শীত শীত দুপুরে ফিরছিলাম রিকশা করে । পকেটে অনেক টাকা । আজ জীবনের প্রথম চাকরীর প্রথম মাসের বেতন পেয়েছি । ইচ্ছে হলেই কিনে ফেলতে পারি ছোট মানুষটির ছোট শখের যেকোন কিছু । অনেক আদেখলা খেয়াল শীতল বাতাসের মত ঢুকছিল মাথায় । কিনতে পারি শখের গীটারটা অথবা বাসার সবাইকে দিতে পারি - এই ঈদে , আমার গর্বিত উপহার অথবা আসন্ন ডেটে আমার ভালবাসাকে দিতে পারি কোন করপোরিয়াল চুমু ।
এইসব যাচিত ভাবনার স্থবির জলে হঠাৎ ঢিল পড়ল শৌশবিক নষ্টালজিয়ার । রিকশাকে পাশ কাটিয়ে মুহূর্তে চলে যাচ্ছিল এক চানাচুরওয়ালা । অই মুহূর্তের শত বিভাজনে আমি চলে গেলাম আমার ছেলে বেলার প্রতিদিনের স্কুল, তারপর স্কুল ছুটি, তারপর মায়ের কাছ থেকে চেয়ে আনা যখের ধনের মত ২ টাকার অপার্থিব চানাচুর ! কত মজা করেই না খেতাম হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ছোট্ট চপল পায়ে !
চানাচুরওয়ালা টিকেও মনে পড়ল । বেঁটে খাট লোক , ইয়া বড় মোচ , মুখে নির্মল - মাতুল প্রশ্রয়ের হাসি সবসময় । লোকটি বড় ভাল ছিল । আমরা ডাকতাম 'চানাচুর মামা' । কোথায় আছো তুমি চানাচুর মামা ? কেমন আছো ?
বিভাজিত অণু মুহূর্ত পাশ কাটিয়ে চলে যাবার পর, আমি রিকশাওয়ালা ভাইকে থামতে বল্লাম । আলতো করে ডাকলাম চানাচুর বিক্রেতাকে । ২ টাকার কিনলাম । কিন্তু সৃতি নির্দেশ করল অনিবার্য তুলনা । কতটুকু মূল্যহীন এই ২ টাকার চানাচুর ! সেই ২ টাকার চানাচুর কতটুকু অমূল্য ! আমি সেই পারত্রিক স্বাদের আশায়, মুখে পুরলাম একমুঠ হলুদ ঐহিক । অনিবার্য ফলাফল হাতের মুঠোয় ! ‘আমার বড় হয়ে উঠা’ কে আচ্ছা মত ঝাড়ি লাগালাম ।