somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যীশু আর সক্রেটিস : শেষ পর্ব

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ৭:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(পূর্ব প্রকাশের পর)

: সত্যিই যদি তুমি ঈশ্বরকে জানতে চাও, তার সৃষ্টিকে জানতে চাও, আমাদের এই জীবনের উদ্দেশ্য জানতে চাও, তাহলে এর সোজা একটা উপায় আমার জানা আছে। তোমাকে যা করতে হবে তা হল ঈশ্বরকে তোমার হৃদয়ে আসার আহবান করতে হবে। তোমার যদি সত্যিই ঈশ্বরকে জানার ইচ্ছা থাকে তাহলে তোমার মধ্যে এক পবিত্র আত্না প্রবেশ করবে, তুমি ঈশ্বরের সাথে একীভূত হবে। সেই সময়ই তুমি সত্যিকারের জ্ঞান লাভ করবে, শান্তি পাবে। তারপর তোমার মৃত্যুর পর চিরদিনের জন্য সুখ আর আনন্দ লাভের জন্য তোমাকে স্বর্গে নিয়ে যাওয়া হবে।
: বুঝতে পারছি, ঈশ্বরের স্বরূপ জানতে আমাকে আরো বহু পথ পাড়ি দিতে হবে। বলুন এই জ্ঞানলাভের জন্য আমাকে কি করতে হবে? কি বললে আমি এই বিদ্যা লাভ করতে পারব? কিভাবে আমি তাকে খুঁজে পাব?
: শুধু বল, "হে ঈশ্বর তুমি আমার হৃদয়ে প্রবেশ কর, এই সত্য বুঝতে পারার মতো জ্ঞান আমাকে দাও।"
: এই কথাগুলোই বারবার বললেই আমি জীবনের উদ্দেশ্য জানতে পারার মতো জ্ঞান লাভ করতে পারব?
: হ্যাঁ, তিনিই তো বলেছেন, যদি তুমি খোঁজ কর তবেই তুমি পাবে; যদি প্রশ্ন কর তবেই উত্তর পাবে; আর কড়া নাড়ার পরই দরজা খুলবে।
: হে ঈশ্বর তুমি আমার হৃদয়ে প্রবেশ কর, এই সত্য বুঝতে পারার মতো জ্ঞান আমাকে দাও।
: হ্যাঁ, হয়েছে। এবার তোমাকে অনন্ত জীবন দান করার জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাও।
: কিন্তু কিছুই তো হল না। জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আগে যা জানতাম এখনো তো তার চেয়ে বেশি কিছু জানতে পারলাম না।
: তাহলে নিশ্চয়ই তুমি ঠিক ছিলে না। তুমি চাওনি সত্যিসত্যিই ঈশ্বর তোমার হৃদয়ে প্রবেশ করে তোমাকে সেই সত্যটা জানাক। ঈশ্বর যে তোমার অন্তরে প্রবেশ করতে পারেন তাই তুমি বিশ্বাস করতে পারছ না।
: সত্যি করে বলছি আমি সেই সত্য জানতে চাই। আমার পুরোটা জীবন আমি আমার দর্শনবিদ্যার কাজে উৎসর্গ করেছি। জীবনের চেয়েও আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে বের করা। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না যেদিন আমি প্রথম আমি সূর্য দেখেছি সেদিন থেকেই আমি এর উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছি। মৃত্যুর পূর্বমূহূর্ত পর্যন্ত আমি এর উত্তর খুঁজতে থাকব। আমার মনে হয় ঈশ্বর আমার ডাক শুনতে পাননি, আমি কি আরেকটু জোরে ডাকব?
: তুমি এর উত্তর খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হয়েছ কারন ঈশ্বরের প্রতি তোমার বিশ্বাস নেই। কোন ব্যক্তি যদি কোন কিছুতে প্রকৃত অর্থেই বিশ্বাস করে তবে তার সামনে পাহাড়সমান বাধাও আসলেও সে অনায়াসে তা দূর করতে পারে।
: না, এ অসম্ভব। আচ্ছা, আপনার তো অনেক অনুসারী। তাদের আত্নীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের কেউ না কেউ কখনো না কখনো নিশ্চয়ই অসুস্থ ছিল? অবশ্যই ছিল। তখন সে নিশ্চয়ই চেয়েছে তার ঐ আত্নীয়টি বা বন্ধুটি যেন আবার আগের মতোই সুস্থ হয়ে ওঠে। তার ঘনিষ্ট বন্ধুটি মারা যাক তা নিশ্চয়ই সে চায়নি। এর মানে বিগত কয়েকশ বছরেও কোন খ্রীস্টান কখনোই কিন্তু ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেনি। তারা জানত ঈশ্বর মিথ্যা।
: ঈশ্বরই দেন আবার তিনিই তা ফিরিয়ে নেন। ঈশ্বরকে ডাকলেই পুণ্য হবে।
: এখন আপনাকে একটা গল্প বলি শুনুন। এই গল্পটাই প্রমাণ করবে কখনোই কোন খ্রীস্টান সত্যিকার অর্থে ঈশ্বরবিশ্বাসী ছিল না। এটিই প্রমাণ করবে যে মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করে তাকে জীবনের উদ্দেশ্য জানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঈশ্বর আসলে ভাওতাবাজি করেছেন। তবে তার আগে আমাকে বলুন নরকই যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা সে সম্পর্কে আপনি একমত কিনা?
: হ্যাঁ, অবশ্যই।
