somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যায়যায়দিনে চায়না থেকে মিনার রশীদের এই লেখা কেউ পড়েছে কিনা যানি না। যারা পড়েছে তারা অন্যরে পড়তে বলনে আর যারা পড়ে নাই তারা পড়েন। সাথে সাথে বায়তুল র্মোকামে গিয়া দোয়া করেন। নির্বাচন ককমিশনে গিয়া কন যুদ্ধাপরাধীদরে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করনে, আর ছামহোয়ার এর এক্স জনোরশেন র্হাডকোর মুক্তিযুদ্ধারা কম্পুর সামনে বইয়া হাত মারনে।

০৫ ই নভেম্বর, ২০০৭ ভোর ৫:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যায়যায়দিনের গত সোমবারের সংখ্যায় একসঙ্গে দুটি মৃত্যুর সংবাদ পড়ি। সংবাদটির শিরোনাম ‘একই সমতলে’ হলে আরো পারফেক্ট হতো। চুয়াডাঙ্গার কৃষক আমিনুল ইসলাম ও তার প্রিয় মহিষটি বিএসএফের গুলিতে গত রবিবার সকাল ৫টায় নিহত হয়েছে। প্রাণিজগতের এ দুই সদস্যের মৃত্যুর ঘাতক একই এবং তা একই প্রক্রিয়ায় সংঘটিত হয়েছে। মৃত্যু পরবর্তী রি-অ্যাকশনও সমান। এ সংবাদটি অন্য কোথাও ছাপা হয়েছে কি না তা দেখার জন্য অন্যান্য পত্রিকার ইন্টারনেট সংস্করণ ঘাটা শুরু করে দিই। প্রধান সংবাদপত্রগুলো ঘেটে কোথাও এ সংবাদটি পাইনি।
অসাধারণ মানুষের কীর্তির মতো তাদের মৃত্যুও ব্যাপক মিডিয়া কভারেজ পায়। কিন্তু সাধারণ মানুষের মরণকে মিডিয়া কভারেজ পেতে হলে উচ্চ মাত্রার ট্র্যাজেডি কিংবা তার ঘাতকের বৈশিষ্ট্য বর্তমান মিডিয়া মোগলদের বাসনা মতো হতে হয়। ঘাতক যদি আমেরিকান সেনাবাহিনী হয় তবে সেই মরণ যতোটুকু হিট হবে তার চেয়ে সুপার ডুপার হিট হবে সেই মরণের পেছনের ঘাতক যদি আল কায়েদা হয়। সিলেটের নূরজাহান এ ব্যাপারে যথেষ্ট ভাগ্যবতী ছিলেন কারণ তার ঘাতক ছিল এ গণনায় একেবারে প্রথম ক্যাটেগরির অর্থাৎ সুপার অ্যান্টিহিরো ফতোয়াবাজ।
কাজেই আমরাও তেমন করেই এ নূরজাহানের জন্য চোখের জল ফেলেছিলাম। শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিকরা তাকে স্মরণ করে উপন্যাসও লিখে ফেলেছিলেন। যে ফতোয়াবাজরা ৫০ গজ দূরে পুলিশের সিপাহী দেখলেই এমনিতেই দৌড় শুরু করে তারাই এসব মিডিয়ার কল্যাণে আবির্ভূত হলো সব আইন ব্যবস্থার সামনে বড় চ্যালেঞ্জকারী হিসেবে। মৌলবাদী দেশ হিসেবে আমরাও একধাপ এগিয়ে গেলাম। কাজেই আমরা কি দেখি সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো মিডিয়া কি দেখায় তা।
সিলেটের এ নূরজাহান জন্মে, কর্মে, আদরে-সোহাগে, ভোগ-বিলাসে সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের কাছাকাছি যেতে না পারলেও মরণের সময় সম্রাজ্ঞীকেও হার মানিয়েছিলেন। তার জীবনের কাহিনী ছিল অত্যন্ত সাদামাটা, তা নাটকীয় কিংবা বর্ণাঢ্যময়ও ছিল না। শুধু তার মরণের কাহিনী বা তার পেছনের ঘাতকই এ প্রচার ভ্যালু সৃষ্টি করেছে। এ নূরজাহানই যদি সাধারণ অত্যাচারী স্বামী বা শাশুড়ি-ননদ দ্বারা নিগৃহীত হয়ে মৃত্যুবরণ করতো যা এ দেশের হাজার হাজার নূরজাহানের ভাগ্যে নিত্যদিন ঘটছে তবে তার লাশের ভাগ্যে ঘুণাক্ষরেও এ কভারেজ জুটতো না। অর্থাৎ মদ্যপ বা সাধারণ অত্যাচারী স্বামী হলো এ বিবেচনায় নিচু ক্যাটেগরির ঘাতক। অন্ততপক্ষে মুখে দাড়ি নেই বা দেখতে মাওলানাদের মতো লাগে না এমন অত্যাচারী ঘাতকদের সংবাদমূল্য আসলেই কম।
