somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রখ্যাত মার্কিন ছোট গল্পকার 'ও হেনরির' ১৬১তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


উইলিয়াম সিডনি পোর্টার প্রখ্যাত মার্কিন ছোট গল্পকার। তিনিই সম্ভবতঃ মার্কিন ছোট গল্পকারদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত এবং জনপ্রিয়। তবে আসল নামে নয় তিনি খ্যাতি লাভ করেন ও হেনরি ছদ্মনামে লিখে। 'ও হেনরি' বা অলিভার হেনরি (Olivier Henry) হলো 'উইলিয়াম সিডনি পোর্টার'-এর ছদ্মনাম। ও হেনরি প্রায় ছয়শতাধিক গল্প লিখেছেন। তাঁর সর্বাধিক জনপ্রিয় সঙ্কলনগুলি হলো- 'বাঁধাকপি এবং রাজা'(Cabbages and Kings), 'নিয়তির রাস্তা' (Roads of Destiny) এবং 'ছয়-সাত'(Sixes and Sevens)। আজ প্রখ্যাত এই গল্পকারের জন্মদিন। ১৮৬২ সালের আজকের দিনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মদিনে তাঁর জন্য আমাদের শুভেচ্ছা।


উইলিয়াম সিডনি পোর্টার ১৮৬২ সালের ১১ জুন আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনার গ্রীণসবোরো শহরে (Greensboro, North Carolina) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ডাঃ এলজারনোন সিডনি পোর্টার এবং মাতার নাম মেরী জেন ভারজিনিয়া সোয়াইম পোর্টার। তার পিতা এলজারনো্ন সিডনি পোর্টার পেশায় ছিলেন একজন চিকিৎসক। ডাঃ এলজারনোন এবং মেরী জেন ভারজিনিয়া ১৮৫৮ সালের ২০ এপ্রিল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন যখন উইলিয়ামের বয়স তিন বছর। তার মাতার মৃত্যুর পরে ও হেনরি তার পিতামহী ও চাচীর কাছে পালিত হন। ১৮৮৭ সালে ও হেনরি এথোলা ইস্টেসকে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে মার্গারেট ওয়ার্থ পোর্টার নামে এক মেয়ে ছিলো। ১৮৯৭ সালে তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়। পরে ১৯০৭ সালে তিনি তার শৈশব প্রণয়ী সারাহ লিন্ডসে কলিমেনকে বিয়ে করেন যদিও ১৯০৮ সালে তারা পৃথক হয়ে যান।


কর্মময় জীবনে ও হেনরি বিভিন্ন পেশায় কাজ করেন। ও হেনরি প্রথম জীবনে কিছুকাল একটি খামার বাড়িতে কাজ করেন। এ ছাড়াও একটি ওষুধের দোকান ফার্মাসিস্ট হিসেবে এবং কলাম লেখক হিসেবে কাজ করেন। তিনি একটি ব্যাংকে কেরানি হিসেবেও কাজ করেন তবে ব্যাংকের তহবিল তসরুফের কারণে তাকে অভিযুক্ত হন এবং ব্যাংকের চাকুরী থেকে বরখাস্ত হন। ব্যাংকের দায়ের করা অভিযোগে ১৮৯৬ সালে তিনি পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হন। জামিন পাবার পরে তিনি ভবঘুরে জীবন-যাপন শুরু করেন এবং ছোট-গল্প লিখে নিজের ও তাঁর পরিবারের ভরণ-পোষণ চালান।


বিখ্যাত এই ছোট গল্পকার অত্যন্ত দরিদ্র অবস্থায় ১৯১০ সালের ৫ জুন আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে মৃত্যুবরণ করেন। অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে যকৃতের সিরোসিস তার মৃ্ত্যুর কারণ বলে ধারণা করা হয়। আজ এই জনপ্রিয় গল্পকারের জন্মদিন। জন্মদিনে তাঁর জন্য আমাদের শুভেচ্ছা।


