somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বান্ধবী বৃত্তান্ত (পুনঃ সম্পাদিত)

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা তিন বন্ধু- টুকুন, উকুন আর আমি পন্ডিত- একটা বিশাল সমস্যায় পড়েছি। আমরা বান্ধবী সংকটে ভুগছি। সমস্যাটা গুরুতর এই কারণে যে, একটা সময়ে - গল্পে যেমন শোনা যায় '' গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ''- আমাদেরও চারপাশটা বান্ধবী-পুর্ণ ছিল। আমাদের দিবস-রজনী, যুগ-যুগান্ত- সরি - কত ঘন্টা, মিনিট, কত হাজার হাজার পালস, কত নিযুত ন্যানোসেকেন্ড চলে গেলো এই সব বান্ধবীদের জন্য। হায়, আজ সে রামও নেই , সেই অযোধ্যাও নেই, নেই সেই বান্ধবীরাও।

আমি পন্ডিত মানুষ, মাইনাস এইটিন পাওয়ারের চশমা পড়ি।(এইটা একটা বিশ্বরেকর্ড। বিশ্বাস না হলে উইকিপিডিয়া দেখুন। ) যান্ত্রিকতা ভালো লাগেনি বলে বুয়েটের যন্ত্রকৌশল ছেড়ে এসেছিলাম ঢাবিতে গণক মেস্তুরীবিদ্যা পড়তে। কিন্তু পড়াশোনা করতে ভালো লাগেনা এই মহান অজুহাত দেখিয়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয়কে অথবা বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে ছেড়ে দিল। আমার মস্তিষ্কের ভেতরে মেধা রাখার জায়গা না থাকায়, আমি প্রায় সময় এগুলো বিনামূল্যে/ উচ্চমূল্যে বিতরণ করি। আর টুকুন ছিল একজন সম্ভাব্য গণিতবিদ। ছিল বলছি- কারণ, আমার মতই সেও একজন অবসরপ্রাপ্ত ছাত্র। তার সবচেয়ে বড় গুন হলো আলসেমি। আলসেমি করতে তার একদমই আলসেমি লাগেনা। সে কোন মানুষের ক্ষতি করেনা, কারণ মানুষের ক্ষতি করার জন্য যে পরিশ্রম করা দরকার তাতে তার তীব্র অনাসক্তি। শুধুমাত্র আমাদের বেলজিয়াম প্রবাসী বন্ধু 'লালগাভী'কে যন্ত্রণা দিতে আর চার বছর আগে ছ্যাঁকা খেয়ে ধরা সিগেরেট ফুঁকতে তার একটুও ক্লান্তি নেই। তার আরেকটা স্বভাব হলো- প্রতিদিন দুপুর অথবা, তার ভাষায়, সকাল বারোটা বাজে এক ডজন সিঙ্গারা দিয়ে সে তার দিনের কর্মসূচি শুরু করে। ও, উকুনের কথাতো বলা হলোনা। সে 'ব্যবসায় প্রশাসন' অথবা 'প্রশাসনে ব্যবসা' নামক বিষয়ে, তার মতে, যা-তা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। সে একজন উদীয়মান ধান্দাবাজ, এবং একজন দার্শনিকও। সে বলে সে নাকি মেয়েদের ফোন করেনা, বরং মেয়েরাই তাকে ফোন করে। একজন দার্শনিক ছাড়া এত বড় মিথ্যা কথা আর কার পক্ষে বলা সম্ভব? ( রাগ করিস না, উকুন। গতকাল ১০০ টাকা ফ্লেক্সি করছি, মনে আছে? )