কাজেই সব পত্রিকার ইন্টারনেট সংস্করণ ঘেটে আমার মনে হয়েছে বিএসএফ হলো এ বিবেচনায় আরো নিম্ন ক্যাটেগরির ঘাতক। মৃত্যুর সময় যেহেতু নির্দিষ্ট ছিল, কাজেই বিএসএফের হাতে না মরে নিজের বউয়ের হাতেও যদি বেচারা এ আমিনুল মারা পড়তো তাহলেও কয়েকগুণ বেশি মিডিয়ার মনোযোগ পেতো। ‘ শিকারি পাখি শিকার করে,’ ‘সূর্য পূর্ব দিকে উদয় হয়’ ইত্যাদি বিষয় যেমন কোনো সংবাদ হয় না তেমনি বিএসএফের হাতে ‘বাংলাদেশিরা গুলি খেয়ে মরে’ এটাও আজকাল কোনো সংবাদ বলে বিবেচিত হয় না।
আর ১৪-১৫ কোটি বাংলাদেশির মধ্যে বিএসএফ যদি সপ্তাহে মাত্র দু-একজন করে গুলি করে মেরে ফেলে তা ধরার মধ্যেও পড়ে না। এসব সংবাদে আমাদের মেইন লাইন মিডিয়া যেন খানিকটা বিরক্তই বোধ করে। কারণ তাদের কাছে এর চেয়েও বড় বিষয় বা সমস্যা রয়েছে। নিজের সম্প্রদায় বা জাতির এ জাতীয় সমস্যা শুধু সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মানুষ ও মিডিয়ার কানেই বাজতে পারে। কিংবা যে কানে বা মনে এসব বাজে তা সাম্প্রদায়িক কান এবং মন হিসেবেই বিবেচিত হয়।
চুয়াডাঙ্গার বাড়াদি গ্রামের কৃষক এ আমিনুল ইসলাম গত রবিবার তার মহিষ খোজার জন্য সীমান্ত এলাকায় গেলে ইনডিয়ার বিজয়পুর ক্যাম্পের বিএসএফ বিনা উস্কানিতে তাকে লক্ষ্য করে তিন রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে আমিনুল মারা যান। খুজে পাওয়া মহিষটিও একই ভাগ্য বরণ করে। সীমান্তের ৭৯/৮০ নাম্বার পিলারের কাছে এ ঘটনাটি ঘটে।
হতভাগা আমিনুলের লাশ ফেরত চেয়ে বিডিআর পত্র দিয়েছে, তবে বিএসএফ এর কোনো জবাব দেয়নি (সোমবারের সংবাদ মতো)। কাজেই হতভাগা পরিবার লাশটি ধরে কান্নারও সুযোগ পাবে না। আমিনুলের বউয়ের বুক ফাটা কান্না ডা. মিলনের বিধবা স্ত্রীর কান্নার চেয়ে কোনো অংশেই কম বেদনাদায়ক নয়। তার এতিম বাচ্চার অবুঝ দৃষ্টি ছোট্ট জুনিয়র কেনেডির (বাবার লাশকে) সেই বিখ্যাত স্যালুটের চেয়ে কম ট্র্যাজিক নয় যা সেদিন সারা আমেরিকাকে কাদিয়েছিল। আমিনুলের মায়ের বুক ফাটা কান্না জাহানারা ইমামের কান্নার চেয়ে কম শোকাতুর নয়। বাবাদের কাধে এসব হতভাগা তরুণ আমিনুলদের লাশ কোনো অংশেই কম ভারি নয়।
আমিনুল ইসলাম একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক ছিল। যে দেশটিকে স্বাধীন করেছেন আমাদের গর্বিত মহান মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন মহামান্য সেক্টর কমান্ডাররা। যতোদূর জানতাম ৫৬,০০০ বর্গমাইলের প্রতিটি ইঞ্চিই সেদিন স্বাধীন হয়েছিল। কৃষক আমিনুলও হয়তো বা তাই জানতো। নাকি আমিনুলের সেই মাপে বা জানায় কোথাও ভুল হয়ে গিয়েছিল? জানি না আমিনুলের বিদেহী আত্মা মুক্তিযুদ্ধের মুরব্বি সেক্টর কমান্ডারদের প্রশ্ন করলে বেয়াদবি হয়ে পড়বে কি না যে আসলে আপনারা কতো ইঞ্চি ভূমি স্বাধীন করেছিলেন? বাড়াদি গ্রামের ৭৯/৮০ নাম্বার পিলারের সেই কয়েক ইঞ্চি জায়গা যেখানে আমিনুলের লাশটি পড়েছিল তা আসলে তার দেশের মাটি ছিল কি? ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা। আমিনুলের লাশ কি তার দেশের মাটিতেই এ মাথা ঠেকিয়েছিল, নাকি অন্য কোথাও? মৃত্যুর আগে অন্যের ভূমিতে দাড়ানোর অপরাধ আমিনুল করেছিল কি?
