somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিস্তা নিয়ে এগোবেন মুখ্যমন্ত্রী, আশায় দিল্লি

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে ঢাকা আসছেন। তার ঠিক আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে ইতিবাচক কথা বলেছেন, তাতে দু’দেশের সরকারই অনেক দিন পরে ফের আশার আলো দেখছেন। তিস্তা চুক্তিতে মমতা আপত্তি জানানোর পরে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী দীপু মণি কলকাতায় এসে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করে বরফ গালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও দুই নেত্রীর আলোচনা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। তার এত দিন পরে মমতার কালকের বক্তব্য নতুন সম্পর্কের সূচনার ইঙ্গিতই দিয়েছে।
প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন কলকাতা বইমেলার উদ্বোধন করে মমতা বলেছেন, “দুই বাংলার মধ্যে আসলে ভূগোলের ব্যবধান নেই, তৈরি হয়েছে একটি রাজনৈতিক বিভাজন। আসলে আমি এক দিকে যেমন বলি ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’, অন্য দিকে আমি এই বাংলাকেও ভালবাসি।” এ বার কলকাতা বইমেলার থিম বাংলাদেশ। এই বইমেলার উদ্বোধন করতে কলকাতায় এসেছেন বাংলাদেশের সাহিত্যিক আনিসুজ্জামান। ছিলেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও। ছিলেন কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাই-কমিশনার আবিদা ইসলামও।
মমতা তিস্তা চুক্তি এবং সীমান্ত চুক্তির বিরোধিতা করার পরে তা এখনও রূপায়ণ করা যায়নি। নদী-বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রকে তিস্তার জলপ্রবাহ সমীক্ষা করে রিপোর্ট দিতে বলেছে রাজ্য। সেই রিপোর্ট এখনও পেশ না হওয়ায় গোটা বিষয়টিই ঝুলে রয়েছে। ঢাকা-দিল্লির সম্পর্ক যা-ই হোক, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা সংঘাতের আবহ তৈরি হয়। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী দীপু মণি মহাকরণে এসে মমতাকে বোঝাতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছিলেন।
হতাশ হয়ে তিনি বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশকে তিস্তার জল থেকে বঞ্চিত করতে পারেন না। এর প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার অধিকার রয়েছে বাংলাদেশের। মমতাও পাল্টা জানিয়ে দেন, পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ লঙ্ঘন করে তিস্তা চুক্তি হলে তিনি মানবেন না। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। মমতার সঙ্গে বাংলাদেশের হাই-কমিশনার তারিক করিমেরও তার পরে আর কথাবার্তা হয়নি। তবে নতুন ডেপুটি হাই-কমিশনার আবিদা ইসলাম কলকাতায় এসে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছেন। মমতাও তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ করেন। বাংলাদেশ ডেপুটি হাই-কমিশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশ মেলা’য় সম্প্রতি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী অংশ নেন। ছিলেন অন্য মন্ত্রীরাও। এ ভাবেই অল্প অল্প করে বরফ গলছিল। বাংলাদেশ সরকার কী ভাবে সন্ত্রাস দমনে ভারতকে সাহায্য করছে, রাজ্যকে সম্প্রতি তা জানিয়েছে কেন্দ্র। কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তান যখন সেনা বাড়াচ্ছে, সেই সময়ে বাংলাদেশকে পাশে পাওয়াটা ভারতের পক্ষে বিশেষ জরুরি। ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তের অধিকাংশটাই পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিন্দে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি সই করতে পারেন তাঁর এই ঢাকা সফরে। তার আগেই বাংলাদেশ সরকার ত্রিপুরার এক শীর্ষ জঙ্গিনেতা রঞ্জিৎ দেববর্মাকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। মুজিব-হত্যাকারীরা ধরা পড়লে ভারতও তাদের ঢাকার হাতে তুলে দিতে রাজি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মমতার ভূমিকা অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বইমেলায় মমতা খুবই সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও জানিয়েছেন, তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্কে আস্থাশীল। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি চান ভারত-বাংলাদেশ সুসম্পর্ক এগিয়ে চলুক। মমতার এই বার্তা ঢাকা-র প্রত্যাশাও অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ নিজেও ঢাকা সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার আগে বিদেশসচিব রঞ্জন মাথাইয়েরও ঢাকা যাওয়ার কথা। বাংলাদেশে নির্বাচনও এগিয়ে আসছে। এই অবস্থায় তিস্তা চুক্তি নিয়ে মমতার সঙ্গে নতুন করে আলোচনায় বসতে চাইছেন খুরশিদ। তিনি মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গ কোনও ভাবেই বঞ্চিত হবে না, এ বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে মমতা তিস্তা চুক্তি থেকে আপত্তি তুলে নেবেন। একই ভাবে স্থল-সীমান্ত চুক্তি নিয়েও কেন্দ্র বোঝাতে চাইছে, স্থানীয় মানুষ এই চুক্তির পক্ষে। এই চুক্তি রূপায়ণের সময়েও পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ যাতে না লঙ্ঘন হয়, তা দেখা হবে।
হিলারি ক্লিন্টনও কলকাতায় এসে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে মমতার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। হিলারি বুঝিয়েছিলেন, বাংলাদেশ ফের জঙ্গিদের ঘাঁটি হয়ে উঠুক, এটা কারও কাম্য নয়। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের একটা গুরুদায়িত্ব রয়েছে। বাম জমানায় এক বার কলকাতার মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে জঙ্গি হামলা হয়েছিল। এমন ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্যও দরবার করেছিলেন হিলারি। এখন কংগ্রেস-তৃণমূল বিচ্ছেদ হলেও মমতার গত কালের মন্তব্যে ভারত সরকার আশাবাদী যে, বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক জটিলতা দূর করতে এগিয়ে আসবেন মমতা।


এক মঞ্চে দুই বাংলা। শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কলকাতা বইমেলার উদ্বোধন করছেন
বাংলাদেশের সাহিত্যিক আনিসুজ্জামান। পাশে সে দেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×