somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, আইরিন খান ও বাঙালের হাইকোর্ট দর্শন

০৯ ই জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমকালে কাজ করার সময় আইরিন খানের একাধিক লেখা আমি অনুবাদ করেছিলাম। মানবাধিকার নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দেয়া বক্তব্যগুলো আমাদের ভাবিয়েছে। তখনও জানতাম না, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। সহকর্মী একজনের তথ্য পেয়ে নেট সার্চ দিয়ে আমার মুগ্ধতা বাড়তে থাকলো। বাংলাদেশের এক নাগরিকের পক্ষে এত বড় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল হওয়া আমাদের জন্য খুবই গর্বের ব্যাপার। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডোনারদের অর্থে চলে, যতদূর জানি। ডোনারদের স্বার্থেই তাদের অনেক সময় মানবাধিকার নিয়ে একপেশে কথা বলতে হয়। কিন্তু তারপরও বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার রক্ষার পক্ষে এ সংস্থাটির কিছু ভূমিকা আছে। আর আইরিন খান সংস্থাটিকে দক্ষতার সঙ্গেই পরিচালনা করছেন।
অনেক দিন পর তিনি বাংলাদেশে এলেন এবার। তিনি যেদিন এলেন সেদিন এটিএন বাংলা বা বাংলাভিশনে টক শোতে উপস্থিত ছিলেন নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবীর। আউটস্পোকেন এই সম্পাদক অ্যামনেস্টি সম্পর্কে যে তথ্যটি দিলেন তাতে ভীষণ বিস্মিত হলাম। তিনি জানালেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবাধিকারের ঝাণ্ডা বহনকারী এ সংস্থাটি বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, আল বদর, রাজাকারদের মানবাধিকার নিয়ে ছিল নিশ্চুপ। এবং তারা বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণের বিরুদ্ধে পাকিস্তানীদের বর্বর হামলা নিয়ে কোনো বিবৃতি পর্যন্ত দেয়নি। ভাবলাম, পরদিন ব্লগে এসে একটা পোস্ট দেব। আইরিন খানের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লংঘন নিয়ে তার প্রতিষ্ঠানের বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে কখনো বিচলিত হয়েছেন বলে খোঁজ পাওয়া যায় না। কিন্তু তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ৩৬ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান। খুবই ভাল কথা। আমরা তার প্রস্তাব সমর্থন করি। বাংলাদেশের মানুষ না হয় নানা বিপদে আপদে ছিল বলে, এতদিন বিচারের দাবি তোলেনি এত জোরালোভাবে। কিন্তু আইরিন খানের মতো একজন অ্যামনেস্টির প্রধান থাকা সত্ত্বেও কেন বছর দুয়েক আগেও অ্যামনেস্টি এ নিয়ে টু শব্দ করেনি?
সামহয়ারের একজন ব্লগার আইরিন খানের বাংলাদেশ সফর নিয়ে নেতিবাচক পোস্ট দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, আইরিন খান টাকা খেয়ে এখন এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছেন। স্বাভাবিক কারণেই তথ্য-প্রমাণহীন এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বলা যায়। ব্লগের অনেকেই তার সে অভিযোগের প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু সেই ব্লগার এই অভিযোগ করেই ক্ষান্ত থাকেননি। প্রতিবেশী ভারতে মানবাধিকার লংঘন নিয়ে অ্যামনেস্টির বক্তব্য প্রত্যাশা করেছেন। ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ। তাদের মানবাধিকার নিয়ে তারা যথেষ্ট সচেতন। তাদের বিচার বিভাগ যথেষ্ট স্বাধীন। এবং সেখানে একটি স্বাধীন মানবাধিকার কমিশনও আছে। সেখানকার মানবাধিকার কর্মীরা যথেষ্ট সোচ্চার। ব্লগার ভারতের আভ্যন্তরীণ মানবাধিকরা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যা বলেছেন তা ইতিমধ্যেই আলোচিত। ভারতেই এ নিয়ে কথা বলার মতো যোগ্য ব্যক্তি আছেন। ফলে, এখন আইরিন খানের কাছে তার দাবি তোলাটা খানিকটা অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। কিন্তু ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিত সীমান্তে বিএসএফ যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তা প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে।