জন্মদিনে ও হেনরির লেখা আসাধারণ গল্প “দি গিফট অব দি মেজাই” উৎসর্গ করা হলো সামু ব্লগের পাঠকদের জন্য।


“The Gift of the Magi” বা “মেজাইয়ের উপহার” ছোট গল্পটি ১৯০৫ সালে নিউ ইয়র্ক সিটির একটি পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় এবং ১৯০৬ সালে “The Four Million” গ্রন্থে সংকলিত হয়।
“The Gift of the Magi”
ও. হেনরীর ছোট গল্প
মাত্র এক ডলার সাতাশি সেন্ট তার হাতে। এর ভেতরে ষাট সেন্ট আবার খুচরো। বাজার করতে গিয়ে জিনিসপত্রের দর-দস্ত্তরর করতে গিয়ে তা থেকে এক পেনি আধ পেনি বাঁচিয়ে অনেক কষ্ট করে এই ক’টা মুদ্রা জমিয়েছে সে। মুদ্রা ক’টা তিনবার গুণল সে। এক ডলার আর সাতামি সেন্ট। অথচ কালকেই বড়দিন।
হতাশ হয়ে সে চেয়ারের ওপর ভেঙে পড়ল । কেঁদে উঠল। তার মনে হল জীবনটা শুধু কান্না আর দুঃখেই ভরা । এর ভেতরে কান্নার ভাগটাই বেশি।
ডেলা যখন কাঁদছে, কাঁদুক। তার আশপাশের কথা এই ফাঁকে একটু বলি। সপ্তাহে আট ডলার ভাড়া দিতে হয় তাদের এই সাজানো ফ্ল্যাটটার জন্যে। খুব খারাপ নয় বাড়িটা। কিন্তু এই ভাড়া গুণতে অনেক কষ্ট করতে হয় তাদের।
নিচের দেয়ালে একটা চিঠির বাক্স ঝোলানো। কোনোদিন কোনো চিঠি হয়তো এখানে ফেলা হয় নি। এর পাশেই বৈদ্যুতিক বোতাম। কোনোদিন কউ এটা টিপে ডেকেছে বলে মনে হয় না। এর পরেই ছোট্ট একটা নামের ফলক। সেখানে লেখা মিঃ জেমস ডিলিংহ্যাম ইয়ং।
নামের ফলকটা ঝোলানো হয়েছিল যখন তাদের অবস্থা ভালো ছিল। যখন ডিলিংহ্যাম সপ্তাহে তিরিশ ডলার করে পেত। িএখন পায় বিশ ডলার। আর তার অবস্থার অবনতির সাথে সাথেই বুঝি নাম-ফলকের ঔজ্জ্বল্য্ও অনেকখানি ম্লন হয়ে এসেছে। তবু এখন্ও যখন সে বাড়ি ফিরে আসে, ডেলা তার আদরের নাম জিম বলে ছুটে আসে, তাকে জড়িয়ে ধরে। অনেক সুখে আছে ওরা।
ডেলা আর কাঁদল না। পাউডারের তুলি দিয়ে গালের অশ্রু মুছে নিল। জানালার পাশে এসে দাঁড়াল। দূরে উঠোনের পাশে বেড়ার ওপর দিয়ে একটা ছাই রঙ বেড়াল হেঁটে যাচ্ছিল। কালকেই বড়দিন। অথচ ঐ এক ডলার সাতাশি সেন্ট দিয়ে জিমকে তার একটা উপহার কিনে দিতে হবে। এজন্যেই সে মাসের পর মাস কষ্ট করে পয়সা জমিয়েছে। সাপ্তাহিক যা আয় তা থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু জমানো যায় না। অনেক চেষ্টা করেছে, পারে নি। জিমের জন্যে এপর্যন্ত যা জমাতে পেরেছে তা ঐকটা টাকা মাত্র। কী তাকে কিনে দেবে, অনেকদিন সে অনেক অবসরে বসে বসে ভেবেছে। সুন্দর আর অসাধারণ একটা কিছু কিনতে চেয়েছে সে। এমন কিছু দেবে যা জিমকে মানাবে, যা পেয়ে জিম গর্বিত হবে।
দুজানালার মাঝখানে একটা অয়না ঝোলানো । আট ডলার ভাড়ার ফ্ল্যাটে আয়না আর কেমনই বা হবে? লম্বা, বড় একটা অয়না। যে কেউ সেখানে দাঁড়িয়ে নিজেকে পুরো দেখতে পাবে। ডেলাও ধদখতে পায়।
অচমকা জানালা থেকে মুখ ফিরিয়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়াল সে। মুখ তার বিবর্ণ কিন্তু চোখ জোড়া উজ্জ্বল। ঘনকালো আর দীর্ঘ চুলের গোছাটা খুলে দিল সে পিঠের ওপর।