আমিনুলের দেশ অন্য কোনো দেশের সঙ্গে যুদ্ধেও জড়ায়নি। তার দেশ থেকে সীমান্ত দিয়ে অন্য কোনো দেশে টেররিস্ট রফতানি বা চোরাচালানও হয় না যে, সেই সন্দেহে আমিনুল জীবন দিয়েছে। বর্তমান বিশ্বের আতঙ্ক টেররিস্ট আক্রমণে সারা ইনডিয়ায় যতো মানুষ মরেছে তার চেয়েও বেশি বাংলাদেশিকে এভাবে পাখির মতো গুলি করে ইনডিয়ার বিএসএফ এমনি এমনিই মেরে ফেলেছে। এ ব্যাপারে আমাদের কারো কোনো বিকার নেই। এটাকে কি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে ভাবা যায় না? বিএসএফকে কি যুদ্ধাপরাধী ঘোষণা করা যায় না?
আমরা সবাই এখন অন্য বিষয় নিয়ে ব্যস্ত।
বিএসএফের এ ঔদ্ধত্যের সামনে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। এটা বন্ধ করতে ইনডিয়ার চির শত্রু পাকিস্তান ও চায়নার সঙ্গে কৌশলগত মৈত্রীর চিন্তাও পাপ হবে। এ দেশে একমাত্র রাজাকাররা ছাড়া অন্য কেউ এটা কল্পনাই করতে পারে না। সেই ভাবনা বন্ধ করার জন্যই রাজাকার ইস্যুকে চাঙ্গা রাখা হয়েছে এবং এ ঘৃণাকে প্রজন্ম থেকে প্রজান্মান্তরে ছড়িয়ে দেয়ার আয়োজন চলছে। স্বাধীনতার আবেগ দিয়েই আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে চিরদিনের তরে এভাবে জব্দ, পঙ্গু ও অরক্ষিত করে রাখা হয়েছে।
হতাশার কথা হলো, জাতির সবচেয়ে ভোকাল অংশটিই এ সর্বনাশা রাজাকার ফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। কাজেই আমিনুলরা আসলেই অরক্ষিত। এ অবস্থায় বর্ডারের ল্যাম্প পোস্টে মাইক লাগিয়ে রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজিয়ে দিলে বিএসএফকে কতোটুকু নিবৃত রাখা যাবে তা-ও মালুম হচ্ছে না। আবার বর্ডারের মানুষ ও তাদের গরু-মহিষের জন্য আমেরিকা বিশেষ বর্ম বানিয়ে সাহায্য করবে তা-ও আশা করা যাবে না। কারণ আমিনুলরা তো আর তেলের ড্রাম না যে, তারা এগিয়ে আসবেন।
সামনে উপায় একটাই বাকি আছে। তা হলো সবাই মিলে আমিনুল ও তার মহিষের লাশের জন্য বায়তুল মোকাররমে উপস্থিত হয়ে মোনাজাত করা, ‘হে মাবুদ তুমি বিএসএফের মনকে গলিয়ে দাও যাতে আমাদের আমিনুল ও তার সঙ্গীর লাশটি ফিরিয়ে দেয়। মাবুদ তোমার জীবন তুমি নিয়েছো। এখন আমাদের আমিনুলের লাশটি ফিরিয়ে দাও।’ কারণ লাশ দুটির কথোপথন শুনে মনে হয় তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।