কিন্তু আইরিন খানের প্রায়োরিটি এখন বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এখানে তার প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন আছে। বাংলাদেশ সরকারের উচিত তার সঙ্গে সহযোগিতা করা। পাশাপাশি আইরিন খানের উচিত, সরকারের আইনগত ভিত্তির নড়বড়ে অবস্থা। বিচার-বহির্ভূতভাবে অনেক ব্যক্তিকে আটকে রাখা ইত্যাদি নিয়ে চুপচাপ থাকা। কারণ, আমাদের মূল লক্ষ্য এখনকার মানবাধিকার প্রসঙ্গ নয়। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। সাফ কথা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলেই আমাদের সব সমস্যা কেটে যাবে বলে আমরা মনে করি।
ব্লগে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আইরিন খানের সফর বিষয়ে নেগেটিভ অবস্থান গ্রহণকারী ব্লগার/ব্লগারদের বিরুদ্ধে যুক্তি প্রদান করেই ক্ষান্ত হননি। তাকে ভুল প্রমাণ করে তাদের আশ মেটেনি। তারা ব্লগ কর্তৃপক্ষকে জড়িয়েছেন। এবং ব্লগারদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন যেন তারা ব্লগ কর্তৃপক্ষ ও সমালোচনাকারী ব্লগারের বিরুদ্ধে অ্যামনেস্টির কাছে আবেদন জানান। আমি যতদূর জানি তাতে অ্যামনেস্টি মত প্রকাশের অধিকার নিয়েই কাজ করে। কোথাও কেউ সরকার বা ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে হয়রানীর শিকার হলে তাদের সাপোর্ট দেয়। নিদেন পক্ষে সরকারের গৎবাধা সমালোচনা করে। এইরকম একটি সংস্থা কি তাদের সমালোচনা অ্যালাউ করে না? নিজেদের সমালোচনাকারীদের কি তারা শাস্তি দেয়? কোন পদ্ধতিতে শাস্তি দেয়? কিন্তু কয়েকজন ব্লগারের কথায় মনে হচ্ছিল আইরিন খান এখনি অ্যামনেস্টির পুলিশ পাঠিয়ে উক্ত ব্লগার ও ব্লগ কর্তৃপক্ষকে ধরে নিয়ে যাবেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যেন রাতারাতি অ্যামনেস্টি ইন্টারপোল হয়ে গেছে।
মুক্তিযুদ্ধের তথাকথিত পক্ষের শক্তির আস্ফালনে কেউ কেউ ভয়ও পাচ্ছিলেন। খুব ইচ্ছা করছিল তখন কিছু লিখি। কিন্তু অন্য একটি আলোচনায় ধৈর্য ব্যয় করায় ব্যস্ত ছিলাম বলে তা পারিনি। এখন একটু সময় হলো।
বিষয় হলো, জেনে বুঝে জুজুর ভয় দেখালেও হতো। কিন্তু না জেনে, না বুঝে এই কাজটি করে যেভাবে প্যানিক সৃষ্টি করা হলো তার দায় কে নেবে। অ্যামনেস্টির ফোন নাম্বার ও ইমেইল অ্যাড্রেস দেয়া হয়েছিল। অ্যামনেস্টি হয়তো কোনো ফোন বা মেইল পেয়ে থাকবে। তাদের উচিত ছিল বিষয়টি নিয়ে ব্লগ কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের মত প্রকাশ করা।
যারা সামহয়ারের ব্লগারদের হাইকোর্ট দেখাতে চেয়েছেন তারা শুধু হাইকোর্ট দেখাতে চেয়েই ক্ষান্ত হননি। ওই ব্লগারের ব্যক্তিগত ঠিকানা, ইমেইল অ্যাড্রেস, তার অবস্থান, তার কাজ এমনকি তার সুপারভাইজারের নাম পর্যন্ত প্রকাশ করে দিয়েছেন। তিনি যতোই অপরাধী হোন তার প্রাইভেসির ওপর এমন হামলা মেনে নেয়া যায় না। যুক্তি যদি ব্লগে মত প্রকাশ ও মত প্রতিষ্ঠার জন্য যথেষ্ট হাতিয়ার না হয় তবে সেই সব ব্লগারের উচিত লেখালেখি ছেড়ে দেয়া।
আইরিন খান বাংলাদেশে আসার পর সবচেয়ে বড় ও নিন্দনীয় যে ঘটনাটি ঘটেছে তা হলো কিছু ইসলামপন্থী দল বাংলাদেশ থেকে তার বহিষ্কার দাবি করেছে। একজন মানবাধিকার কর্মীর সঙ্গে আমাদের দ্বিমত থাকতে পারে। কিন্তু তিনি ধর্মবিদ্বেষী এই মিথ্যা অভিযোগ করে কেউ তার বহিষ্কার দাবি করতে পারেন না। বাংলাদেশে যখন বিভিন্ন দেশের আন্ডার সেক্রেটারি আর দক্ষিণ এশিয়া ডেস্কের নিম্নপদস্থ কর্মকর্তাদের বাড়বাড়ন্ত তখন বাংলাদেশেরই সন্তান, সফল মানবাধিকার কর্মীর উপস্থিতি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে তার সোচ্চার কণ্ঠ আমাদের জন্য অসহনীয় হতে পারে না।
ইসলাম পন্থী দলগুলোর অন্যায্য দাবিকে আমি সমর্থন করি না। এবং তাদের এই দাবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাই।
ব্লগে এখন পর্যন্ত ভার্চুয়াল মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো প্রতিবাদ দেখলাম না। আইরনি খানের সমর্থকদের এই হইলো অবস্থা। হায় ব্লগিং!
৩৩টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গল্প-একাকীত্বের অন্ধকার

