঙ্গ বটে। সরকারী বন্দুকধারী লোকজনের, মানে র‌্যাব-পুলিশ প্রভৃতি সংস'ার, বন্দুকের সেবাদান যে কতটা নির্মম ও ভয়ঙ্কর হতে পারে ভুক্তভোগী না হওয়া পর্যন- শাসক-পরিবারের সদস্যরা তা বুঝতে পারার মতো অনুভূতিশক্তির অধিকারী এখনও আছেন কি? নিপীড়ক রাষ্ট্রের পক্ষে বাম হাতে বন্দুক নিয়ে ডান হাতে সেবা দিতে যাওয়াটা যে নিতান-ই নির্মম ক্যারিকেচার সেটা বোঝা কি খুবই কঠিন? নিরস্ত্র জনগণের সামনে ভয়ঙ্কর সব মারণাস্ত্রের অধিকারী একদল সংগঠিত মানুষ এসে যদি বলে আমরা তোমাদেরকে উদ্ধার করতে এসেছি, অভিজ্ঞতাটা তাহলে সুখকর হয় না। দেশী-বিদেশী ইতিহাস তা-ই বলে। বাস-বে, বহুজাতিক কর্পোরেশনসমূহ আর ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সপক্ষে বলপ্রয়োগের নানান সব বন্দোবস- স্বাবলীলভাবে চালু করতে পারলে আপনি কার্যকর রাষ্ট্র, আর আপনার সরকার সুশাসনের সরকার, না-পারলে আপনি ব্যর্থ রাষ্ট্র। আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামাত-জাপা’র ক্যাডাররা মানুষ খুন করার বন্দোবস- গড়ে তুললে সেটা দুর্বৃত্তের শাসন, আর পুলিশ-র‌্যাব-কোবরা-চিতার রাষ্ট্রীয় ‘ক্যাডার’দের মাধ্যমে বিনাবিচারে খুনের বন্দোবস- গড়ে তোলা হলে সেটা আইনের শাসন।
কিন' আইনের জোরে, জেলজুলুম-বন্দুকের জোরে ‘অপরাধ’ দমন করা যায় না। যে-দুর্নীতির কথা বলে জরুরি আইন জারি করা হয়েছে, জেল-জুলুম-হুকুমদারির সমস- হাতিয়ার ব্যবহার করেও সেই দুর্নীতিকে বাগে আনা যায় নি। দুর্নীতির প্রশ্নে সরকার প্রশ্নাতীত সুনীতির পরিচয়ও রাখতে পারে নি। অপছন্দের দুর্নীতিবাজকে ধরা হয়েছে, পছন্দের দুর্নীতিবাজকে বাইরে রাখা হয়েছে। উপদেষ্টাদের নিজেদেরই সম্পত্তির হিসাব দেওয়ার প্রশ্নটিকে লুকিয়ে ফেলা হয়েছে। দুর্নীতিবাজদের তালিকা কাটাছাঁটা করতে হয়েছে, কাউকে কাউকে ছেড়ে দিতে হয়েছে, ব্যবসায়ীদের আর কাউকে ধরা হবে না বলে কথা দিতে হয়েছে, একেবারে নাকানিচুবানি অবস'া। বলপ্রয়োগের বাড়াবাড়িতে উল্টা বাজার-হাট-দোকানপাট-আমদানি-রপ্তানি-ব্যবসা-বাণিজ্য-রাজনীতি-প্রতিষ্ঠান ছারখার হয়ে গেছে। বোঝা গেছে, সমাজব্যবস'ার দীর্ঘমেয়াদী কাঠামোগত পরিবর্তন ছাড়া দুর্নীতি দূর করা সম্ভব না। যে-গণতন্ত্রহীনতার কথা বলে জরুরি আইনের সরকার বসানো হয়েছে, সেই সরকারই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলে নি, পাঁচ উপদেষ্টার পদত্যাগের কোনো ব্যাখ্যা সরকার দেয় নি, যে-সেনাসদস্যটি ঢাবি-শিক্ষার্থীটিকে প্রহার করেছিল তার কী বিচার হলো জানা যায় নি, চলেশ রিছিলের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার খবর মিডিয়ায় ছাপানো যায় নি, আরও কত নিরাপরাধ মানুষ হয়রানি ও নিপীড়ণের শিকার হয়েছে তার কোনো হদিস নাই, স্বচ্ছতারও ব্যাপক অভাব থেকে গেছে, প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধানের দ্বৈত ক্ষমতাকেন্দ্র কখনো কখনো দৃশ্যমানভাবে সমান-রাল হয়ে উঠেছে, প্রশ্নও উঠেছে, সদুত্তর