somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধ্রুব

১০ ই ডিসেম্বর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলেটির জন্ম জানুয়ারির এই কনকনে শীতে। মকর রাশির জাতক হওয়ায় জন্ম থেকেই খুব জেদি। মায়ের অনেক কষ্টের সন্তান সে, বাচার কথাই ছিলনা। তবুও মরতে মরতে বেচে গেল। বাবা অন্ন সংস্থানের জন্য বিদেশে থাকেন। সবার খুব আদরের, বাবা-মার চোখের মণি, আকাশের ধ্রুবতারা, তাদের একমাত্র সন্তান। তাই মা নাম দিল ছেলেটির ধ্রুব।

দিন যায়, কালের পরিক্রমায় বড় হয়ে ওঠে ধ্রুব। খুব চঞ্চল, পুরো বাড়ি সে মাতিয়ে রাখত। কিন্তূ কোন বাড়ি? বাবা বিদেশে থাকায় আত্মীয় স্বজনের বাড়ি থাকতে হয় ধ্রুব ও তার মাকে। ধ্রুবর বাবার কাছ থেকে ঠিক-ই খরচাপাতি নেন ধ্রুবর চাচা, কিন্তূ মাকে বাঁকা বাঁকা কথা শোনাতেও ছাড়েননা চাচী। অতঃপর ধ্রুবর গন্তব্য মামাবাড়ি। ছোটবেলার উন্মেষ হয় তার সেখানেই, ঢাকায় চাচার বাসা ছিল আবদ্ধ কারাগারের মত, কিন্তূ মামা বাড়ির খোলা-মুক্ত পরিবেশ করেদিল তাকে অসীম হূদয়বান ও আত্মীয় স্বজন-ভাইবোনদের স্নেহ ও অপার ভালবাসা করেদিল তাকে কিছুটা আবেগপ্রবন।

দূর আকাশে শব্দ করে যখন উড়ে যায় উড়োজাহাজ, ভাবে তার বাবা কবে আসবে, বুকে জড়িয়ে ধরবে তাকে! সেতো কখনো তার বাবাকে দেখেনি, সেকি খুব রাগী? যে তাকে দেখে সেই বলে, ‘আরে দেখ-ধ্রুব একদম দেখতে ওর বাবার মতন হয়েছে, তাই না?’ ইসস যদি পাইলট হতে পারতাম! তাহলে উড়ে চলে যেতাম বাবার কাছে। ছোটবেলায় বোধকরি সবারই পাইলট হবার ইচ্ছে জাগে মনে।

একদিন ধ্রুবর স্বপ্ন পুরণ হয়, বাবা দেশে ফেরেন, কিন্তূ আসার পথেই সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্নক আহত হন তিনি। ধ্রুবদের এতদিনের গোছানো স্বপ্ন ভেংগে চুরমার হয়ে যায়। অর্জিত সমস্ত ধন গেল বাবার চিকিৎসার পেছনে। ভেংগে পড়া সংসারের দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নিলেন ধ্রুবর মা। সেলাই করে সংসার চালান, ধ্রুবর বাবা ঘরে বসা; ডাক্তার ভারী কাজ করতে নিষেধ করেছে। প্রাচুর্য হয়ত নেই কিন্তূ সুখ শান্তির অভাব নেই সংসারে। ধ্রুবর মা শক্ত হাতে হাল না ধরলে হয়ত বালির বাধেঁর মত ভেংগে যেত এই সুখের সংসার। এমনও দিন গিয়েছে, বাজার না নিয়ে এসে ছেলের জন্য বই-খাতা নিয়ে আসত ধ্রুবর বাবা। খালাদের কাছ থেকে উপহার পাওয়া শাড়ি বিক্রি করে প্রাইভেট টিচারের পাওনা পরিশোধ করত ধ্রুবর মা। খুব কষ্টের ও আদরের ধন তাদের এই সন্তান।

