somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অঙ্গীকার পালন.....

১৪ ই জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খোলাফায়ে রাশেদীনের শাসনামল।
ইসলামের মহিমা ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। কালজয়ী আদর্শ ইসলামের ছোঁয়ায় আলোকিত গোটা আরব সমাজ।
ইসলামের এ সোনালী যুগে খিলাফতের কর্ণধার হচ্ছেন হযরত উমর (রা)।
দীনদার এক মহান বীর তিনি। পরম মহানুভব ও ন্যায়বান এক শাসক। অর্ধ দুনিয়া এখন তাঁর হাতের মুঠোয়। তাঁরই যাদুর স্পর্শে দীনের দাওয়াত আরো বেগবান হল।
মক্কা ও মদীনার সীমানা ছাড়িয়ে ইসলাম বিশ্বের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়তে লাগল।
তখন পাশেই ছিল পারস্য সাম্রাজ্য। বিরাট দেশ। আধুনিক যুদ্ধ শক্তি ও সম্পদের কোন অভাব নেই তাদের। মুসলিম শক্তি সে তুলনায় খুবই নগণ্য। পারসিয়ানরা ছিল ইসলামের ঘোর বিরোধী। তাই তারা ইসলামের বিজয় দেখে আঁতকে উঠল। ইসলামের উত্থান তাদের সহ্য হলো না।
তাই তারা ইসলামের বিরুদ্ধে শুরু করল ষড়যন্ত্র।
নানা রকম কলাকৌশল গ্রহণ করা হল।
অনেক ফন্দি-ফিকিরও করা হল। মুসলমানদের পদানত করার জন্য। আঁটা হল মহা পরিকল্পনা।
এদিকে মুসলমানদের ছিল প্রচণ্ড ঈমানী শক্তি। এই শক্তির নিকট কাফিরদের কোন দুরভিসন্ধিই টিকল না।
তাই পারসিয়ানরা দিশেহারা হয়ে উঠল। তাহলে কি করা যায়? ইসলামের গতিকে কিভাবে রোধ করা যায়? এ নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেল পারসিকরা। অনেক ভাবল তারা। কিন্তু কোন কূল-কিনারাই খুঁজে পেল না।
অবশেষে মাথায় এক বুদ্ধি এল।
ছলে বলে মুসলমানদের দাবিয়ে রাখতে হবে। ইসলামী রাষ্ট্রের অস্তিত্বের মূলেই আঘাত হানতে হবে। তাই যুদ্ধের প্রয়োজন। যুদ্ধই ইসলামী শক্তিকে ধ্বংস করার একমাত্র পথ। তাই মুসলমানদের এক ভয়াবহ যুদ্ধের দিকে ধাবিত করল তারা।
পারস্যের বিশাল সেনাবাহিনী।
ধন-সম্পদ ও অস্ত্রপাতির কোনই কমতি নেই ওদের। আধুনিক যুদ্ধের কলা-কৌশলও তাদের জানা। যুদ্ধের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নিল ওরা। তাবৎ শক্তি তারা জড়ো করল।
সেনাপতির দায়িত্ব দেয়া হল খ্যাতনামা বীর যোদ্ধা রুস্তমের উপর। সে যুগের নামকরা যুদ্ধবিদ রুস্তম।
এদিকে মদীনায়ও সাড়া পড়ে গেল। মুসলমানরা জেগে উঠল।
পারসিকদের ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নিলেন খলিফা উমর (রা)।
তিনিও প্রস্তুত হলেন। তিনি প্রতিরোধের সংকল্প করলেন।
কিন্তু মুসলমানদের শক্তি ও সামর্থ যে খুবই কম। তাদের প্রয়োজনীয় সৈন্য নেই। যুদ্ধাস্ত্রও নেই। তারপরও বসে তো আর থাকা যায় না। একদল মুজাহিদকে তাই যুদ্ধের জন্য তৈরী করা হল।
সেনাপতির দায়িত্ব দেয়া হল হযরত আবু উবাইদাকে।
