somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ কে আনাম ! লোক সংগীতকে ঘিরে যার স্বপ্ন অবিরত

১৪ ই নভেম্বর, ২০০৭ রাত ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"সুরমা নদীর তীরে আমার ঠিকানারে/ বাবা শাহজলালের দেশ সিলট ভূমিরে' অথবা 'ও সোনার চান্দেরে/ ও মায়ার চান্দেরে...। সিলেটের খুব চেনা গান। দেশের সব খ্যাতিমান শিল্পীরাই কম বেশি এই গানটি গেয়ে থাকেন।

অথচ অনেকেরই অজানা এই গানের সুর শ্রষ্ঠা কে। গানটির কথা ও সুর দিয়েছেন শ্রীমঙ্গলের নিভিতচারী এক লোকজ শিল্পী এ কে আনাম। সিলেট বেতারের এক সময়ের এই প্রচার ভিমুখ শিল্পী এ কে আনাম বর্তমানে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে সুদুর আমেরিকায় চিকিৎসাধীন আছেন। সিলেটের মাটি ও মানুষের অকৃত্রিম প্রেম, ভালোবাসা, বিরহ-বিচ্ছেদ, ইসলামী ঐতিহ্য, বিশেষ করে শাহজালাল, প্রকৃতির নানা চিত্র, বন্যা-খরা এ সবকিছুকে তিনি কথা ও সুরের ইন্দ্রজালে অপরুপ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সৃজনশীল সংগীত জগতে তিনি এ কে আনাম নামেই অধিক পরিচিত। তবে তার পুরো নাম আহমদ খায়রুল আলম চৌধুরী (মুক্তা)। তার রচনায় বাঙালির সংস্কৃতি বিশেষত সিলেট অঞ্চলের প্রাচীন সংস্কৃতি,সাধারন মানুষের জীবনধারা ও আধ্যাত্নিকতার ঘোর তত্ব সুনিপুণভাবে ফুটে উঠেছে।

আধুনিক ও আঞ্চলিক ভাষায় লোকসঙ্গীত রচনা করে সিলেটের গীতসাহিত্য জনপ্রিয়তার শীর্ষে স্থান করে নেওয়া এই মানুষটি ১৯৪০ সালে ভারতের আসাম রাজ্যর "লাবক" চা বাগানে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার চাকরির সুবাদে ১০ বছর বয়সে (১৯৫০ সালে) মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালিঘাট চা বাগানে চলে আসেন। ছাত্রজীবন থেকেই সংস্কৃতির প্রতি ছিল নিভির টান। লেখাপড়ার পাশাপাশি স্কুলের সব সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে উৎসাহবোধ করতেন। সে সময় থেকেই স্কুল ম্যাগাজিন, দেয়াল পত্রিকায় ছড়া, কবিতা ও গান লিখতেন।

১৯৬৮ সালে লোকসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তান বেতারের স্বীকৃতি লাভ করেন। স্বাধীনতার সংগ্রামের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত রাখতে সিলেটের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে গান গেয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রেরণা যুগিয়েছেন। দেশ স্বাধীনের সেই মাহেন্দ্রনে তিনি বিজয়ের আনন্দে লিখেছিলেন, "বিজয় দেখিলাম/ উনিশ শ’ একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরে"সহ একাদিক স্বাধীনতার গান। সেই পথ ধরে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ বেতারের একজন নিয়মিত গীতিকার ও সুরকার হিসাবে আত্ম প্রকাশ করেন। পরবর্তী সময়ে নাটক লিখার পাশাপাশি প্রাবন্ধিক, কার্টুনিষ্ট ও চিত্রশিল্পী হিসাবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। তিনি ছিলেন শিল্পী হাসেম খানের খুবই কাছের মানুষ। তার রচিত অসংখ্য গান প্রচার হয়েছে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে।

সিলেটের প্রবীন শিল্পী বিদিতলাল দাশ, হিমাংশু বিশ্বাস, জামাল উদ্দিন হাসান বান্না, শুভ্র দেব ও সেলিম চৌধুরীসহ আর অনেকেই তার গান গেয়ে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। তার রচিত ‘সুরমা নদীর তীরে আমার ঠিকানারে, ও মায়ার চান্দেরে, সিলট পাইলে যেমন তেমন ঢাকাত পাইলে কই আচেন কেমন, লন্ডন পাইলে ধরিয়া কই, ও আমার সিলটি ভাইসাব,’ এসব জনপ্রিয় গানের আজও লোকমুখে শুনা যায়। তার এই জনপ্রিয় গানগুলো সিলেটের সীমানা পেরিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশী মানুষের কাছে বিপুল জনপ্রিয় হয়ে আছে। একজন সংগীত শিল্পী হিসাবে তিনি দেশের সীমানা পেরিয়ে বহুবার যুক্তরাজ্যসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, শিলচর ও ত্রিপুরা শহরে দেশের হয়ে সংগীতের সুর ছরিয়ে দিয়েছেন।


তাকে নিয়ে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘ সুরমা নদীর তীরে’ থেকে জানা যায় , তার রচিত ও সুরারোপিত ‘সুরমা নদীর তীরে আমার ঠিকানারে/বাবা শাহজলালের দেশ সিলট ভূমিরে’ গানটি সিলেটের আঞ্চলিক ও আধ্যাতিক গানের ইতিহাসে একটি অনন্য সংযোজন। তার আবাসস্থল চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল শহরের কলেজ রোডে তিনি প্রতিষ্টা করেছিলেন শ্রীমঙ্গল সঙ্গীত নিকেতন ও সারগাম সঙ্গীত বিদ্যালয়। পাশাপাশি সমাজসেবায় রয়েছে তার ব্যাপক অবদান। নিখিল ভারত বঙ্গসাহিত্য সম্মেলন (৬২তম সর্বভারতীয় অধিবেশন, শিলচর) ১৩৯৬ সালে সাহিত্য, সংস্কৃতি, সঙ্গীত, শিল্পকলা, শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে তাকে অভিজ্ঞানপত্র প্রদান করা হয়। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠান ও ১৯৯৪ সালে ‘লন্ডন ফেষ্টিভ্যাল অব বাংলাদেশ’-এ তিনি অংশগ্রহণ করেন।

তিনি শারীরিক অসুস্থতার জন্য ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র চলে যান। সেখানে তিনি বিদেশের পত্রপত্রিকায় তুলে ধরেন বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এই লোকজ শিল্পী আজ অসুস্থ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। সেই এ কে আনাম সুস্থ হয়ে আবার ফিরে আসবেন সেই প্রত্যাশা শ্রীমঙ্গল তথা সিলেটের তার অগণিত ভক্ত, শুভাকাংখী ও শুভানুধ্যায়ীদের মাঝে।

৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×