somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২০০৭ কড়চা

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৫:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আরেকটি বছর চলে যাচ্ছে জীবন থেকে। অনুভূতিটা ঠিক বুঝতে পারছি না, ভালো না খারাপ কীরকম লাগা উচিত। এই যে প্রতি বছর শুরুর পূর্বে আমরা প্রিয়জনদের শুভ কামনা করি, সেখানে আসলে কি চাই আমরা? সারা বছর শুধুই সুখ আর শান্তিতে কাটুক তার, সেটা? নাকি ভালো আর খারাপের মধ্যে ভালোর অংশ বেশি থাকুক, সেটা?

২০০৭-এর প্রথম দিনে আমি কল্পনাও করতে পারিনি কি অপেক্ষা করছে আমার জন্য সামনে। দিনটি শুরু হয়েছিল বেশ ভালোভাবেই। ঈদ-এর স্বাভাবিক আনন্দ-ফূর্তি আর কি। সামান্য মাইনের চাকরির দুঃখবোধ ওই একটি দিনে আমার মনে আসেনি বোনাস হিসেবে পাওয়া টাকাটা কুরবানির গরু কেনার জন্য লাগাতে পেরে। অল্প হলেও জীবনে প্রথমবারের মতো স্ব-উপার্জিত টাকা ঈদের সময় আব্বার হাতে তুলে দিতে পারার মধ্যে যে কি আনন্দ, সেটা লিখে বুঝানোর মতো হাত আমার নেই।

এরপর আস্তে আস্তে আমি দেশে চাকরির প্রতি বিতৃষ্ণ হতে লাগলাম আর বিদেশের কল্পিত স্বপ্নরাজ্য আমাকে প্রতি মুহুর্তে হাতছানি দিতে লাগল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তুলতে গিয়ে রেজিস্ট্রি আপিসের কেরানি থেকে বড়কর্তা পর্যন্ত যেভাবে সামলাতে হলো, তাতে এ জন্মে আর দেশে কিছু করার স্বপ্ন মরে গেলো খুব নির্মমভাবে। শেষ পর্যন্ত পাঁচ সপ্তাহ দেরিতে কাগজগুলো হাতে পেলাম। তারপরও দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষের মতো আশা নিয়ে কানাডাতে উচ্চশিক্ষার আবেদন করলাম দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রায় একমাস পর যখন দুটো থেকেই আশানুরূপ উত্তর পেলাম, আব্বার চোঁখের সেই অভিব্যক্তি কোনদিন ভোলার নয়। একমাত্র ছেলে বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে ফিরবে, এর চেয়ে বেশি খুশির কিছু তাঁর জীবনে আসবে বলে মনে হলোনা। আবারও অতীতের সব ব্যর্থতা ভুলে গেলাম একদিনের জন্য, বাবামায়ের মুখে একটু হাসি এনে দিতে পেরেছি বলে ধন্য মনে হলো নিজেকে। ছোটগল্পের মতো কাহিনী এখানেই শেষ হয়ে গেলে বোধকরি সবচেয়ে ভালো হত।

তারপর আরম্ভ হলো ভিসা প্রাপ্তি পর্ব। চব্বিশ ঘন্টা আব্বার শুধু একটাই চিন্তা কিভাবে সব কাগজপত্র তৈরি করা যায়। যাই হোক, তিন মাস আব্বা আর আমি মিলে ছুটাছুটির পর আমি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারলাম। পরের সপ্তাহে যখন ফলাফল জানার জন্য ঢাকা যাবো, তিনি সেই ভোরবেলা আমাকে বাসে তুলে দিতে আসলেন আর বার বার শুধু স্মরণ করিয়ে দিতে থাকলেন, যা-ই ঘটুক, মন খারাপ করবে না। জীবন এখানেই শেষ নয়। সুসংবাদটা জানানোর সময় তাঁর মুখটা কিরকম হয়েছিল, সেটা দেখার সাধ রয়ে গেল আমার।

নতুন পরিবেশে একটু মানিয়ে নেবো বলে ক্লাস শুরুর এক মাস আগেই যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম। যথারীতি আমাদের খাওয়ার টেবিলের একমাত্র আলোচ্যসূচী তখন আমি। ভালই লাগতো ভাবতে যে একসময় বাইরে নিয়ে গিয়ে আব্বার পুরো চেকআপ করাবো। এটা করবো, সেটা করবো, আরো কত কি। আমার মাস্টার্সের সমাবর্তনে আব্বা-আম্মা বসে দেখবেন আর হাসবেন। কিন্তু ... একটু বেশিই বোধহয় চেয়ে ফেলেছিলাম জীবন থেকে। আমার যাওয়ার ঠিক পনেরো দিন আগে ভোরবেলা ঘুম ভেঙ্গে এ কী দেখলাম। আমরা কিছু বুঝার আগেই আব্বা চলে গেলেন। পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ নিয়ে পড়েছি অনেক কিছুই, কিন্তু পুত্রের কাঁধে পিতার লাশের ওজন কিরকম, সেটা বুঝলাম ওইদিনই।

এরপর জীবনের আরও দু'সপ্তাহ কিভাবে গেলো, বুঝিনি। যখন বুঝলাম, তখন আমি আম্মার কাছ থেকেও অনেক দূরে, পৃথিবীর অন্য প্রান্তে। এখানে টাকা আছে, নিরাপত্তা আছে, সপ্তাহান্তে মেকি আনন্দ আছে, কিন্তু কি যেন নেই ... প্রত্যেকটি হাসির পেছনে যে হাহাকার, সেটা যে কোনকিছুতেই পূরণ হবার নয়।

তাই আমি বুঝি না, আসলে শুভ নববর্ষের মানেটা কি। তবুও নতুন বছর ভালো কাটুক সবার, এ কামনা রইল।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৬:১০
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×