চলুন বিএসএফের বিজয়পুর মর্গে চলে যাই। আমিনুল ও তার মহিষের লাশের কথোপথন শুনি।




আমিনুলের লাশ : ভালোই হলো রে। তুই আমার জীবনের সঙ্গী ছিলি। আজ মরণেরও সঙ্গী হয়েছিস। বিএসএফের মর্গেও তোকে পাশে পেয়েছি। যাকে বলে জীবন আর মরণের সঙ্গী। জানিস, তোর এ ভাগ্য আমার স্ত্রীও পায়নি। বেচারি জীবনের সঙ্গী হলেও তোর মতো আমার মরণের সঙ্গী হতে পারলো না। বেচারির কথা মনে করে মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে রে। আমাকে জড়িয়ে ধরে শেষ বারের মতো একটু কাদবে তা-ও মনে হয় পারবে না। কিভাবে যে এ সময়টুকু কাটাই। তাই চল, তোকে একটা চুটকি বলি। এক পাইলট তার বিমানবালাকে বলে, বউয়েরা আমাদের জীবনের সঙ্গী হলেও তোমরা বিমানবালারা হলে আমাদের জীবন ও মরণের সঙ্গী। এ মহিষ, বল তো এ মজার চুটকিটি বলার পরও হাসি আসছে না কেন?
মহিষের লাশ : কারণ আমরা লাশ হয়ে গেছি মনিব। তবে সবই ওপর ওয়ালার ইচ্ছা। এমন ভাগ্য কয়টি মহিষের হয় বলুন? মরার জন্য তাই আমার তেমন কষ্ট নেই। কিন্তু এখন খুব টেনশনে পড়ে গেছি মনিব।
আমিনুলের লাশ : তোর আবার টেনশন কি? বউ-বাচ্চা কারো খোজ-খবর নেই। তোর লাশ জড়িয়ে ধরে কাদার কেউ নেই।
মহিষের লাশ : প্রিয় মনিব আমার। আমি সেই টেনশন করছি না। আমি টেনশনে আছি কারণ কিছুক্ষণ পরই তো আমাকে ও আপনাকে ইনডিয়ান কুত্তারা পেটে পুরবে। শেষে কি না ইনডিয়ান কুত্তার পেটেই যেতে হবে এটা ভেবেই আমি অত্যন্ত পেরেশান হয়ে যাচ্ছি মনিব।
আমিনুলের লাশ : আশ্চর্য। আমরা মানে মানুষ বাংলাদেশিরা বর্ডার এলাকাতে থাকায় না হয় ইনডিয়া বিদ্বেষী ওরফে রাজাকার হয়ে পড়েছি। তোরা মহিষ বাংলাদেশিরাও কেন ইনডিয়ান বিদ্বেষী হয়ে পড়লি?
মহিষের লাশ : কাটা ঘায়ে আর নুনের ছিটা দেবেন না মনিব। মাথায় হাত দিয়ে বলুন তো, আমি মহিষ না হয়ে যদি গরুর জাত হতাম তাহলে কি এমন নির্মমভাবে বিএসএফ গুলি করতে পারতো? আমি গরু হলে দেবতার সঙ্গী হিসেবে হয়তো বা আপনিও এ যাত্রায় বেচে যেতেন। কাজেই আমরা ইনডিয়ান বিদ্বেষী না হয়ে কিভাবে থাকি বলুন? আমার তো মনে হয়, আমার এ নির্মম মৃত্যুর পর শতকরা ৯৯ ভাগ মহিষই রাজাকার হয়ে পড়বে।
আমিনুলের লাশ : এসব বাজে প্যাচাল রাখ। এখান থেকে কিভাবে মুক্তি পাবো তাই চিন্তা কর। রেড ক্রস কি আমাদের উদ্ধার করার জন্য এখানে আসবে বলে তোর মনে হয়?