আর বান্ধবীরা? লোপা যখন সিক্সটিন, ক্লাস টেনে পড়তো, সি ওয়াজ হোয়্যট ইজ নেইমড বিঊটি , তার প্রেমে পড়ে যাওয়াটা ছিলো সোজা। হলোও তাই। আমি প্রায় আর টুকুন পুরোটাই পড়ে গেলো। উকুন পড়লোনা, কারণ রোগটা ছোঁয়াচে হতে পারে ভেবে সে আগেই প্রতিষেধক নিয়ে রেখেছিল। যাই হোক, লোপা অনেকটা পর্যায় সারণির d ব্লক মৌলের মত। সে রঙ্গীন যৌগ গঠন করতো। কার না ভালো লাগে রঙ? ভালো লেগেছিল আমাদেরও। আমাদের কাছে লোপা ছিল যেন একটা দেবী। কিন্তু d ব্লক মৌল তো শুধু আর রঙ্গীন যৌগই গঠন করেনা, তার ছিল পরিবর্তনশীল যোজনী, সে বিভিন্ন বিক্রিয়ায় প্রভাবক হিসেবে কাজ করতো, এবং জটিল আয়নও গঠন করতো। সুতরাং থাকা হলোনা একসাথে। লোপা ছিল খুব ডিমান্ডিং। আমরা অন্য কোন মেয়ের সাথে কথা বলি- এটা সে সহ্য করতোনা। সে চাইতো আমাদের সমস্ত মনোযোগ যেনো থাকে তার প্রতি। যখন চিটাগাং কলেজে পরতাম, সেই ২০০০-০২ তে, কলেজের কে আমি, টুকুন আর লোপাকে চিনতোনা? সারাটাদিন, সবজায়গায় আমরা একসাথে। অথচ এমন বন্ধুত্বও টিকলোনা।

আমাদের একসময়ের টিচার সুমন মামা আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন ডানাকে। তখন আমরা মাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। ডানা ছিল চিটাগাং-এ নতুন। কিছুই চিনতোনা। আর ও পড়তো পাশের মহসিন কলেজেই। চিটাগাং-এ বন্ধুহীন জায়গায় ওর হয়তো আমাদেরকে দরকার ছিল। কিন্তু আমরা তাকে উপেক্ষা করে গেলাম। কারণ, আমাদের আকাশে তখন লোপা। লোপা ছাড়া পৃথিবীর অন্য সব মেয়েই আমাদের কাছে ছিল তখন মুল্যহীন। সো, গেট লস্ট, ডানা। ডানাকে ভুলেই গিয়েছিলাম প্রায়, যদি না টুকুন ওকে আবার আবিষ্কার করতো। শুধুমাত্র কৌতুহল বশে টুকুন একদিন ডানাকে ফোন করলো। এর মধ্যে অনেক কিচুই পালটে গিয়েছিল। লোপার সাথে আমাদের ডাইভোর্স হয়ে গেছে। আমি চলে এসছি ঢাকায়। আর ডানা সিলেটে। তো ডানা আবার আসলো আচমকা। প্রথমে টুকুনের মুখে ডানার কথা শুনে আমি অনেক অবাক হয়েছিলাম। এরপর প্রায় ফোন করতাম ডানাকে। কখনো এত চমতকার কথা বলতো- মনে হতো অনেক কাছের কেউ; আবার কখনো সে যেন আমাদের চিনেইনা, যেনবা আমরা এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির কোন আগন্তুক। আমাদের সমস্ত উপেক্ষাকে ৩ দিয়ে গুণ করে সে আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছে। গত পরশুদিন ডানাকে বলছিলাম--
--শোন ডানা, তোমাকে দিয়ে তো আমাদের পোষাচ্ছেনা।
ও হাসে (যেনবা কাছের কেউ)। -- কেন পোষাচ্ছেনা?
--তুমি একটা শীতল রক্ত বিশিষ্ট প্রাণী। প্রায় সময়ে গর্তের ভিতরে লুকায়ে থাকো। হাইবারনেশনে চলে যাও।
--কি বললা?
--কথা সত্য না?
--হুম, সত্য।
ফোন রেখে দিল ধুম করে, যেনবা আমি এন্ড্রোমিডিয়ান।


......চলবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৭ দুপুর ১২:৪০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×