দুটো জিনিস ছিল তাদের স্বামী-স্ত্রীর। দুজনেই যে যার জিনিসের জন্য ছিল গর্বিত। একটা হচ্ছে ডেলার সুন্দর আর লম্বা চুলের গোছা। আর একটা হচ্ছে জিমের সোনার ঘড়ি। এ ঘড়িটা তার ঠাকুরদা’র কাছ থেকে পাওয়া। যদি উল্টোদিকের ফ্ল্যাটে শেবা’র রানি থাকতেন আর ডেলা জানালায় তার ভিজে চুল ছড়িয়ে রাখত তবে রাণিও হয়তো ঈর্ষায় মরে যেতেন। এমন অসাধারণ সৌন্দর্য ছিল সে চুলের। আর যদি সোলেমান বাদশাহ নিচের তলায় সমস্ত ধর-রত্নের মাঝ বসেও থাকতেন আর জিম যেত-আসতে তার সোনার ঘড়িটা বের করে সময় দেখত, তবে বাদশাও তাকে হিংসে না করে পারতেন না। এই দুটো জিনিস নিয়ে এতো গর্বিত ছিল ওরা।
সোনালি জলের মুক্তা-ধারার মতো ডেলার উজ্জ্বল চুল ছড়িয়ে পড়ল তার হাঁটুর অবধি। কম্পিত হাতে তাড়াতাড়ি সে আবার খোঁপা বেধে রাখল। মুহূর্তকাল দাঁড়িয়ে রইল নীরবে। দু-এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল গাল বেয়ে। ঝড়ে পড়ল লাল মেঝের ওপর।
তাড়াতাড়ি সে বাদামি রংঙের জ্যাকেট আর টুপিটা তুলে নিল। তারপর দ্রুত স্কর্ট দুলিয়ে উজ্জ্ল চোখে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এল রাস্তায়।
যেতে যেতে একটা সাইবোর্ডের সামনে এসে দাঁড়াল সে। সেখানে লেখ-‘ম্যাড়াম সোফ্রানি, যাবতীয় চুলজান দ্রব্যের দোকান’। ডেলা হাঁপাতে হাঁপাতে ওপরে উঠে ম্যাডামের সামনে দাঁড়িয়ে নিঃস্বান নিয়ে বলল, ‘আপনি চুল কিনবেন’?
‘কিনব। টুপি খুলে চুল ছড়িয়ে নি, আগে দেখি।’
সোনালি চুলের বোঝা ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে। ব্যবসায়ী চালে ম্যাডাম চুল তুলে ধরে বললেন,‘বিশ ডলার দিতে পারি।’
‘তাহলে তাড়াতাড়ি করুন আপনি।’
পরের দুঘন্টা যেন হাওয়ায় ভেসে গেল। যেলা হন্যে হয়ে খুঁজছিল সব দোকান- কী সে কিনবে জিমের জন্যে?
অবেশেষে তার পছন্দ হল। ঠিক জিমের সাথে খাপ খাবে।
যেন শুধু জিমের জন্যেই ওটা তৈরি হয়েছিল। এ রকমটি সে আর কখনো দোকানে দেখেনি।। একটা প্লাটিনামের চেন, সুন্দর নকশা করা, দেখেই দামি মনে হয়। শুধু নকশা নয়, জিনিসটা অদতেই সুন্দর। জিমের ঘড়িতে আশ্চর্য মানাবে। দামও জিনিসে অনুপাতে বেশি না। একুশ ডলার মোট নিল দোকানদার। বাকি সাতাশি সেন্ট নিয়ে সে ফিরে এল ফ্ল্যাটে। জিম ওই চেন লাগিয়ে বন্ধ-বান্ধবের কাছে খুব বাহবা নেবে। দেখাবার জন্যে বারবার সময় দেখবে। ডেলা ভাবল ঘড়িটার সাথে সাধারণ চামড়ার ব্যন্ড মোটেই মানায় না। এবার এই চেনে অদ্ভুত মানাবে। আরো সুন্দর লাগবে ঘড়িটাকে। বাসায় ফিরে এসে চুলের কথা মনে পড়ল। জিমের কথা ভাবতে ভাবতে সে ভুলেই গিয়েছিল চুলগুলো ঠিক করা দরকার। চল্লিশ মিনিচের ভেতরে সমসম্ত চুল কোঁকড়ানো হয়ে গেল। আশপাশে. কানের লাতির নিচে ছড়িয়ে পড়ল চূর্ণ চূর্ণ হয়ে। একরাশ, ঝাঁকড় ঝাঁকড়া। বাচ্চা ছেলের মতো যেন দেখাতে লাগল তাকে। অনেকক্ষণ ধরে আয়নার সামনে সে দাঁড়িয়ে রইল সাবধানী চোখে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল। তারপর আপন মনেই বলল, ‘যদি জিম রাগ না করে তাহলে বলবে সে আমাকে ঠিক কনি আইল্যান্ডের গাইয়ে মেয়ের মতো দেখাচ্ছে। কিন্তু আমার তো কোন উপায় ছিল না। এক ডলার সাতাশি সেন্ট দিয়ে কী কিনতে পারতাম আমি?
