somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাক - ভারত সমস্যা : কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের পথ

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লাইন অব কন্ট্রোল বিশ্বের অন্যতম সুরক্ষিত সীমান্ত রেখা হিসেবে পরিচিত । দীর্ঘদীন শান্ত থাকার পর গত কয়েকদিন ধরে নতুন করে আবারো উত্তেজনার সূত্রপাতকে কেন্দ্র করে দুই দেশের পরাষ্ট্রনীতিতে আলোচনার ঝড় উঠেছে। দুই দেশের পরাষ্ট্রনীতির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো দুই দেশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। ভারত - পাকিস্তান উভয়ই শক্তিশালি রাষ্ট্র । স্বাধীনতার পূর্বে হিন্দু প্রভাবাধীন ভারতের জাতীয় কংগ্রেস পাকিস্তানীদের মনে যে বিদ্বেষ সৃষ্টি করেছিল স্বাধীনতার পরও পাকিস্তানীদের মধ্যে সেটা বহাল রয়েছে। ভারতও পরবর্তীতে এই সন্দেহ বিদ্বেষ কখনো দূর করার চেষ্টা করেনি । পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্ককে আরো তিক্ত করে তুলেছে। ১৯৪৭ সালে যখন দেশ ভাগ হয় তখন মুসলমানরা ভারত ত্যাগ করে আর হিন্দু শিখরা পাকিস্তান ত্যাগ করে এসময় ব্যাপক রক্তপাত এবং আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। এছাড়াও অর্থ সম্পদ ভাগ বাটোয়ারা নিয়েও দুই দেশের মধ্যে বিরোধ দেখা যায়। তবে এই দুই দেশের সবচেয়ে জটিল ইস্যু হলো কাশ্মীর সমস্যা। ১৯৪৭- ১৯৪৮ সালের দিকে এই দুই দেশের মাঝে কাশ্মীর নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টিতে জাতিসংঘ মধ্যস্থতা করে। এই মধ্যস্থতা ভারত মেনে না নিলে ১৯৬৫ সালে যুদ্ধ শুরু হয় । ১৯৬৬ সালের ১০ ই জানুয়ারী বর্তমান রাশিয়া তাসখন্দ চুক্তির মাধ্যমে সে যুদ্ধের নিষ্পত্তি ঘটাতে সক্ষম হলেও ১৯৭১ সালে আবার তারা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এ সুযোগে সোভিয়েত সমাজ আফগানদের উপর হস্তক্ষেপ করলে পাকিস্তান আফগানদের সহযোগিতা করলে এ সুযোগে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের সাথে একটি ভাল সম্পর্কের ভিত্তিতে ভারতকে পারমানবিক অস্ত্র নির্মানে সহযোগিতা করে। পাকিস্তান একই সুযোগে চীনের সহযোগিতায় পারমানবিক অস্ত্রেও টিক্কা দিতে সক্ষম হয়। ১৯৭২ সালে পাক-ভারত সমস্যা সমাধান কল্পে সিমলা চুক্তি হয় এই চুক্তির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয় যে ভারত পাকিস্তানের মাঝে বিবাদমান সমস্যাগুলো তারা দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান করবে। কারগীল সীমান্ত নিয়েও দুই দেশের সম্পর্ক দিনে দিনে অবনতির দিকে চলে যায়। ২০০২ সাল ছিল কাশ্মীর নিয়ে পাক- ভারতের অস্তিরতার সময় দুই দেশের মধ্যে হতাহতের ঘটনায় অনেক নিরীহ কাশ্মীরি নিহত হয় যার পরিপ্রেক্ষিতে কাশ্মীরের জনগন আজও এই দিনটিকে শোক দিবস হিসেবে পালন করে। দুই দেশের এই অভ্যন্তরীন সমস্যা সে সময় বৃটেনের হস্তক্ষেপে সাময়িক সমাধান হলেও পরবর্তীতে সমস্যা আরো দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০৩ সালে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি চুক্তির মাধ্যমে অনেক দিন থেকে এই দুই দেশের মধ্য শান্তিপূর্ণ অবস্থান ছিল। কিন্তু হঠ্যাৎ করেই ৬ ও ৮ জানুয়ারীতে কাশ্মীর সীমান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে এখন দুই দেশের মধ্য আবারও নতুন সমস্যার সূত্রপাত করেছে। জম্বু এবং আজাদী কাশ্মীর এই দুটির মাঝখানে অবস্থিত লাইন অব কন্ট্রোল। লাইন অব কন্ট্রোলের দুই পার্শ্বে কোটি কোটি মানুষ বসবাস করছে, এই কোটি প্রাণকে ক্ষুধা আর দারিদ্যের মধ্য রেখে দুই দেশের শাসক গোষ্ঠি একপক্ষ কাশ্মীরকে নিজেদের দখলে রেখে অন্য পক্ষ দখলের পাঁয়তায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে গত পাঁচ দশক ধরে। পাক- ভারতের মধ্যে ঘৃণা ও বিদ্বেষ এতই প্রবল যে , এরা পরস্পরকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য শ’ খানেক পারমানবিক অস্ত্র তৈরি করে রেখেছে। এক একটি অস্ত্র তৈরিতে যে পরিমান অর্থ খরচ হয়েছে যা দ্বারা দুটি দেশের অসংখ্য দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের দুর্দশা দূর করতে পারত। বর্তমান বিশ্বে ফিলিস্তিন ও ইসরাইল ছাড়া আর কোন দেশ পাওয়া যাবেনা , যারা ভারত পাকিস্তানের মতো পরস্পরকে ঘৃনা করে। অথচ কাশ্মীর সমস্যা না থাকলে এই দুটি দেশ হতো বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বন্ধুভাবাপন্ন, যারা যে কোন সমস্যায় এক অ্পরকে সাহায্য করত। