আমই পিপড়া বলছি-২
আমই পিপড়া বলছি-১
এখন মরার কথা যখন এসেই গেলো বলে ফেলি আমরা কিভাবে মারা যাই। আর ডাক্তার বদ্যি ছাড়া আমাদের স্বজন কুজনেরা কিভাবে সেটা বুঝে ফেলে। বেচে থাকার সময়ে প্রতি মুহূর্তে আমরা এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ বের করি আমাদের শরীর থেকে। ধরা যাক তার নাম লাইফ ক্যামিক্যাল। এই ক্যামিক্যাল ছুড়লে হয় কি, আমাদের সিগনালিং সিস্টেম স্ট্রং থাকে। আমরা এক জন আরেক জনের কথা বার্তা অবস্থান সব অই ক্যামিক্যাল এর গুনে খুঁজে খুঁজে বের করি। যখন মরে যাই বেশ গেলো ফুরাইলো বলে ক্যামিক্যাল বার হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তখন আশেপাশে যারা আছে তারা শুকে দেখে। না নাই, এর গেছে ফুরাইছে, টানাটানি করে মৃত পিপড়া বাইরে বের করে দেয় কারণ হলো যেন রোগ না ছড়ায় আর আমরা নিজেদের মাংস নিজেরা খাই না। যদিও রানী মারা গেলে তারে ছিরে টুকরা টকরা করে খাইয়ে দেয়া হয়। রানীর মাংস তো! আমরা সকলেই হয়তো খেয়ে বড়ো হয়েছি, নিজের মায়ের মাংস। এইবার এক চক্কর দেয়া যাক ইতিহাসে। মানুষের মাঝে অনেক ধর্ম, তার মাঝে বিশাল জনগোষ্ঠীর ধর্মের নাম ইসলাম। সেই ধর্মের বই কোরআন(আশা করি আমি পিপড়া কোরআন এর নাম বলে রাগ করবেন না) ঘটনা হলো সেই কোরআন এ আমাদের নিয়া আছে এক আয়াত। আয়াত নাম্বার ১৮, একেবারে ঠিকঠাক সেই আয়াত তুলে দেই। সূরা নমল এর ১৮ নং আয়াত“যখন তারা পিপীলিকা অধ্যুষিত উপত্যকায় পৌঁছল, তখন এক পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকার দল, তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে”।
ঘটনা কি সুলায়মান যখন তার বাহিনী নিয়া আমাদের অতীত গৌরব ময় এলাকায় রওয়ানা হলেন, তখন আমাদের অই পূর্ব নারীর কেউ সেটা লক্ষ্য করলো আর সবাইরে হুশিয়ার করার জন্য বললো এই কথা। কিন্তু সেই সামান্য কথা তুলে দেয়া হলো কোরআন এ। কারণ কি? কারণ আছে। কারণ নিয়ে ভাবতে হবে তোমাদের নিজেদের।
এইবার বলি আরেক গোপন কথা, এই কথা শুনে হয়তো তোমাদের অনেকে দা নিয়ে আমারে মারতে আসবে, কিন্তু কথা হলো হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) পরিষ্কার ভাষায় পিপড়া, মৌমাছি, কাঠঠোকরা পাখী আর পায়রা মারতে না করে গেছেন। অবশ্য তিনি মানুষ মারতেও না করে গেছেন সেখানে দুনিয়ার মানুষ এক জন আরেক জনরে মারে কারণে অকারণে আর আমরা তো সামান্য পিপড়া।
পাখীর কথা যখন এলো, তখন পাখী নিয়ে এক গল্প বলি। এই গল্প আমি শুনেছিলাম আমার দাদী পিপড়ার কাছে। ঘটনা হলো একদিন আমাদের মতো এক পিপড়া পানিতে পড়ে গেছে। সে আবার ফায়ার এন্ট না! সাতার জানে না, পানিতে পড়ে বাচাও বাচাও বলে চিৎকার করছে পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখছে তার সঙ্গীরা কিন্তু কি করা, কেউ তো সাতার জানে না, তাকে কে বাচাতে যাবে? তখন সেই পানির উপরে এক গাছে বসা ছিলো এক পাখী। সে নিচের এই ঘটনা মন দিয়ে দেখছিলো, হটাত তার কি মনে হলো, সে একটা পাতা ছিরে নিচে ফেলে দিলো। পাতা পেয়ে সেই পিপড়া পাতাতে উঠে জান বাচালো। উপরের দিকে মুখ করে বললো অগো পাখী একদিন আমিও তোমার উপকার করবো। পাখী বললো যা যা বিরক্ত করিস না, তুই করবি উপকার! কিন্তু সত্যি উপকারের একদিন এসেই গেলো, এক হিংস্র মানুষ হাতে ইয়া বড়ো বন্ধূক নিয়ে এসেছে বনে পাখী মারতে। তো বন্ধূক তাক করে যেই না পাখীর দিকে ধরেছে সেই পিপড়া তার পায়ে দিলো এক কামড়। কামড় বলেতো, হুল ফুটিয়ে ফরমিক এসিড ঢেলে দেয়া। সেই হিংস্র মানুষের টীপ গেলো ফসকে। সে মাগো বাবাগো করে পা কচলাতে লাগলো। পাখী গেলো প্রাণে বেচে। সে বুঝলো সামান্য দয়া করে প্রাণ বাঁচানোতে আজ তার প্রাণ রক্ষা পেলো। বিরাট শিক্ষা অতি ক্ষুদ্রের উপকার করো কোন প্রতিদান না ভেবে, একদিন কেউ না কেউ তোমার উপকার করে দিয়ে যাবে হয়তো জীবন বাঁচিয়ে।
