somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

@তাওহীদুর্ রুবুবিয়্যাহর তাৎপর্য অনুধাবন (দুই)

০৫ ই নভেম্বর, ২০০৭ রাত ৮:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব পড়ুন
এর পরের পর্যায়টি হলো মানুষের যুক্তি-বিবেচনা নির্ভর প্রমাণ, এতে রয়েছে দু'টি দিক- মানুষ তার নিজ সত্তা দিয়ে বিবেচনা করবে ও সৃষ্টি জগতে বিস্তৃত আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে যুক্তি ও বিচার-বিবেচনা খাটিয়ে এই বিশ্ব-ভ্রহ্মাণ্ডের স্রস্টার অস্তিত্ব অনুধাবন করবে।

সৃষ্টিজগতে মানব সত্তা এমন এক বৈচিত্র বহন করে যা নিয়ে সাধারণ চিন্তাসম্পন্ন কেউ ভাবলেও একথা বুঝতে সক্ষম হবেন যে, কত মহান সে পরম সত্তা যিনি এত সূক্ষ্মভাবে সৃজন করেছেন তাকে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন:
وَفِي أَنْفُسِكُمْ أَفَلَا تُبْصِرُونَ .
((আর তোমাদের নিজেদের মধ্যে রয়েছে নিদর্শন, তোমরা কি তা লক্ষ্য করছ না?)) [সূরা আয্-যারিয়াত: ২১]
মানুষ নিজের সৃষ্টি রহস্য নিয়ে ভাবলেই তার জন্য তার স্রষ্টার অনুসন্ধান ও তাকে মেনে নেয়া যথেষ্ট হয়ে যায়। কেননা, আল্লাহ্ বলেন:
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ طِينٍ - ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَكِينٍ - ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًا ثُمَّ أَنْشَأْنَاهُ خَلْقًا آَخَرَ فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ .
((আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির উপাদান থেকে, তারপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে; পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি ‘আলাক(জমাট রক্ত)-এ, তারপর ‘আলাককে পরিণত করি পিণ্ডে এবং পিণ্ডকে পরিণত করি অস্থি-পঞ্জিরে; তারপর অস্থি-পঞ্জিরকে ঢেকে দেই গোশত দ্বারা; অবশেষে তাকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে। অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান!)) [সূরা আল-মু'মিনূন: ১২-১৪]

সোবহান আল্লাহ্! কেন নয়? আমার প্রভুই যে সর্বোত্তম স্রষ্টা। দৃষ্টিমানদের আল-কুরআনকে আল্লাহর বাণী বলে বিশ্বাস করার জন্য কি এই প্রমাণ যথেষ্ট নয় যে, চৌদ্দশত বছর পূর্বের এক অবৈজ্ঞানিক যুগে নাযিল হওয়া কুরআনে বর্ণিত মানব সৃষ্টির রহস্যগুরো অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল আধুনিক গবেষণায়! তারপরও যারা অন্ধ, অন্ধত্বই যাদের গন্তব্য, তারা দেখেও দেখে না। তারা বলে বেড়ায় যে, আজকাল তারাই পারছে শিশুর বানাতে (নাউযুবিল্লাহ্) যে শুক্র বিন্দু থেকে মানুষের শুরু, পৃথিবীর মাথাগুলো কি পেরেছে তেমন কোন শুক্রবিন্দু সৃষ্টি করতে? তাহলে কিসের এত দম্ভ? স্রস্টার সৃষ্ট উপাদাকে সাজিয়ে যারা স্রষ্টার কৃতিত্ব দখল করতে চায়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জ্ঞানপাপী মূর্খ তারাই।

আল্লাহ্ তা'আলা অন্যত্র আরো বলেন: وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّاهَا
((আর শপথ মানবসত্তার এবং তাঁর যিনি তা সুবিন্যস্ত করেছেন।)) [সূরা আশ্-শামচ: ৭]
সূরা আত্-তীনে তিনি বলেন: لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ
((আমি তো মানবকে সৃস্টি করেছি সর্বোত্তম গঠনে।)) [আয়াত: ৪]