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১০ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:০১





ব্রাজিলের পান্তানাল রেইন ফরেস্টে এর নির্জন জায়গায় পাশাপাশি বসে আছে ম্যারিনা ও মুহিব। পৃথিবীর অন্যতম এই বন রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকদের কাছে অসম্ভব শিহরন জাগানিয়া। অনেক অনেক মানুষের ভীরে ম্যারিনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে বসবাস করছি

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:৩৩

মুক্তিযুদ্ধের কোটা নিয়ে অভিযোগ তোলা উচিত নয়।
তাদের পরিবারকে শ্রদ্ধা জানাতে চাই।

৬০% নারী কোটা শতকরা ১০০ জনের ভিতরে ৬০ জনের বেশি নারী পাওয়া যাবে। দেশের পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। গত... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাদৃশ্য- বড়ই অদ্ভুত এক বৈশিষ্ট্য!

লিখেছেন আহলান, ১০ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৪৯




সাদৃশ্য- বড়ই অদ্ভুত একটি বৈশিষ্ট্য। আল্লাহর রাসুল ( সাঃ) বলেন কাল কেয়ামতে কোন ব্যাক্তির হাসর নাসর তাদের সাথেই হবে, যাদের সাথে তার সাদৃশ্য থাকবে। অর্থাৎ দুনিয়াতে যারা যাকে যেভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি কল্পকথা

লিখেছেন কালো যাদুকর, ১০ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬

আমি খুঁজে পাবো তোমায়
পুরোনো সব রাস্তায়
এ মন বাধাঁ - যেখানে, যেথায়।

সারাদিন ধরে ঘুরে-
ঐ খেলাঘরে,
ঐ মেলায়,
ঐ পলাশ শিমুল বনে,
ঐ নির্জন গলির কোণে,
ঐ ছোট্ট ড্রইং রুমে,
ঐ জীবন্ত ছবির ফ্রেমে,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

EU বাংলাদেশ, আফ্রিকা ও আরবদের সাহায্য করার চেষ্টা করে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১০ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৩



EU বাংলাদেশকে বিবিধভাবে সাহায্য করে আসছে স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু থেকে; বিশেষ করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে সচল করার জন্য সহযোগীতা করতে চায়। আমাদের দেশে ও আফ্রিকায় ভালো যা ঘটছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×