সহসাই যুদ্ধের দামামা বেজে উঠল।
পারসিক বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ল। মুসলমানদের একটার পর একটা জনপদ মাড়িয়ে এগিয়ে আসছে ওরা। কোন বাধা ছাড়াই এরা গ্রাস করছে মুসলমানদের জনবসতি।
পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করল।
মুসলিম জনগণের মধ্যে ত্রাস ও শংকা ছড়িয়ে পড়েছে।
ইসলামের এই বুঝি শোচনীয় পরাজয় হতে যাচ্ছে। এটা ভেবে তাদের হৃদয়-মন কেঁপে উঠল।
অবশেষে মুসলিম বাহিনী গর্জে উঠল।
তারাও এগিয়ে গেল প্রতিরোধ গড়ার জন্য।
নামারুক নামক স্থানে উভয় বাহিনী মুখোমুখি হল।
যুদ্ধ বাঁধতে আর দেরি হল না।
বিশাল পারসিক বাহিনীর সাথে নগণ্য সংখ্যক মুসলিম সৈন্যের প্রচণ্ড লড়াই শুরু হল। রক্তের বন্যা বয়ে গেল নামারুকে। মুসলমানরা আল্লাহর উপর ভরসা রেখে শত্রুদের মোকাবেলা করল। মুসলিম বাহিনী তীব্র আঘাত হানল।
তাই শত্রু সেনারা বিচলিত হয়ে উঠল।
মুসলমানদের বীরত্ব ও অসীম সাহসের নিকট পারস্য সেনারা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল। পারসিয়ান শিবিরে নেমে এল ঘোর অন্ধকার। মুসলমানদের প্রচণ্ড আক্রমণে শত্রুসেনারা দিশেহারা হয়ে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করতে লাগল।
মুসলমানদের হাতে পারসিক সেনাপতিও বন্দী হল। নামারুকের মাটিতে রুস্তমের পরাজয়ে পারস্য সম্রাটের অহংকার শেষ হয়ে গেল।
ইসলামের বিজয় পতাকা উড়ল নামারুকের মাটিতে।
এদিকে সেনাপতি রুস্তমের বন্দীদশা নিয়ে ঘটল এক মজার ঘটনা।
যে সব মুসলিম সেনা রুস্তমকে বন্দী করেছিল তারা তাকে চিনত না। তাই রুস্তম বেশ চালাকি করে পালাতে চেষ্টা করল।
ধূর্ত সেনাপতি মুসলিম সৈন্যদের বলল,
ভাই! আমি বৃদ্ধ মানুষ, আমাকে দিয়ে তোমাদের কি লাভ? তাই আমাকে ছেড়ে দাও। বরং আমার বিনিময়ে দু’জন গোলাম নিয়ে নাও।
সরলপ্রাণ মুসলিম সৈন্যটি তার কথা শুনে খুব করুণা হল। সে রুস্তমকে ছেড়ে দেয়ার অঙ্গীকার করে বসল। কিন্তু পরক্ষণেই সৈন্যটি বৃদ্ধের আসল পরিচয় জানতে পারল।
বিপাকে পড়ে গেল মুজাহিদ সেনাটি।
সে ভাবল, এখন এত বড় শত্রুকে কোনভাবেই ছেড়ে দেয়া উচিত নয়।
বিষয়টি মুসলিম সেনাপতি আবু উবাইদার কানে গেল। সব শুনে উবাইদা বললেন, রুস্তমকে মুক্ত করে দাও। কেননা তাকে ছেড়ে দেয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে। তাই এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা আবশ্যক, কোনক্রমেই অঙ্গীকার লংঘন করা যাবে না।
অবশেষে অঙ্গীকার মত মস্তবড় শত্রু রুস্তমকে ছেড়ে দেয়া হল।
বিজয় হল অংগীকারের।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:১০
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×