somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তেলের দাম বাড়ায়

১২ ই নভেম্বর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৬:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


উন্নয়ন অগ্রগতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে যে পণ্যটি, সেটি নিঃসন্দেহে জ্বালানি তেল। আর বিশ্বজুড়ে এই তেলের সাম্প্রতিক দাম বৃদ্ধিকে বলা হচ্ছে বিশৃঙ্খল ও রীতিমতো অস্বাভাবিক। চলতি সপ্তাহে অশোধিত তেলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৯৬ বা ৯৭ ডলার। অতীতে কেউ কেউ চিন্তা করেছিলেন জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলে ১০০ ডলার স্পর্শ করলে বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। বর্তমানে অর্থনীতি কিন্তু সেই পরিস্থিতি অতিক্রম করছে।
জ্বালানি তেলের দাম আকাশে ওঠায় সবচেয়ে তিগ্রস্ত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্ব, যাদের জ্বালানি খরচ বেশি এবং অনেকাংশে আমদানির ওপর নির্ভরশীল। আরও তিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের মতো গরিব দেশগুলো। এসব দেশে জ্বালানির সঙ্গে জড়িত পণ্যগুলোর দাম বেড়ে যাচ্ছে। সরকারের রাজস্বের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ চলে যাচ্ছে জ্বালানি আমদানিতে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উন্নয়ন।
নেপথ্য কারণ
২০০২ সালে জ্বালানি তেলের যে দাম ছিল, বর্তমানে দাম তার তিন গুণ। আর এ বছরের শুরুতে যে দাম ছিল, বর্তমান দাম তার ৪০ শতাংশ বেশি। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো উত্তর ইরাকে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী দমনে তুর্কি সেনা অভিযান। উত্তর ইরাকে তেল যথেষ্ট আছে তা নয়। তবে কিরকুক শহরকে সংযোগকারী একটি বড় পাইপলাইন আছে, যেটি কুর্দি অঞ্চলের দেিণ। যদিও এই পাইপলাইনটি ২০০৩ সালে ইরাক অভিযানের পর থেকেই তুরস্ক বন্ধ করে দিয়েছে।
ব্যাপক অর্থে ইরাকের উত্তরে সহিংসতা এই আতঙ্ক ও হুমকির জš§ দিচ্ছে যে, তা যে কোনো সময় ইরাক, ইরান, কুয়েত ও সৌদি আরবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বৈশ্বিক তেলের জোগানের ২০ শতাংশ দেয় এই দেশগুলো। বিশেষ করে আজারবাইজান থেকে তুরস্কের সেহাল বন্দর পর্যন্ত যে পাইপলাইন গেছে, এবং যেটি দিয়ে দৈনিক সাত লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি হয়, কুর্দিরা সেটির তিসাধন করতে পারে সেই আশঙ্কা রয়েছে। এই আতঙ্ক তেলের দাম বাড়ার একটি বড় কারণ।
ইরানের পরমাণু শক্তিধর দেশ হওয়ার ইচ্ছা ও তা রোধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলার হুমকিÑএটাও দাম বৃদ্ধির অপর এক কারণ। তা ছাড়া নাইজেরিয়ার তেল সমৃদ্ধ এলাকায় জঙ্গি সহিংসতা, আফগানিস্তান ও ইয়েমেনে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ সাম্প্রতিক দাম বৃদ্ধিকে উসকে দিয়েছে।
তেলের চাহিদা বাড়বেই
জ্বালানির চাহিদা এখন সর্বোচ্চ। চীন ও ভারতÑবৃহৎ দুটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে তাদের জ্বালানি চাহিদা। দুটি দেশেরই লোকসংখ্যা ১০০ কোটির ওপরে। দেশ দুটিতে নতুন নতুন ভোক্তাশ্রেণীর আবির্ভাব ঘটছে। চীনের জ্বালানি চাহিদা বাড়ছে প্রতিবছর ১৫ শতাংশ হারে। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ২০০৩ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল জাপান। ওই বছর তাদের টপকে যায় চীন।
