somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইমাম আল গাজ্জালী রহ.

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


-মনযূরুল হক

গুণীরা বলেছেন- বড় হতে হলে একটা প্রতিজ্ঞার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠতে হয়। ইমাম গাজ্জালীর সেই প্রতিজ্ঞাটা তৈরি হয়েছিল একটা রোমাঞ্চকর ঘটনার মাধ্যমে। মাধ্যমিক পড়াশুনা শেষ করে জুরজান থেকে তুছ নগরে ফিরে আসছিলেন তিনি। পথে ডাকাত পড়লো এবং সবকিছুর সাথে ডাকাতরা তাঁর ব্যাগটিও কেড়ে নিল। যাতে ছিলো তার নোট-পা-ুলিপি ‘তালিক’। তিনি ডাকাত দলের পিছু নিলেন। ডাকাত সরদার দেখে বলল, মরতে না চাইলে ফিরে যাও।
আমার ঐ থলেটি ফিরিয়ে দাও, গাজ্জালী বললেন।
কী আছে তাতে ?
আমার দীর্ঘ দিনের জ্ঞান।
‘আমার’ জ্ঞান বলছো কেন, এটা তো এখন আমার কাছে।
গাজ্জালী সংকেতটি বুঝতে পারলেন। প্রতিজ্ঞা করলেন, এমনভাবে জ্ঞান অর্জন করবেন যেন কেউ কোনদিন ডাকাতি করতে না পারে।
খোরাসানের ঐ ‘তুছ’ শহরেই ৪৫০ হিজরীতে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। তার পূর্ণ নাম আবু হামেদ মুহাম্মাদ বিন মহাম্মাদ আল-গাজ্জালী। নামের শেষাংশে গাজ্জালী হয়েছিল মূলত পারিবারিক পেশার সূত্র ধরে। তার বাবা ছিলেন গাজ্জাল বা তাঁতী । খুব ছোটবেলাতেই তিনি বাবাকে হারান। বাবার এক বন্ধুর কাছে তাদের দুই ভাইয়ের প্রতিপালনের দায়িত্ব ছিল। কিন্তু বন্ধু অর্থের অভাবে কয়েকজন বিত্তশালীদের সহযোগিতায় এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদেরকে ভর্তি করিয়ে দেন। সেখানেই তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত হয়। তারপর ‘ফেকাহ’ পড়ার জন্য তিনি গিয়েছিলেন জুরজান শহরে। সেখান থেকে ফেরার পথেই ডাকাতের ঘটনাটা ঘটে।
৪৭৬ হিজরীতে গাজ্জালী উচ্চতর এলেম শিক্ষার জন্য নিশাপুর গমন করেন। নিশাপুরে দুই বছর থেকে তিনি ‘আল-মুআসকারে’ চলে আসেন এবং তখন নানা বিতর্কে অংশগ্রহণ করে সেলজুকী সালতানাতের উজীর নেযামুল মুলুকের নজর কাড়তে সক্ষম হন। উজীরের ইচ্ছায় মাত্র ৩৪ বছর বয়সে ইমাম গাজ্জালী তখনকার সবচেয়ে বড় বিদ্যালয় বাগদাদের ‘নিজামিয়া’ মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পদ অলঙ্কৃত করেন। ৪৮৮ হিজরীতে অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে দীর্ঘ দশ বছরের পর্যন্ত তিনি পরিব্রাজক জীবন যাপন করেন।
আশৈশব অর্থকষ্টে ভোগা তাঁতীর ছেলে গাজ্জালী বাগদাদে দারুন সুখে স্বাচ্ছন্দে জীবন কাটিয়ে ছিলেন। এ সময় তিনি ‘আল-মুস্তাযহারী’র মতো বড় বড় কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। এছাড়াও গাজ্জালী রচনা করেছেন প্রায় তিন শতাধিক গ্রন্থ। তাঁর রচনার সম্ভার সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে আছে। তিনি মূলত দর্শনধর্মী গ্রন্থ রচনা করেছেন বেশি। ডব্লিউ এম ওয়াটের মতে, তার রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে লজিক্যাল বিন্যস্ততা। তবে গাজ্জালীর একমাত্র বিশ্বাস ও অবস্থান ছিল, ওহী বা নবুয়তী চিন্তাধারা মানুষের সমস্ত আকল ও বুদ্ধির উর্ধ্বে। তিনি বলেছেন, ওহী ছাড়া কোনও দার্শনিক মতবাদ কখনো ধর্মীয় চিন্তার ভিত্তি হতে পারে না। মধ্যযুগীয় দার্শনিক চিন্তার প্রভাব থেকে মুক্ত করে মুসলিমদেরকে কোরআন-হাদীসের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনার কারণে তাকে ‘হুজ্জাতুল ইসলাম’ বা ইসলামের প্রামাণিক পুরুষ বলা হয়।
গাজ্জালী বিয়ে করেননি বলে জনশ্রুতি আছে। তবে ইতিহাসের সামনে সে শ্রুতি ধোপে টেকেনি। কারণ গাজ্জালীর জীবন ও জীবনী পর্যালোচনা দেখা গেছে, আনুমানিক ৫০০ হিজরীতে তিনি নিজ দেশে ফিরে এসেছিলেন প্রধানত তাঁর মেয়েদের অনুরোধে। জ্ঞান সাধনা, দর্শন চর্চা এবং বই লেখা ছাড়াও তিনি তাঁর মেয়েদেরকে খুব ভালোবাসতেন। দেশে ফিরে তিনি বাড়ির পাশে একটা মাদরাসা ও একটা খানকাহ প্রতিষ্ঠা করেন। এবং বাকি জীবন এই নিয়েই কাটিয়ে দেন।
৫০৫ হিজরীর ১৪ই জমাদিউস সানি (১৮ই ডিসেম্বর ১১১১ইং) রবিবার এক সুন্দর সকালে এই ক্ষণজন্মা মনীষী ইমাম আল-গাজ্জালী রহ. ইন্তেকাল করেন। ইরানের অমর কবি ফেরদৌসীর সমাধির পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×