ঠিক সাতটার সময় কফি বানানো হয়ে গেল। চুলোর ওপরে কড়াই বসিয়ে রাখল। জিম এলেই গরম গরম ক’টা চপ ভেজে দেবে। কিন্তু এতো দেরি তো ও কোনোদিন করে নি। ডেলা সেই চেন হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে ঘরে ঢোকাবার দরোজার পাশে চুপ করে বসে রাইল। বাইরে সিঁড়ি থেকে ভেসে এল জিমের পায়ের আওয়াজ। ফেকাশে হয় গেল সে এক মহূর্তের জন্যে। ডেলার অভ্যেস ছিল প্রত্যেক কাজের আগে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা। সে ফিস ফিস করে উচ্চারণ করল, ‘হে ঈশ্বর, আমাকে কুৎসিত দেখাচ্ছে বলে জিম যেন রাগ না করে’।
ঘরে ঢুকে জিম দরোজা বন্ধ করে দিল। কেমন শুকনো আর গম্ভীর দেখাচ্ছে ওকে। বেচারা ! মাত্র বাইশ বছর বয়সে সংসারের ঝামেলায় পড়ে গেছে। একটা ওভারকোটও নেই। বেচারা!
জিম বিহ্ববল হয়ে, বোকা হয়ে দরোজার সামনে নিশ্চল হয়ে গেল। একদৃষ্টে চেয়ে রইল ডেলার দিকে। আর তার চোখের সেই শূন্য দৃষ্টির সামনে ডেলা কুঁকড়ে এল, এতাটুকু হয়ে গেল। তার চোখে রাগ ছিল, বিষ্ময় ছিল না, কিছুই ছিল না। ডেলা যা ভেবেছে তার কোন ছায়াই সেখানে নেই। সে শুধু একদৃষ্টি তাকিয়ে রইল ডেলার দিকে অদ্ভুত ভাবে।
ডেলা সরে এল কাছে। কান্না-ভাঙা গলায় বলল, ‘জিম, জিম অমন করে তাকিও না। আমি চুল বিক্রি করে ফেলেছি-বড়দিনে তোমাকে কিছু না দিয়ে থাকতে পারব না, সে জন্যে। আবার তো চুল বড়ো হয়ে যাবে, তুমি আমায় একটুও বোকো না। এছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। আমার চুল খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে। এসো বড়োদিনের আনন্দ করি। দেখো, তোমার জনে্য কী কিনে এনেছি, তুমি ভাবতেও পারবে না-দেখো’।
জিম যেন এখনও কিছুই বুঝতে পরে নি। কিছুই দেখে নি। সে শুধু উচ্চারণ করল, ‌তুমি চুল কেটে ফেলেছ’?
‌‘হ্যা, বিক্রি করেছি। চুল ছাড়া কি আমাকে দেখতে খুব খারপ লাগছে,?
জিম অদ্ভুত ভাবে ঘরের চারিদিকে তাকাল। বোকার মতো বলল:
‌‘সব চুল কেটে ফেলেছ’?
