somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুঘু সমাচার

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সে অনেক অনেক ঘন্টা আগের কথা। বঙ্গদেশে তখন দেখভাল-করিবার-সরকার ক্ষমতায় অধিস্ঠিত। তাহাদের হম্বিতম্বিতে দূর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদরা সকলেই জেল-হাজতের ভাত খাইতেছেন। এমনই একদিন বিজয় দিবসের প্রাক্কালে বিদ্যুৎউপদেষ্টামহোদয় মধ্যাহ্নভোজের পর বিশ্রাম লইতেছিলেন। সহসাই বলা নাই কওয়া নাই বিদ্যুৎ চলিয়া গেল। শীতকযন্ত্র বন্ধ হইয়া যাওয়ায় তাহার কক্ষে কিয়ৎক্ষণের মধ্যেই গুমোট পরিবেশ সৃষ্টি হইল। পাইক-পেয়াদা সরব হইল এবং মুহূর্তেই খবর হইল আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রই সমস্যার মূল। তদস্থানে কী এক সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় সবকটি ইউনিট বন্ধ হইয়া গিয়াছে এবং ফলশ্রুতিতে দেশের চালু আর সকল বিদ্যুৎকেন্দ্রে একযোগে উৎপাদন বন্ধ হইয়া গিয়াছে।

কিন্তু বঙ্গদেশ বলিয়া কথা। আশুগঞ্জের কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের দোষ স্বীকার করিবেন কেন? তাৎক্ষণিক নিজেদেরকে নির্দোষ দাবী করিয়া তাহারা জাতীয় গ্রীডের উপর দোষ চাপাইয়া ক্ষ্যান্ত হইতে চাহিলেন। এই দোলাচালে পড়িয়া উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ত্রুটির মূল খুঁজিতে পিডিবির হোমরাচোমরা এক প্রকৌশলীকে তাৎক্ষণিকভাবে আশুগঞ্জে পাঠাইয়া দিলেন। পূর্ববর্তী সরকার হইলে সাবোটাজ তত্ব বাহির হইয়া পড়িতো। কিন্তু এখন তো কোন রাজনীতি করিবার অধিকার নাই, সে অধিকার ফাইলচাপা দিয়া রাখা হইয়াছে। তাহা হইলে সাবোটাজ তত্ত্ব কাজ করিবে কীভাবে ইহাই দেশবাসীর মনে প্রশ্ন হইয়া দেখা দিল।

অপরদিকে বিদ্যুতের অভাবে রাজধানী ঢাকার সকল ট্রাফিক সিগন্যাল একযোগে বিকল হইয়া পড়িল ও ট্রাফিক পুলিশদের যানবাহন নিয়ন্ত্রণে অতিশয় বেগ পোহাইতে হইল। অবস্থা সামলাইতে ব্যারাক হইতে অতিরিক্ত পুলিশ আনিয়া ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করিতে হইল। বিদ্যুতের এহেন বিপর্যয় হইতে স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁহার কার্যালয় অবদি রেহাই পাইল না। তাই দেখিয়া বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা অতিশয় ভীত ও পীড়িত হইয়া তদন্ত কমিটি গঠন করিল ও বিদ্যুৎ-রহস্য উদঘাটনে আদজল খাইয়া লাগিয়া পড়িল।

ঘুঘুই দায়ী: আহতাবস্থায় আটক

উপায়ান্তর না দেখিয়া সাবোটাজ তত্ত্বই কাজে লাগানো হইল। তদন্ত শুরু হইবার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তদন্ত কমিটি বিপর্যয়ের জন্য একটি ঘুঘুকে দায়ি করিলেন। শক্ত একটা যুক্তিও বাহির করা হইল। ঐদিন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সুইচ ইয়ার্ডে ভাসভারের কাছে ঘুঘুটিকে আহত অবস্থায় পাওয়া গিয়াছিল। ঘুঘুই যদি দায়ী না হইবে তো পিছনের ডানা ও লেজের সবগুলো পাখনা পুড়িল কী করিয়া? সন্দেহভাজন ঘুঘুটিকে আহতাবস্থায় গ্রেফতার করিয়া আপিসের একটি কাগজের ঝুড়িতে আটক করিয়া রাখা হইল। যতদূর জানা গেল ঘুঘুটি সুস্থ রহিয়াছে। তবে রিমান্ডে নেয়া হইতে পারে এই ভাবনায় উহা নির্বাক হইয়া মুষরে পড়িল।

এদিকে রাজধানী হইতে ছুটিয়া আসা তদন্ত কমিটির প্রধান ওকে জোতদার মহোদয়ও ঘুঘুটিকে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত করিলেন। প্রমাণ হিসেবে ঘুঘুটির ছবি তুলিয়া নিয়া ঐদিন বৈকালে ঢাকায় ফিরিয়া গেলেন। এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি মত দিয়াছেন যে ঘুঘুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সুইচ ইয়ার্ডের ১৩২ কেভি ভাসভারের জাম্পার ও হরনগেটের মধ্যদিয়ে যাইবার পথে ফ্লাশিং সৃষ্টি করে। এ সময় ঘুঘুটি ইচ্ছাকৃতভাবে সাবোটাজের উদ্দেশ্যে তার-জাতীয় কোন জিনিস পায়ে ঝুলাইয়া নিয়া যাইতেছিল বলিয়া মত প্রকাশ করা হইল। অকুস্থলে তার-জাতীয় কোন জিনিস না পাওয়া গেলেও আসামী ধরা পড়িয়াছে এবং প্যাঁদানি দিলেই সব বাহির হইয়া পড়িবে এই খুশিতে কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়া আসিল।

(পরের দিনের ঘটনা)
এদিকে ঘুঘুটি নাওয়া খাওয়া প্রায় ছাড়িয়া দিল। তাই দেখিয়া কর্তৃপক্ষ একমাত্র আসামীকে বাঁচিয়া রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করিতে লাগিল। ইত্তবসরে একজন পক্ষীবিশারদের পরামর্শে ঘুঘুটিকে খাবার হিসাবে খুদ, ধূলোমাটি, খোসাশুদ্ধ মসুরের ডাল ও সরিষা দানা দেওয়া হইল। কিন্তু ঘুঘুটি পানাহার বন্ধ করিয়া চুপচাপ বসিয়া রহিল।

(তার পরের দিন)
কিন্তু শেষ রক্ষা আর হইলনা। কী এক কারণে তদন্ত কমিটি তাহাদের মত পাল্টাইলেন। তাহারা বুঝিতে পারিলেন যে ঘুঘুকে দায়ি করা ধোপে নাও টিকিতে পারে; বরং বড় কোন পাখি যেমন বাজ হইলে হয়তো এ যাত্রা পাড় পাওয়া যাইতো। কিন্তু বাজ পাখি তাহারা কোথায় পাইবেন? তাই তাহারা নন্দঘোষে সন্ধান করিতে মনোনিবেশ করিলেন। অবশেষে একজন নন্দঘোষের সন্ধান পাওয়া গেল। আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপককে (সংরক্ষণ) দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হইল। তাহার বিরুদ্ধে সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারেরও অভিযোগ উঠিল।

অতপর বেচারা ঘুঘু মুক্তি পাইল এবং সুখে শান্তিতে পরিবার লইয়া দিন কাটাইতে লাগিল।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ১১:৩৭
১৩টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×