somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধৈর্যের বড় পুরস্কার...

১৩ ই জানুয়ারি, ২০০৮ সকাল ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসলামের সৌন্দর্য বেলালকে আকৃষ্ট করল। তিনি ইসলাম কবুল করে মুসলমান হলেন। এ খবর জানাজানি হয়ে গেল সর্বত্র। এ খবর তার মনিব উমাইয়ারও কানে গেল।
এ সংবাদ শুনে বেলালের মনিব উমাইয়া ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল।
ক্রোধে, ক্ষোভে ফেটে পড়ল উমাইয়া।
অত বড় স্পর্ধা ক্রীতদাসের!
উমাইয়া মক্কার সেরা ধনী ব্যক্তি।
ধন-সম্পদ, মান-মর্যাদা কোনটাতেই তার তুলনা নেই। সে মক্কার সমাজে একজন শীর্ষস্থানীয় লোক।
তবে ইসলাম বিদ্বেষেও তার জুড়ি ছিল না। ইসলামের নামও সে শুনতে পারত না। তাই ক্রীতদাস বেলালের ইসলাম কবুলের খবরে উমাইয়ার মাথা বিগড়ে গেল।
বেলালকে কাছে পেয়ে তার উপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করল। অত্যাচারের চোটে বেলাল জ্ঞান হারালেন। সামান্য জ্ঞান ফিরে এলে তাকে ইসলাম ত্যাগের নির্দেশ দিল উমাইয়া। বলা হল, ‘এখনও বলি মুহাম্মদের ধর্ম ত্যাগ কর। নতুবা জানে মেরে ফেলব।’
ক্রীতদাস বেলাল তো অন্ন-অবিচল।
তিনি উমাইয়ার কোন কথাতেই কর্ণপাত করলেন না। তার বিশ্বাসে ফাটল ধরাতে ব্যর্থ হয়ে উমাইয়ার ক্রোধ আরো বেড়ে গেল। এভাবে বেলালের উপর ক্রমাগত নির্যাতন চালাতে লাগল উমাইয়া।
একদিন দুপুর বেলা।
আরবের মরুভূমির ভয়ংকর খরায় বালুকণাতে তখন আগুন জ্বলছে।
দাবানল নেমে আসছে আকাশ থেকে।
রৌদ্রের তাপ বাতাসে আগুনের ফুলকা ছড়াচ্ছে।
এমনি অবস্থায় উমাইয়া বেলালকে প্রচণ্ডভাবে মারধর করল।
তারপর তাকে উত্তপ্ত বালুর উপর সূর্যমুখী করে শুইয়ে দেয়া হল। ভারী পাথর এনে বুকের উপর চাপিয়ে দেয়া হল বেলালের। তার দম বেরিয়ে যাবার উপক্রম হল। বেলাল নীরবে সহ্য করে গেলেন সব নিপীড়ন।
কোন অনুনয়-বিনয়ের শব্দ নেই তার মুখে। ব্যথা-বেদনার জন্য কোন আর্তনাদও তিনি করছেন না। তার চোখে কোন অশ্রুও লক্ষ্য করা গেল না।
সে এক অবাক কাণ্ড!
বেলালের মুখে শুধু একটিই শব্দ ‘আহাদ’ ‘আহাদ’, আল্লাহ এক-আল্লাহ এক।
বেলালের এ দৃঢ়তা ও অসীম ধৈর্য উমাইয়াকে অবাক করে দিল।
তারপরও উমাইয়ার মন কিছুতেই নরম হল না।
ঘটনাক্রমে সেদিন ঐ পথ ধরেই হেঁটে যাচ্ছিলেন হযরত আবু বকর (রা)।
‘আহাদ’ ‘আহাদ’ শব্দ শুনে তিনি থমকে দাঁড়ালেন।
চারিদিকে তাকালেন তিনি।
এক সময় তাঁর চোখ পড়ল মরুভূমির দিকে।
সেখানে শুয়ে রয়েছে একজন ক্রীতদাস। পাশেই ব্যঘ্র মূর্তিতে দাঁড়িয়ে আছে উমাইয়া।
আবু বকর (রা) ব্যাপারটা সহজেই বুঝে ফেললেন।
তিনি উমাইয়ার কাছে এগিয়ে এলেন।
হযরত আবু বকর (রা) বললেন,
উমাইয়া! আপনাকে আমি ধনী ও একজন বিবেচক লোক বলে জানতাম। কিন্তু আজ আমার পুরো ধারণাই পাল্টে গেল। দাসটিকে যদি আপনার পছন্দ না হয়, তাহলে তাকে তো বিক্রি করে দিলেই পারেন। অমন বর্বরোচিত আচরণ করা তো মানুষের কাজ নয়।
আবু বকরের কথাগুলো উমাইয়া মনে খুব লাগল।
উমাইয়া চটে গিয়ে আবু বকরকে বলল,
এত বাহাদুরী দেখাবেন না। বেলাল আমার দাস। তার সাথে ভাল কি খারাপ ব্যবহার করব সেটা তো আমার একার অধিকার। আপনার যদি অত দয়া হয় তাহলে তাকে কিনে নিলেই তো পারেন।
হযরত আবু বকর উমাইয়ার কথা শুনে মনে মনে খুবই খুশি হলেন।
কেননা, তিনি বেলালকে কিনতেই চাচ্ছিলেন। তিনি যা চাচ্ছিলেন উমাইয়া তা বলে ফেলেছে। উমাইয়া দাসকে বিক্রির প্রস্তাব দেয়ায় আবু বকর (রা) এ সুযোগকে সাথে সাথেই কাজে লাগালেন। তিনি চট জলদি করে ক্রীতদাসটিকে কেনার প্রস্তাব দিলেন।
উমাইয়া প্রস্তাবে রাজী হল। ক্রীতদাস বেলালকে বালুকণার উপর হতে উঠিয়ে বুকে তুলে নিলেন আবু বকর (রা)। উমাইয়া বিষয়টি ভাল চোখে দেখল না। সে বিদ্রূপের হাসি হেসে বলল,
তুমি একটা বোকা আবু বকর। অনেক মূল্য দিয়ে এ অকর্মণ্য ভৃত্যকে তুমি কিনে নিলে। তোমার ক্ষতি দেখে আমি না হেসে পারলাম না।
আবু বকরও হেসে বললেন,
উমাইয়া! আমি ঠকেছি তুমি ভাবছো! অথচ প্রয়োজনে আমার সমস্ত সম্পত্তির বিনিময়ে হলেও আমি এ ক্রীতদাসকে কিনে নিতে কুণ্ঠিত হতাম না। অথচ তুমি খুব সস্তায় ভৃত্যটিকে বিক্রি করে দিলে।
হযরত আবু বকর (রা) যে ক্রীতদাসকে কিনে নিয়ে মুক্ত করে দিলেন তিনি হচ্ছেন সেই মর্যাদাবান বেলাল।
ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হযরত বেলাল।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:২৪
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:০৫


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×