এইবার একটা জোকস বলা যায়। যেহেতু আমি কিশোরী হাসি তামশা করাই তো আমার কাজ নাকি বলো? জোকস টাতে অবশ্য ভুল আছে, তবে ভুল বের করা তোমাদের কাজ। একদিন বনের মাঝখান দিয়ে এক পিপড়া খুব হেসে হেসে যাচ্ছে। তাই দেখে শেয়াল বললো কিরে এতো হাসছিস কেনো? পিপড়া উত্তর দিলো ঘটনা জানো না কুমারী হাতি রাজকুমারী এক বাচ্চা দিয়ে বসে আছে। বলা নেই কওয়া নেই, বিয়ে নেই, নিমন্ত্রণ নেই! অতি বিচ্ছিরি কাজ কারবার, কুলটা রাজকন্যা হাতি দিয়ে ফেললো এক বাচ্চা। শেয়াল বললো তাতে তর হাসির কিরে মুখপোড়া? তখন পিপড়া উত্তর দিলো হাসি কি সাধে, হাতির রাজা ঘোষণা করে দিয়েছে, এ নিশ্চয়ই কোন পিপড়ার কান্ড গত বছর নাকি হাতিশালের আশেপাশে সে প্রচুর পিপড়াকে ঘুরতে দেখেছে। ফাঁক পেয়ে কোন পিপড়াই নাকি এই কুকর্ম করে ফেলেছে। বলো এখন না হেসে উপায় আছে!
আর না হয় জোকস নাই বলি। একটা ছড়া বলা যায় কি বলো? কিন্তু কি বিড়ম্বনা দেখো সেই কবিতাতেও ভুল। আর তোমাদের সেই কবি নবকৄষ্ণ ভট্টাচার্য কে দুষ দিচ্ছি না। বেচারা কবি মানুষ পিপড়া নিয়ে কতটুকুই বা জানবে। (কাজের লোক) নামের এই কবিতায় এসেছে আমাদের কথা ভুল হলো পিপীলিকার বেটারা তো কোন জীবনে এক ফুটা কাজ করে নি, তবে তারে ভাই ডাকা হবে কেনো এ তোমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কারসাজী! পিপীলিকা, পিপীলিকা /দলবল ছাড়ি একা /কোথা যাও, যাও ভাই বলি।/ শীতের সঞ্চয় চাই /খাদ্য খুঁজিতেছি তাই /ছয় পায়ে পিল পিল চলি।আমাদের ভাই বলে ডাকলে বয়েই গেছে উত্তর দিতে। কবিরও যা বাহার!
এখন কথা হলো তোমাদের মানুষের মাঝে প্রচুর আছে যাদের টাইটেল হচ্ছে পিপড়া। ইন্ডিয়া নামক দেশটাতে তো প্রচুর মানুষের জাতের নাম পিপড়া। অমুক পিপড়া, তমুক পিপড়া। আমাদের আচার আচরণের সাথে সামান্য মিলে গেলো বলে তারা আমাদের নামটা চুরি করে তাদের নামের পিছনে লাগিয়ে দিয়েছে।
Lieutenant তোমাদের মানুষের আর্মি বাহিনীর বেশ উচ্চ পদের নাম। বানান দেখো, মিথ্যা তুমি দশ পিপড়া!
তোমাদের মানুষের রাগ যে তোমরা কত ভাবে আমাদের উপর ঝেড়েছ, তার ইয়ত্তা নেই। যখন ইন্ডিয়া বাংলা ভাগ হয়ে গেলো। সেই সময়ে হয়তো এই কথা তুলেছিলো কোন ছাগল! কালো পিপড়া হলো মুসলমান, আর লাল পিপড়া হলো হিন্দু। তাই ছোট বেলায় অনেক কু মনের মানুষ আমাদের এই দুই রঙের পিপড়া নির্দ্বিধায় মেরে ফেলে। তোমাদের মানুষের এসব আজগুবি আক্কেল দেখে মাঝে মাঝে আমাদের ভয় করে অথচ হিসেব কষে দেখো তোমরা দুনিয়াতে আসার বেশ আগেই আমরা এসে বসে আছি।
কথা হচ্ছে শুধু আমাদের সাথেই না তোমরা গাছ পালাকেও ধর্মের বানিয়ে ফেলো। বাঁচোয়া বট গাছ টা দুই ধর্মেই যায় না হলে দুনিয়া থেকে বট গাছ নাই করে দিতে। তুলসী গাছ হিন্দুর, মেহেদী গাছ মুসলমানের, ক্রিসমাস ট্রি ক্রিশ্চান এঁর। অরে বাবা তোমরা পারো বটে!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:০০