somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘাতকের হলো পরাজয়..... সোনালী দিনের ডায়েরী থেকে

২১ শে জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আল্লাহর নবী (সা) মদীনায় হিজরত করছেন।
চারজনের ছোট্ট একটি কাফেলা। মক্কার মাটি ছেড়ে মদীনার পথ ধরে ছুটে চলছে সে কাফেলা।
অত্যন্ত সাবধানে চলছেন নবীজি।
মক্কার কাফের কুরাইশরা যাতে টের না পায় এ জন্যই তাদের এই সতর্কতা।
মহানবীর (সা) কাফেলায় আছেন হযরত আবু বকর, আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকাত এবং আমের।
ডানে লোহিত সাগরের বিশাল জলরাশি। বাঁয়ে মরুময় অন্তহীন পাহাড়ের সারি।
মহানবীর কাফেলা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে তারই মাঝ দিয়ে। বাহন হিসেবে রয়েছে মাত্র তিনটি উট।
কাওছার নামক উটের পিঠে চড়েছেন মহানবী (সা)।
আমের ও আবু বকর চড়েছেন একটিতে আর উবাইকাত তার নিজস্ব উটের পিঠে।
কাফেলাটি সওর গিরি গুহায় গিয়ে পৌঁছল।
ইতোমধ্যেই রাতের আঁধার কেটে গেছে।
এদিকে মহানবীর (সা) হিজরতের খবরও মক্কায় রটে গেছে। নবী (সা) ও তাঁর সাথীদের খুঁজে বের করার জন্য পাগলপারা হয়ে উঠেছে কুরাইশরা। মহানবী (সা) ও আবু বকরকে হত্যার জন্য একশ উটের পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে। সওর গুহায় আশেপাশের পল্লীতেও পুরস্কারের খবর দ্রুত এসে ছড়িয়ে পড়ল।
এদিকে গিরি গুহা হতে কাফেলাটি বের হবার সময় একজন পল্লীবাসী তা দেখে ফেললো। আর যায় কোথায় তড়িঘড়ি করে লোকটি এ খবর সবাইকে অবগত করল।
এমন সময় সেখানে চলছিল এক বৈঠক। বিষয়টি সভায় আলোচনা হলে সুরাকা নামক এক যুবক চালাকি করে বলল, ‘না, না, এ কাফেলা সেটা নয় যার কথা তোমরা অনুমান করছ। আমি জানি ওরা উট খুঁজতে বেরিয়েছে। অতএব কাফেলাকে অনুসরণ করার প্রয়োজন নেই।’
সুরাকা গোটা পুরস্কার পাবার লোভেই সভায় এই মিথ্যা কথা বলেছিল।
তার কথা বিশ্বাস করে বৈঠকের লোকজন অন্য আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল তখন সুরাকা ধীরে ধীরে সভাস্থল ত্যাগ করল। তারপর দ্রুত বেরিয়ে পড়ল তার মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্য।
বলবান ঘোড়ায় চড়ে তীর বেগে ছুটে চলছে সুরাকা।
পুরস্কার পাবার তীব্র আকাংখায় সে উঁচু-নীচু পাহাড়িয়া পথে ছুটে চলছে। ইতোমধ্যেই কাফেলার লোকজন তার নজরে পড়ল। বেশ দূরে সেই কাফেলাকে ধরার জন্য সুরাকা তার ঘোড়ার গতি আরো বাড়িয়ে দিল। কিন্তু খানিক পরই পা পিছলে পড়ে গিয়ে ঘোড়া মারাত্মক ব্যথা পেল। এতে সুরাকার মনেও হোঁচট খেল। এ অভিযানে সাফল্যের ব্যাপারে তার সন্দেহ সৃষ্টি হলো। তবুও পুরস্কার পাবার মোহে সে যে আচ্ছন্ন। আরবের নীতি অনুযায়ী তীর দিয়ে লটারী করেও না সূচক জবাব পেয়ে সে ক্ষণিকের জন্য হতাশ হলো। তারপরও সে বিশ্বাস করতে পারছিল না লটারীর ফলাফলকে। তাই শিকারের খোঁজে পুনরায় রওনা হলো সুরাকা।
ঘোড়া তার ছুটছে তীর গতিতে। কাফেলার খুব কাছাকাছি এসে পড়ল সে।
হঠাৎ হযরত আবু বকরের চোখে ধরা পড়ল শত্রুর ছায়া। তিনি খুব আশংকা বোধ করে বললেন, ‌আমরা এখন শত্রুর কবলে। ওরা সহসাই আমাদের ধরে ফেলবে।
কিন্তু মহানবী (সা) মোটেও উদ্বিগ্ন হলে না।
তিনি বললেন, ভয় পেয়ো না; আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন।
সুরাকা কাছাকাছি এসে পড়েছে।
সুরাকার চোখে-মুখে উল্লাসের বন্যা যেন উপচে পড়ছে। কিন্তু তার ঘোড়াটি সহসাই আবারো দুর্ঘটনায় পড়ল। এবার ঘোড়ার পা দু’টি মাটিতে গেড়ে গেল। অনেক চেষ্টা করেও ঘোড়ার পা উঠাতে পারল না সুরাকা। মনটা তার ভীষণ খারাপ হয়ে গেল।
সুরাকা আবারো তীর দিয়ে লটারী করল। এবারও ফল হল উল্টো- ‘না সূচক।’
সুরাকা ভয়ে ও গ্লানিতে হতাশ হয়ে পড়ল। এদিকে ঘোড়াটি পা তুলতে না পেরে চিৎকার শুরু করলো। সুরাকা আরও হতাশ হয়ে পড়ল।
এ অবস্থায় মহানবীর (সা) কাফেলাকে লক্ষ্য করে সুরাকা বললো, শুনুন! আমি সুরাকা। একটু দাঁড়ান। আমি কিছু কথা বলতে চাই। আমার দ্বারা আপনাদের কোন ক্ষতি হবে না।
কাফেলা সুরাকার অসহায় অবস্থা দেখে ঘুরে দাঁড়াল। সুরাকা নবীর (সা) নিকট ছুটে গেল এবং সে তার কাজের জন্য ক্ষমা চাইল। অতপর নবীজিকে বলল, আপনারা আমার খাদ্য এবং অস্ত্রশস্ত্র সবকিছু গ্রহণ করুন।
মহানবী (সা) তার কথা শুনে হেসে বললেন, ‘তাই!
তোমার এসবের কোন প্রয়োজন নেই। বরং তুমি আমাদের হিজরতের কথা গোপন রেখো। সেটাই যথেষ্ট।
এবার সুরাকা মহানবীর (সা) নিকট তাকে কোন একটা পরওয়ানা লিখে দেবার অনুরোধ জানাল।
মহানবী (সা) আমেরকে আদেশ দিলেন। নির্দেশ পেয়ে চামড়ায় আমের ঐ রকম একটা পরওয়ানা লিখে দিল। এটাই সুরাকার জন্য যথেষ্ট হলো। মহানবীকে (সা) হত্যা করে পুরস্কার পাবার মোহে উন্মাদ সুরাকা এবার তার ভুল বুঝতে পারল।
সে তার ঘোড়া নিয়ে মক্কার পথে ফিরে গেল।
মহানবী (সা) তাঁর কাফেলা নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করলেন মদীনার পথে।
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×