‘হ্যাঁ, বিক্রি করে ফেলেছি। সব দোকানে চলে গেছে। আজ বড়দিনের সন্ধে। তোমার জন্যেই এ কাজ করেছি। আমার চুল হয়তো গোনা যাবে, কিন্তু তোমাকে যে আমি কতো ভালোবাসি কী করে তার হিসেব দেব। চপগুলো কী গরম করব ? ডেলা মিষ্টি সুরে বলল।
জিম যেন এতক্ষণে চৈতন্য ফিরে পেল। জড়িয়ে ধরল ডেলাকে।
আপনি এখানে একটা কথার জবাব দিন- সপ্তাহে আট পাউন্ড আর বছরে একলাখ,দুয়ের ভেতরে কী তফাৎ? একজন অঙ্ক শাস্ত্রবিশারদ যা উত্তর দেবেন তা এখানে মিথ্যে। আজ দুজন পরস্পরের জন্য যে উপহার এনেছে সে সব জিনিসে তাদের আর প্রয়োজন নেই। এই রহস্যময় উক্তি একটু পরেই পরিষ্কার বোঝা যাবে।
জিম তার কোটের পকেট থেকে একটা প্যাকেট বের করে টেবিলের ওপর রাখল। বলল, ‘আমাকে ভুল বুঝো না ডেলা। চুল থাকলেও বা না থাকলেও আমার ভালোবাসার কোন তারতম্য কোনোদিন ঘটবে না। একই ভাবে তোমাকে ভালোবাসবো আমি। কিন্তু যদি ওই প্যাকেট ছিঁড়ে ফেলল। উল্লাসে চিৎকার করে উঠল সে। তারপরই বিষাদে ম্লান হয়ে এল। কান্নায় ভেঙে পড়ল সে।
দ্রুমহাতে ডেলা নারোম আঙুলে প্যাকেট ছিড়ে ফেলল। উল্লাসে চিৎকার করে উঠল সে। তারপরই বিষাদে ম্লান হয়ে এল। কান্নায় ভেঙে পড়ল সে।
হাতে তার নোতুন চিরুনি- আর মাথা আঁচড়াবার সাজসরঞ্জাম। কতো দিন। ব্রডওয়ের দোকানে এই সেট দেখে কিনতে চেয়েছেও । সুন্দর হাড়ের তৈরি, পাথর বসানো কিনারা। আর বঙটা এতো মানানসই যে চুলে দিলে বোঝা যায় না যে, চিরুনি আছে। ডেলা জানে অনেক অনেক দাম এগুলোর। তবুও সে ব্যথিত হৃদয়ে কতদিন ভেবেছে- আহা, সে যদি কিনতে পারত। আজ সে তা পেয়েছে, কিন্তু কি হবে তা দিয়ে? তার চুল আজ আর নেই ।
সে বুকের ওপর জড়িয়ে ধরল চিরুনিটা তারপর আলতো চোখ তুলে খুশি ভরা গলায় বলল, ‘তাতে কি? আমার চুল শিগগিরই বড়ো হয়ে যাবে’। তারপর ডেলা খুশিতে নেচে উঠল।
জিম এখনো তার নিজের জন্যে কেনা উপহার দেখে নি। ডেলা মেলে ধরল সেটা এবার তার সামনে। উজ্জ্বল চেনটা তার হাতে আলোয় ঝকমক করছে।
‘বেশ সুন্দর না জিম? সব দোকান খুঁজে কিনেছি। দাও, তোমার ঘড়িটা দাওতো, আমি নিজের হাতে লাগিয়ে দেব’।
কিন্তু তা না দিয়ে জিম চেয়ারে এলিয়ে পড়ল। দুহাত মাথার পেছনে রেখে সে যেন কেমন হয়েগেল। হাসল, একটু হাসল, তারপর বলল, ‘ডলা , কিছুক্ষণের জন্যে উপহার পাশে রেখে দাও। এতো ভালো আর দামি ওগুলো যে সব সময় ব্যবহার করা যাবে না। আসল কথা কী জানো, তোমার চিরুনি কেনবার জন্যে আমি আমার ঘড়িটা বিক্রয় করে দিয়েছি। দাও এবার চপটা ভেজে দাও।
সেই রাজন্য বর্গ অত্যান্ত জ্ঞানী- যারা একদিন সেই নবজাত শিশুর জন্যে উপহার বয়ে নিয়ে এসেছিলেন। তারাই বড়দিনে উপহার দেবার নিয়ম চালু করেছিলন। তারা জ্ঞানী ছিলেন। তাই এমন উপহার হয়তো এনেছিলেন তারা যাতে করে দুটো উপহার এক হয়ে না যায়, বদলে নেওয়া যায়। আর এখানে আমি দুটি সরল হৃদয়ের গল্প বলেছি। তারা পরস্পরের জন্যে নিজের শ্রেষ্ঠ ধন বিসর্জন দিয়েছিল। কিন্তু একথা সত্যি যে, আজকের এই বড়োদিনে তাদের উপহারই শ্রেষ্ঠতম। যারা উপহার দেন তারা আছেন। তারা হচ্ছেন সেই রাজন্যবর্গ। আর আমাদের এই দুটি নায়ক-নায়িকা, এরা আজ ঐ সব রাজাদের চেয়েও জ্ঞানী, তাদের চেয়েও বোধ করি সুখী।

৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×