বড় হয় ধ্রুব, প্রেম সবার জীবনেই হাতছানি দিয়ে ডাকে। অনেক চোখা-চোখি, ভাললাগা-ভালোবাসার পর ডি.এম.সি-র সহপাঠীকেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সে। মা কে গিয়ে বলে, কিন্তূ মা রাজি নয় ধ্রুবর এই প্রস্তাবে। এক অজানা আশঙ্কায় বিষিয়ে যায় মায়ের মন। সে ভাবতেই পারেনি তার ছেলে এতটা বড় হয়ে গিয়েছে। তার অনেক দিনের স্বপ্ন নিজে পাত্রী পছন্দ করে ছেলের বিয়ে দেবে, এখন একী কথা বলছে ধ্রুব? একুশটি বছর ধরে কি অবিরাম সংগ্রামের মধ্যে থেকে নিজের হাতে তিলে তিলে গড়ে ওঠা এই সংসারে প্রবেশ করবে এক অজানা অচেনা মেয়ে! সেই মেয়ে কিনা খর্ব করবে তার অধিকার! ধ্রুবর বড় খালার সংসারে দুই ছেলে নিজেদের পছন্দ মত বিয়ে করল, এখন সকালের নাস্তা সহ সব কিছু রেধেঁ খাওয়াতে হয় সেই নবাবজাদীদের। ধ্রুবর খালা যেন বাড়ির অচ্ছ্যুত একজন মানুষ। আমার তো ধ্রুব ছাড়া আর কেউ নেই, আমার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা হবে নাতো? তাহলে কি আমি একজন ব্যার্থ মা, যে নিজের সন্তানকে নিজের মত করে গড়ে তুলতে পারিনি? ধ্রুব যখন খুব ছোট, তখন ভালো স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি। অসহায়ত্বের সুযোগে পাড়ার ভাবিরা এসে বলত, ধ্রুবরতো ব্রেনতো ভালনা, তাই ভাল কোথাও চান্স পায়নি। সেই থেকে জিদ চাপে তার, স্বামীর অসুস্থতার কথা ভেবেই বোধয় ছেলেকে ডাক্তার বানান তিনি। এখন সেই পাড়ার ভাবিরাই ধ্রুবর প্রসংশায় পঞ্চমুখ। গর্বে বুক ভরে যায় ধ্রুবর মায়ের, ভেবেহিলেন ছেলেকে নিজের মনের মত করে গড়ে তুলতে পেড়েছেন। কিন্তূ হায়! ছেলের জিদের কাছে মা আজ অসহায়।

অনেক বসন্ত পর, ধ্রুব এখন শহরের অন্যতম নাম করা সেরা ডাক্তার। তার ছোট্ট মিষ্টি ছেলে অনন্ত একদিন তার চেম্বারে কাজের সময় আসে, ধ্রুব বিরক্ত হয়ে আসার কারন জিজ্ঞাস করে। ছেলেটি বাবার কাছে তিনশত টাকা চায়, ধ্রুব ব্যস্ত হাতে ছেলেকে টাকা দিয়ে জানতে চায়, টাকা দিয়ে সে কি করবে? অনন্ত বলে, ‘বাবা আমি টিফিনের টাকা জমিয়ে ২০০ টাকা জমিয়েছি আর তোমার কাছ থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে এই পাঁচশ’ টাকা হল বাবা। তোমার একজন রোগীর ভিজিটের টাকার সমান। মনে আছে বাবা, আমরা কতদিন একসাথে থাকিনা, একসাথে ভাত খাইনা! এই নাও পাঁচশ’ টাকা বাবা, তুমি শুধু আমাকে আধঘন্টা সময় দাও, আজ আমি তোমার সাথে ভাত খাব’। ধ্রুবর মুখ থেকে কোন কথা বের হয়না, দীর্ঘ আটত্রিশটি বছর ধরে যে সত্য সে অস্বীকার করে আসছে, আজ তার আট বছরের এই শিশু বাচ্চা চোখে আঙ্গুল দিয়ে তা দেখিয়ে দিল। আজ তার খুব মায়ের কথা মনে পড়ল, ছেলের প্রতি মানসিক বিতৃষ্ণা নিয়ে তিনি মারা গিয়েছেন। মনে হল যেন চিৎকার দিয়ে ডুকরে ডুকরে সে কাঁদে। কিন্তূ তার অক্ষিকোটর জল বিহীন। কাঁদবার মত আবেগই তার এতদিনে মরে গেছে।।

------------------------------------------------------
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×