পর্যবেকেরা উদ্বিগ্ন এ কারণে যে, জ্বালানির চাহিদা যে হারে বাড়ছে, জোগান সমানতালে বাড়ছে না। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির মতে, আগামী বছর জ্বালানির গড় চাহিদা বাড়বে দিনে ২২ লাখ ব্যারেল। চলতি বছর চাহিদা বাড়ে ১৫ লাখ ব্যারেল। এ ছাড়া ২০১২ সাল পর্যন্ত জ্বালানি চাহিদা প্রতিবছর দুই শতাংশ করে বাড়তে পারে।
ওপেকের কী করার আছে
জ্বালানি নিরাপত্তাবিষয়ক বিশ্লেষক জন রবার্টস মনে করেন, জ্বালানির দাম বাড়ার প্রধান দায়টা ওপেকের। যেহেতু এটি জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন এবং জ্বালানি রপ্তানির প্রধান অংশটি ওপেকের মাধ্যমেই হয়। দাম নিয়ন্ত্রণে তাদের ভূমিকা আরও আক্রমণাÍক হওয়া উচিত। কিন্তু তাদের ভূমিকা খুবই দুর্বল। রবার্টস আরও উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
এখানে ওপেকের একটা বক্তব্য আছে। তারা কিন্তু উৎপাদন বাড়াচ্ছে। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর যে উৎপাদন কোটা, তা তারা আগেই ছাড়িয়ে গেছে। ১ নভেম্বর থেকে দিনে পাঁচ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে।
অবশ্য উৎপাদন বাড়ানো নিয়ে ওপেকের মধ্যে মতভেদ আছে। বিশেষ করে সৌদি আরব সংকটকালে কোটার বাইরে আরও বেশি উৎপাদনের দিকে আগ্রহী। তবে অন্যরা তা নয়। ইরান, নাইজেরিয়া, ভেনেজুয়েলা তড়িঘড়ি উৎপাদন বাড়াতে চায় না। বরং বাজার গরম দেখতেই তারা পছন্দ করে।
ওপেকের বক্তব্য হলো, একশ্রেণীর জ্বালানি ব্যবসায়ী যেভাবে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, তাতে উৎপাদন বাড়িয়েও দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। যারা আতঙ্ক ছড়িয়ে ফায়দা লুটছে তাদের বিরুদ্ধে আগে ব্যবস্থা নিতে হবে। আগে আতঙ্ক দূর করতে হবে।
কার লাভ, কার তি
আশির দশকের শেষ দিকে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০১ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতি প্রায় সে রকমই বটে। দাম বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্র খুবই উদ্বিগ্ন। এমনিতে মার্কিন অর্থনীতির অবস্থা সংকটাপন্ন। আগস্টে শেয়ার বাজারে ধসের প্রভাব অর্থনীতিতে এখনো। বাড়ছে বেকারত্ব। মূল্যস্ফীতি কমছে না। এ অবস্থায় জ্বালানির দাম বৃদ্ধি তাদের বিশাল, বিরাট আকারের অর্থনীতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদনকারী দেশগুলো আছে ফুরফুরে মেজাজে। এক্সনমোবিল ও বিপির মতো বড় তেল কোম্পানিগুলোর এখন সুদিন। প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজ ভেনেজুয়েলাকে নতুনরূপে সাজাচ্ছেন। পশ্চিমা সমালোচনাকে পায়ে দলে সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচিতে প্রচুর বিনিয়োগ করছেন। ভালো অবস্থায় আছে রাশিয়াও।
তবে বিশ্লেষকেরা আশা করছেন, বাজার আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে। একটি ভালো ঘটনাই তেলের দাম ৭০ বা ৬০ ডলারে নিয়ে যেতে পারে।


আজকের প্রথম আলোয় প্রকাশিত
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরোনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×