এরপর দৃষ্টি দেয়া যায় জাগতিক নির্দশনাবলীর প্রতি, এই জগত সংসারের প্রতিটি ব্যাপারেই রয়েছে এমন সব অকাট্য প্রমাণাদি, সত্যানুসন্ধানী দৃষ্টিই কেবল মাত্র তা দেখতে পায়। এসব দেখে বান্দা চিনতে পারে তার স্রষ্টাকে, তার প্রতিপালককে। আল্লাহ্ বলেন:
سَنُرِيهِمْ آَيَاتِنَا فِي الْآَفَاقِ وَفِي أَنْفُسِهِمْ حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ الْحَقُّ أَوَلَمْ يَكْفِ بِرَبِّكَ أَنَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ .
((অচিরেই আমরা তাদেরকে আমাদের নির্দশনাবলী দেখাব (আসমান ও যমীনের) দিগন্ত সমূহে এবং তাদের নিজেদের সত্তায়, যাতে তাদের কাছে স্পষ্ট হয় যে, এ (কুরআন) সত্য, আপনার প্রভু সব কিছুর উপর সাক্ষ্যদাতা হিসাবে কি যথেষ্ট নন?)) [সূরা ফুসসিলাত: ৫৩]

দিন-রাতের আগমন-প্রগমন, জোয়ার-ভাটা, বৃষ্টি-বজ্র, বীজ-বৃক্ষ, ইত্যাদি আরো অসংখ্য স্থূল ও সূক্ষ্ম বিষয়াদির গবেষণা যে কোন সত্য সন্ধানীকে পৌঁছে দিতে সক্ষম তার পরম প্রিয় প্রতিপালকের নিকট। চাই কেবলমাত্র নিয়্যতের বিশুদ্ধতা, অর্থাৎ, সত্য অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সর্বপ্রকার কুটিলতা পরিহার করা।

এ প্রসঙ্গে আমাদের পূর্ববর্তী মনীষীদের দ্বারা অসংখ্য সত্য ঘটনা ও প্রমাণের অবতারণা হয়েছে। তন্মধ্যে ইমাম আবূ হানীফা রাহিমাহুল্লাহর সাথে একদল লোকের বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার প্রচেষ্টাকালীন সময়ে তাদেরকে ইমামের বলা কথাগুলো চিন্তাশীলদের জন্য বিশাল খোরাক বহন করে। তিনি বিতর্কে আগ্রহীদেরকে শুধু বললেন: "এ বিষয়ে কথা বলার আগে তোমরা আমাকে টাইগ্রীস নদীতে চলমান একটি জাহাজ সম্পর্কে তোমাদের কি মতামত তা জানাও, এটি কি নিজে নিজেই খাদ্যদ্রব্য, পণ্যাদি ইত্যাদিতে পরিপূর্ণ হয়ে নিজে নিজেই ফিরে আসছিল, এরপর নিজে নিজেই নোঙ্গর করেছিল আবার সেভাবে ফিরেও যাচ্ছিল; এসব কিছু হচ্ছিল অথচ কেউ তাকে পরিচালনা করছিল না?"
তারা বললো: এটা তো অসম্ভব ব্যাপার! কক্ষনো হতে পারে না।
তিনি তখন তাদেরকে বললেন: "যদি একটা ক্ষুদ্র জাহাজের ব্যাপারে এটা অসম্ভব হয় তাহলে এ বিশ্ব জগতের উপর-নিচ সবটুকুর ব্যাপারে তা কি করে সম্ভব হতে পারে?"

যারা এমন মূর্খতাসুলভ কথা বলে যে, এই পৃথিবীর সবকিছু এমনি এমনিই কালের গতিতে-বিবর্তনে হয়ে গেছে, তারা কিন্তু নিজেদের হাত-পায়ের নড়াচড়া ক্ষেত্রেও এটা স্বীকার করবে না যে, এগুলো আমি নাড়াইনি, এমনি এমনি নড়েছে। কিংবা গাছের কিছু পাতা অথবা ধুলিকণার উড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও স্বীকার করবে না যে, ওগুলোর পেছনে বাতাসের হাত ছিল না। অথচ এই বিশাল বিশ্ব-ভ্রহ্মাণ্ডের ব্যাপার আসলেই পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যায়, বধির হয়ে যায়, মুক হয়ে যায়। আল্লাহ্ তা'আলা হেদায়াতের আলোয় উদ্ভাসিত করুন আমাদের অন্তরগুলো। আমীন।
05.11.2007, মদীনা মুনাওয়ারা, সৌদি আরব।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি অজ্ঞ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৫২


ভাবতে পারো
৮০ টুকরো হতে হয়;
ভাবতে পারো
জ্বলে পুড়ে মরতে হয়!
ভাবতে পারো
কতটুকু লোভ লালসা
থাকলে পরে
এমন হবে বলো দেখি;
ভাবতে পারো
কেমন জন্ম মৃত্যুর খেলা;
জানি আমি
তুমি কিছু ভাবতে পারবে না
কারণ তুমি অজ্ঞ
মৃত্যুর পরে একা... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×