মহিষের লাশ : আপনি তো মনিব কুয়েতি শেখের লাশ না যে, ওই সব বিদেশি হিউমেনিটারিয়ান মেশিনারিজ হন্যে হয়ে পড়বে। মরার পর সবাই সমান হয়ে গেলেও ভুলবেন না যে, আপনি বাংলাদেশের একজন সামান্য কৃষক ছিলেন।
আমিনুলের লাশ : কিন্তু তুই তো পশু। পশুপ্রেমিকরা নিশ্চয় চিল্লাচিল্লি শুরু করবে। পশ্চিমি ফার্স্ট লেডিদের অনেকেই স্বামীর চেয়ে পশুকেই বেশি ভালোবাসেন। কষ্ট হয় বাংলাদেশের বর্ডারের কৃষক না হয়ে ধনী দেশের কুত্তা হলেও আরো ভালো হতো।
মহিষের লাশ : মনিব, মন খারাপ করবেন না। আমাদের জন্যও খুশির খবর আছে। তবে তার জন্য জামায়াতের সেক্রেটারি মুজাহিদকে ধন্যবাদ জানান।
আমিনুলের লাশ : তুই তো দেখি রে হার্ডকোর রাজাকার। আমাদের চেয়েও বেশি। যা-ই হোক, আগে কারণটি খুলে বল।
মহিষের লাশ : কারণ তিনি সব জীবিত সেক্টর কমান্ডারদের এক করে ফেলেছেন। তারা এখন এক হয়ে যদি আবারো ৭১-এর মতো হুঙ্কার ছুড়েন তবে দেখবেন বিএসএফ ভয় পেয়ে আমাদের দুজনকে মুক্ত করে দেবে।
আমিনুলের লাশ : লাশ হলেও মহিষ যে মহিষই থেকে যায় তুই হলি তার বড় প্রমাণ। সেক্টর কমান্ডাররা এক হয়েছে বলেই যে ইনডিয়ার বিরুদ্ধে লেগে যাবে তা তুই ভাবলি কিভাবে? মুসলমানদের কেবলা যেমন সব কালে একদিকে থাকে তেমনি তারা ভাবেন স্বাধীনতার হুমকি শুধু পাকিস্তানের দিক থেকেই উড়ে আসতে পারে। তাদের মিসাইলটি তাই এখনো সেই দিকে তাক করা। মিসাইলের এ কেবলা বা দিক কখনো পরিবর্তন করা যাবে না। কাজেই কল্পনা নয় বাস্তব চিন্তা কর। কারণ আমার আর তোর মতো তারা কেউ বিএসএফের মর্গে আটকা পড়েনি। কয়েক ঘণ্টা পর ইনডিয়ার কুত্তার পেটে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
মহিষের লাশ : ঠিকই বলছেন মনিব। লাশ হওয়ার পর আমার মাথাও দেখি খুলে গেছে। আপনার সব কথা বুঝতে পারছি। এখান থেকে বের হওয়ার জন্য আমাদের মতো তাগিদ তাদের নেই। তাদের কখনো বিএসএফের মর্গে আসতে হবে না। তাই দেখেন, ক্লাস টুর বাচ্চাকে জিজ্ঞাসা করলেও বলে দেবে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের হুমকিটি যদি আসে তবে কোন দিক থেকে আসতে পারে। এ বাচ্চার মন্তব্য আপনার বোধগম্য হলেও এসব বিজ্ঞ জনের কথা মাথার অনেক ওপর দিয়ে যাবে।
আমিনুলের লাশ : তোরে অযথা গালিটা দিলাম। মনে কিছু নিবি না। তোর মাথা আসলেই খুলে গেছে। খুব খুশি হলাম। আমাদের তো আর কিছুর ভয় নেই। তাই মনটা খুলে বলতে পারছি। যে শত্রু পাছায় অনবরত লাথি দিচ্ছে তার দিকে না তাকিয়ে তারা আমাদের ফ্লাইং কিকের ভয় দেখাচ্ছেন। এরাই নাকি স্বাধীনতার সার্বক্ষণিক প্রহরী?