: এবং আপনি বলেছেন যে প্রত্যেক মানুষই পাপী আর তারা ঈশ্বরের কৃপা হতে বঞ্চিত?
: হ্যাঁ, বলেছি।
: ঈশ্বরবিশ্বাসী প্রত্যেক ব্যক্তিই কিন্তু বিশ্বাস করে যে যদি সে পাপ করে তবে সে নরকে যাবে। এখন গল্পটা বলি। প্রত্যেক খ্রীস্টানই হল পাহাড়ের চূড়ায় দাড়িয়ে থাকা একজন ব্যক্তি। সে জানে যদি সে পাপ করে তবে সে মৃত্যু আর আজীবনের অত্যাচারের মুখে পড়বে। আপনি বলেছেন নরক হল পৃথিবীতে যত দুঃখ-দুর্দশা আছে তার চেয়েও খারাপ জায়গা। তাহলে তো কোন ঈশ্বরবিশ্বাসী কোন ব্যক্তিই পাপ করত না, আমি বলতে চাচ্ছি শাস্তি পাবে জেনেও পাহাড়ের চূড়া থেকে লাফ দিত না অর্থাৎ পাপের পথে পা বাড়াতো না। আপনি বলেছেন প্রত্যেক ব্যক্তিই পাপী, এমনকি যারা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে তারাও পাপী। এর মানে হচ্ছে সৃষ্টির শুরু থেকেই কখনোই কোন খ্রীস্টান সত্যিই বিশ্বাস করেনি যে তারা নরকে যাবে। কারন যদি সে সত্যিই বিশ্বাস করত তাহলে সে পাপই করত না, নীচে নরকে তার জন্য আজীবন শাস্তি অপেক্ষা করছে জেনেও সে পাহাড় থেকে লাফ দিত না। ঠিক এমনিভাবেই এই কয়েকশ বছরেও তারা কখনোই আপনাকে বিশ্বাস করেনি। এর মানে দাড়াল যে ঈশ্বর কখনোই তাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি, ঠিক যেমনি একটু আগে ঈশ্বর আমার অন্তরেও প্রবেশ করেনি। তাই ঈশ্বরকে আমাদের বিশ্বাস করতেই হবে এমনটি আশা করার কোন অধিকার তার নেই। একইভাবে তার কোন অধিকার নেই তাদেরকে শাস্তি দেবার, তাদেরকে নরকে পাঠাবার। আপনার ঈশ্বর ভুল। আপনার ঈশ্বর আসলে কোন ঈশ্বর নয়।
: তোমার চারপাশের এই পৃথিবীর দিকে তাকাও। ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য এটাই কি যথেষ্ট নয়? এই অপরূপ প্রকৃতির দিকে তাকাও, এই প্রকৃতিই তোমাকে শক্তি দিয়েছে, স্বাস্থ্য দিয়েছে, আরামের জন্য সূর্যকিরণ দিয়েছে, খাবারের চাহিদা পূরনের জন্য গাছপালা আর শস্যক্ষেত দিয়েছে। ঈশ্বর তোমার জন্য এতকিছু করল তার জন্য কি তুমি তাকে ধন্যবাদ দেবে না।
: আমি জানি প্রকৃতি দয়ালু, তাহলে আমার ঘরের জানালা ভাঙ্গল যে শিলাখন্ড, সেটা কার?
: এর কারণ প্রকৃতিতে ভালর পাশাপাশি খারাপও আছে। এর জন্য ঈশ্বরকেই তোমার ধন্যবাদ দিতে হবে। ঈশ্বর বলে অবশ্যই কেউ আছেন, তিনি যদি সৃষ্টি না করে থাকেন তবে এই পৃথিবী আসল কোথা থেকে?
: বিন্তু আপনার ঈশ্বরই যে এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তার প্রমাণ কোথায়? এই পৃথিবীতে হাজার হাজার ধর্ম আছে, সেসব ধর্মের মানুষরাও দাবী করেন যে তাদের দেবতারাই নাকি এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। এর উত্তর আমার জানা নেই, কিন্তু তাই বলে ভাববেন না পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই আপনার সব কথা আমি মেনে নেব। আমিও তো আপনার মতো দাবী করতে পারতাম যে জিউসই এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তাছাড়া আমি যদি মেনেও নেই যে আপনার ঈশ্বরই এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তাহলে এতো গেল মাত্র একটা দিক, ঈশ্বরের অন্য যে সব দিকের কথা আপনি বলেছেন সেগুলো কিন্তু যুক্তি দিয়ে সত্য বলে মেনে নেওয়ার উপায় নেই।
: দাড়াও, যেও না। নিজেকে রক্ষা কর, নইলে তোমাকে নরকে পঁচতে হবে। ঈশ্বরকে তোমার হৃদয়ে প্রবেশ করতে দাও। যতক্ষন পর্যন্ত না তুমি আমার কথা মেনে নেবে ততক্ষন পর্যন্ত আমি এখান থেকে যাব না।
: ঠিক আছে, আপনার কথাই মেনে নিলাম। ধরে নিন, এগুলো সবই একটা বুড়োমানুষের অলস চিন্তা। আপনার এত অনুসারী, হয়তো আপনিই ঠিক। আর কে আমি? বোকাসোকা এক বুড়ো। এত লোকের মতামত উপেক্ষা করে সবাইকে আমার যুক্তি মানতে বাধ্য করাতে পারব তার যোগ্যতাই কি আছে আমার!
: ঈশ্বরকে অসংখ্য ধন্যবাদ, শেষপর্যন্ত তিনি জ্ঞান দিয়েছেন।
সক্রেটিস চলে গেল।

(সমাপ্ত)

বিঃ দ্রঃ ইংরেজী মূল লেখাটির মতো এই বাংলা অনুবাদটি পিডিএফ ফরম্যাটে পড়তে চাইলে নীচের অ্যাড্রেসটি কপি করে অ্যাড্রেসবারে পেস্ট করুন।
Click This Link
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×