মেলে নি। পুরোনো যুগের হাসিনা-খালেদার মতোই প্রধান উপদেষ্টা দেদারসে ফিতা কেটেছেন, এটা-সেটা উদ্বোধন করেছেন, ক্যামেরা-ত্রাণ চালিয়েছেন। টিভি চ্যানেলগুলোকে দিয়ে উন্নতিমূলক প্রচারণা-ভিডিও চালানেও বাদ যায় নি। এ-রকম আরও অনেক দৃশ্য-কাঠামো সেই পুরোনো জমানার ছাঁচকে মনে করিয়ে দিয়েছে। মিডিয়া স্বাধীন থাকে নি। টেলিফোন অ্যাডভাইস, কর্তৃপক্ষ-আরোপিত সেন্সরশিপ এবং স্ব-আরোপিত সেন্সরশিপের ঘটনা ঘটেছে অনেক, সাংবাদিকদের আটক করা হয়েছে, আটক করে নির্যাতন করা হয়েছে, মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, কার্ফুর মধ্যে সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র দেখে দেখে পেটানো হয়েছে। শিক্ষকদেরকে গ্রেপ্তার করার খবর পর্যন- পত্রিকায় এসেছে দু-আড়াই দিন পর, শিক্ষকদের মুক্তি দাবি করে মার্কিন সিনেটর এডোয়ার্ড কেনেডির বিবৃতি প্রথম আলো’য় ছাপা হয়েছে টিভিতে প্রচারেরও সপ্তাহখানেক পর। সেন্সরশিপ যে হচ্ছে মিডিয়া সে-কথা ঠিকমতো প্রকাশ পর্যন- করতে পারে নি, কিংবা ইচ্ছা করে নি। ভয় যেমন ছিল, তেমনি এই সরকারের সাথে মহাজনী মিডিয়ার স্বার্থ ও এজেন্ডার শ্রেণীগত ঐক্যও ছিল। ভেতরে ভেতরে দেনদরবার সত্ত্বেও সেই ঐক্যে বেশিরভাগ সময় কাজ হয় নি। রাষ্ট্রশক্তি যখন সর্বাত্মক দমনমূলক চেহারা নিতে থাকে তখন সে তার শ্রেণীর লোকদেরকেও শিকারে পরিণত করতে পারে। বহুলকথিত শ্রমিক শ্রেণীর রাষ্ট্র মানে যেমন প্রত্যেক শ্রমিকের রাষ্ট্র না, বিরলকথিত বুর্জোয়া রাষ্ট্র মানেও তেমনি প্রত্যেক বড়লোকের রাষ্ট্র না। কর্তৃত্বপরায়ন আমলাতান্ত্রিক কাঠামোসমৃদ্ধ রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের খোদ পরিচালকবর্গ বা ম্যানেজার-গোষ্ঠী যেকোনো শ্রেণী-গোষ্ঠী-দল-ধর্ম-জাতির জন্য নিপীড়ক হয়ে উঠতে পারে। প্রসঙ্গত, এটা এমন এক সত্য ইতিহাসে যার বহু প্রমাণ আছে, অথচ মার্কসবাদী, বুর্জোয়া উদারনীতিবাদী এবং অন্যান্য কর্তৃত্বপরায়ন দলগোষ্ঠীগুলো তা উপলব্ধি করে নি বললেই চলে। এইজন্য, শুধু ভালো মানুষদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিলেই রাষ্ট্র ভালো হয়ে যায় না, রাষ্ট্রের কর্তৃত্বপরায়ন কাঠামোর একেবারে আমূল পরিবর্তন ছাড়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের সুদীর্ঘ প্রক্রিয়া সত্যিকারের গণমুখীনতা অর্জন করতে পারে না। (অসমাপ্ত)

এই লেখাটির দ্বিতীয় কিস্তিটিও পোস্ট করেছিলাম ব্লগে। কিন্তু মডারেটর মহোদয় কী এক অজ্ঞাত কারণে সেটি প্রথম পৃষ্ঠা থেকে মুছে ফেলেছেন। ব্যখ্যা চেয়ে পোস্ট করেছিলাম। ব্যাখ্যা দেয়ার আশপাশ দিয়েও না গিয়ে ওই পোস্টটিকেও প্রথম পাতা থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। এ কারণে এই লেখাটির দ্বিতীয় কিস্তি পড়তে হলে দয়া করে আমার ব্লগে ঢুকুন।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:০১
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×