শোয়াইব জিবরান
একটা সময় গেছে আমাদের নব্বইয়ের মাঝামাঝি। প্রেস থেকে প্রেসে ঘুরেছি। কমদামে একটুখানি ভাল ছাপা পাওয়ার অাশায়। তখন শব্দপাঠ বের করি। সঙ্গে থাকেন কবি মাসুদুল হক, মুজিব ইরম, আতিক রহমান আর প্রয়াত আজিজুন মাগফুরা। ঘুরতে ঘুরতে একসময় ফৃ স্কুল স্ট্রিটে একটা প্রেস পেয়েও যাই। না শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে পত্রিকা ছাপানো হয়নি, সবকিছু ছাপিয়ে একজন মানুষকে পেয়ে যাই তিনি কবি আহমেদ মুজিব। তিনি প্রেসেই সময় কাটান আর এ প্রেস বিচিত্র মাত্রা নিয়ে তাঁর কবিতায়ও ঢুকে যায়। আমরা দিনের পর দিন তার প্রেস নিয়ে প্রেসময় সময় কাটাই। দুপুরে খিদে লাগলে পাশের ঝুপরিতে এক বুড়ি আমাদের ফেনমাখানো ভাত দেন, গরম মোরগের ঝোল দিয়ে, সস্তায়। পাশে মুরগি তার ছানাগুলো নিয়ে আমাদের খাবারের পাশে ঘুরঘুর করতে থাকে। আমরা মাটিতে বসে খাই আর আহমেদ মুজিব মুরগীর ছানাগুলোকে ভাত ছিটিয়ে দেন। আমরা মৃত মোরগকে নিয়ে ঠাট্টা করি, মুজিব আনমনে থাকেন।
তারপর গেছে বহুকাল। আমরা ছিটকে পড়েছি মুড়ি মুড়কির মতো পৃথিবীর নানা প্রান্তে নানা উছিলায়। কবিতা ছাড়া মুজিবকে আমার আর মনে নেই।
কাল সন্ধ্যায় কবিবন্ধু সৈকত হাবিবেব প্রকৃতিতে বসে আছি। আলুথালু এক কবি এলেন। তিনি আামাদের আারেক প্রিয় কবি সরকার মাসুদ। তাঁর নতুন কাব্যগ্রন্থ সৈকত এই বইমেলায় করছে। মাসুদ তাঁর বইয়ের প্রুফ দেখারছলে আামাকে কবিতা পড়ে শোনাচ্ছেন। আমি ফাঁকে বলি, আপনারা আাশির দশকে নিভৃতিচর্চা নামে একটি দল গড়ে তুলেছিলেন, খায়রুল হাবিব নামে একজন ছিলেন। ভাল কবিতা লিখতেন। তিনি কই। প্রসঙ্গে কাজল শাহনেওয়াজ, বিষ্ণু, শাদাব আর অাহমেদ মুজিব এর কথা আসে। সরকার মাসুদ বিষণ্ণসুরে বলেন, মুজিব তো নেই। মারা গেছে। কামুর নায়কের মতো বলেন, এই তো হবে গত বিষ্যুৎ কী মঙ্গলবার, ইতালিতে। নিভৃতি নেমে আসে আমাদের মাঝে। কাটাঁবনে তখন সন্ধ্যার বিষণ্ণ ধুলো, চাকার পেছনে উড়তে থাকে পন্থে পন্থে।