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় উপমহাদেশের অর্থনৈতিক দুর্দশার সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে বিশ্লেষকগণ কাশ্মীর সংকটকে দায়ী করছেন । পাক-ভারতের মধ্যকার এই কাশ্মীর সমস্যার সকল প্রতিফল পোহাতে হচ্ছে কাশ্মীরের জনগনের রিহীহ জনগনের। বর্তমানে কাশ্মীর প্রশ্নে ভারত বিভাজন (লাইন অব কন্ট্রোল) রেখা মেনে নিতে রাজি হলেও কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী জনগন আর পাকিস্তান রাজী নয় । পাকিস্তান রাজী না থাকলেও কোন ক্ষতি ছিল না যদিবা ভারত তাদের অধিকারী কাশ্মীরের গৃহযুদ্ধ বন্ধ করতে পারত। তবে যদি ভারতীয় কাশ্মীরের জনগনকে ভারত সরকার খুশি করতে পারত তাহলে কাশ্মীর সমস্যা কিছুটা হলেও সমাধানের সম্ভাবনা ছিল । কাশ্মীরকে যথেষ্ট স্বায়ত্ত্বশাসন প্রদান করে গৃহযুদ্ধের অবসান অসম্ভব। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় শাসক গোষ্ঠী অভ্যন্তরীন জটিলতার কারনে সেটা করতেও অক্ষম। তবে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের যতগুলো পথ রয়েছে তারমধ্যে পর্যাপ্ত স্বায়ত্ত্বশাসনই ভারতীয় শাসকদের জন্য সহনীয়। ভারতীয় কাশ্মীর মূলত তিনটি ভাগে বিভক্ত, জম্মু,কাশ্মীর আর লাদাখ। জম্মু ও লাদাখ হিন্দু ও বেীদ্ধদের আবাসস্থল আর কাশ্মীর হল মুসলিমদের আবাস্থল। জম্মু আর লাদাখের জনগন ভারতে থাকার পক্ষপাতী অন্যদিকে কাশ্মীরের একপক্ষ চায় স্বাধীনতা অন্যপক্ষ চায় পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্তি। বিচ্ছিন্নতাবাদী গেরিলারা বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত। এক ডজনের বেশী দল নিয়ে তারা গঠন করেছে হুরিয়াত কনফারেন্স। ভারত সরকার যদি মুসলিম প্রধান অঞ্চল কাশ্মীরের ওপর পাকিস্তান সরকার এবং হুরিয়াতের সাথে সমঝোতায় আসতে পারে তবে সেক্ষেত্রে ছয় দশকের এই আন্তর্জাতিক সমস্যাটির দারুন মীমাংসা হতে পারে। এক্ষেত্রে উপায় হলো বেশ কিছু জায়গা পাকিস্তানের ছেড়ে দেয়া।
তবে কাশ্মীর সমস্যা অন্যভাবে সমাধান করা যেতে পারে। ভারত পাকিস্তানের অধিকৃত জায়গা সংযুক্ত করে যদি স্বাধীন কাশ্মীর রাষ্ট্র গড়ে তোলা যায় তবে তা হবে কাশ্মীরের জনগনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। আন্তর্জাতিক শ্রেনীও বোধহয় এমন একটি সমাধান দেখতে সবচেয়ে বেশী আগ্রহী। সেক্ষেত্রে বৃহৎ শক্তি রাষ্ট্র পাক-ভারতের মাঝে বাফার রাষ্ট্র হিসেবে কাজ করবে এই ক্ষুদ্র স্বাধীন কাশ্মীর।
কাশ্মীর সমস্যা সমাধান যে একবারেই অসম্ভব তা নয়। ত্রুটি হলো দুটি দেশের রাজনৈতিক অপরিপক্কতা। বর্তমানে পাকিস্তান আবার ফিরে গেছে সেনা শাসনের পর পূর্বের অবস্থায় । যদিও ভারতকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ বলা হয় , কিন্তু সে গণতন্ত্রও শুধু নির্বাচনের মাঝেই সীমাবদ্ধ, তার কার্যকারী কোন প্রতিফলন দেখা যায় না। দেশটির গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো আজও সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাড়াতে পারেনি। কাশ্মীর ছাড়াও নানা বিচ্ছিন্নতাবাদী সমস্যায় জর্জরিত ভারতের পক্ষে তাই কাশ্মীরের ওপর বড় ছাড় দেয়া সম্ভব নয়। কারণ হিসাবে দেখা যায় দেশটি তাহলে বিশ পঁিচশটি ভাগে বিভক্ত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে প্রচন্ড। কিন্তু কাশ্মীর সমস্যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার স্বার্থেই বিশ্ববাসীকে প্রদান করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যর সমস্যা অর্থাৎ আরব- ইসরাইল শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলেই আন্তর্জাতিক শক্তিধর সম্প্রদায় তাদের মনযোগ কাশ্মীরের ওপর পূর্ণমাত্রায় প্রদান করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কেননা বর্তমানে কাশ্মীর বলতে শ’ খানেক পারমানবিক বোমার বিস্ফোরনের সম্ভাবনা । তাই কাশ্মীরের অসহায় জনতার দিকে তাকিয়ে কাশ্মীরকে গণতান্ত্রিক উপায়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যার মাধ্যমে এই জটিল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। নতুবা যতদিন এটি সম্ভব না হবে ততদিন এ সমস্যার অগ্রগতি এভাবেই চলতে থাকবে।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×