মহিষের লাশ : ভুলে গেছেন মনিব আমাদের মন নেই। কাজেই মন খারাপের প্রশ্নই ওঠে না। শুধু মগজটি আছে যার অব্যবহৃত সেলগুলো শেষ মুহূর্তের জন্য জলসে উঠেছে। আর ঠিকই বলছেন মনিব, সারা দেশবাসী তা মানলেও আমি আর আপনি বিএসএফের মর্গে শুয়ে এ কল্পনা বিলাস মানতে পারি না। তবে মনিব ভুল বুঝবেন না। নিজে মরে গেলেও দেশের অমঙ্গল চাই না। জীবিতদের চেয়ে আমাদের লাশ জগতের আরো দুজনের কথাই এখন বেশি মনে পড়ে। একজন (মেজর জলিল) বলেছিলেন, অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা।
অন্যজন (জিয়া) সেই স্বাধীনতাকে পাহারার সুবন্দোবস্ত করতে গিয়ে নিজেই লাশ হলেন। তার মিশন সফল হলে আপনাকে আর আমাকে আজ বিএসএফের মর্গে এমন অসম্মানজনকভাবে শুয়ে থাকতে হতো না এবং ইনডিয়ার কুত্তাদের পেটে যাওয়ার আশঙ্কায় প্রহর গুনতে হতো না। যারা আমাদের এভাবে পাখির মতো গুলি করে মারে তারাই পশ্চিম সীমান্তে একটি পাখি শিকার করতেও হাজার বার চিন্তা করে। কাজেই মনিব, আমি আর আপনি না, এখানে পড়ে আছে বাংলাদেশের অসহায় মানচিত্র। শুধু একাত্তরের একমুখী আবেগে বুদ হয়ে থাকা এসব জ্ঞানী-গুণীরা তা কোনোদিন টের পাবেন না।
আমিনুলের লাশ : তাই তো কাল্পনিক শত্রুকে মোকাবেলার জন্য টনকে টন কাগজ ব্যবহার করলেও তোর আর আমার জন্য দুটি লাইনও এরা লিখতে পারলো না। আচ্ছা তোর মাথা তো খুলে গেছে। একটা সত্য কথা বল তো দেখি, ১৯৭১ সালে মূল যুদ্ধাপরাধীদেরকে বন্ধুদের হাতে তোহফা হিসেবে ছেড়ে দিয়ে এখন তাদের অক্সিলারি ফোর্সদের নিয়ে এরা মেতেছে কেন? সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে সবাইকে তো মাফ করে দেয়া হয়েছিল। এদের কাউকে কাউকে নিজেরাও স্পিকার বানিয়েছে, মন্ত্রী বানিয়েছে, এমপি বানিয়েছে, এমনকি বেয়াইও বানিয়েছে। এদের কারো কাছে দোয়া নিতে নিজেদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে পাঠিয়েছে। তাদের পাশে বসিয়ে ১৯৯৬ সালে একসঙ্গে আন্দোলনও করেছে। এখন হঠাৎ এমন করে চটে উঠলো কেন?
মহিষের লাশ : প্রথম জবাব হলো, আমি আর আপনি যে বিএসএফের মর্গে পড়ে আছি তা দেশবাসীকে ভুলিয়ে রাখার জন্য। এটা কঠিন প্রশ্ন মনিব, একবার থুথু ফেলে দিয়ে সেই থুথু আবার মুখে নেয়ার প্রয়োজন পড়েছে কেন? কারণ একটাই, নিজেদের মুখটি শুকিয়ে যাচ্ছে তাই।
আমিনুলের লাশ : আমার কি মনে হয় জানিস? আধিপত্যবাদের পথের কাটা জাতীয়তাবাদী শক্তির মূল ঘাটি বিএনপিকে চতুর্মুখী আক্রমণে আজ ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে। এসব পরিকল্পনার পরতের পর পরত ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে। দেখে যেতে পারলাম না এর সর্বশেষ পরত কোনটি।
মধ্যরাতের ক্যু সংঘটিত হয়ে গেছে। ইলেকশন কমিশনে বাকশালের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। তাদের স্বরেই কমিশন সুর মিলিয়েছে। থলের বেড়ালটি ধীরে ধীরে বের হয়ে পড়ছে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের মূল উদ্দেশ্যটিও স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে। বাকশাল যা পারেনি এ কমিশনকে দিয়ে তাই করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আশার কথা হলো, অন্ধকার এ রাতেও জনগণ আলোক বর্তিকাটি বা তার কা-ারিকে ঠিকই চিনে নিয়েছে। একই সঙ্গে জাতীয়তাবাদী শক্তির অন্য সহায়তাকারী শক্তিগুলোকেও নিস্তে
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সচীবদের সম্পর্কে এখন কিছুটা ধারণা পাচ্ছেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২০ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৭



সামুর ব্লগারদের মাঝে ১ জন সচীব আছেন,(বর্তমানে কর্তব্যরত ) তিনি বর্তমানে লিখছেন; আধামৃত সামুতে তিনি বেশ পাঠক পচ্ছেন; উৎসাহের ব্যাপার! এরচেয়ে আরো উৎসাহের ব্যাপার যে, তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×